দেওয়ানা(আমার ভালোবাসা) #লিখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া #পর্বঃ_৪৪

0
667

#দেওয়ানা(আমার ভালোবাসা)
#লিখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৪৪
🍂
আরাফ খান ঠোঁট কামড়িয়ে নিজের কান্না আটকিয়ে রিদকে বসা থেকে টেনে দাড় করায়,,,, পরে সাথে সাথে রিদকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়,,,

.

রিদকে বুকে জরিয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে আরাফ খান,,,
নিজের সোনা বাবাকে কি বলে শান্তনা দিবে জানা নেই তার,,, নিজের ঠোঁট কামড়িয়ে কান্না চেপে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ক্রমাগত,,, কারণ এ মূহুর্তে রিদ শান্তনা দিবার মতো কোনো ভাষা তার কাছে নেই,,, তিনি নিজেরও এ মূহুর্তে বড্ড অসহায়,, তার সোনামাকে বাঁচানো যাবে কিনা তিনি নিজেরও জানা নেই,,,, যদি মায়াকে বাঁচানো না যায় তাহলে খান পরিবারের নেমে আসবে এক ঘোর অন্ধকার আর সেই অন্ধকারে নেতিয়ে যাবে তার পরো পরিবার,,, স্ত্রী, রিদ, আয়নকে, হারাতে হবে তাকে,,, তাদের প্রাণটা রয়েছে এই মেয়েটা মধ্যে,,, রিদ এতটা পাগলামো করবে ভাবতে পারেনি আরাফ খান,,, তিনি আরও আগেই বুঝতে পেরেছেন যে রিদ মায়ার প্রতি দূর্বল অনেকটা,,, কিন্তুু এতটা দূর্বল ভাবতে পারেনি তিনি,,, রিদ শক্ত মনের মানুষ হয়েও যদি এতটা পাগলামো করে তাহলে তার স্ত্রী কে কি করে বাঁচাবে,,,, মায়ার পরিবারকেই বা কি বলবে,,,
হসপিটালের আসার পরপরই মায়ার পরিবারকে জানানো হয়েছে মায়া এক্সিডেন্টে কথা,,, হয়তো এতক্ষণ বেড়িয়েও পড়েছেন ঢাকা উদ্দেশ্য,,,, সবটা কিভাবে সামলাবে, তিনি নিজেরও ভেঙে পরেছেন তার সোনামা অবস্থা দেখে, চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছা করছে কিন্তুু পারছে না কারণ তাকে এখন সবটাই সামলাতে হবে, বউ নাতিকে আগলে রাখতে হবে নয়তো বড় কোনো অঘটন ঘটতে পারে,,,, তাই তার নিজেকে শক্ত রাখতে হবে,,, আরাফ খানের এমন সব চিন্তা ভাবনায় মাঝে ডক্টর শামীম আবারও মায়ার অপারেশন সার্চলাইট থ্রিয়েটার থেকে বেড় হয়ে আসে হত্বম্ব হয়ে, পরিবেশটা একপলক চোখ বুলিয়ে নিজের জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে কিছুটা সাহস জুগিয়ে কাপা কাপা সুরে আরাফ খানকে বলে উঠে,,,,,

.

—” স্যার পেসেন্টর অবস্থা ভালো না,, ইমিডিয়েটলি অপারেশন সার্চলাইটের নিতে হবে,,, নয়তো আমার পেসেন্টকে ৫% ও বাঁচার শিওর দিতে পারবো না,,, উনার মাথা আঘাতটা একটু বেশি গভীর,,, তবে শরীরে তেমন কোনো আঘাত পাইনি,, হাতে পায়ে একটু লেগেছে মানে গাড়ির কাচ ভেঙে ডুকে গেছে আরকি,,, সেখানে আমারদের ডক্টর ব্যান্ডেস করে দিয়েছেন,,, কিন্তু পেসেন্ট মাথায়,,,,,,

.

