দেওয়ানা(আমার ভালোবাসা) #লিখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া #পর্বঃ_৫০ 🍂

0
689

#দেওয়ানা(আমার ভালোবাসা)
#লিখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৫০
🍂
আজ প্রথম পাঞ্জাবী পরেছে সে তাও তার বউয়ের জন্য নয়তো পাঞ্জাবীর বিষয়টি কোনো কালেই পছন্দ নয় তার,,, সবাইকে নিজের দিকে এভাবে তাকাতে দেখে বিরক্তি নিয়ে চারপাশে চোখ বুলাই আবারও,,, যার জন্য এতো কষ্ট করে পাঞ্জাবি পরলো সে,, তাঁকে তো দেখাতে হবে তার এই নতুন রুপটা,,, যার জন্য সে এতো কষ্ট করলো তাকে দেখতে না পেয়ে আরও বিরক্তি প্রকাশ পাচ্ছে রিদের ফেসে,,,

.

রিদ এমনিতেই নেশাক্ত সৌন্দর্য অধিকারী তার ওপর আবার এই প্রথম পাঞ্জাবি পরেছে এতে যেন তার নেশাক্ত ধাপটা কয়েক গুণ বেড়ে যায়,,, রিদের এমন নেশা ধরানো রুপে মন্ত হয়ে সবাই হা করে গিলে খাওয়া টাইপ তাকিয়ে আছে,,, রিদ বিরক্তি নিয়ে কিছুটা এগিয়ে আসে সামনে দিকে, পরে থেমে নিজেকে স্থির রেখে ডানহাতে দুই আংগুল দিয়ে কঁপালে স্লাইড ঘষতে ঘষতে নিরবে ব্রাউন চোখ জোড়া দিয়ে চারপাশে মায়াকে খুঁজতে থাকে,,,, কোথাও মায়াকে দেখতে না পেয়ে কপাল কুচকে এলো তার,,, আর ভাবতে থাকে, হঠাৎ করে মেয়েটা হাওয়া হয়ে গেল নাকি, যার কারণে এখন খুঁজে পাচ্ছে না সে,,,

.
রিদের নেশা ধরানো রুপে আসক্ত হয়ে ডলি এক প্রকার ছুটে এসে রিদকে জরিয়ে ধরে,,, আকস্মিক ঘটনায় রিদ প্রথমে কিছু বুঝতে না পেরে চুপ থাকে পরে কি হচ্ছে তার সাথে বুঝতে পেরে মূহুর্তেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায় রিদের,,, রাগটা নিজের মধ্যে বহাল রেখে চোখ মুখ শক্ত করে ডলির দুবাহু শক্ত করে টেনে নিজের বুক থেকে উঠিয়ে সামনে দাঁড় করায়,,, রিদ কিছু বলতে না দিয়ে ডলি খুশিতে গটগট হয়ে আহাদু সুরে বলে উঠে,,,

.

—” baby you looking so hot, I am fed up with seeing you in this form…

.
রিদ ডলি কথা শুনে নিজেকে আর ধরে রাখতে না পেরে দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেগে ডলি দিকে ত্যাড়ে যেতেই থেমে যায় সে,, দৃষ্টি যায় স্টেজের কোণায় হেনা খাঁনের আঁচল ধরে দাঁড়িয়ে থাকা মায়া ওপর,,,৷ মায়া এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে পলকহীন ভাবে,,,৷ মায়াকে এভাবে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিদ মূহুর্তেই শান্ত হয়ে যায়,, সেও মায়ার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকায়,,,

.
ডলি রিদকে নিজের দিকে ত্যাড়ে আসতে দেখে ভয়ে সিটিয়ে যায় মূহুর্তেই, রিদকে থেমে যেতে দেখে কপাল কুচকে এলো তার, রিদকে সামনে দিকে তাকাতে দেখে সেও রিদের দৃষ্টি অনুসরণ করে পিছন ঘুরে তাকায়, সাথে সাথে চোখে পড়ল স্টেজের কোণায় মায়াকে,,,, মায়াকে ওদের দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে ডলি,,,, পরে
রিদ আর মায়া পরস্পর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে শয়তানি বুদ্ধি চাপলো ডলির মাথায়,, সে একহাতে রিদের গলা জরিয়ে ধরে অন্য হাতে রিদের বুকে আঁকি ঝুঁকি করতে করতে মায়াকে দেখিয়ে দেখিয়ে ন্যাকামো সুরে বলে উঠে,,,,

