#দেওয়ানা(আমার ভালোবাসা)
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৫৭
🍂
কথা গুলো বলেই কাউকে কোনো সুযোগ না দিয়ে আমাকে টেনে মূহুর্তেই কোলে তুলে হনহন করে চলে যেতে লাগলো নিজের রুমের দিকে,, আকস্মিক ঘটনায় আমি চমকে উঠে সাথে সাথে উনার গলা জরিয়ে ধরি পরি কি হয়েছে বুঝতে পেরে ভয়ে হাত পা ছুটাতে লাগি উনার থেকে বাঁচার জন্য, কিন্তুু আমার এমন করে ছুটানোতে ও বিশেষ কোনো কাজ হলো না, উনি শক্ত হাতে আমাকে কোলে নিয়ে হেঁটে যেতে লাগলো,,,, আর পিছন থেকে সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে আমাদের যাওয়ার দিকে,,,,,,
.
আমার গুণধর স্বামী আমাকে শক্ত হাতে কোলে নিয়ে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো, আমি উনারকে নিজের রুমে দিকে যেতে দেখে আরও অনেক বেশি করে নিজের হাত পা ছুটাতে লাগি নিজেকে উনার হাত থেকে জন্য, কিন্তুু তাতেও রকম রক্ষা পাচ্ছি না আমি,, উনি আমাকে নিয়ে নিজের রুমের দরজা সামনে দাঁড়িয়ে পরে কিন্তু রুমেটি বন্ধ থাকায় বাঁধ্য হয়ে আমাকে নামিয়ে দেয় আর হাত বাড়িয়ে একহাত দিয়ে আমার একহাত শক্ত করে চেপে ধরার আগেই আমি সেই সুযোগ বুঝে উনার হাত থেকে পালানোর জন্য দৌড় লাগায় হিচকে উল্টো দিকে,,,
.
আকস্মিক ঘটনায় তাল সামলাতে না পেরে চমকে উঠে উনি তা আমি না তাকিয়েই বুঝতে পারছি, আমাকে ধরার জন্য হাত বাড়ায় কিন্তু তার আগেই আমি দৌড়াতে লাগি উল্টো দিকে, উনিও আমার পিছন পিছন কিছুটা পথ দৌড়িয়ে এসেও আমাকে ধরতে না পেরে থেমে যায় উনি পরে পিছন থেকে খানিকটা চিৎকার করে বলে উঠে,,,
.
—-” কাজটা তুমি ঠিক করলে নাহ রিত, তুমি পালিয়ে যাবে কোথায় তুমি আমাতে সীমাবদ্ধ, তোমার রাস্তাটা আমি নিজেই তাই ঘুরেফিরে তোমায় আমাতেই হাটতে হবে, এখন পালিয়ে যাচ্ছো নেক্সট টাইম কিভাবে পালাও আমিও দেখবো, আমাকে জ্বালিয়ে তুমিও শান্তি পাবে না নাহহহহ, আমি তোমাকে থাকতে দিব নাহহহ
.
উনার এমন সব কথা শুনে আমার দৌড়ানোটা থেমে যায় মূহুর্তেই আমি স্থির হয়ে আসি, উনি যে কি কি করতে পারে সবটাই আমার জানা, এবারও আমার সাথে ভয়াবহ কিছু করবে নাতো, উনি কি কিছু চিন্তা করে রেখেছে আমার জন্য, আচ্ছা উনি আমাকে ছেড়ে যাবে নাতো, ছেড়ে যাওয়ার কথা মাথায় আসতেই মূহুর্তেই আমি চমকে উঠি, আচ্ছা উনি যদি ডলি আপুর জন্য আমাকে ছেড়ে দেয় তোহ আমি কি করবো, আমি থাকতে পারবো তো উনাকে ছাড়া, এমন সব কথা মনে আসতেই কলিজা কেঁপে ওঠে আমার তার সাথে সাথে চোখও ভরে আসে মূহুর্তেই, টলমলে চোখে আমি সামনে দিকে তাকাতেই চোখে পড়ল দাদী খানিকটা দৌড়ে আসছে আমার দিকে সিঁড়ি বেয়ে ওপর দিকে আমার সামনে এসে দাড়িয়ে পরে আমাকে নিজের বুকে মধ্যে চেপে ধরে হাঁপিয়ে ওঠা কন্ঠে উত্তেজিত হয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,,,,
.