বাকি কথা গুলো বলার আগে ডক্টর শামীম নিজের বাহু চেপে ধরে চিৎকার করে সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো,,,, ডক্টর হাতে গুলি করা হয়েছে তাই সে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো, আর ডক্টর সামনে অগ্নি রুপ নিয়ে দাড়িয়ে আছে রিদ, হাতে থাকা বন্ধুটা থেকে এখনো ধুঁয়া বেড় হচ্ছে,,, চোখ মুখ হিংস্রতা ফোটে উঠেছে,,, হঠাৎ করে রিদ ডক্টরকে শুট করে বসবে কেউ সেটা ভাবতেও পারিনি, মূহুর্তের সবার চোখে মুখে আতংক আর ভয় ছেয়ে গেল রিদের কাজে,, আর আরাফ খান স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, পাথরে মতো শক্ত হয়ে,,, তখনি রিদ রাগে গজগজ করতে করতে ডাক্তারে কলার চেপে ধরে উঠাতে উঠাতে বলে উঠে,,,,

.

—” কি রামলীলা কাহিনী শুরু করছিস রেরর ডক্টর,,, তুই বার বার আমার বউকে টিকেট দিচ্ছিস,,, তোকে বলেছিলামনা আমি টিকেট না দিতে শালার ব্যাটা তাও দিলি এবার নে আমি তোকে টিকেট দিয়ে দিচ্ছি এখনি,,, আর তোর কলিজাটা কতবড় রেহ ডক্টর, তুই আমার বউকে ছুয়ে ব্যান্ডেস করে দিলি, একটাবারও আমার কথা তোর মাথায় আসলো না হারামীবাচ্চা,,, তোর এই মাথাটায় ফোটো করে দিব আমি,,,

.

বলেই রিদ ডক্টরের কপালে বন্ধুকটা তাগ করতেই, পাশ থেকে একটি মেয়েলি কন্ঠ শুনে থেমে যায় রিদ,,,
ডক্টর রেবা দ্রুততার সাথে এগিয়ে আসে রিদের সামনে, পরে একটা শুকনো ঢুক গিলে নিজেকে স্বাভাবিক করে রিদকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,,,,

.
—” মিস্টার খান, ডক্টর শামীম আপনার বউকে ছুয়েও দেখেনি,, আমি ডক্টর শামীম এর সিনিয়র ডক্টর তাই আমি আপনার বউয়ের ব্যান্ডেস হাতে পায়ে ব্যান্ডেস করে দিয়েছি,,, আর আমি আপনার বউকে অবজারভেশন করে ফাইল রেডি করে ডক্টর শামীমকে পাঠিয়ে ছিলাম আপনাদের সাথে কথা বলতে, পেসেন্টকে তাড়াতাড়ি অপারেশন সার্চলাইটে নিতে হবে,,, কিন্তুু আপনি এ রকম পাগলামো করলে আপনার বউয়ের আরও ক্ষতি হবে,,, আমার আমাদের কাজ করতে পারবো না,,, আপনি বিষয়টা বুঝার চেষ্টা করুন প্লিজ আমাদের হাতে খুব কম সময় আছে,,,, আপনার যদি কোনো পুরুষ ডক্টর পছন্দ না হয় তবে আমাদের এখানে অনেক দক্ষও সিনিয়র মহিলা ডক্টর আছে তাদের নিয়ে আমি আপনার বউয়ের অপারেশন করবো তবুও আপনি নিজেকে শান্ত রাখুন,,,, আপনার শান্ত থাকাটা আমাদের জন্য অন্তত জরুরি,,, প্লিজ বুঝার চেষ্টা করুন,,,,

.

রিদ মহিলাটি কথা শুনে চোখ মুখ শক্ত করে তাকায় তার দিকে,,, পরে এক পলক মহিলাটির গলায় ঝুলে থাকা আইডি কার্ডটি দেখে নিয়ে পাশে থাকা চেয়ারটি তুলে স্বজোর আচার মারে ফ্লোরে পরে চিৎকার করে বলে উঠে,,,

.

—-” আমি কাউকে বিশ্বাস করি না,,, আমার রিত আমার কাছে থাকলে ঠিক হয়ে যাবে,, আমার রিতকে এক্ষুনি আমার কাছে নিয়ে আসুন,,, আমার রিত আমার কাছে থাকবে কোনো অপারেশন করা লাগবে না ওর,,, আমি এক্ষুনি নিয়ে যাব ওকে এখান থেকে লাগবে না ওর কাউকে আমার রিত আমার সাথে থাকবে,,,,

.

