#দেওয়ানা(আমার ভালোবাসা)
#লিখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৪২
🍂
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমি,,,, নিজের প্রতিছবিটাকে দেখার জন্য আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছি তেমনটা নয়,,, আয়নায় উনাকে আর ডলি আপুকে একসাথে দেখা যাচ্ছে তাই তাকিয়ে আছি আমি,,,, মনে মধ্যে কোনো রকম ফিলিংস কাজ করছে না ওদের একসাথে দেখে,,,, খারাপ ভালো কোনটাই কাজ করছে না দুজনকে একসাথে দেখে,,, যেটা কাজ করছে সেটা হলো তাচ্ছিল্যর নিজের প্রতি নিজের,,,,
কারণ আমি সবটা জানি যে উনি ডলতে আপুকে পছন্দ করে আর আপুকেই বিয়ে করতে চাই,,,,, মাঝখান দিয়ে আমি শুধু বোঝা হয়ে গেলাম উনার জন্য,,,,
আমি উনাকে মুক্তি দিতে চাই,,,, খুব করে চাই উনাকে মুক্তি দিতে,,,, এইসব ভাবতে ভাবতে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম নিশ্চুপে,,,,
.
তারপর আবারও তাদের দিকে তাকায়,,, লেডিস্ ডিজাইনার যখন আমাকে ড্রেস দেখাচ্ছিল তখন উনি একটা পাশে দাড়িয়ে ফোন এ মনোযোগ দিয়ে কথা বলছিল কারও সাথে,,, তখনি কোথাও থেকে ডলি আপু ঝড়ে গতিতে এসে উনাকে জরিয়ে ধরে,,, আকস্মিক ঘটনায় তাল সামলাতে না পেরে উনার হাতে থাকা ফোনটি নিচে পরে যায়,,,, তখন আমি ড্রেস দেখায় ব্যস্ত ছিলাম,,,,হঠাৎ আপুর আগমনে আমার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল,,,, পরে মাথা নিচু করে পিছন ঘুরে দাড়ায়,,, সামনে তাকাতেই আবারও চোখে পরে উনার দের কারণ আমার সামনে বড় একটা আয়না রয়েছে তাতে খুব সুন্দর করেই আপু আর উনাকে দেখার যাচ্ছে,,,, উনি চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে,,, হয়তো কোনো কারণে রেগে যাচ্ছেন,, আমি আর কিছু দেখার প্রয়োজন বোধ মনে করেনি,,, তাই কাউকে কিছু না বলে চুপচাপ বেড়িয়ে আসি দাদীর উদ্দেশ্য,,,, দাদীকে খুজে না পেয়ে দাদাজান এর পাশে বসে পরি,,,, আমাকে দাদাজানের পাশে বসতে দেখে হাসি মুখে আদুরে একহাত দিয়ে জরিয়ে নেয় দাদাজান,,, আমি দাদাজান এর বুকে ভাবলেশহীন ভাবে মাথা রাখে চুপচাপ বসে থাকি,,, আমাকে এতটা চুপচাপ দেখে দাদাজান আদুরে সুরের বলে উঠে,,,,,
–
—” কি খারাপ লাগছে সোনামা,,,
দাদাজান কথায় আমি শুধু মাথা নাড়িয়ে না বুঝায়,, মানে আমার খারাপ লাগছে না,,,, দাদাজান আমাকে বুক চেপে ধরে অন্য হাতে আমার মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,,, আমি চুপচাপ বসে সামনে তাকিয়ে আছি,,,, অনুভূতি আমার শন্য,,, আমার কারও প্রতি কোনো রকম অভিযোগ নেই আর নেই কোনো আশা,,,,
.
আমার এমন সব চিন্তা ভাবনায় মাঝে হঠাৎ করে কেউ আমার পাশে বসে পরে,,, এ মূহুর্তে আমার পাশে কে বসেছে তা জানার প্রয়োজন বোধ মনে করেনি,, তাই আগের ন্যায় দাদাজান এর বুকে ঘাপটি মেরে বসে আছি,,,, আমাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে পাশ থেকে কেউ বলে উঠে,,,,
.
—” দাদা মায়ার কি শরীর খারাপ লাগছে নাকি,,, আমি কি ডাক্তার ডাকবো ওর জন্য,,,,
.
