#দেওয়ানা(আমার ভালোবাসা)
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৫২
🍂
রিদ এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে মায়া,, চোখ মুখ হালকা কুঁচকে রাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চুপ করে,,, মায়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলেও রিদের কাছে মায়ার এমন করে দাঁড়িয়ে থাকাটা বেশ সন্দেহজনক লাগছে,, তারপর আবার তার রুমে মায়া নিজ থেকে এসে দাড়িয়ে আছে ব্যাপাটা যেন রিদের কাছে অস্বাভাবিক চেয়েও অদ্ভুত লাগছে বেশি,,, তারপর আবার মায়া এমন আচরণটা করতে দেখে রিদ একটা ভ্রু উঁচু করে মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,,,,
,
—” কি..?
.
মায়া রিদের মুখে কি শব্দটি শুনে এই মূহুর্তে চরম বিরক্তি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে,,, রিদকে যদিও মায়া প্রচন্ড রকম ভাবে ভয় পাই, কিন্তুু এই মূহুর্তে মায়ার রিদকে ভয় পাচ্ছে না মোটেও উল্টো রিদের ওপর একঝাঁক ঝুঁকিভরা রাগ কাজ করছে,,, তাকে এই ভাবে চুরি করে এনে এই রুমে ভিতর ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে আবার জিজ্ঞাসা করছে, কি…? আবার ফেলে দিতে দিতে দরজা দিয়ে পালিয়ে গিয়ে আবার ওয়াশরুম ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে তাকে নিচে পরা থেকে উঠাল, আজব প্রাণী, ফেলে যদি দিবে তাহলে উঠাবার কি দরকার হুহহহ,,, তাই সে রিদের সাথে কোনো কথা বলবে না একদমই না, এবার যা কিছুই হয়ে যাক না কেন,,,,, তাই সে ঘাপটি মেরে নিজের মুখে তালা এঁটেছে শক্ত ভাবে,,,,
.
রিদ মায়াকে চুপচাপ থাকতে দেখে আর মায়াকে কোনো রকম কথা বলতে না দেখে কঁপাল কুঁচকে এলো রিদের, হঠাৎ করে মায়া অদ্ভুত আচরণে রিদ সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আবারও প্রশ্ন করে উঠে…..
.
—” কি সমস্যা বলবে তোহ,,,
.
রিদ কথায় মায়া রিদের দিকে এক পলক তাকিয়ে আবারও নিজের মতো করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে,, এতে করে রিদ খানিকটা বিরক্তি নিয়ে শক্ত গলায় বলে উঠে,,,,
.
—” কি হয়েছে বলবে তো রেররর বাবা,, আর এখানে কি করছো তুমি,,, তোমার নাহ ছাঁদের থাকার কথা ছিল সবার সাথে,,, (তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
.
রিদের এমন ঝাঁজালো কন্ঠ কথা শুনে খানিকটা ভড়কে যায় মায়া, অসহায় দৃষ্টিতে রিদের দিকে তাকিয়ে থেকে আস্তে করে বলে উঠে,,,,
.
—” আপনি তো আমাকে এই রুমে চুরি করে এনেছেন,, তারপর আবার আমাকে নিচের ধাক্কা দিয়ে পেলেও দিয়েছেন,,, আমি হাতে ব্যাথা পেয়েছি তো,,, আবার আপনিই আমাকে বকা দিচ্ছেন, আমি তো আমার রুমে যাচ্ছিলাম গোসল করতে, কিন্তুু তার আগেই আপনি আমাকে চুরি করে নিয়ে এলেন,,,
.
মায়ার কথা শুনে রিদ মূহুর্তেই চমকে উঠে,,, সেতো মায়াকে এখানে নিয়ে আসিনি,,, তাহলে কে এনেছে, রিদ কিছু একটা ভেবে দ্রুত গতিতে দৌড়ে দরজার দিকে ছুটে যায়,, আশেপাশে চঞ্চল দৃষ্টিতে তাকিয়ে কাউকে খুঁজে চলছে, কে মায়ার ক্ষতি চাই, কে মায়াকে তার রুমে ধরে এনেছে,,, কেউ তো চাই মায়াকে রিদ থেকে দূরে রাখতে, কিন্তুু কে সে,,, কার এতো সাহস যে তার বউকে ছুয়ে দেখার চেষ্টা করতে চাই,,, তার কলিজা টা তো মেপে দেখবেই রিদ,,, আশেপাশে কাউকে খুঁজে না পেয়ে রিদ নিজের ফোন বের করে আসিফ কে কল দিয়ে কিছু একটা বলে, একঝাক রাগ নিয়ে আবারও রুমে দিকে পা বাড়ায়,,,
.
