#দেওয়ান(আমার ভালোবাসা)
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৭৯
.
🍂
নিজের অফিস রুমে ল্যাপটপে সামনে বসে আছে রিদ, আর সামনে দাঁড়িয়ে আছে রিদের অফিস মেনেজার শফিক সাহেব হাতে তার বেশ কিছু ফাইল,, তিনি বিগত অনেকটা সময় ধরে দাঁড়িয়ে আছে রিদের সামনে অসহায় ফেস করে তার এমন অসহায়ত্বটাও যেন আজ রিদের চোখেও ধরা পরছে না কোনো ভাবেই,, শফিক সাহেব তার ফাইল গুলো জরুরি ভিত্তিতে রিদকে দিয়ে সাইন করানো জন্য এখানে নিয়ে আসা কিন্তু রিদ একটা সাইন করার পর পরই ভিডিও কলে আর্জেন্ট ডিসকাস এ মন্ত হয়ে যায় আর শফিক সাহেব তখন থেকেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে রিদের সামনে……
.
ল্যাপটপের সামনে বসে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলছে রিদ বিদেশি কাইন্ডদের সাথে একটা বিশেষ ডিল ফাইল করার জন্য বরাবরে মতোই,, আর সেই কলকে কেন্দ্র করেই রিদের অনেকটা সময় কেটে যায় ল্যাপটপের সামনেই,, ভিডিও কনফারেন্সে থাকার শর্তেও 10 মিনিট পর পর ফোন কলসও অ্যাটেন্ড করছে রিদ,,
.
আর কল করা ব্যাক্তিটি হচ্ছে মায়া,, 10 মিনিট পর পর রিদকে মায়া কল করছে কথা বলার জন্য আর রিদও হাসি মুখে তার বউয়ে সেই কল অ্যাটেন্ড করছে বিনা বাক বয়ে,, দুই মিনিট কথা বলার পর আবার ভিডিও কনফারেন্স মনোযোগী হচ্ছে গম্ভীর মুখে,,,,
.
এতে করে বিদেশি কাইন্ডদের কাজে খানিকটা ব্যাঘাত ঘটালেও রিদের ভয়ে কেউ তা প্রকাশ করতে পারছে না,, তাই সবাই অনেকটা জোর পূর্বক হাসি মুখে সবটা মেনে নিচ্ছে রিদের সামনে,, কারণ রিদ তার বউয়ের সাথে নরম আর পাবলিকে সাথে গরম,,, বিষয়টি বুঝতে পেরেই সবাই চুপ থাকে নয়তো কোম্পানির সাথে সাথে রিদের সহযোগিতাও হারাতে হবে সবার,, আর রিদের সহযোগিতা না পেলে বিজনেস এ সফলতা অর্জন করা দোষকর হয়ে পরবে, যেটা কেউ চাইনা…….
.
মায়া রিদকে 10 মিনিট পর পর কল করলে রিদ এক মিনিট পর পর নিজের ফোন চেক করছে যে বউ তার ফোন করেছে কিনা সেই আশায়,, ভিডিও কলে থাকার সত্বেও বারবার নিজের ফোন চেক করাতে সফিক সাহেব হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে রিদের দিকে,, যে রিদ খানের মতো মাফিয়া কিং কেও ভালবাসার মতো বিষয়টি এতটা দুর্বল করতে পারে তা জানা ছিলো না শফিক সাহেবের,, যদি বিষয়টি জানতো তাহলে তিনি আরো আগেই দোয়া করতো তার নির্দয় বস রিদ খান যেন কারো প্রেম পড়ে গভীর ভাবে,, তাহলেই তো তিনি রোজ রোজ রিদের অত্যাচার থেকে বেঁচে যেত,, শফিক সাহেব কথাগুলো এক মনে ভেবে নিয়ে আবারও রিদের দিকে তাকাই করুন দৃষ্টিতে,,
.
উনার এমন তাকানোর মধ্য দিয়ে রিদের ভিডিও কলটা শেষ হয়,, পরে ফাইলগুলো সাইন করার জন্য কলমটা হাতে তুলতে আবারও মায়ের কল আসে রিদের ফোনে কিছুক্ষণ কথা বলার পর রিদ শফিক সাহেব দিকে এক পলক তাকিয়ে থেকে চুপচাপ দ্রুত ফাইল গুলো সাইন করে দেয়,, পরে শফিক সাহেবকে বিদায় করে উঠে দাঁড়িয়ে সামনে কাঁচের দেয়ালের ওপর একটা হাত রেখে বাহিরের দিকে তাকায় এক দৃষ্টিতে……
.