হালকা পরিচিত কন্ঠ কানে আসতেই আমি ঘাড় ঘুরিয়ে পাশ ফিরে তাকায় তখনি চোখে পরে নিহা আপুর বড় দেবকে,, উনি আমার পাশে বসে আছেন চোখ মুখ হালকা চিন্তার চাপ,,, হয়তো আমাকে নিয়েই আমি উনার চেহেরায় চিন্তার চাপটা,,, আমার এমন চিন্তা ভাবনায় মাঝেই দাদাজান বলে উঠে,,,,
.
—” তেমন কিছু না সাহিল,,, (নিহা আপুর বড় দেবর এর নাম) ওহ খানিকটা ক্রান্ত তাই আমার কাছে এসেছে,,,,
—” ওহ আচ্ছা,,, আমি ভাবলাম মায়া অসুস্থ,,,,
বলেই উনি সোজা হয়ে বসে পরে,,, নিজের ফোন টিপতে লাগলো,,,, সাহিল ভাইয়া সাথে আমার বেশ কয়েক বার দেখা হলেও তেমন কোনো কথা হয়নি আমাদের মাঝে,,, টোক টাক কথা বলা ছাড়া,,, যেমন কেমন আছেন, ভালো আছি,,, ব্যাস এতোটুকুই,,,, এর ছেড়ে বেশি কিছু না,,,, আমি সাহিল ভাইয়া দিকে এক পলক তাকিয়ে থেকে সামনে দিকে তাকায় তখনি চোখে পড়ল উনাকে,,,,
.
উনি প্রচন্ড রেগে দু-হাত মুষ্টি করে দুপদাপ পা ফেলে বেড়িয়ে আসে শো রুম থেকে,,,, পরে রেগে চোখ মুখ শক্ত করে চারপাশে নিজের চোখ বুলিয়ে কাউকে খুঁজে চলছে,,,, নিজের চোখ বুলিয়ে আমাদের দিকে তাকায় উনি,,,, কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে দৃষ্টি স্থির রেখেই ভ্রু কুঁচকায় উনি (রিদ),,,, তারপর আরও রেগে এগিয়ে আসে আমাদের সামনে দাড়ায়,,,, উনাকে রাগতে দেখে আমি ভয়ে দাদাজান এর বুকে মুখ লুকায়,,,, উনি লাল লাল চোখে একবার আমার দিকে তো একবার সাহিল ভাইয়া দিকে তাকাচ্ছেন,,,, হয়তো সাহিল ভাইয়া আমার পাশে বসাটা পছন্দ হয়নি উনার,, যা উনার তাকানোর মাধ্যমে বুঝা যাচ্ছে,,, পরে উনি গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে,,,,,
.
—” সাহিল তুমি দাদী কাছে যাও,,,,
উনার হঠাৎ আগমনে হঠাৎ কথায় চমকে উঠে সাহিল ভাইয়া,,, বিস্ময়কর নজরে তাকিয়ে থেকে কিছু না বলে আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে থেকে চুপ করে উঠে যায় সাহিল ভাইয়া,,,, ভাইয়া যেতেই উনি বসে পরে আমার পাশে,,,, কিছু না বলে চুপচাপ বসে থাকে হাত মুখ শক্ত করে,,,,, আর বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছে,,, যা আমি না তাকিয়েও বুঝতে পারছি,,, আমি উনার এমন তাকানো দেখেও ভুল করেও উনার দিকে তাকাচ্ছি না,,,, আর কেন বা তাকাবো আমার তাকানো কোনো রাইট নেই,, আমি কেন অন্যের ভালোবাসা দিকে নজর দিব হুহহহ,, আমি কি ছেচড়া নাকি হুহহহ,,, একদম তাকাবো আমি যাই কিছু হয়ে যাব,,,, জাহান্নামে যাক উনি আর তার সাথে যাক ডলি আপু তবুও তাকাবো আমি মনে মনে এই শপথ করলাম আমি,,,,
.
দাদাজান বুকে ঘাপটি মেরে বসে আছি আমি,, অনুভূতি শূন্যে অবস্থা করছে আমার,,, উনাকে আমার পাশে বসে থাকতে দেখেও নিজের কেমন অসহায় অসহায় ফিলিংস আসছে মনে,,,, ইচ্ছে করছে সবকিছু ছিন্ন করে উনাকে মুক্তি করে দিতে এ মূহুর্তে,,, তাহলে হয়তো কলিজা শান্তি পেত আমার,,,,
.
.
.