বলেই ত্যাড়ে যায় মায়ার কেবিনে দিকে, মায়াকে নিজের সাথে করে নিয়ে যাবে বলে,,,, রিদের এমন পাগলামো দেখে আরাফ খান দ্রুততার সাথে আসিফ আর আশিক কে বলে রিদকে আটকাতে,,, তারা আরাফ খানের কথা মতো সবাই মিলে রিদের দু বাহু, কমড়, ঘাড় শক্ত হাতে চেপে ধরে, যাতে করে রিদ ছুটতে না পারে,,,, কিন্তুু এতেও যেন রিদকে থামাতে পারছে না কেউ, রিদের শক্তি সাথে কেউ পেড়ে ওঠছেনা,, সবার সাথে দস্তাদস্তি হচ্ছে রিদের,, সবাই রিদকে যার যার মতো করে শক্তি দিয়ে টেনে আটকিয়ে রেখেছে,,, কারণ রিদ এ মূহুর্তে যেন বড্ড উন্মাদ হয়ে ওঠেছে তার রিত এর জন্য, তার মনে হচ্ছে সবাই রিদ থেকে তার বাচ্চা বউকে নিয়ে যেতে চাইছে,,, তাই সে নিজের হিতাহিত জ্ঞান হারায়ে ফেলেছে,,, তার শুধু একটা কথায় আমায় আসছে যে তার রিত তার কাছেই ভালো থাকবে,,, আর কারো কাছে নয়,,,,

.

আরাফ খান রিদকে আটকিয়ে ডক্টর রেবাকে দ্রততা সঙ্গে তাড়া দিয়ে বলে মায়াকে অপারেশন থ্রিয়াটারে নিয়ে যেতে আর ডক্টর শামীমকেও চিকিৎসা দিতে,,, ডক্টর রেবা দ্রুত নিজের মাথা নাড়িয়ে সুমতি জানিয়ে ডক্টর শামীমকে কয়েকজন নার্স দিয়ে অন্য কেবিনে পাঠায় চিকিৎসা জন্য,,,,, পরে তিনি একপলক রিদের দিকে তাকিয়ে ভয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে,,, আর মনে মনে ভাবে থাকে,,, যদি এই মেয়ে কিছু হয় তো কি তান্ডবলীলা ঘটবে কে জানে,,, রিদ যে কাউকে ছাড়বে না তা ভালো করেই বুঝতে পারছে তিনি,,, সত্য বলাতে এক ডক্টর এর ওপর গুলি করে বসে,,, আর যদি এই মেয়েকে বাঁচাতে না পারে তো তাদের সবার কি হবে,,,,

.
আর কিছু ভাবতে পারলো না ডক্টর রেবা,, ভয়ে দ্রুততা সঙ্গে মায়ার কেবিনে চলে যায়,,, পরে মায়াকে রেডি করে অপারেশন থ্রিয়েটার নিয়ে যাওয়ার জন্য বেড় করে রিদের সামনে দিয়ে নিয়ে যেতেই, রিদ মায়াকে শুয়া অবস্থায় দেখে আরও একধাপ পাগলামো বেড়ে যায় রিদের,,, রিদ সবার সাথে দস্তাদুস্তি করেই চলছে নিজেকে ছুটানো জন্য, আর সাথে প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করছে মায়ার জন্য,,,, সবাই সবটা শুধু স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে,,,

.

মায়াকে অপারেশন সার্চলাইটের নিয়ে যাওয়া পরপরই কেবিন দরজা লক করা হয়,, এতে করে আরও ক্ষেপে যায় রিদ,,, নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে
দৌড়ে মায়ার অপারেশন থ্রিয়েটার দরজায় জোরে জোরে ধাক্কাতে লাগে নিজের বাহু দিয়ে সাথে জোরে জোরে লাতিও মারতে থাকে কেবিনে দরজা ভাঙ্গার জন্য,,, আর নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে চিৎকার করতে থাকে,,, যে তার রিতকে তার কাছে দিয়ে দিতে, তারা কেন তার রিতকে নিয়ে যাবে,,, রিদের ধারণা সব ডাক্তারা মিলে তার বউকে কেবিনে ভিতরে মেরে ফেলবে, শুধু রিদই পারবে তার বউকে বাঁচাতে,,, তাই প্রচন্ড উত্তেজনায় চিৎকার করছে রিদ আর কেবিনে দরজা ধাক্কাচ্ছে,,,