—” তুই ঠিক আছিস তো সোনামা, রিদ তোকে কিছু করেনি তো,
.
কথা গুলো বলেই দাদী আমাকে নিজের বুকের থেকে উঠিয়ে আমার দুগাল নিজের দুহাতে আঁকড়ে ধরে আমাকে ভালো করে দেখে নিয়ে আবারও আদুরে সুরের বলে উঠে,,,,,,,
.
—” আজ যা হয়েছে তার জন্য সরি রেহ সোনামা, আর হবে না এমনটা আমি তোকে আঁকলে রাখবো সবকিছু থেকে, আর আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবি নাহ একদমই আমার সাথে সাথেই থাকবি তুই, আমি চাই না আজ যেটা হয়েছে সেটা বারবার হুক,,,
.
বলেই দাদী আমার চোখে পানি মুছে দেয় নিজের হাতে, আমি দাদীর কথায় মাথা নাড়িয়ে সুমতি জানায় যে দাদীর সাথে সাথেই থাকবো কথাও যাব না, দাদী আমার সুমতি পেয়ে হাসি মুখে আমার এক হাত চেপে ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো নিজের সাথে, আমি দাদী পিছন পিছন যেতে লাগলাম চুপচাপ, দাদীর সাথে যেতে যেতে আবারও ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন ফিরে তাকায় উনাকে দেখার জন্য, উনি আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চোখ মুখ এক অচেনা দৃষ্টি উনার এমন দৃষ্টির মানে এই মূহুর্তে আমি বুঝতে পারছি না,, তাই উনার থেকে আস্তে করে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেই,, কেন জানি সবটা ঘোলাটে লাগছে আমার কাছে, সবকিছুই চেনে তার পরও সবকিছুতে বড্ড পর পর ভাব,,, অদৃশ্য বেড়া জালে আটকে পরে আছি আমি,,,
.
.
🍁
খানিটা রেগে দাঁড়িয়ে আছে ফিহা, তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আরিফ চোখে মুখে তার একরাশ বিরক্তি ফুটে ওঠেছে তা আরিফকে দেখেই বুঝতে পারবে ফিহা, কিন্তুু আরিফের বিরক্তি লাগা ভাবটা অপেক্ষা করে নিজের রাগটা জারতে এসে ফিহা, কারণ কাল রাতে আরিফ আসার পর থেকেই ফিহা তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেই যাচ্ছে কিন্তুু আরিফ তাকে বরাবরই এড়িয়ে চলছে তাঁকে কথা বলার কোনো সুযোগই দিচ্ছে না, তাই বাধ্য হয়ে আরিফের পথ আটকিয়ে দাড়িয়ে ফিহা, যায় হোক না কেন এই মূহুর্তে কথা বলেই দাম নিবে ফিহা তার আগে নয়. ফিহা রেগে চাপা সুরে ভ্রুঁ কুঁচকে বলে উঠে,,,,
.
—-” কি সমস্যা
.
—” তোমার কি সমস্যা আমি কি করে বলবো… (বিরক্তি নিয়ে)
.
আরিফের এমন কথায় রেগে যায় পরে চোখ গরম করে কপাট রাগ দেখিয়ে বলে উঠে,,,,
.
—” আমি আমার সমস্যা কথা আপনাকে বলছি না, আমি জানতে চাইছি আপনার কি সমস্যা আপনি আমাকে এড়িয়ে চলছেন কেন,,,,
.
—-” আমার কোনো সমস্যা নেই পথ ছাড়ুন আপনি, আমি আপনাকে কোনো রকম এড়িয়ে চলছি না আমি এমনই, আমার থেকে দূরে থাকুন আপনি, আমি যেমন দেখতে তেমনটা কিন্তুু মোটেও নয়, তাই আমাকে জ্বালাতে এসে নাহ আপনি নিজেই জ্বলে উঠেন, তাই সাবধান করছি দূরে থাকুন,,,,
.
