#দেওয়ানা(আমার ভালোবাসা)
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৭৩
.
🍂
ভেজা সেঁতসেঁতা শরীর নিয়ে হেনা খাঁনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে রিদ ও মায়া, দুজনকে ভেজা অবস্থায় দেখে হেনা খাঁন কপাল কুচকে দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ, রিদ স্বাভাবিক বগিতে দাঁড়িয়ে থাকলেও মায়া খানিকটা ইতস্তত বোধ করছে হেনা খাঁনের কপাল কুচকে তাকানোতে, রিদ হেনা খাঁনের ভাব বগি বুঝতে পেরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে, হেনা খাঁন দুজনের দিকে তাকিয়ে থেকে সন্দেহ নিয়ে বলে…….
.
—” এই তোরা দুজন ভেজলি করে…..
.
হেনা খাঁনের তদারকি বিষয়টা রিদ স্বাভাবিক বগিতে নিতে পারলেও মায়া খানিকটা ভয় পাচ্ছে হেনা খাঁনকে, চুরি করা পর ধরা পরার যে ভয়টা থাকে মানুষের মধ্যে মায়াও ঠিক একি অবস্থা রিদের কাছে সেচ্ছা গিয়েছে এটা যদি হেনা খাঁন জানতে পারে তাহলে মায়ার কি অবস্থা হবে সেটাই চিন্তা করে ভয়ে কাচুমাচু করতে লাগে মায়া, হেনা খাঁন মায়াকে ভয় পেতে দেখে তার সন্দেহ দৃষ্টিটা যেন আরও একধাপ গভীর হয়, হেনা খাঁনকে সন্দেহ দৃষ্টিতে মায়ার দিকে তাকাতে দেখে রিদ কথা ঘুরানো জন্য তাত্ক্ষণিক বলে উঠে………
.
—” ভেজাটা বড় কথা নয় তোমার সোনামা তুমি ফিরে পেয়েছো সেটাই বড় কথা, আর তুমি ডিটেকটিভদের মত ইন্টারোগেটিভ কেন করছো,,,,,
.
রিদের কথায় শক্ত গলায় বলে……
.
—” আমার করাটা অযুক্তকর নয় রিদ তুই সেটা ভালো করেই জানিস, এখন বল তুই ওকে(মায়া) কোথায় পেয়েছিস……..
.
হেনা খাঁনের কথা স্বাভাবিক কন্ঠে বলে……
.
—” আমি আশিকে বলে রিতকে আমার কাছে নিয়ে গেছিলাম….
.
সন্দেহ নিয়ে হেনা খাঁন বললো……
.
—” কেন, তোর ওর(মায়া) কি কাজ লেগেছে হঠাৎ…..
.
হেনা খাঁনকে কথা পাল্টা জবাব বলে….
.
—” দাদী তোমার নাতিন আমার বউ হয়, আর আমি আমার বউকে আমার কাছে নিয়ে যেতেই পারি,,,,
.
রিদের এমন পাল্টা জবাবে রেগে জান হেনা খাঁন, সেই রাগের বশবতি হয়ে কপাট রাগ দেখিয়ে উচ্চ স্বরে বলে…….
.
—” একদম বাজে কথা বলবি না তুই, মায়া তোর বউ হলেও তুই ওকে বউ বলে কবে মেনেছিস যে এখন অধিকার খাটাতে এসেছিস হ্যা, আর আমার সোনামা থেকে দূরে থাকবি তুই,,,
.
হেনা খাঁনের কথা মানে বুঝতে পেরে রিদ স্বাভাবিক বগিতে বললো…….
.
—” দাদী সময় সাথে মানুষ নিজ গতিতে পরিবর্তন হয়,,,
.
রিদের কথায় হেনা খাঁন শক্ত গলায় তেজি সুরে বললো……
.