.
—” বেবি আমি জানতাম তুমি আজ পাঞ্জাবি পরবে,,, আমার কথা চিন্তা করে তুমি পাঞ্জাবিটা পরেছো,,, তাই আমি আজ অনেক হেপি,,, লাভ ইউ বেবি,,, লাভ ইউ সো মাচ,,

.
রিদ আর ডলির সবটা নিরব দর্শক মতো শ্রর্বণ করছিল মায়া অসহায় দৃষ্টিতে,,,, রিদের এতটা কাছে ডলিকে দেখে অনুভূতি শূন্য হয়ে আস্তে করে চোখ ফিরিয়ে নেয় সে,,, কেন জানি মায়ার আর কিছুই দেখতে ইচ্ছা করছে না,,, অহেতুক বড্ড চোখ দুটো জ্বলছে তার,,,

.
মায়াকে নিজের থেকে বেখেয়ালি ভাবে দৃষ্টি সরিয়ে নিতে দেখে চোখে-মুখে হিংস্রতা ফুটে উঠে রিদের,,, সেই হিংস্রতা রেশ ধরে ডলিকে আবারও টেনে দাঁড় করায় সে,,, পরে রাগে রি রি করতে করতে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,,,,

.
—” নিজের বউ ছাড়া, পর নারীকে কখনোই ছুঁয়ে দেখিনি আমি, সেটা যেভাবেই হোক না কেন,,, আমার কাজে ঝামেলা সৃষ্টি করিস না,,, নিজের ভালোটা পাগলও বুঝে,,, নিজের মাথাটা মায়া কর অকারণে এটাকে হারাতে না হয় তোকে,,,, তাই আমাকে আমার মতো থাকতে দে,,, এক কথা বারবার বলার মানুষ আমি না,,,

.
রিদের এমন কথার মানে বুঝতে পারে ডলি,,, রিদ কি, আর সে কি কি করতে পারে সবটাই জানা তার,,, রিদকে ভালোবাসে বলে বারবার ছুটে আসে রিদের দিকে নয়তো সে কখনোই রিদ নামক ভয়ানক প্রাণীর সামনে আসতো না,,, ডলি রিদের কথা গুলো শুনে বার কয়েক শুকনো ঢুক গিলে সে,, জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়,,, হাত পা প্রচন্ড রকমের ঠান্ডা হয়ে আসছে তার,,,, ভীতু চোখে তাকায় রিদের দিকে,,,
রিদ কথা গুলো বলেই হনহন করে স্টেজের দিকে চলে যায়,,,

.
রিদ চলে যাওয়াতে হাফ ছেড়ে বাঁচে ডলি,,, সাথে সাথে রাগও হয় প্রচুর,, কি নেই তার, সবিই তো আছে,,, সেকি মায়ার থেকে কোনো অংশে কম নাকি, বরং বেশিই হবে,, চোখ বুলানো সৌন্দর্য তার, যা মূহুর্তেই শত শত ছেলেকে পাসাতে পারে,,

তাহলে কেন রিদ তাকে দেখতে চাই না, কেন তাকে ভালোবাসে না রিদ,,, সে যদি রিদকে না পায় তো,, রিদের বেঁচে থাকা কারণ টাকেও মেরে দিবে সে,,, এতে যদি তার নিজেকেও মরতে হয় তো হবে, তার সাথে করে মায়াকেও মারতে হবে, তার আগে নয়,,, যদি রিদ তার না হয় তো অন্য কারও হতে দিবে না সে,,,, কথা গুলো ভেবেই পৈশাচিক আনন্দ পায় সে মনের মধ্যে,,,,

.

