#দেওয়ানা (আমার ভালোবাসা)
#লিখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৪১
🍂
দাদী সাথে মার্কেটে ঘুরঘুর করছি আমি,,, বাকি সবাই যার যার মতো শপিং করায় ব্যস্ত থাকলেও, আমার মাঝে নেই কোনো রকম ব্যস্ত ,,, আমি এক মনে সবাইকে পযবেক্ষন করে চলছি মলের এক পাশের চেয়ার টায় পা ঝুলিয়ে বসে,,,, আমার দু’হাতে দুটো কোণ আইসক্রিম ধরা,, আর সামনে টেবিলে ওপর কতগুলো চকলেট, চিপস, রাখা আমার জন্য,,, দাদী আমাকে খাবার গুলো দিয়ে বসিয়ে গেছে নিহা আপুর শপিং করার জন্য,,,, আমরা সবাই একি দোকানে ভিতরে আছি, সবাই আমার সামনেই হয়েছে,,,, আমার দু-পা দুলাতে দুলাতে একহাতের আইসক্রিমটা খাচ্ছি আর অন্যহাতে আইসক্রিমটা ধরে রেখেছি,,,,,
.
বেশ মনোযোগ সহকারে আইসক্রিম খেতে খেতে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে আমার গুন্ডা স্বামীকে খুঁজে চলছি আমি,,, উনার খুঁজার একমাত্র কারণ হলো উনি (রিদ) নিজেই,,, কারণ বাসা থেকে বেড় হয়ে এখানে আসা অব্দি সম্পূর্ণ সময়টা উনি আমার সামনেই ছিল,,, যখন গাড়িতে বসেছি দাদা-দাদীর সাথে,,, তখন উনি নিজের গাড়ি ছেড়ে আমাদের গাড়িতে উঠে বসে পড়ে ড্রাইবার সাথে,,, আমি উনাকে আমাদের সাথে দেখে সাথে সাথে চমকে উঠে দাদীকে জরিয়ে ধরি উনার ভয়ে,,,, উনি সরাসরি আমার দিকে না তাকিয়ে গাড়ি ভিতরের আয়না তাকিয়ে দেখে নেয় এক পলক,,, সাথে সাথে দুজনের চোখাচোখি হয়,,, আমি ভয়ে চোখ নামিয়ে নেয়,,,, পরে পুরো রাস্তায় উনি (রিদ) বারবার আয়না দিকে তাকিয়ে আমাকে দেখছিলেন,,, সাথে আমিও,,, বেশ কয়েক বা আমাদের চোখাচোখি হলে, আমি চোখ নামিয়ে নিলেও উনি নামায় নি, বরং তাকিয়ে ছিল অপলক দৃষ্টিতে,,, উনার এমন দৃষ্টি মানে আমি বুঝতে পারিনি,, হঠাৎ করে উনার কি এমন হল যে আমাকে এভাবে দেখছে,,, এভাবে তাকিয়ে থেকে পরে নিজের সিটে কান্তি ভরা শরীরটা এলিয়ে দিয়ে আয়নায় তাকিয়ে ছিল এক দৃষ্টিতে,,,,
.
আমরা সবাই একসাথে মলে ভিতরের আসি উনি তখন আমাদের সাথেই ছিল,, কিন্তুু একটু পরেই কোথায় গেল তা আমি জানি না,, তার জন্য উনাকে আর দেখতে পাইনি আমি,,,, সেই জন্য উনাকে খুঁজে চলছি আমি,,, উনাকে কোথাও দেখতে না পেয়ে হতাশ চোখে নিজের মতো করে আইসক্রিমের কামড় বসাচ্ছি আর বারবার চারপাশে চোখ দিয়ে উঁকি ঝুঁকি মেরে উনাকে খুঁজছি একটু দেখার আশায়,,,, তখনি দেখি উনি আসিফকে কি যেন বলছে কোনো বিষয়ে, সম্ভত আমাদেরকে কড়রা গার্ড করতে বলছেন,,, আমি উনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম হঠাৎ করে কথা বলতে বলতে উনিও আমার দিকে তাকায় এবারও দুজনের চোখাচোখি হয়, আমার কি হল কি জানি আমি আমার চোখ না নামিয়ে উল্টো উনার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলাম অপলক দৃষ্টিতে,,, উনাকে কেন যেন আজ মন ভরে দেখতে ইচ্ছা করছে,,, মনে হচ্ছে এইটা আমার শেষ দেখা আর হয়তো উনাকে দেখতে পারবো না আমি,,, মনে মধ্যে এক অন্য রকম অস্থিরতায় ভুগছি,,,, তাই নিজের অস্থিরতা মেটাতে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম অপলক দৃষ্টিতে,,,
.