নিজেকে শান্ত করে মায়ার দিকে এগিয়ে আসে রিদ, খানিকটা থেমে মায়াকে ভালো করে পযবেক্ষন করে নেই,, পরে মায়ার হাতে কাটা দাগটা দেখে চেয়াল শক্ত হয়ে ওঠে রিদের সাথে সাথে,,, দ্রুততা সঙ্গে মায়ার হাত নিজের কাছে টেনে নেয় শক্ত ভাবে, মায়াকে রেগে কিছু বলবে ভেবেও থেমে যায় রিদ, কারণ মায়াকে কিছু বলা বেকার, সেতু নিজেই জানে না তার সাথে আসলে কি হয়েছিল,,, রিদ সবটা বুঝতে পেরে কিছু একটা ভেবে মায়ার দিকে কিছুক্ষন শান্ত ভাবে তাকিয়ে থেকে মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,,,,
.
—” যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাউ তুমি,,, আজকে তুমি আমার সাথে আমার রুমে থাকবে,,, তাই কোনো বাহানা না করেই গোসল করে এসো আমি তোমার জন্য খাবার আনছি,,, আর এই রুম থেকে যেন তোমাকে বের হতে না দেখি রিত,,, তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে বলে আমার মনে হচ্ছে না,, so be careful…..
.
কথা গুলো বলেই মায়াকে কোনো কিছু বলতে না দিয়ে কোলে তুলে নিয়ে ওয়াশরুমের দরজার দিকে পা বাড়ায় রিদ,, মায়াকে সাওয়ার নিচে দাঁড় করিয়ে বাম হাতে পানির টেপ ছেড়ে দিয়ে বাহিরের চলে আসে রিদ,,, শরীরটা তার রাগে রি রি করছে,, তার কলিজায় হাত দেয়ার মানুষটাকে এমনি এমনি ছেড়ে তো দিবে না সে, কিন্তুু তার আগে তার রিতকে সেইভ করতে হবে যে কোনো মূল্যে,,, তাই আজকে রাতটা রিতকে তার সাথে রাখবে যাতে আর কোনো ক্ষতি করতে না পারে,,,,
.
যদি রিদ তখন নিজের রুমে না থাকতো তাহলে কি হতো তা বাচ্চা বউয়ের,, মায়াকে হলুদ ছুয়ে নিজের রুমে এসেছিল গোসল করতে, পরে গোসল করা শেষ করে বাহিরে বের হওয়ার জন্য তখনি দরজা খুলতেই কিছু পরার শব্দ কানে আসতেই চমকে উঠে দ্রুত এগিয়ে আসতেই চোখ পরে মায়াকে ফ্লোরে উপুড় হয়ে পরে থাকতে দেখে সাথে সাথে মায়াকে টেনে নিজের সামনে দাঁড় করায় এবং সবটা জানতে চাই,,, মায়ার বেখেয়ালি আচরণ আর কথায় রিদ সবটা বুঝতে পারে নিজের মতো করে তাই সে মূহুর্তেই চুপ হয়ে যায়,,,,
.
রিদ মায়ার জন্য সার্ভেন্ড দিয়ে খাবার এনে রুমে বসে আছে সেই কখন থেকে,, কিন্তুু মায়ার ওয়াশরুম ভেতর থেকে বের হওয়ার নামই নিচ্ছে না,, রিদ বেশ কিছুক্ষন সময় নিয়ে বসে থেকে কপাল কুচকে তাকায় ওয়াশরুমের দরজা দিকে, ব্যাপারটা তার মোটেও ভালো ঠিকছে না,, সেই কখন থেকে মেয়েটা ওয়াশরুমের ভেতর অথচ ভেতর থেকে পানি পরা বা কোনো রকম নড়াচড়া শব্দ কানে আসছে না তার,,, ব্যাপারটা তার কাছে বেশ অদ্ভুত লাগছে,, আর তার সেই অদ্ভুত হওয়া ধাপটা এড়াতে ধীর পায়ে উঠে এগিয়ে যায় ওয়াশরুমের দরজা দিকে,,, পরে ওয়াশরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আস্তে করে টুকা দিয়ে চিন্তা বলে উঠে,,,,,
.
