দেওয়ানা(আমার ভালোবাসা) #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া #পর্বঃ_৬৯ 🍂

0
884

#দেওয়ানা(আমার ভালোবাসা)
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৬৯
🍂
সারাদিনের ব্যস্ততা ও ক্লান্তিময় হয়ে রাত দশটার নাগাদ বাড়িতে ফিরেছে রিদ, কান্তিতে তিক্ত হয়ে ড্রয়িংরুমের দাঁড়িয়ে শূন্য চোখে শান্ত দৃষ্টিতে চারপাশে চোখ বুলিয়ে নেই, আশেপাশে জনশূন্য হয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে কপাল কুচকে এলো রিদের, এই অসময়ে বাড়ির সবাই যাবে কোথায় কথাটি ভাবতেই কাউকে জিজ্ঞেসা করবে বলে ভেবেও থেমে যায় রিদ, সারাদিনের ব্যস্ততায় শরীরটা ক্লান্তিতে রি রি করছে খুব তাই এই মূহুর্তে একটা লম্বা শাওয়ার নেওয়া দরকার তাঁর, পরে নাহয় আশিককে কল করে জিজ্ঞেসা করা যাবে বাড়ির সবাই কোথায়, কথাটা ভেবেই দুপদাপ পা ফেলে উপর নিজের রুমে চলে যায়। লম্বা সময় নিয়ে একটা শাওয়ার নিতে,,,,

.

নিজের রুমে বসে বসে ল্যাপটপে মুখ গুঁজে এক ঘন্টা যাবত কাজ করে চলছে রিদ, আরও খানিকটা সময় ধরে কাজ করার পরও ঘড়ি দিকে তাকাতেই চোখে পড়ল বারোটা নাগাদ সময়টাকে, এতোটা সময় হয়ে যেতে ঘাড় ঘুরিয়ে নিজের রুমে দরজা দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়, এতোটা সময় হয়ে গেলো অথচ কেউ তাঁকে ডাকলো না খাবার জন্য, কথাটা ভেবেই ওঠে দাঁড়ায় রিদ খানিকটা চিন্তিত হয়ে এগিয়ে যায় নিচে ড্রয়িংরুমে দিকে, সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামার সময়ও কাউকে কোথাও দেখতে না পেয়ে কপাল কুচকে এলো আবারও, খানিকটা চিন্তিত ভঙ্গিতে কল দেয় আশিককে,, পর পর দুবার কল করার পরও আশিক কলটা রিসিভ করতে না দেখে একরাশ টেনশন ভর করল রিদের মাথায়। সেই টেনশনে রেশ ধরেই রেগেমেগে আবারও কল দেয় আশিককে পর পর তিন বার কলটা করার পর কলটা রিসিভ হয় আশিককের ঐ দিক থেকে, আসিফ কলটা রিসিভ করে আস্তে করে হ্যালো বলার সাথে সাথে রিদ খানিকটা রাগ দেখিয়ে উচ্চ স্বরে বলল…

.

—” হারামির বাচ্চা কই তুই? মরেছিস নাকি কোথাও? একটা ফোন ধরতে তোর এতো টাইম লাগে কেন?

.
রিদের হুট করে রেগে যাওয়া কথায় আশিক খানিকটা ভয়ে সিটিয়ে যাওয়া অবস্থায় কাচুমাচু করতে করতে আস্তে করে রিদকে উদ্দেশ্য করে বললো……

.
—” সরি বস্! বড় স্যারের (আরাফ খাঁন) সাথে ছিলাম এতক্ষণ! তাই আপনার কলটা রিসিভ করতে পারিনি…..

.

আশিকের এমন উত্তরে সন্তুষ্ট হয়নি রিদ, তাই আগে মতোই রাগী ভাবটা নিজের মধ্যে বজায় রেখে টেনশনে বলে উঠে…….

.
—” হারামির বাচ্চা বউ কই আমার! সেটা বল….