.

🍁
রিদ স্টেজের সামনে গিয়ে দাড়ায়,,, অহেতুক চারপাশে চোখ বুলিয়ে ঘাড় বাকা করে আবারও মায়ার দিকে তাকায়,,, মায়া তখনো মন খারাপ করে নিচে দিকে তাকিয়ে আছে, ওপরের দিকে তাকাচ্ছে না পযন্ত,,, রিদ মায়ার এমন করার কারণটা প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে বুঝতে পেরে ঠোঁট কামড়িয়ে হাসে সে,,, তার পিচ্চি বউ তাঁকে নিয়ে জেলাস, ভাবতে আনন্দে ঢেউ খেলে যায় তার মনের মধ্যে,,,

.
রিদ এক হাতে ওয়াইন এ গ্লাস নিয়ে দাড়িয়ে পরে,,, বার কয়েক সেই গ্লাসে চুমুক বসায় মায়ার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে,,, মায়া তখনো চুপচাপ মন খারাপ করে নিচে দিকে তাকিয়ে আছে,,, হাতে হেনা খাঁনে আঁচলটা বারবার পেঁচাচ্ছে,,, রিদ সেটা শান্ত দৃষ্টিতে পযবেক্ষন করছে নিঃশব্দে,,,,

.
মায়া নিজের অস্থিরতাটা ধরে রাখতে না পেরে, আস্তে করে নিয়ে মাথাটা উঁচু করে সামনে দিকে তাকায়,,, সাথে সাথে দুজনেই চোখাচোখি হয়, রিদকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সেও চুপচাপ তাকিয়ে থাকে রিদের দিকে,,,

.
রিদ মায়াকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটা ভ্রু উঁচু করে ইশারা করে,,, কি হয়েছে জানতে চাই,,,, মায়া রিদের ইশারা দেখে কিছু না বলে আবারও চুপচাপ নিজের মাথাটা নিচু করে দাঁড়িয়ে পরে,,, রিদ মায়াকে মাথা নিচু করতে দেখে, মূহুর্তেই হেসে উঠে,,, হাত বাড়িয়ে ওয়াইন এ গ্লাসটা ওয়েটার কাছে দিয়ে এগিয়ে এসে মায়ার পাশে দাঁড়ায় নিঃশব্দে,,,

.
মায়া রিদের উপস্থিতি টের পেয়ে একবার চোখ তুলে রিদকে দেখে নিয়ে আবারও নিচে দিকে তাকায়,,, রিদ মায়াকে এমন করতে দেখে আস্তে করে ঝুঁকে মায়ার কানে ফিসফিস করে বলে উঠে,,,,

.
—” বউ আমার যা দেখেছে, তা কিন্তুু মোটেও সত্য নয়,,, আমি কিন্তুু ডলিকে জরিয়ে ধরিনি, সে ধরছে,,, দোষ তার আমার না,,, তাই বউয়ের গাল ফুলিয়ে না থাকায় উচিত,,,

.
বলেই রিদ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পরে মায়ার দিকে তাকিয়ে দুষ্টমী হাসি দিয়ে,,, রিদের এমন ফিসফিস কথায় শিহরিত হয়ে ওঠে মায়া,,, রিদের উত্তাপ গরম নিশ্বাস মায়ার গালে, কানে, গলায় বাড়ি খেতেই মূহুর্তে আবারও কঠিন রোগী আক্রান্ত হয়ে কেঁপে ওঠে সে,,, পরে আস্তে করে রিদের দিকে তাকায় অসহায় দৃষ্টিতে,,, পরে করুন কন্ঠে বলে উঠে,,,

.

