#দেওয়ানা(আমার ভালোবাসা)
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৫৬
🍂
থমথমে পরিবেশ সবাই চুপ কেউ কোনো কথা বলছে না, আর আমি ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে চলছি, উনি নিজের করা প্রশ্নের উত্তর না পেরে খানিকটা রেগে উচ্চ স্বরে বলে উঠে,,,,,,
.
—” আমার রিতকে মারলো কে জানতে চাইছি আমিমমম,,,,,
.
উনার এমন করে জোরে চেঁচানো ফলে সবাই খানিকটা কেঁপে উঠে, নিস্তব্ধ পরিবেশে কোনো শব্দের উৎস নেই, এমন নিস্তব্ধ শব্দ বিহীন পরিবেশে আম্মু সতেজ গালায় বলে উঠে,,,,
.
—” আমি মেরেছি ওকে, ওহ মারের কাজ করেছে তাই মেরেছি, ওহ প্লেটটা কেন ভাঙলো,,,
.
আম্মুর এমন কথা শুনে ভ্রুঁ কুঁচকে তাকায় উনি পরে শান্ত ভাবে আম্মুকে এক পলক তাকিয়ে থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে আমার ওপর নিক্ষেপ করে, আমার দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে আবারও আমার গাল টেনে এপাশ-ওপাশ করে ভালো ভাবে দেখে, ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন ফিরে মালার দিকে তাকায় পরে মালাকে উদ্দেশ্য করে কপাল কুঁচকে বলে উঠে,,,,
.
—” মালা এই বাড়ির যাবতীয় প্লেট আমার সামনে হাজির কর যাহতো,,,,
.
উনার এমন কথা শুনে আমি কান্না অফ করে বোকার মতো উনার দিকে তাকিয়ে আছি, উনি হঠাৎ এতো প্লেট কেন চাইছে, আর বিয়ে জন্য তো আমাদের কোনো প্লেট লাগছে না সবতো ডেকোরেশন লোক গুলো দিচ্ছে তাহলে উনার কেন এতো গুলা প্লেট চাই,, আমি সহ উপস্থিত সবাই উনার এমন কথা শুনে বোকার মতো তাকিয়ে আছি,,, আর মালা উনার কথা শুনে এক পলক উনার দিকে তাকিয়ে থেকে আস্তে করে ধীর পায়ে বাকি সার্ভেন্ডকে নিয়ে চলে যায় কণার রুমে প্লেট আনতে যেখানে শাহী অর্গানিক সব কাঁচের জিনিসপত্র রাখা এই বাড়ির,,,,
.
বেশ কিছুক্ষণ মধ্যে মালা আর বাকি সব সার্ভেন্টরা মিলে উনার সামনে কয়েক হাজার বাহারী ডিজাইনে সচ্ছ শাহী কাঁচে প্লেট হাজির করে,,, আমি সহ ড্রয়িংরুমে উপস্থিত সবাই কৌতূহলী চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি, আম্মু দাদী ও উনার দিকে তাকিয়ে আছে কৌতুহলী হয়ে, উনি কেন এতো গুলো প্লেট এই মূহুর্তে চাই সেটা দেখের জন্য,,, উনি সব গুলো প্লেট এক পলক ভালো করে দেখে নিয়ে ভ্রুঁ কুঁচকে আবারও মালার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠে,,,,
.
—” এখানে সব আজে, বাকি নেই তো,,,
.
উনার (রিদ) এমন কথায় মালা মাথা ওপর নিচ নাড়িয়ে সুমতি জানিয়ে ভয়ে ভয়ে আস্তে করে বলে উঠে,,,,
.
—” জেঁহ ছোডু সাহেব সবিই আনচি বাহি নাই,,
.
মালা কথা শুনে এবার ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকায় পরে হাতে ইশারায় আমাকে ডেকে বলে উঠে,,,,
.
—” এদিকে এসো,,
.