—” বউ, ওহ বউ,, বউ কি আমার ঘুমিয়ে পরেছে ওয়াশরুমে,,
.
রিদের কথায় মায়া কোনো নড়াচড়া না দেখে বেশ চিন্তায় পরে গেল রিদ,, মেয়েটা যেখানে সেখানে এমন উদ্ভট কাজ করে বেড়ায় কিভাবে আল্লাহ জানে,,, এতটা পাগলামো না করলে কি হয় না মেয়েটা,,, মেয়েটা এমন অদ্ভুত আচরণে মরেছে সে বারবার, শেষে তার মতো মানুষকে বাঁধ্য করছে এই মেয়েটা সামনে ঝুঁকতে,,, আর কি চাই মেয়েটা, এখন কি তার কলিজা ছিঁড়ে খাবে মেয়েটা,, এতোটা ঝালায় কেন মেয়েটা তাঁকে,,,, সেও আর ছাড় দিবে না এই মেয়েকে, তাঁকে পুড়াবে সেও তার বউকে পিষে ফেলবে নিজের সাথে, তারপর ছাড় দিব না একদমই না,,, বউ তার একদম আদুরে আদুরে ভরিয়ে দিবে সে,,, কথা গুলো একমনে ভেবেই রিদ আবারও দরজা আস্তে করে টুকা দিতে লাগে বারবার, আর আদুরে সুরের বলে উঠে……..
.
—” বউ, স্বামী তোমার বড্ড টেনশন করছে তোমাকে নিয়ে তাই ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসো সোনা,,,
.
এবার মায়ার কোনো হেলদোল না দেখে রিদ খানিকটা বিরক্তি নিয়ে ঝাঁজালো কন্ঠে বলে উঠে…..
.
—” কিরেহ বাবা, কি হয়েছে বলবে তো আমায় নাকি,,, এই ভাবে ওয়াশরুমের ঘাপটি মেরে বসে থাকার কোনো মানে তো দেখছি না আমি……
.
রিদ এমন ঝাঁজালো কন্ঠে কথা শুনে মায়া ওয়াশরুমের ভেতর থেকে ভয়ে ভয়ে আস্তে করে বলে উঠে…..
.
—” কি পরবো আমি কাপড় নেই তোহ আমার এখানে,, এজন্য তো আমি এখানে বসে আছি,,, আপনি বুঝতে পারছেন না কেন……
.
মায়ার কথায় রিদ স্বঃস্থির নিশ্বাস ফেলে যাক বউ তার ঘুমায় নি তাহলে,,, কিন্তুু কাপড় বিষয়টি কিছু না ভেবেই রিদ নিজের কর্বাট থেকে একটা টি-শার্ট আর একটা টাউজার এনে আবারও ওয়াশরুমের দরজা নক করে,, আদুরে সুরের বলে উঠে……
.
—” বউ তোমার কাপড় এনেছি ধরো… দরজা খুলো সোনা….
.
রিদের এমন আদুরি মাখা টাইপ কথা শুনে মায়া মূহুর্তেই বোকা বনে যায়, কারণ মায়া কখনোই রিদের এমন আচরণে সাথে পর্ব পরিচয় নয়, তাই বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকে, পরে আবারও রিদের আওয়াজ কানে আসতেই মায়া ধীর পায়ে দরজা খুলে হাত বাড়িয়ে রিদ থেকে কাপড় গুলো নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখে কনফিউজড হয়ে রিদকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে……
.
—” আপনি আমাকে ভুলবাল কাপড় দিয়েছেন তোহ,,, এই গুলা আমার কাপড় নাতো….
.
—” জানি আমি,,, বাট আজকে রাতটা এটা পড়ে নাও বউ,, তোমাকে একা ছাড়তে পারবো না তাই আজ এটা পরে থাকো তুমি….