🍂
শপিং মলে সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমরা সবাই,,,, দুই মিনিট হল সবার শপিং করা শেষ হলো,,, তাই আমরা সবাই বাহিরে এসে দাঁড়িয়েছি,,,, কারণ গার্ডরা সবার শপিং ব্যাগ গুলো গাড়িতে রাখছেন একে একে তাই আমারা সবাই দাড়িয়ে আছি,,,, আমাদের সাদা করে মোট ছয়টি গাড়ি এসেছে,,, দুটো ফয়সাল ভাইয়াদের,, দুটোতে আমরা আর নিহা আপুরা যাব,,, আর দুটোতে গার্ডরা যাবে,,,,,
.
আমি দাদীর পাশে দাড়িয়ে সবাইকে পযবেক্ষন করছি,,,
তখনি চোখে পরে উনাকে উনি বিরক্তি নিয়ে সবাইকে দেখছেন,,, আর নিহা আপুর উনার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে খানিকটা দূরে,,,, উনি তখন আমার পাশেই বসে ছিল শপিং মলে সারাটা সময়,,, পরে আমি যেখানে গিয়েছি সাথে সাথে উনিও গিয়েছেন কিন্তু কোনো কথা বলেনি চুপচাপ ছিল,,,,, উনি আমার পিছন পিছন চলাটা আমার জন্য ছিল একটা প্রশ্ন বোধক চিহ্ন মতো, উনি এভাবে আমার পিছন পিছন কেন ঘুরছিল তা আমার জানা নেই,,,, আর না জানতে চাই,,, তবে যেটা চাই সেটা হলো উনি আমার পিছনে না আসাটা,,,,
.
আমি উনার দিকে তাকিয়ে থেকে এক মনে কথা গুলো ভাবছিলাম,,,, হঠাৎ করে উনিও আমার দিকে তাকায় দুজনের চোখাচোখি হতেই আমি চোখ নামিয়ে নেয়, সাথে সাথে মাথা নিচু করে আস্তে করে পিছন ঘুরে দাড়ায়,,,, যাতে উনাকে আর দেখতে না পারি,,,, আমার হঠাৎ করে ঘুরাটা হয়তো উনার (রিদ) পছন্দ হয়নি তাই আমার ঘুরার সাথে সাথে কপাল কুচকে এলো উনার,,,,
উনি রেগে আমার দিকে হনহন করে এগিয়ে আসতেই হঠাৎ থেমে যায়,,,, চিৎকার করে বলে উঠে,,,,
.
—” রিতততত,,, রিত No,,, রিত No,,, প্লিজ No,,,,, প্লিজ রিত ডোন্ট gooo,,,
.
রিত শব্দটি কানে আসতেই পা থেমে যায় আমার,,,, মুহূর্তে মনে মধ্যে অজানা একটা ধুকপুক শুরু হয়,,,, উনি আমাকে রিত ডাকছে (রিক্তা শট ফম রিত),,, এই নামটা আমি আগেও শুনেছি,,, কিন্তুু কোথায়,,,, আমার এমন সব চিন্তা ভাবনায় মাঝে সামনে তাকিয়ে দেখি উনি পাগল পাগল হয়ে দৌড়ে আসছে আমার দিকে,, উনার পিছনে বাকি শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর আমার দিকে তাকিয়ে আছে,,,, আমি উনার এমন দৌড়ানোর মানে বুঝতে পারছি না এ মুহূর্তে,,,,, কারণ আমি যখন উনার দিক থেকে পিছন ঘুরে দাড়ায় তখনি চোখে পড়ে রাস্তায় একটা ছোট বিড়াল গাড়ির নিচে পড়তে যাচ্ছে তাই সেটাকে বাঁচাতে দৌড় দিলাম মেইন রাস্তা দিকে আর যায় হোক বিড়ালে বাচ্চাটাকে তো আর মরতে দিতে পারি না,,,, তাই আমার সব চিন্তা ভাবনায় পিছনে ফেলে আবারও এগুতে যাব তখনি থেমে যায় আমার পা আর উনার দৌড়,,,
.