.
আরাফ খান সবটা সয্য করতে না পেরে আবারও রিদকে টেনে চড় মারে,, রিদ চড় খেয়েও দমে যায়নি তার এ মূহুর্তে মায়াকে চাই-ই চাই,, তাই চড় খেয়েও আবারও এসে মায়ার কেবিনে দরজা ধাক্কাতে লাগে নিজের বাহু দিয়ে,,

.
আরাফ সবটা স্বাভাবিক রাখতে আর মায়ার অপারেশন এর যাতে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে তাই আবারও আসিফকে ইশারা করে রিদকে আটকাতে বলে,,, সাথে আসিফ সহ বাকি সব বডিগার্ডরা রিদকে আবারও টেনে ধরে রাখে,,,,

.
রিদ অনেকটাই হাঁপিয়ে উঠেছে সবার সাথে জোড়া জোড়ি করে,,, সাথে সারাদিনে কান্তি ভর করছে রিদের মাঝে, রিদ দুপুর থেকে কিছু খায়নি আর সারাটা দিন ব্যস্তায় পার করে বিকালে বাসায় এসেও, মায়াকে দেখে নিজের সব কান্তি ভুলে গিয়ে মায়ার পিছন পিছন ছুটে এসেছে শপিং মলে পযন্ত,,, কিন্তুু রাস্তায় অপ্রতাশিত ঘটনায়, আর রিদ নিজের মায়ার সাথে থেকেও নিজের বউকে প্রক্টেক করতে পারনি বাঁচাতে পারেনি মায়াকে এক্সিডেন্টে হওয়া থেকে, এতে করে রিদ আরও বেশি ক্ষপ্ত নিজের প্রতিও,,,, রিদ সবার সাথে জোড়াজুড়ি করতে করতে হাইপার হয়ে চিল্লিয়ে বলে উঠে,,,,,

.
—” I want her দাদাভাই, আমার ওকে লাগবেই,,,৷ আমাকে আমার রিত এনে দাও নয়তো আমি আর নিজের নিশ্বাসটা নিতে পারবো না,,,, i need her,,,
প্লিজ আমাকে এনে দাও আমার রিতকে,,,,,

.
কথা গুলো বলতে বলতে আস্তে আস্তে করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ার আগেই আসিফ সহ বাকি সবাই শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে রিদকে,,, রিদ প্রচন্ড মানসিক চাপ আর উত্তেজনায়, নিতে না পেরে জ্ঞান হারায়ে ফেলে,,,
রিদকে জ্ঞান হারাতে দেখে কান্না বরত অবস্থা এগিয়ে আসে, রিদের ফুপি, সাথে নিহা, ফিহা, ও ডলি,,, সবাই রিদকে ধরে কান্না করতে থাকে,,,,

.
আরাফ সবাইকে একপলক দেখে ওপর দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করে, নার্সকে বলে রিদকে কেবিনে শিপ্ট করতে বলে,,, পরে ডাক্তার রিদকে দেখে আরাফ খানকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,,,,

.

—” পেসেন্ট এর অবস্থা বেশি একটা ভালো না,,, উনি মানসিক ভাবে ভিষণ চাপ পেয়েছেন, তাই সেটা নিতে পারেনি প্রচন্ড উত্তেজনায় জ্ঞান হারায়,,, পেসেন্ট এর এখন ফোল রেস্ট দরকার, নয়তো উনাকে বাচানো যাবে না যদি উনি (রিদ) এমন ভাবে উত্তেজিত হতে থাকে,,,, উনি অনেকটা দুর্বল হয়ে পরেছেন তাই আমার উনাকে স্লাইন এর সাথে সাথে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দিচ্ছি তিন ঘন্টার আগে উনার ঘুম ভাঙাবে না,,,, আশা করি আপনি আমার কথা বুঝতে পেরেছেন,,,,,

.