—” সময় পরিবর্তন হলেও তুই হতে পারিস না কারণ সময় তোর হিসাব মতো চলে… আমি তোর সাথে আমার সোনামাকে রেখে কোনো রকম বিপদ বাড়াতে চাই না তাই তুই আজকে পর থেকে ওর আশেপাশেও ঘুর ঘুর করবি না এটাই আমার শেষ কথা…..
.
হেনা খাঁনের কথায় রিদ জেদ সুরে বললো……
.
—” পারবো না তোমার শেষ কথা রাখতে, বউ আমার আর বউ থেকে দূরে থাকতে হবে আমাকে দরকার হলে বউ নিয়ে দেশান্ত হয়ে যাবো আমি তবুও বউ ছাড়ছি না আমি, আর আমার যখন বউ লাগবে তখন আমি নিজেই এসে বউ উঠিয়ে নিয়ে যাবো, তবুও বউ চাই আমার বউ নিয়ে নো কম্প্রোমাইজ……..
.
রাগ নিয়ে বললো…..
.
—” এই তুই কি পাগল হয়ে গেলি……
.
হেনা খাঁনের কথা রিদ রাগ নিয়ে সুপ্ত কন্ঠে বললো…..
—” বিয়ে কর, বিয়ে কর করে পাগল বানিয়ে বিয়ে জোর করে বিয়ে করালা আমাকে, এখন এন্ড অফ দ্যা মোমেন্ট এসে আমার বউ চাই আর এখনই নাকি সেই বউ থেকেই দূরে থাকতে হবে আমাকে ওয়াও জোস, আর নিজের জন্য কিছু বললে আমি হয়ে যায় পাগল…. এখন তুমি বলো সমস্যাটি আমার নাকি তোমাদের…..
.
কপাট রাগ দেখিয়ে হেনা খাঁন বলে উঠে……
.
—” বললেই হলো তোর বউ লাগবে এখন, গত একটা বছর কোথায় ছিলিস তুই আর কম আঘাত করেসনি আমার সোনামাকে এখন বললেই আমি আমার সোনামাকে তোর হাতে তুলে দিব,,,
.
হেনা খাঁনের কথায় রিদ নিজের দায়সারা ভাব জেড়ে পাল্টা উত্তরে বলে……
.
—” মেরেছি আরও মারবো, অবাধ্য হলে আবারও মারতে দ্বিধা বোধ করবো না আমি, আর তুমি ভালো করেই জানো অকারণে কিছুই করি না আমি,,,,,
.
—” রিদ……
.
—” দাদী প্লিজ ভালো লাগছে না আমার, দূরে থাক দূরে থাক বলা বন্ধ করো তুমি, তোমার বলা আর না বলা সমান কারণ থেকে দূরে থাকা কোনো কালেই সম্ভব নয় আমার দ্বারা আশা করি তুমি বুঝতে পেরেছো……
.
কথা গুলো বলেই রিদ হেনা খাঁনকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ধুপধাপ পা ফেলে ভেজা শরীর নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়, হেনা খাঁন রিদের যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন, রিদ কিছু নিয়ে জেদ করলে সেটা সে করেই ছাড়ে ওকে সেটা বুঝানো বেকার, রিদ কখনো অন্যের শুনে কাজ করে না নিজের যা ভালো লাগে সেটাই করে,, হেনা খাঁন কথা গুলো ভেবে মায়াকে নিজের বুকে টেনে আলতো হাতে, মায়াও চুপচাপ হেনা খাঁনের বুকে মাথা রেখে রিদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে করুন ভাবে, রিদ থেকে হেনা খাঁনের সামনে দূরে থাকতে হবে তাঁকে……….
.
🍁
রাতের খাবার জন্য ডাইনিং টেবিলের বসে আছে খাঁন বাড়ির সবাই শুধু রিদ ছাড়া,, মায়া বারবার আড়চোখে সিঁড়ি দিকে তাকাচ্ছে রিদ আসে কিনা দেখার জন্য, বার কয়েক বার তাকানো পরও রিদকে আসতে না দেখে ডাইনিং টেবিলের বসে কাচুমাচু করতে থাকে,,
.