🍁
পাগল পাগল হয়ে দৌড়েও মায়াকে বাঁচাতে পারেনি রিদ,,,, ঝড়ে গতিতে দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ থেমে যায় মায়ার নিতান্ত দেহটা রাস্তা পরে থাকতে দেখে,,,, তখন মায়া যখন আবারও দৌড় দিতে যাবে তখন দ্রুত গতিতে একটা ট্রাক এসে ভারি মারে মায়াকে,,,, মায়া সে ভারি খেয়ে উড়ে গিয়ে সামনে আসা কার্র এর ওপর পরে,,, কার্রটির সামনে থাকা কাঁচের মধ্যে ভারি খেয়ে ছিটকে গিয়ে পরে যায় রাস্তা মাঝে উপুড় হয়ে,,, দুটো হাত সামনে দিয়া দুই সাইডে,,,, মায়া রাস্তা পড়া সাথে সাথে মাথা রক্তে সারাটা রাস্তা বাসতে থাকে,,,,, রিদ সেই দৃশ্য দেখে থেমে থেমে দৌড়ে এসে মায়ার সামনে ধপাস করে হাটু গেটে বসে পরে,,,, বেহালি ভাবে নিজের দুহাতও পরে নিজের দুই হাটুর ওপর,,,, একরকম অনুভূতিহীন ভাবে তাকিয়ে থাকে মায়ার রক্ত মাখা মুখ দিকে,,,, রিদ একবার রক্ত মাখানো রাস্তা দিকে তাকাচ্ছে তো একবার মায়া দিকে তাকাচ্ছে,,,,, মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না শুধু তাকিয়ে রয়েছে মায়ার মুখে দিকে,,,, মায়া আদু আদু চোখ খোলা রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে,,, চোখে পাতা ছুয়ে ছুয়ে রক্ত ফোঁটা রাস্তায় পড়ছে,,,, আর ঠোঁট দুটো হালকা হা করা যার মাধ্যমে টেনে টেনে জোরে জোরে হালকা শব্দ করে নিশ্বাস নিচ্ছে,,,,,,, আর অস্পষ্ট সুরের কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে,,,৷
.
রিদ অনুভূতিহীন হয়ে টেনে মায়াকে নিজের কোলে নিয়ে আসে,,,, মায়াকে অস্পষ্ট সুরের কিছু বলতে দেখে আস্তে করে নিজের কানটা মায়ার মুখে কাছে রাখে,,, তখনি আমার থেমে থেমে অস্পষ্ট সুরে আটকে আসা গলায় আস্তে করে বললো,,,,,,
.
—” আজকে থেকে আপনি মুক্ত,,,, আমি নামক কেউ আপনাকে আর বিরক্ত করবে বা,,,, একদিন আমি আপনাকে বলেছিলাম না যে,,, একদিন আমারও দিন আসবে আর সেদিন আমিও বড্ড স্বার্থপর হবো৷,,, আপনাকে ছেড়ে চলে যাব আমি,,,, আজ হয়ে গেলাম স্বাথপর চলে যাচ্ছি আপনাকে ছেড়ে,,,, আর হয়তো আ……( নিশ্বাস জোরে টেনে টেনে)
বাকি কথা গুলো বলার আগেই মায়ার নিশ্বাস থেমে যায়,,,, রিদকে আঁকড়ে ধরা হাতটা হঠাৎ নিচে পরে যায়,,,, রিদ মায়া কথা গুলো শুনে আর মায়াকে নড়াচড়া করতে না দেখে,,,, হঠাৎ করে যেন বড্ড উন্মাদ হয়ে উঠে কি করবে কিছু বুঝতে না পেরে মায়াকে নিজের বুকের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে পাগলের মতো আচরণ করতে করতে বলে উঠে,,,,
.
—” রিত তুমি আমার সাথে এমনটা করতে পারো না,,,, তুমি আমাকে ছাড়তে পারোনা আমি তোমাকে ছাড়াতে দিব না,,,, বউ আমার দেখনা আমার কেমন জানি লাগছে আমার কলিজা কেঁপে কেঁপে উঠছে,,,, আমার ভিষণ ভয় করছে,,,, রিত তুমি আমাকে তোমার শাড়ি আঁচলে নাও না,,,, রিত প্লিজ,,,, (চিৎকার করতে করতে)
থেমে গেল রিদের জীবন পথ,,, রয়ে গেল না বলা অসংখ্য অনুভূতি ও মনে কথা গুলো,,,, জানা নেই কখনো রিদ তার মনের কথা গুলো তার রিত পযন্ত পৌঁছাতে পারবে কিনা,,,,,
( আজকে পাটটা লিখতে আমার তিন ঘন্টার সময় লেগেছে কারণ কষ্টে ,,,,, মায়ার মৃত্যুটা বণনা করতে গিয়ে কষ্টে আমার হাত চলতেছিল না,,,,)
চলবে……….