দেওয়ানা(আমার ভালোবাসা) #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া #পর্বঃ_৬৬ 🍂

0
820

#দেওয়ানা(আমার ভালোবাসা)
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৬৬
🍂
রিদ মায়ার ওপর বিরক্তি নিয়ে গম্ভীর মুখে বসে আছে আর মায়া তখনো রিদের শার্টের কোনা দুহাতে আঁকড়ে ধরে রিদের দিকে ঘুরে বসে আছে ঘাপটি মেরে অসহায় ফেস করে রিদের দিকে তাকিয়ে থেকে,, রিদ মায়ার হঠাৎ এতোট সাহস কোথায় থেকে এলো সেটাই ভেবে পাচ্ছে না এই মূহুর্তে,

.
রিদ মায়া সাথে কোনো রকম কথা বলতে চাইছে না কারণ রিদ মায়ার ওপর অনেকটা রেগে আছে প্রথম দিনের বিষয়টি নিয়ে, মায়া রিদকে নিজের থেকে দূরে থাকতে বলাটা রিদ মেনে নিতে পারিনি একদমই, তাই রেগে মায়ার সাথে এক প্রকার জিদ্দি ধরেই দূরে দূরে থাকছে মায়া থেকে, রিদ নিহার সংগীত অনুষ্ঠানে আসেনি যাতে মায়ার সামনে পরতে না হয়, বিয়েতেও আসতো না কিন্তুু মায়ার ওপর নজর রাখতে গিয়ে বিয়েতে আসতে হয় বাধ্য হয়ে, কারণ জিদ্দ ধরে তো আর মায়াকে হারাতে পারবে না, তাছাড়া মায়ার আর রিদকে নিয়ে কে মাইন্ড গেমস খেলছে জানার জন্য মূলত নিহার বিয়েতে আসা,, নিহার বিয়েতে সারাক্ষণ রিদের নজর মায়ার ওপরই ছিল একটা মূহুর্তে জন্যও চোখের আড়াল করতে দেয়নি, যদিও মায়ার মনে হচ্ছিল উল্টোটা রিদ মায়ার দিকে তাকায়নি পযন্ত,, কিন্তুু রিদ মায়াকে আড়াল থেকেই চোখে চোখে রাখছিল,,,

.

রিদ সেই রাগের রেশ ধরেই এখন মায়াকে নিজের থেকে দূরে রাখতে চাইছে কিন্তু তাও পারছে না মায়ার জন্য, মায়া এক প্রকার ঘাপটি মেরে চিপকে বসে আছে রিদের সাথে, রিদ ঘাড় ঘুরিয়ে মায়ার দিকে তাকাতেই চোখে পড়ল মায়ার গাল ফুলিয়ে রাখা ফেসটা, রিদ সে দিকে এক পলক তাকিয়ে থেকে আবারও সামনে দিকে তাকায়,, এই মূহুর্তে মায়ার সাথে কথা বলাটায় বেকার কারণ রিদ মায়াকে আগে নিজের কাছে রাখতো ভয় দেখিয়ে কিন্তু হঠাৎ করে মায়া এতোটা সাহসী হওয়া ভয়টাই পাচ্ছে না রিদকে,,,

.

যথারীতি গাড়িটি এসে থামে খাঁন বাড়ি সামনে রিদ কাউকে কিছু না বলেই গটগট করে গাড়ি থেকে নেমে হনহনিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে যেতে লাগলো, মায়াও সাথে সাথে গাড়ি থেকে নেমে নিজের দু’হাতে লেহেঙ্গা দুপাশ উঁচু করে ধরে দৌড়াতে দৌড়াতে রিদের পিছন পিছন যেতে লাগলো,,

.

রিদ নিজের রুমের সামনে আসতেই তখনো মায়াকে নিজের পিছন পিছন দৌড়াতে দেখে বিরক্তি নিয়ে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পরে,, মায়া পিছনে ছিল কিন্তুু রিদ হঠাৎ থেমে যাওয়ার কারণে মায়া সাথে সাথে গিয়ে ভারি খাই রিদের পিঠে সাথে,, মায়া চমকে উঠে দ্রুত রিদের দিকে তাকায়,, মায়ার এমন কাজে রিদ বিরক্তি নিয়ে পিছন ঘুরে তাকায় ওর দিকে পরে তেজি গলায় মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে…………..

.
—” কিরে বাবা কি সমস্যা পিছন পিছন ছুটছো কেন আমার….

.
মায়া রিদের এমন তেজি সুরে কথা শুনে থমথমে গলায় আস্তে করে বলে উঠে…….

.
—” তো কি করবো আমি…

.
মায়ার এমন কথায় রিদ কপাট রাগ দেখিয়ে বলে উঠে….

.

—” কি করবা মানে, কবে তুমি আমার কথা শুনেছো যে আজকে তুমি শুনবে আমার কথা, যাও নিজের রুমে যাও,, একদমই আমাকে ডিস্টার্ব করবা না আর…….

.
রিদের কথায় মায়া নাহুচ সুরে গাল ফুলিয়ে ঠোঁট উলটিয়ে বলে উঠে…..