আমাকে এভাবে তাকাতে দেখে হঠাৎ কথা থেমে যায় উনার, ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে কিছু একটা ভেবে, আমার দিকে তাকিয়ে থেকে হাতের ইশারায় আসিফকে চলে যেতে বলে,,, পরে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে ধীর পায়ে এগিয়ে এসে আমার পাশের চেয়ার টার বসে পরে,,,, আমি তখনো ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে ছিলাম উনার দিকে,,,, উনি(রিদ) আমাকে এভাবে তাকাতে দেখে আমার পাশে বসে একটা হাত টেবিলে ওপর রেখে তাতে হালকা ভর দিয়ে ঝুকে অন্য হাতে টেবিল ওপর রাখা ছোট বলটা নিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে ভ্রু কুচকে বলে উঠে,,,
.
—” ম্যাডাম কি আমাকে পাগল বানানোর জন্য এভাবে তাকিয়ে আছেন মনে হচ্ছে হুম? এমনিতেই হাফ পাগল হয়ে আপনার পিছন পিছন এখানে চলে এসেছি,,, এখন কি পুরো পাগল বানানোর প্লানিংয়ে আছেন নাকি? মনে রাইখেন আমাকে পাগল বানিয়ে লাভ নেই। আমি পাগলহলে আপনাকেও শান্তিতে থাকতে দিব না দরকার হলে আপনাকে সাথে সাথে নিয়েই ঘুরবো তারপরও ছাড় দিব না।
.
উনার কথা শুনে আর উনাকে আমার পাশে বসে থাকতে দেখে চমকে উঠলাম আমি,,, উনি কখন এলো আমার পাশে,,, নিজের অস্থিরতায় নিয়ে উনাকে দেখার এতটাই ব্যস্ত ছিলাম যে উনি কখন আমার পাশে বসলো আমার খেয়ালই হয়নি,,, কিন্তু এখন উনাকে আমার পাশে দেখে ভিষণ ভয় করছে,,, ভয়ে জড়সড় হয়ে কাচুমাচু করে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি কেউ এসে আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার আশায়,,, হাতে দুটো আইসক্রিম খানিকটা গলে যাচ্ছে,,,, শুকনো একটা ঢুক গিলে আবারও উনার দিকে একটা পলক তাকিয়ে থেকে আস্তে করে উঠে দাঁড়াতে যাব তখনই উনি আমাকে সহ আমার চেয়ার টেনে উনার একদম উনার কাছে নেয়,,, উনার এমন কাজে আমি ভয়ে সিটিয়ে যায়,,, মুহূর্তে মনের মধ্যে একরাশ অস্থিরতা জেঁকে বসেছে,,, ভয়ে ঢুক গিলে ভিতু চোখে উনার দিকে তাকায় উনি আমার এমন অবস্থা দেখে আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে স্বাভাবিক ভাবেই আমার খাওয়া আইসক্রিমটা নিয়ে খেতে খেতে বলে উঠে,,,,,
.
—” এত পালাই পালাই করেন কেন ম্যাডাম,,,, স্বামী থাকতে অন্য কাউকে খুঁজেন সবসময় এটা তো খারাপ লক্ষণ আপনার। এবার থেকে স্বামী স্বামী করবেন আপনি ঠিক আছে। আচ্ছা যায় হোক আপনার শাড়িটা পড়া পযন্ত ঠিক ছিল,,, তবে এতটা সাজলেন কেন আপনি,,, এখন আপনাকে কি করা যায় বলুন তো ম্যাডাম,,,,
.
উনার এমন কাজে আমি ফ্রিজ হয়ে গেলাম,,, উনি আমার এঁটো আইসক্রিম খাচ্ছেন,,, উনাকে আমি যতটুকু জানি উনি কখনো ব্লেন্ড ছাড়া কিছু ব্যবহার করে না, আর খাবারের বিষয়ে এতটা সচ্ছ যে একি প্লেট দিয়ে দ্বিতীয় বার খায় না নোংরা লাগে বলে,, আর সেই উনি আমার মুখে খাবার খেল, ভাবতেই আমি শক্ট থেকে কোমায় চলে যাচ্ছি,,,, আমাকে এভাবে তাকাতে দেখে হালকা হাসলো উনি, পরে খানিকটা থেমে আবারও বলে উঠে,,,,
.