—” আমি গাল ফুলায়,,,

.
—” হুমম, বউ আমার গাল ফুলিয়ে থাকলে আদর আদর লাগে বেশি,,,
.
—” আর ডলি আপু করলে,,,,

মায়ার মুখে ডলি নাম শুনে আবারও ঝুঁকে পরে মায়ার দিকে, পরে আস্তে করে বলে উঠে,,,

.
—” জ্বলে বুঝি,,,

কথাটা বলেই রিদ মায়ার কানে, শব্দ করে একটা চুমু খায়, পরে সাথে সাথে মায়ার গালেও একটা চুমু খায়ে স্বাভাবিক ভাবেই দাঁড়িয়ে পরে মায়ার পাশে,,, আর মায়া রিদের হঠাৎ এমন কান্ডে ভরকে যায় সে,,, সন্ধ্যা থেকেই কি হচ্ছে তার সাথে কিছু বুঝতে পারছে না সে, রিদের এমন সব কান্ডে মায়া বারবার শিহরিত হচ্ছে,, নিজেকে কঠিন রোগী টাইপ মনে হচ্ছে কারণ রিদের ছুঁয়াই বারবার কেঁপে কেঁপে ওঠা তার কাছে সয্য হচ্ছে না,,, তাই একহাতে গাল চেপে ধরে রিদের দিকে তাকিয়ে আছে অসহায় ফেস করে,,, রিদ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে সামনে তাকায়,,,,

.
রিদ মায়ার গালে শব্দ করে চুমু খাওয়াতে, সেই চুমুর শব্দ হেনা খাঁনের কানে আসতেই পাশ ফিরে তাকায় মায়ার দিকে,,, মায়ার সাথে রিদকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকায় হেনা খাঁন,,,, পরে কৌতূহল হয়ে রিদকে প্রশ্ন করে ওঠেন,,,

.
—” এই তুই এখানে ওর পাশে কি করছিস,,, (তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে)

,
রিদ চোখ মুখ কুঁচকে ঠোঁট উলটিয়ে বলে উঠে,,,

—” কিছু না,,,

—” তাহলে অন্য কোথাও গিয়ে দাঁড়া, ওর পাশে কেন দাঁড়িয়ে আছিস,,,

—” ওহ আমার বউ হয় তাই,,,

.
রিদ হেনা খাঁনকে হাঁপ ছাড়া উত্তর দিয়েই জায়গায় ছেড়ে প্রস্হান করে সাথে সাথে,,, আর হেনা খাঁন রিদের কথায় হা হয়ে থাকে, রিদের আজ কাল কথা গুলো সব কেমন যেন সবার মাথা ওপর দিয়ে যায়,,,

.

মায়া গালে হাত দিয়ে রিদের চলে যাওয়ার দিকে করুন ভাবে তাকিয়ে থেকে, নিজের দৃষ্টি পাশ ঘুরাতে চোখ যায় ছাদের দরজার দিকে,,, সাদা পাঞ্জাবি পরে দরজা দিয়ে সুদর্শন পুরুষ হাসি মুখে এগিয়ে আসছে স্টেজের দিকে,,,, মায়া সেই ব্যাক্তিটি দেখে হিতাহিত জ্ঞান হারায়ে হেনা খাঁনের আঁচল ছেড়ে নুপুরে ঝনঝন শব্দে তুলে ভৌ দৌড়ে ঝাপিয়ে পরে সেই সুদর্শন যুবকে বুকে ওপর, ব্যাক্তিটি আবেশেয় মায়াকে নিজের বুকের মধ্যে টেনে নেয় শক্ত ভাবে,,,,

.

রিদের কানে মায়ার নুপুরের ঝনঝন শব্দ আসতেই পিছনে ফিরে তাকাতেই চোখে পড়ল মায়াকে কারও বুকে ওপর ঝাপিয়ে পরতে,,, মায়াকে কারও বুকে মুখ লুকাতে দেখে সাথে সাথেই চেয়াল শক্ত হয়ে আসে তার, মূহুর্তেই যেন শরীরে রক্ত টগবগ করে ওঠে শিরায় শিরায়,,,, চোখ দুটো যেন রক্তে চলচল করছে তার,,,, নিজেকে ধরে রাখার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে মূহুর্তেই,, মাথার শুধু সবকিছু ধংশ করার তান্ডব মেতে ওঠছে,,, আর সেই তান্ডবে সবার আগে পুড়ানো হবে মায়াকেই,,,,

চলবে…………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here