—” জি ডক্টর বুঝতে পারছি,,, তবে আপনি রিদকে তিন ঘন্টা জন্য নয় চব্বিশ ঘণ্টা ঘুমের ইনজেকশন দিন,, কারণ রিদ ঘুম থেকে উঠে আবারও মায়ার জন্য পাগলামো করবে তখন রিদকে সামলানোর আমার জন্য দায় হয়ে পরবে,,,, তারপর আবার মায়া অবস্থা কখন কি হয় কিছু বলতে পারছি না,,, তাই আপনি রিদকে ঘুমের কড়া ইনজেকশন দিন যাতে চব্বিশ ঘণ্টা আগে না উঠে,,,,, (শান্ত দৃষ্টিতে বললো আরাফ খান)

.
ডক্টর আরাফ খানে কথা মতো রিদকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়,,, আরাফ খান এগিয়ে এসে রিদের মাথায় আদুরে একহাত বলিয়ে দিয়ে নিশ্চুপে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বেড়িয়ে যায় রিদের কেবিন থেকে,,,,

.

🍁
সবটা নির্রব দর্শকের পযবেক্ষন করে নিল ডলি,,,, ডলি মীর্জা কখনোই ভাবতে পারেনি রিদান খান মানে দেশে সবচেয়ে বড় বিজনেস ম্যান একটা সামান্য মেয়ে জন্য এতটা পাগলামো আর হাইপার হয়ে পড়বে,,, আর সবচেয়ে বড় কথা রিদ যে বিবাহিত সেটা সে আজকে শুনলো তাও রিদের মুখ থেকে,,, যাকে সে এতটা বছর ধরে ভালোবাসে এসেছে হঠাৎ করেই তার মুখ থেকে অন্য একটা মেয়েকে বউ বলে দাবি করায় কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না ডলি মীর্জা,,,, রিদের এতোটা পাগলামি দেখে ইচ্ছা করছে সবকিছু ভেঙে তচনচ করে ফেলতে,, মায়া নামক মেয়েটি নিজের হাতে হত্যা করতে,,,, আর তার রিদকে নিজের কাছে নিয়ে আসতে,,, তাই সে নিজের মনে মনে দোয়া করতে লাগলো যাতে মায়া নামক মেয়েটি জীবিত ফিরে না আসে রিদের জীবনে,,,

.

.
আরও কিছুক্ষনের পরে হসপিটালের হতভম্ব হয়ে দৌড়ে আসে আয়ন,,, আয়নকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে সে কতটা সাফার্র করে এসেছে এখান পযন্ত,,,,, চুল গুলো এলোমেলো হয়ে পরে আছে নিজের কপালে, শার্টের ইনটাও অগোছালো ভাবে বেড়িয়ে আছে পেন্টের থেকে, চোখ মুখ ফোলা ফোলা অনেকক্ষন কান্না ফলে যেমনটা হয় আরকি,,,, আয়নকে এমনতো অবস্থা দেখে চমকেয়ে উঠে আয়নের পরিবার,,,, তারা কখনোই আয়নকে এমন অবস্থায় দেখেনি কখনো, আর সবচেয়ে বড় কথা মায়ার জন্য এতটা ভেঙে পরবে সেটাও তাদের চিন্তা ভাবনা বাহিরে ছিল,,,,, কিন্তুু আরাফ খান চমকায়নি তিনি জানেন মায়ার প্রতি আয়নে ফিলিংসটা,,, তাই তিনি এক পলক আয়নকে দেখে বেঞ্চ মধ্যে বসে থাকে চুপ করে,,,,,

.
আয়ন প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে দৌড়ে এসে আরাফ খানের সামনে হাটু গেড়ে বসে, আরাফ খানের দু’হাত নিজের হাতে ভাজে নিয়ে কাপা কাঁপা গলায় বলে উঠে,,,,,

.

—” আমার মায়াপাখি কোথায় নানাভাই,,,, ওহ ঠিক আছে তো,,,,, এত কিছু কিভাবে হলো নানাভাই,,,, আমার মায়াপাখি কিছু হলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো, আমি কিছুতে আগুন লাগিয়ে দিব যদি আমার মায়াপাখি কিছু হয়,,,, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে নানাভাই আমি কি করবো এখন যাতে আমার পাখি একদম ঠিক হয়ে যায়,,,, ওকে না দেখে আমি আর থাকতে পারছি না,, তুমি বলে দাও আমি কি করবো এখন,,,, আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে,,, (কান্না করতে করতে বললো আয়ন)