মায়ার এক পাশে আরাফ খাঁন বসেছে অন্য পাশটায় ফিহা, মায়ার ঠিক সামনের চেয়ারটা খালি রাখা তার পাশের চেয়ারটায় আরিফ বসেছে, আরিফের পাশে ফিহার বাবা মা বসেছে, আরিফের সামনে ফিহা বসেছে। এখানে আপাতত রিদের সাথে সাথে আয়ন নেই, আয়ন গত এক সাপ্তাহ যাবত বিদেশে রয়েছে বিজনেস এর কাজে তাই এখানে আয়ন নেই, সবাই ডাইনিং এ বসে যার যার মতো করে খাবার খাওয়া শুরু করছে, কারণ রিদ কখনোই টাইম ম্যানটিন করে সবার সাথে খাবার খাই না বেশি ভাগ সময় একা একা খেয়েই থাকে তাই কেউ অপেক্ষা না করে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে হেনা ছাড়া,,,
.
হেনা খাঁন কখনোই রিদকে ছাড়া খাবার খাই না উনি, রিদের জম্মের পরে থেকেই হেনা খাঁনই রিদকে মানুষ করেছে আর রিদের জন্য তার ভালোবাসাও অপরিসীম, হেনা খাঁনের সবকিছু একদিকে আর রিদ অন্য দিকে,,,
.
হেনা খাঁন মায়াকে নিয়ে রিদের সাথে ঝগড়া করে কারণ রিদের অনেক রাগ আর সেই রাগের শিকার হতে হয় মায়াকে তাই উনি রিদের রাগ থেকে মায়াকে বাঁচানোর জন্য দূরে রাখতে চাই দুজনকেই, মায়া অনেকটাই অবুঝ বতমান দুনিয়া সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই ওর,,
.
হেনা খাঁন সার্ভেন্ড দিয়ে সবাইকে খাবার ভেড়ে দিচ্ছে এমন সময় সিঁড়ি বেয়ে ধুপধাপ পা ফেলে শব্দ করে নিচে নেমে আসে রিদ, রিদকে নিচে নামতে দেখে মায়া চমকে উঠে সেদিকে তাকায় আর সাথে সাথে চোখে পড়ল রিদকে, রিদের দিকে তাকাতেই চোখ বড় বড় হয়ে আসে মায়ার আবাক করা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রিদের দিকে, কারণ রিদ ফর্মাল স্টাইলে কালো টি-শার্ট আর কালো টাউজার পরে কিলার লুক নিয়ে ডাইনিং এসে মায়ার সামনের চেয়ারটাই বসে পরে, মায়া তখনো হা হয়ে তাকিয়ে থাকে রিদের দিকে, রিদ তখনো মায়াকে লক্ষ করেনি, চেয়ার টেনে বসতেই হেনা খাঁন হাসি মুখে রিদকে খাবার প্লেট এগিয়ে দেয়, পরে হাসি মুখে আলতো হাতে রিদের মাথায় বুলিয়ে দিয়ে মায়ার পাশের চেয়ারটাই বসে পরে আস্তে করে…….
.
রিদ খাবার প্লেট সামনে নিয়ে চোখ তুলে তাকায় সামনের দিকে মায়াকে নিজের দিয়ে হা হয়ে তাকাতে দেখে কপাল কুচকে এলো রিদের, পরে নিজের দিকে এক পলক তাকিয়ে থেকে আবারও মায়ার দিকে তাকায়, মায়ার হা হয়ে তাকানোর মানে বুঝতে পেরে দুষ্ট হাসে রিদ, পরে মায়ার দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের একটা ভ্রুঁ উঁচু করে ইশারা করে কি হয়েছে,,,, ইশারা করার পরও মায়ার কোনো হেলদোল না দেখে রিদ টেবিলের দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসে, বউ তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে তাই সবার সামনেই পাগলামো করছে,,
.
.
চলবে…………..