.

—” উঁহুম যাবো না রুমে,, একটু থাকি না আপনার সাথে, একটু থাকি,,,

.

—” নাহ একদমই না,,, এই তুমি যাবে এখন থেকে নাকি গুলি করবো তোমাকে আমি,, (রেগে)

.
কথাটা বলেই রিদ আবারও জোরে জোরে ডেকে আসিফকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে

.
—” আসিফ তোর ভাবির জন্য একটা বন্দুক নিয়ে আয়তো, তোর ভাবির আজকে আমার হাতে গুলি খেয়েই মানবে তার আগে নয়….

.
রিদের কমড়ে একটা বন্দুক থাকা শর্তেও মায়াকে ভয় দেখানোর জন্য রিদ মায়াকে শুনিয়ে শুনিয়ে আসিফকে কথা গুলো বলে,, রিদের এমন কথা শুনের মায়া মূহুর্তেই ভয়ে সিটিয়ে যাওয়া অবস্থায় উল্টো ঘুরে নিজের লেহেঙ্গা দুপাশ উঁচু করে ধরে প্রাণপূর্ণ দৌড় লাগায় নিজের রুমে দিকে, দৌড়াতে দৌড়াতে পিছন ফিরে রিদের দিকে তাকিয়ে থেকে চিৎকার করে বলে উঠে……

.
—” আমি কিন্তু মোটেও আপনাকে ভয় পাচ্ছি না হুহহহ,,

.

কথাটা বলেই মায়া নিজের রুমে ঢুকে যায় সাথে সাথে , রিদ সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আস্তে করে সেও নিজের রুমে চলে যায়, পরে ফাস্টেড বক্স নিয়ে নিজের হাতের গুলিটা বের করে বেন্ডেজ করে স্বস্থির হয়ে শাওয়ার নিচে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ, পরে কিছু একটা ভেবে নিয়ে শাওয়ার শেষ করে বাহিরের বের হয়ে নিজের মাথাটা মুছতে মুছতে ফোনটা নিয়ে আসিফ একটা কল দেয় রিদ, ফোনের রিং হতেই স্ক্রিনে তাকিয়ে রিদ নামটা দেখেই দ্রুত গতিতে কলটা রিসিভ করে আসিফ, কলটা রিসিভ করতেই রিদ শান্ত সুরে আসিফ কে বলে রাখে ডলিও তার পরিবারকে কাল দেখবে আজকে ওদের সবাইকে এমনই বেঁধে রাখতে……

.
কথা গুলো বলেই রিদ আসিফকে কিছু বলতে না দিয়ে সাথে সাথে কলটা কেটে দেয়,,

.

.

———

সকাল ১০ঃ ২৬ বাজে নিহার বিয়ের পর দিন খান বাড়িতে এখনো মেহমানদের অনেকটাই ভির লেগে আছে,, ড্রয়িংরুমের সোফায় বেশ কয়েকজন বয়স্ক মহিলাদের আসর জমেছে,,, তারা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা সমালোচনা করেই যাচ্ছে তাদের মতো করে,, বাড়ির ছেলেরা সবাই সকালের নাস্তা করে যের যার মতো কাজে চলে গেছে খানিকটা আগেই,, হেনা খাঁন আবারও ডাইনিং সাজাচ্ছে নিজের হাতে কাউকে খাওয়াবে বলে, হেনা খাঁনের এমন সাজানোর মধ্য দিয়ে নিশ্বব্দে চেয়ার টেনে বসে পড়ে রিদ নাস্তা করার জন্য,, হেনা খাঁন রিদকে দেখে হাসি মুখে একে একে প্লেটে সাজিয়ে রাখা নাস্তা গুলো দিতে লাগলো রিদও চুপচাপ নিজের নাস্তা করতে লাগলো…..

.

ড্রয়িংরুমে এমন মনোরম পরিবেশে মাঝে মায়া ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে সিঁড়ি বেয়ে ওপর থেকে নিচে নেমে আসে হাই তুলতে তুলতে সোজা গিয়ে ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে পরে বয়স্ক মহিলাদের পাশে, কিছুক্ষণ ঘুমে ঝিম মেরে বসে থাকলেও পাশের মহিলাদের কথা শুনে চমকিত হয় মায়া, পাশের মহিলাদের কথা ভালো করে শুনার জন্য বেশ মনোযোগ সহকারে আগ্রহ নিয়ে ঘুরে বসে তাদের দিকে তখনি তাদের কথা মায়ার কানে এলো তারা একে অপরের বলছে…..

.