.
আয়নে কথা শুনে আয়নকে উঠিয়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরে নিজের বুকের মাঝে,,, এ মূহুর্তে কিছু ভাবার সময় নেই আরাফ খানের,,,, এখন শুধু সবটা সামলাতে হবে তাকে নয়তো আয়নও রিদের মতো না পাগলামো করে বসে,,, অবশ্য আয়ন রিদের মতো অতটা উগ্র টাইপে না, আয়ন একটু বেশিই গম্ভীর টাইপের মানুষ, তাই আরাফ খান আয়নকে নিয়ে কিছুটা আশাহত যে আয়ন রিদের মতো এতটা পাগলামো করবে না,,, আবার শান্ত হয়েও বসে থাকবে না তাই তিনি সবটা বুঝে আয়নকে নিজের বুক মাঝে নিয়ে নেয় আর শান্তনা দেয় যে মায়া ঠিক আছে,,,, কিছু হয়নি,,,, আয়ন আরাফ খানের কথায় কিছুটা শান্ত হয়ে বসে পরে আরাফ খানের পাশে,,,, দু’হাতে নিজের মাথা চেপে ধরে,,,,,

.

,

🍁
টানা তিন ঘন্টা যাবত মায়া মাথার সার্জারী করেই চলছে ডক্টরা কিন্তুু কিছুতেই কিছু করতে পারছে না তারা,,,অপারেশন সাকসেসফুলি ভাবে করছে তারা কিন্তুু তারপরও মায়ার শারীরিক ভাবে নেতিয়ে পরছে ক্রমাগত,,,, এভাবে নেতিয়ে পড়লে হয়তো আর মায়াকে বাঁচালো যাবে না,,,, কিন্তুু পেসেন্ট যদি নিজের মতো করে বাঁচা আশা ছেড়ে দেয় তাহলে ডাক্তারাও বা কি করতে পারবে,,, ডক্টর রেবা ও বাকি সব সিনিয়র ডক্টরা মিলে অতি সাবধানতার সাথে মায়ার অপারেশন শেষ করে,,,, এতে করে টানা সাড়ে চার ঘন্টা সময় লাগে অপারেশন এ,,,, অপারেশন শেষ করে বেড়িয়ে আসে ডক্টর রেবা,,,, ডক্টর রেবাকে বেরোতে দেখে এগিয়ে আসে সবাই,,,, ডক্টর রেবা সবাইকে একপলক দেখে রিদকে কোথাও দেখতে না পেয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বলে উঠে,,,,

.

—-” মিস্টার খান,,, আমাদের অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে, সফলভাবে সার্জারী করেও তেমন সফল হতে পারেনি আমরা,,, কারণ পেসেন্ট মাথা আঘাতটা অনেকটা গভীর,,, তাই পেসেন্টের বাহাত্তর ঘন্টা মধ্যে জ্ঞান না ফিরলে আমাদের সত্যি কিছু করার থাকবে না,,,, আমরা পেসেন্টকে অবজারভেশনে রেখেছি ৭২ ঘন্টার জন্যে,,,,, প্লিজ অন্তত আপনি আমাদের বুঝার চেষ্টা করুন,,,, মৃত্যুটা কারো হাতে নেই আমরা শুধু আমাদের সাদ্দ মতো চেষ্টা করছি বাকিটা আল্লাহ ইচ্ছা,,,,, আপনারা আল্লাহকে ডাকুন প্লিজ,,,, তিনি একমাত্র ভরসা,,,,,

.

বলেই ডক্টর রেবা নিজের জায়গায় দ্রুত ত্যাগ করেন,,, বলা তো আর যায় না আবার কখনো কে গুলি করে বসে তাই তিনি যতা সম্ভব নিজের কেবিনে দিকে ছুটে একপ্রকার পালিয়ে যায়,,,,,

.

মায়ার অবস্থা কথা শুনে সবাই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কারো মুখে কোনো কথা নেই,,, আয়ন সবটা শুনে ধুপ করে ফ্লোরে বসে পরে,,,, আর আরাফ খান এবার নিজেই ভেঙে পরেছেন এই ভেবে যে কিভাবে সামলাবে নিজের স্ত্রী, ও নাতিকে (রিদ),,,, বউ তার যেমন তেমন কিন্তুু রিদ আজকে যা করেছে মায়ার জন্য তারপর তাকে সামলাতে পারবে তো যদি মায়ার কিছু হয়,,,,

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here