নিহার বিয়ের পর মায়াকে অনেকটা জোড়াজোড়ি করেই আজ ভার্সিটিতে পাঠিয়েছে হেনা খান,, যেতে চাইনি প্রথমে রিদের কাছাকাছি থাকতে চেয়েছিল তখন রিদ মায়াকে বুঝিয়েছিল যে ভার্সিটিতে গিয়েও কাছাকাছি থাকতে পারবে দুজন,,মায়ার মন চাইলেই রিদকে কল করে কথা বলতে পারবে দুজন, আর কথা বলার মাধ্যমেই মায়া রিদের কাছাকাছি থাকতে পারবে সারাক্ষণ, এটা বুঝিয়ে রিদ মায়াকে ভার্সিটিতে পাঠিয়ে ছিল,, এতে করে মায়া ভার্সিটিতে গেলেও রিদের কথা অনুযায়ী রীদের কাছাকাছি থাকার জন্য 10 মিনিট পর পরই রিদকে কল করেই যাচ্ছে মায়া…..
.
মায়া ভার্সিটিতে গিয়েও ফোন হাতে নিয়ে ঘাপটি মেরে বসে আছে রিদের সাথে কথা বলার জন্য ক্লাসে ওর বিন্দু মাত্র মনোযোগ নেই,, আর রিদের যে খারাপ লাগছে মায়ের সাথে কথা বলতে তেমনটা কিন্তু মোটেও নয়,, উল্টো রিদ নিজেরও এক মিনিট পরপর ফোন চেক করছে যে তার বউ তাকে কল করছে কিনা সেই আশায়,, সামান্য দূত্বতটা ও যেন কারও সহ্য হচ্ছে না,, কথাগুলো ভেবে নিয়েই রিদ পাশ থেকে ফোনটা হাতে তুলে নেয় মায়াকে কল করার জন্য,, কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর পরই মায়া কলটা রিসিভ করে করুন কন্ঠে বলে উঠে…..
.
—” আমার আর ক্লাস করতে একটুও ভালো লাগছেনা, আমি কখন বাসায় যাব…..
.
—” যখন ম্যাডামের সব কয়টা ক্লাস শেষ হবে তখন আর তুমি মাত্র দুটি ক্লাস শেষ করেছো এতটা সময়ে,, ম্যাডাম কি এত তাড়াতাড়িই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে হুমমম……
.
রিদের এমন কথা মায়া গাল ফুলিয়ে বলে ওঠে,,,,
.
—” আমার ভালো লাগছেনা কোনকিছু আমি আপনার কাছে যাবো…..
.
মায়ার কথায় রিদ সবটা বুঝতে পেরে একটা দীঘ নিঃশ্বাস ফেলে আস্তে করে বলে উঠে…….
.
—” রিত তুমি নতুন নতুন প্রেম সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছো,, এই ফিলিংস গুলো তোমার জন্য নতুন তাই এই ফিলিংস গুলো ঠিক করে সামলিয়ে উঠতে পারছো না,, আর এর জন্যই তুমি এতোটা অস্থির হয়ে পড়ছে,,, তবে তোমার এই ফিলিংস গুলো সামলানোর জন্য আমি আছি তোমার পাশে সবসময়,, এখন তুমি মনোযোগ দিয়ে বাকি ক্লাস গু………
.
রিদের বাকি কথাগুলো শেষ করার আগে পিছন থেকে কেউ একজন মায়াকে নাম ধরে ডেকে উঠে,, আর আকস্মিক ঘটনায় মায়া চমকে উঠে পিছন ঘুরে তাকায় ডাক দেওয়া ব্যাক্তিটির দিকে তখনই চোখে পড়ল সাব্বিরকে,, চোখে সামনে সাব্বিরকে দেখতে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মায়া পরে ফোনটা হাতে ধরা অবস্থায় সাব্বিরের দিকে তাকিয়ে থাকি ভ্রুঁ কুচকায়,,, সাব্বির মায়াকে নিজের দিকে তাকাতে দেখে দ্রুত তাড়া দিয়ে চারপাশে তাকাতে তাকাতে বলে উঠে…..
.
—” রিতু আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে জরুরি, এখনই বলতে হবে আমার তোমাকে……
.
পুরুষালী কন্ঠ শুনে মূহুর্তেই চুপ করে যায় রিদ,, তার বউকে কে এমন করে ডাকতে পাবে বিষয়টি ভেবেই কপাল কুচকে আসে রিদের,, পরে সাব্বির মায়ার সাথে জরুরি কথা বলতে চাই সেটা শুনে মূহুর্তেই মাথা গরম হয়ে যায় রিদের,,, চোখ দুটো মূহতেই টকবগে উঠা রক্ত লাল চোখে পরিনত হয়,, ভালো করে আজানা ব্যাক্তিটি কন্ঠটি শুনেই মূহুর্তেই একঝাক ভয়রা কাজ করে রিদের মনে মধ্যে,, তাই আর কোনো কিছু চিন্তা ভাবনায় না করেই ফোনেটা কানে চেপে ধরা অবস্থায় দ্রুততা সঙ্গে বেড় হয়ে যায় মায়ার ভার্সিটির উদ্দেশ্য,,, মায়ার সাথে কথা বলার ব্যাক্তিটি যদি রিদের চিন্তা করা ব্যাক্তিটি হয় তো আজ অনেক কিছু হয়ে যাবে হয়তো তার বউকে তার কাছে আর নাও ফিরে পেতে পারে,, রিদ অনেকটা পাগল পাগল হয়ে গাড়ি চালাচ্ছে আর মায়া ও ব্যাক্তিটি কথা গুলো শুনতে শুনতে….