—” আপনি আজ এই শাড়িটা পড়ে অনেকটায় নাড়িয়েছেন আমাকে ম্যাডাম। তাই আজ আপনার সব ভুল মাফ করলাম। তবে রোজ রোজ করবো না কিন্তু। আপনার স্বামী যে ভালো মানুষ না সেটা তো জানেনই তাই কষ্ট করে আর না বললাম। তবে আপনার এইসব সাজ- সৌন্দর্য থাকবে শুধু আপনার স্বামীর জন্য, মানে আমার জন্য। আর আমি! আমার জিনিস কখনো কারো নজর পছন্দ করি না। আপনি নিজের মতো করে যতোটা খুশি সাজতে পারবেন তবে সেটা বাড়ির চার দেয়ালে বা আমাতে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে।( শান্ত ভাবে হুমকি দিয়ে)
.
উনার এমন কথায় আমি আরও ভয় পেয়ে যায়, কাপা কাঁপা স্বরে বলে উঠি,,,,
.
—” আমি দাদী যাব,, আপনাকে আমার ভয় লাগে,,, আমাকে দাদী যেতে দিন,,,,
.
আমার গুলো বলার সাথে সাথে উনি আমাকে জোরে ধমক দিয়ে বলে উঠে,,,,,
.
—” দাদী যাব কি হ্যা? বল স্বামী থাকবো। আজকে কোথাও যাওয়া হবে না তোমার,,, তোমাকে নিয়ে শপিং করবো আমি চল আমার সাথে,,,
.
বলে আমাকে টেনে দাড় করিয়ে আমার একহাত ধরে দু কদম এগিয়েও থেমে যায়,,, পরে আমার দিকে ঘুরে তাকায়,,, পরে আমাকে টেনে নিজের কাছে এনে আমার চুল গুলো দেখে ভ্রু কুঁচকায়, নিজের হাতে আমার চুল গুলো নিয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে সব গুলো চুল হাতে মুঠোয় করে কিছু একটা করতে চাইছে কিন্তুু বরাবর ব্যাথ হচ্ছে,,, আমার পুরো মাথার চুল এলোমেলো করে ফেলেছে তবুও উনি নিজের কাজে সফলতা অর্জন করতে পারেনি,,,, পরে কি করতে গিয়ে নিজের হাতে আমার সব চুল পেচিয়ে ফেলে সুতা পেচানোর মতো করে,,,, হতাশ হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আহত সুরে বলে উঠে,,,,,,,
.
—” চুল বাধে কিভাবে,,,? আমি পারছি না কেন,,,, যতবার পেচাচ্ছি ততবার সব গলিয়ে যাচ্ছে,,, সবটা আমার হাতে পেচিয়ে গেছে দেখ,,,,
.
উনার এমন করুন ফেস দেখে আমার কেমন জানি লাগছে,,, আজ এতকিছু এক সাথে হজম করতে পারছি না আমি,,, উনার হঠাৎ আমার সাথে ভালো হওয়াটা মেনে নিতে পারছি না আমি,,,, সবটা সপ্নের মতো লাগছে,,,, আচ্ছা আমি সবটা সহ্য করতে পারবো তো, হারিয়ে ফেলবো না তো কোনো কিছু,,, আমার এমন চিন্তা ভাবনায় মাঝে উনি আবারও চিন্তাত সুর সুরে বলে উঠে,,,,,
.
—” কি করি বলতো,,,, (চুল দেখতে দেখতে)
.
আমি উনার এমন কান্ড দেখে বোকা মতো তাকিয়ে আছি,,, পরে উনি আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আমার চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে,, আমার শাড়ি আঁচল দিয়ে আমাকে পেচিয়ে পেকেট বানিয়ে ফেলে,,, পরে একটা ডিজাইনার শো রুমে এনে একজন লেডিস্ ডিজাইনারকে দিয়ে আমার চুল গুলো বাধায়,,, মহিলাটি আমার চুল বাধার সময় উনি বেশ মনোযোগ সহকারে আমার চুল বাধা দেখছিল দাড়িয়ে,,, মহিলাটি আমার চুল গুলো বাধতে বাধতে উনাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,,,,,
.
—” স্যার ম্যাডাম তো দেখি ছোট,,,, কিন্তুু মন আর চোখ জোড়ানো সৌন্দর্য দিয়েছেন আল্লাহ ম্যাডামকে,,, এত সুন্দর চুল আমি কখনো দেখিনি,,, আর লম্বাও অনেকটাই একদম হাটুর নিচে পযন্ত টেকেছে ম্যাডাম এর চুল,,,, (মিষ্টি হেসে)
.
মেয়েটি কথা উনি শুধু হাসলো পরে আমাকে মেয়েটি সাথে পাঠায় ড্রেস দেখার জন্য,,, আমি শুধু বোকার মতো সবটা পযবেক্ষন করেই চলছি,,,, আর বুঝার চেষ্টা করছি যে কি এমন হয়েছে উনার যে উনি আজ এতটা স্বাভাবিক,,,,, নাকি বড় কিছু করা দান ধায় আছে,,,
চলবে………….