—” আমার মেয়েটা এখন তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা, বাচ্চা হবে বুঝলেন আপা, আমার মেয়েটার না বিয়ে হয়েছে আজ এক বছর হলো প্রথমে তো বাচ্চাই হচ্ছিল না পরে হসপিটাল নিয়ে গিয়ে ডাক্তার এর পরামর্শের নিয়েছে তাই এতো দিনে আল্লাহ ওদের সংসার আলো করতে কাউকে পাঠাচ্ছে আপা,,,

.
—” বুঝলেন আপা অনেকের বিয়ে পরও বাচ্চা হতে লেট হয় কারণ তারা বিয়েটা করেও বাচ্চা নিতে চাই না তাড়াতাড়ি তাই তাদেরই কষ্টটা বেশি হয়…. (অন্য জন্য)

.
মহিলাদের এমন কথায় চমকিত হয় মায়া, তার নিজের তো বিয়ে হয়েছে কই তার তো কোনো বেবি হচ্ছে না, এখন কি তারও বেবি হতে কষ্ট হবে অন্যদের মতো, কিন্তুু সেতো আগে থেকেই চাইতো তার একটা বেবি হোক কিন্তু এখনো হচ্ছে না এতে তার কি দোষ,,, মায়া একমনে আরও কিছু ভেবে হঠাৎ করে মহিলাদের প্রশ্ন করে বসে…..

.
—” আচ্ছা বিয়ে হলেই কি বাচ্চা হয়, তাহলে আমার হচ্ছে না কেন…..

.

মায়া এমন প্রশ্নে থমথমে খেয়ে যায় পাশের মহিলা গুলো বাচ্চা বিষয়টি একান্তই ব্যক্তিগত বিষয় আর বিয়ে হলেই যে বাচ্চা হবে এমন কিছুই না, বিয়ে ছাড়াও বাচ্চা হচ্ছে তবে সেটা অবৈধ ভাবে,, কিন্তু এই মূহুর্তে এতো কিছু বুঝানো সম্ভব নয় বলে মহিলাটি হাসি মুখে মাথা নাড়িয়ে সুমতি জানা যার অথ হ্যাঁ বিয়ে হলেই বাচ্চা হয়….

.
মহিলাটি এমব মাথা নাড়িয়ে দেখের মায়া আবারও কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন করে বসে…..

.
—” তাহলে আমার হচ্ছে না কেন,,, আমি বাচ্চা কোথায় থেকে নিব, আচ্ছা আমার কি এখন হসপিটালের যেতে হবে ডক্টর কাছে…..

.

মায়ার এমন কথায় দ্রুত পাশের মহিষটি বলে উঠে,,,

.

—” কোথায় থেকে নিবে মানে, তোমার স্বামী দিবে তোমাকে বাচ্চা, তার জন্য তোমাদের একান্ত কিছু পারসোনাল কাজ করতে হবে,, আর তারপরও যদি কোনো সমস্যা থাকে তাহলে ডক্টর দেখাতে পারো তোমরা….

.
মহিলাটি কথা শেষ করা সাথে সাথে মায়া আর কাউকে কিছু বলতে না দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে হনহনিয়ে এগিয়ে গিয়ে চেয়ার টেনে রিদের পাশের বসে পরে, রিদ মায়াকে নিজের পাশে বসতে দেখেও না দেখার ভান করে চুপচাপ নিজের মতো করে খেতে লাগলো, যেন এই মূহুর্তের রিদের সামনে খাবার ছাড়া অন্য কিছু নেই এখানে,, মায়া রিদের এমন মনোভাব দেখে সেও কিছুই বললো না রিদকে দম মেরে কিছুক্ষণ রিদের দিকে তাকিয়ে থেকে স্পষ্ট গলায় খানিকটা উচ্চ স্বরে বলে উঠে…..

.
—” আমার একটা বাচ্চা চাই, আপনি আমাকে বাচ্চা দিচ্ছেন না কেন……

.
মায়া এমন কথায় ড্রয়িংরুমে সবাই থমথমে খেয়ে যায়, সবাই গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে রিদ ও মায়ার দিকে হেনা খাঁন ও থমথমে চোখে তাকিয়ে রইলো রিদের দিকে, রিদ মায়া কথা শুনে মূহুর্তে বিষম খেয়ে যায়, পানিটা নিজের মুখে নিয়েই অনবরত কাশতে থাকে মায়া কথায়, এই মূহুর্তে রিদ মায়ার থেকে এমন কোনো কথা আশা করেনি,, মায়ার জন্য জীবনের প্রথম অন্যের সামনে খানিকটা লজ্জা পেতে হচ্ছে তাঁকে, তাই নিজে জায়গায় বসে আস্তে করে চোখ বুলাই চারপাশে সবাইকে নিজের দিকে গোল গোল চোখে তাকাতে দেখে সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নেয় রিদ,, মায়া রিদ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে আবারও বলে উঠে…..

.
—” কি হলো বলুন আমার বাচ্চা কবে দিবেন আপনি, আমরা একান্ত পারসোনাল কাজ গুলো কবে করবো বাচ্চার জন্য……

.

.
মায়ার এমন কথায় এবার রিদ ভিষণ বাজে ভাবে ফেঁসে গেছে এই মূহুর্তে, এখানে না পারছে বসে থাকতে আর না পারছে ওঠে যেতে, জীবনের প্রথম এমন পরিস্থিতি শিকার হয়েছে রিদ তাও তার বউয়ের জন্য,, সাথে কাশিটা যেন আগে থেকে আরও দুগুণ বেড়ে গেলো মায়ার সাথে পাল্লা দিয়ে….

চলবে………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here