.
রিদের এমন শুনার মধ্যে দিয়েই মায়া বলে উঠে…..
.
—” কিহ ভাইয়া……
.
—” তুমি আমার সাথে চলো এখনই……
.
সাব্বিরের কথায় মায়া কিছু বুঝতে না পেরে চুপ থেকে আবারও ভ্রুঁ কুঁচকে আস্তে করে বলে উঠে…..
.
—” কোথায় আর কেন…..
.
মায়ার এমন কথায় সাব্বির খানিকটা রেগে চাপা সুরের বললো…..
.
—” এত প্রশ্ন করছো কেন গেলেই তো দেখতে পারবে কোথায় চল আমার সাথে…..
.
ব্যাক্তিটি এমন কথায় রিদ সাথে সাথে ফোনের ওপাশ থেকে চিল্লায়ে বলে উঠে…..
.
—” রিত No no কোথাও যাবে না তুমি,, তুমি ওখানেই থাকো আমি আসছি তোমার কাছে,,,, রিততততত
.
রিদ চিল্লানোর সাথে সাথে গাড়ির অনেকটা তেজ চালানো শুরু করে দেয়,,, আর মায়ার ফোনটা হাতে থাকা জন্য রিদের এমন চিল্লানো কথা গুলো শুনতে পাইনি কোনো ভাবেই,,, আর রিদের জীবনের এই প্রথম নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে কারণ এই মূহুর্তে যদি নিজের প্রিয় মানুষটাকে রক্ষা করতে না পারে তো তার সবকিছুই বৃথা হয়ে যাবে,, তাই যে করে হোক নিজের প্রাণটা আগে রক্ষা করতে হবে পরে নাহয় বাকি সবকিছু দেখা যাবে কার কলিজা কত বড়,, রিদ অনেকটাই বুঝতে পারে মায়ার সামনে কে এখন দাড়িয়ে আছে তাই জানটা যেন আরও আগে বের হয়ে যাচ্ছে তা বউয়ের জন্য…….
.
রিদের এমন সব চিন্তা ভাবনায় মাঝে দিয়েই সাব্বির মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে……….
.
—” চল আমার সাথে দ্রুত……
.
সাব্বিরের কথায় মায়া কোনো রকম কথা না বলে চুপচাপ রাজি হয়ে যায় সাথে যাওয়ার জন্য আর রিদ অনেকটা পাগল পাগল হয়ে যায় মায়ার জন্য এমনত অবস্থা পিছন থেকে আরও একজন ব্যাক্তি বলে উঠে…..
.
—” কে কোথায় যাবে শুনি…….
.
পিছনে থেকে কারও কন্ঠ কানে আসতেই আবারও চমকে পিছন ঘুরে তাকায় সাব্বির ও মায়া চোখের সাথে আয়নকে ভ্রুঁ কুঁচকে নিজের দিকে তাকাতে দেখে মায়া খানিকটা হাসি মুখে বললো…….
.
—” আরে আয়ন ভাইয়া তুমি এখানে,,,
.
আয়ন মায়ার হাসি মুখে এক পলক তাকিয়ে থেকে সাব্বির দিকে তাকায় ভ্রুঁ কুঁচকে পরে সাব্বিরের সামনে দাঁড়িয়ে পরে সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে উঠে…..
.
—” মায়া তোমার সাথে কোথায় যাওয়ার জন্য বলছো, তুমিই বা কেহ……
.
আয়নের কন্ঠ শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রিদ,, সাথে সাথে গাড়ি ব্যাক কষে সিটে মূল গান এলিয়ে দিয়ে চোখে বন্ধ করে কৃতজ্ঞতা সুরে নিজেই নিজেকে বলে উঠে……
.
—” আয়ননননন,,
.
কথা বলেই রিদ আবারও আয়নের কথা মনোযোগী হয়,, আয়নকে হঠাৎ করে চোখে সামনে দেখতে পেয়ে চমকে উঠে ইতস্তত বোধ করতে থাকে সাব্বির,, নিজের চুরি ধরা পরার ভয়ে দ্রুত কথা ঘুরিয়ে বলে উঠে…….
.
—” আসলে মায়াকে আমার সাথে যেতে বলেছে পেন্সিপাল স্যার,, তাই ডাকতে এসেছিলাম…..
.
—” কিন্তু কেন…….
.
.
চলবে…………