উনার ডাকে আমার কোথায় হেলদোল হলো না আমি আগের নেয় টায় জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, উনার দিকে বোকার মতো তাকিয়ে থেকে,, উনি আমাকে জায়গায় স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে খানিকটা রেগে ঝাঁজালো গলায় আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,,,,
.
—” দাঁড়িয়ে থাকতে তোমাকে কে বলেছে, আসতে বলছি, আসছো না কেন,,,,
.
উনার এমন ঝাঁজালো কন্ঠে শুনে আমি খানিকটা ভয়ে কেঁপে ওঠি, আমাকে কেঁপে ওঠতে দেখে দাদী আমাকে আরও শক্ত করে জরিয়ে ধরে, পরে উনাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,,
.
—” রিদ কি করছিস এমনিতেই মেয়েটা ভয় পাচ্ছে, তুই আবার ওহ সাথে চেচাচ্ছিস কেন,,,
.
দাদীর কথা উনি দাদীর দিকে এক পলক তাকিয়ে থেকে নিজের দৃষ্টি আবারও আমার ওপর নিক্ষেপ করে এগিয়ে এসে শক্ত হাতে আমার একহাত চেপে ধরে নিয়ে প্লেট গুলোর সামনে দাঁড় করায় পরে শান্ত ভাবে বলে উঠে,,,
.
—” ততক্ষণ পর্যন্ত ভাঙবে তুমি যতক্ষণ না পর্যন্ত এই সব গুলো প্লেট শেষ হচ্ছে,,,
.
উনার এমন কথায় আমার চোখ বড় বড় হয়ে ওঠে মূহুর্তেই, এতো দামি দামি শাহী প্লেট ভাঙবো আমি অসম্ভব, আম্মু তো আমাকে কেটে কুচি কুচি করে জলে ভাসিয়ে দিবে, আম্মু কথা মাথায় আসতেই আমি ঘাড় ঘুরিয়ে আম্মু দিকে তাকায় আমার সাথে সাথে আম্মু চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে উনার দিকে, উঁহুম শুধু আম্মু একা নয় ড্রয়িংরুমে উপস্থিত সবাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে উনার দিকে,,, সবার এমন করে তাকানোটা অপেক্ষা করে আবারও আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,,
.
—” রিত তুমি যদি এই গুলো না ভাঙ্গো, তাহলে আই সয়ার আমি তোমাকে ভেঙ্গে দিব, তাই কোনো শব্দ না করে. Just finish it…..
.
উনার এমন শান্ত ভাবে কিলার হুমকিতে আমি ভয়ে কাচুমাচু করতে থাকি কি করবো কিছু ভেবে না পেরে আস্তে করে একটা প্লেট হাতে নিতেই পাশ থেকে আম্মু আমার হাত চেপে ধরে আমার হাত থেকে প্লেট নিয়ে নেয়, আম্মুকে প্লেট নিতে দেখে উনি খানিকটা কপাল কুচকে তাকায় আম্মু দিকে পরে আম্মুকে কিছু বলতে না দিয়ে উনি আসিফ কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,,,
.
—” আসিফ আমার জন্য হকিস্টিক নিয়ে আই যাহ,
আসিফ দ্রততা সঙ্গে বলে উঠে
.
—” জিই ভাই,
.
বলে আসিফ সাথে সাথে প্রস্হান করেন উনার জন্য হকিস্টিক আনতে খানিক বাদে দুটো হকিস্টিক নিয়ে হাজির হয় উনার সামনে, উনি একহাতে একটা হকিস্টিক হাতে নিয়ে অন্য হাতে আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে আম্মু পাশ থেকে উনার পাশে এনে দাঁড় করায়, পরে আমার একহাতে একটা হকিস্টিক তুলে দিয়ে উনার( রিদ)হাতে ও একটা হকিস্টিক তুলে নেই,,,
.
পরে দাঁতে দাঁত চেপে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,,
.