কথা গুলো বলেই আরিফ ফিহাকে কিছু বলতে না দিয়ে ফিহার পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগলো হনহন করে,, আরিফ ফিহার মনে অবস্থা বুঝতে পারছে আরও অনেক আগেই, তাই সে ফিহাকে বরাবরই মতো এড়িয়ে আসছে, সে চাই না তার জন্য তার বোনের সংসারে কোনো রকম অশান্তি সৃষ্টি হোক তাই সে এক প্রকার ফিহার থেকে পালিয়ে বাঁচতেছে, কিন্তু তা আর পারছে কই ফিহার জন্য যেখানে যাচ্ছে সেখানেই এসে হাজির হচ্ছে তার সামনে, তাই সে মনে মনে ঠিক করেছে আর বিয়ে ঝামেলা চুকিয়ে পারি জমাবে নিজ গন্তব্যে, কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই আরিফ নিজ রুমের দিকে চলে যায়,,,,,
.
ফিহা আরিফের যাওয়ার দিকে রেগে তাকিয়ে আছে, মাথায় তার অন্য চিন্তা আর যাই হোক আরিফকে ছাড়বে না কখনোই, সে আরও বড় জেদি মেয়ে যা করা প্রয়োজন হোক না কেন আরিফকে সে বুঝিয়ে ছাড়বে তার ভালোবাসাটা…….
.
.
.
🍁
নিহা আপুর মেহেদী ছুঁয়া কিছুক্ষন পর সবাই সবার মতো রেডি হচ্ছে, আপু আজ নিজেকে সাজিয়েছে ঘারো সবুজ রঙের লেহেঙ্গায়, আর বাকিরা সবাই গোল্ডেন আর হালকা সবুজ লেহাঙ্গায় সাজিয়েছে নিজেকে,, আমিও সবার মতো করে নিজেকে সাজাতে পারিনি অজানা এক কারণে সবাই লেহেঙ্গা পড়লেও আমি পরেছি ঘাড়ু সবুজ রঙের শাড়ী তাও কালকের মতো করে আজকেও আমাকে বাঙালি ভাবে শাড়ী পরতে হয়েছে,,, আমি শাড়ী পরে খুশি মনে দাদীর পাশে বসে গোল গোল চোখে সবাইকে পযবেক্ষন করছি আপন মনে,,, তখনই পাশ থেকে ডলি আপুর হাসি মুখে এগিয়ে এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে পরে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,,,,
.
—” মায়া আমাকে একটা হেল্প করবে আসলে আমি একটা সমস্যা পরেছি,,,,
.
আপু সমস্যা আছে কথা শুনেই আমি চমকে উঠে সাথে সাথে আপুকে হেল্প করার জন্য কিছু বলতে যাবো তার আগেই পাশ থেকে দাদী বলে উঠে,,,,
.
—” কি সমস্যা ডলি আমাকে বলো আমি হেল্প করছি, মায়া ছোট ওহ কিছু বুঝে না,,
.
—” তেমন কিছু না নানু আসলে কাজটা মায়াকে ছাড়া হবে না তাই আরকি, তুমি একদমই টেনশন করো নাহ আমি থাকতে অন্য কেউ ওর কোনো ক্ষতি করবে না, আমি আছি তোহ ওর জন্য,, এখন আমার ওকে খুব দরকার,, প্লিজ তুমি কিছু বলেনা ওহ আবার চলে আসবে তোহ,,,
.
ডলি আপুর এমন কথায় দাদী তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আমাকে ডলি আপুর সাথে যাওয়ার জন্য সুমতি জানায়, সুমতি পাওয়ার সাথে সাথে ডলি আপুর শক্ত হাতে আমার একহাত চেপে ধরে দাদীকে হাসি মুখে বিদায় জানিয়ে নিজের সাথে করে আমাকে নিয়ে যেতে লাগলো নিচের দিকে পরে আমাকে একটা অন্ধকার রুমে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় নিচে ফ্লোরের ওপর, আমি ধাক্কা খেয়ে উপুড় হয়ে পরি ফ্লোরের ওপর, ডলি আপুর রুমে দরজা আটকিয়ে শক্ত হাতে আমার চুলের মোঠ করে নিজের দিকে ফিরায়, ডলি আপুকে এমন করতে দেখে ভয়ে আমি কান্না করতে লাগি আর নিজের দুহাত দিয়ে আপুর হাত থেকে নিজের চুল ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকি, এই মূহুর্তে কি করবো কিছুই জানি না আর আপু আমার সাথে এমন কেন করছে তাও বুঝতে পারছি না,,,,
চলবে………