.
—” এতো বড় বড় কাপড় গুলা পরবো আমি….
.
—” হুমম, কোনো কথা নয়, ঝটপট পরে বাহিরে আসো….
.
বলেই রিদ চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই আবারও মায়া ভিতর থেকে বলে উঠে…..
.
—” কিন্তুু আমার তো চার কাপড় লাগে, আর দুটো কাপড় কই….
.
মায়ার কথায় রিদ ভ্যাবাচ্যাকে হয়ে যায় মূহুর্তেই, নিজের দুই কাপড় পযন্ত ঠিক আছে বাট বাকি দুই কাপড় এই মেয়ে জন্য কোথায় থেকে আনবে সে,,, আর এই মেয়ে কবে বুঝবে এইসব বিষয় গুলো… রিদ খানিকটা ইতস্তত বোধ করে বলে উঠে…..
.
—” দুই কাপড়ই পড়ে নাউ না সোনা,,, তোমার বাকি দুই কাপড় আমার কাছে নাই তো…
.
—” আমি দুই কাপড় পরবো না, আমার চার কাপড় চাই, একটা ছোট কাপড় সাথে একটা বড় উরনা লাগবে আমার…. (জেদ সুরে)
.
মায়ার ছোট কাপড় মানে বুঝতে পেরে রিদ খানিকটা ইতস্তত বোধ আমতা আমতা করে বলে উঠে…..
.
—” জান, আমার কাছে তোমার ছোট কাপড় নেই তো,, তাই তোমার পরা ছোট কাপড়টাই পরে থাকো আজকের রাতে জন্য,,, আমি তোমাকে পরে অনেক গুলা ছোট কাপড় এনে দিব কেমন….
.
—” কিন্তুু
—” আমার বউ ভালো…
.
—” আচ্ছা,,,
.
মায়া রিদের কথা মতো বিনা বাক বয়ে সুন্দর করে রিদের দেওয়া কাপড় পরে বাহিরে এসে দাঁড়ায়,, নিজ থেকে একগুণ বড় কাপড় পরে মায়া কোনো রকম টাউজার পা দুটো দুই হাতে আঁকড়ে ধরে রেখেছে, আর গায়ে দুগুণ ডিলার টি-শার্টটি হাঁটু নিচ পযন্ত ঠেকেছে, রিদ মায়াকে এক পলক ওপর থেকে নিচ পযন্ত দেখে ঠোঁটে কামড়িয়ে হেঁসে বলে উঠে………
.
—” সেই, বউ তো আমার আমিতে হাবুডুবু খাচ্ছে,,,, এবার তুমিতে আমি আমি লাগছি গো বউ,,,,,
.
মায়া রিদের কথা শুনে কিছু না বলে একবার নিজেকে দেখে নিয়ে গাল ফুলিয়ে ঠোঁট উলটিয়ে অসহায় ফেস করে তাকিয়ে থাকে রিদের দিকে,,, রিদ মায়াকে গাল ফুলাতে দেখে ঝটপট করে কোলে তুলে দেয় নেয়,,,
.
আকস্মিক ঘটনায় মায়া ভয় পেয়ে রিদের গলা জরিয়ে ধরে,, পরে নিজের হাত পা ছুটাতে ছুটাতে থাকে রিদ থেকে নিজেকে বাঁচানো জন্য,,, কিন্তুু নিজের কাজে সফলতা অর্জনে করতে না পেরে রিদের কোলে চুপ করে বসে থাকে,,, রিদ মায়াকে কোলে করে নিয়ে সোফা ওপর বসে পরে মায়াকে কোলে ওপর বসিয়ে একহাতে আঁকড়ে ধরে অন্য হাতে মায়াকে নিজের হাতে মুখে খাবার তুলে দেয় যত্ন করে…..
.
আজ রিদ তার রিতকে এতোটা কাছ থেকে আজ প্রথম পেয়েছে আর সেটা সে কখনোই বিফলে যেতে দিবে না,,, তার সবটাই চাই তার রিত থেকে,,, তাই আজ সে সেটাই করবে যেটা সে করতে চাই…….
চলবে………………