—” ধৈর্য জিনিসটা আমার মধ্যে ছিটা ফোটাও নেই,, তাই আর ধৈর্য ধরে সবার কাহিনি দেখার মতো সময় নেই আমার রিত, তাই তুমি চুপচাপ প্লেট গুলো ভেঙ্গে শেষ করো, প্লেট ভাঙবে তোহ তুমি ঠিক থাকবে নয়তো আমার হাতে থাকা হকিস্টিকটা তোমার মেরে শেষ করবো,,,,,
.
উনার কথা আম্মু আমার মূহুর্তেই চুপ করে যায়, আর উপস্থিত সবাই শুধু চুপচাপ দাঁড়িয়ে সবটা দেখছে কেউ কিছু বলতে পারছে না, কারণ যে কথা বলবে সেই ফেঁসে যাবে ব্যাপক ভাবে, তাই সবাই গোল গোল চোখে আমাকে পযবেক্ষন করছে বারবার হয়তো বুঝার চেষ্টা করছে উনার সাথে আমার কি সম্পর্ক হতে পারে উনি কেন আমাকে নিয়ে এতটা অস্থির, উনার মতো মানুষ যেখানে সবাইকে এড়িয়ে চলে সেখানে সে নিজেই জরিয়ে আছে তাও মেয়েলি ব্যাপারে কথা ভেবেই সবার কপাল কুচকে এলো, তাই গোল গোল চোখে একবার আমার দিকে তো একবার উনাকে পযবেক্ষন করেই চলছে,,, আমি উনার ভয়ে সবার এমন নজর অপেক্ষা করে হকিস্টিক তুলে ভারি বাসায় প্লেট এর ওপর,, সাথে সাথে দুই একটা প্লেট ভাঙে যায়,, প্লেট ভাঙতে পেয়ে খুশি হয়ে উনার দিকে তাকায়, উনি আমাকে উনার দিকে তাকাতে দেখে চোখ ইশারায় বাকি প্লেট গুলোর ভাঙতে বলে,,,,
.
আমি উনাকে এক পলক দেখে উনার ইশারা মতোই হাজার খানিক প্লেট থেকে আরও শত খানিকটা প্লেট ভেঙে ফেলি, পরে কান্ত হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে থাকে আস্তে করে বলে উঠে…..
.
—” আর পারছি না তো, কান্ত হয়ে পরেছি আমি,,,
.
আমার এমব কথা শুনে উনি নিজের মতো করে হকিস্টিক তুলে বাড়ি বসায়া প্লেট এর ওপর, পরে নিজের মতো করে প্লেটের ওপর একেক করে কয়েক শত প্লেট ভেঙে চোখ তুলে আসিফ এর দিকে তাকিয়ে বলে উঠে বাকি গুলো ভেঙে শেষ করতে,,,, বলেই উনি আমার আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,,,
.
—” আশা করি আপনি নেক্সট টাইম আমার রিতকে আঘাত করার চেষ্টা করবেন না। আপনি মা হিসাবে মারলেও মেনে নিব না আমি,, আর যদি এমন সব সামন্য বিষয়ে হয়, তাহলে তো কখনোই মেনে নিব না আমি, তারপর ও যদি আজ মেরেছেন যদি আবারও মারেন তাহলে আজ যা করেছি তার তিন গুণ করবো আমি, সবকিছু ভেঙে গুলিতে দিব আমি,,,
.
কথা গুলো বলেই কাউকে কোনো সুযোগ না দিয়ে আমাকে টেনে মূহুর্তেই কোলে তুলে হনহন করে চলে যেতে লাগলো নিজের রুমের দিকে,, আকস্মিক ঘটনায় আমি চমকে উঠে সাথে সাথে উনার গলা জরিয়ে ধরি পরি কি হয়েছে বুঝতে পেরে ভয়ে হাত পা ছুটাতে লাগি উনার থেকে বাঁচার জন্য, কিন্তুু আমার এমন করে ছুটানোতে ও বিশেষ কোনো কাজ হলো না, উনি শক্ত হাতে আমাকে কোথায় নিয়ে হেঁটে যেতে লাগলো,,,, আর পিছন থেকে সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে আমাদের যাওয়ার দিকে,,,,,,
চলবে…………..