.
রিদের এমন ধমকে আশিক খানিকটা ইতস্তত বোধ করে আস্তে করে বলে উঠে……

.
—” বস্ ম্যাডাম তো আপনার পরিবারে সবার সাথেই আছে এখন। আজকে নিহা ম্যাডামের রিসেপশন পার্টি ছিল, তাই সবাই এখানে এসেছেন। আপনাকেও এখানে আসায় জন্য দাদা-দাদি অনেক বার কল করেছেন কিন্তু আপনাকে কেউ ফোনে পাইনি।

.
আশিকের কথায় শান্ত হয় রিদ। আজকে সকালে ডলি ও তার পরিবার ঠিক ঠাক জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার পরে বাকি সারাটাদিন খুব বেশি ব্যস্ততায় কাঁটে রিদের। আর সেই ব্যস্ততা কারণে ফোনটা যে কখন বন্ধ হয়ে যায় বলতেই পারিনি সে। আজকে যে নিহার রিসিপশন পার্টি ছিল সেটাও সে ভুলে বসেছে এজন্য মূলত কাউকে বাসায় না দেখের সে অনেকটা চিন্তিত হয়ে পরে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করে গম্ভীর কন্ঠে রিদ আশিক বলে…….

—” সবাই কখন আসবে? আর কতটা সময় লাগবে আসতে?

.
রিদের গম্ভীর কন্ঠ শুনে আশিক ঝটপট করে দ্রুত উত্তরে বলে উঠে…..
.

—” এইতো আর আধাঘন্টা লাগবে বস্। অল মোস্ট আমরা এসেই পরেছি…..

.
—” আচ্ছা আয়! আর শুন তোর ম্যাডাম এখন কি করছে? সারাদিন কোনো রকম পাগলামি বা ঝামেলা করেনি তো কারও সাথে?

.
—” বস ম্যাডাম তো এখন আপনার দাদীর সাথেই গাড়িতে বসে আছে। কিন্তু মনে হয় কোনো কারণে ম্যাডাম রাগ করে আছে। আজ সারাটা দিন একটাবারের জন্যও আপনার দাদীকে ছেড়ে কোথাও যায়নি আর না খুশি মনে কারও সাথে কথা বলেছে। কেমন একটা মনমরা হয়ে ছিল রিসিপশন পার্টিতে।,(চিন্তিত হয়ে)

.

আশিককের কথা গুলো শুনে রিদ কিছু না বলে আশিকের কলটা কেটে দিয়ে হালকা কঁপাল কুঁচকে এক পলক ফোনটার দিকে তাকিয়ে থেকে ভাবতে থাকে হঠাৎ করে তাঁর বউ এমন মনমরা হয়ে থাকার কারণটা কি হতে পারে,, সে চাইলেও তাঁর বউকে কিছুই জিজ্ঞেসা করতে পারবে না এইমূহুর্তে। কারণ সে ইচ্ছে করেই রাগ দেখিয়ে বউ থেকে দূরে দূরে থাকছে সেদিনের পর থেকে, বউ থেকে দূরে থাকলে ও বউয়ের প্রতিটা সেকেন্ডের খবর রাখছে সে পদে পদে, কথা গুলো ভেবেই রিদ আবারও সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিজের রুমে চলে যায়, আপাতত তাঁর অন্য কারও হাতে খেতে পছন্দ না। হেনা খাঁন না থাকায় না খেয়েই শুয়ে পরতে হয় তাঁকে,,,

.

.

🍁
সকাল আটটা বাজে খাঁন বাড়িতে নতুন মেহমান আমেজে ভরপুর হয়ে আছে, আর এতো এতো উৎফুল্লতা কারণ হলো নিহা ও ফয়সালকে নিয়ে, ওদের নিয়েই এখন সবাই মহাব্যস্ত আপ্যায়ন করা জন্য, নিহা ও ফয়সাল এর রিসিপশন পার্টির পর তাদেরকেও আসতে হয় খাঁন বাড়িতে নিয়ম রক্ষাতে,, আর সেই নিয়ম রক্ষাতের সূত্র ধরেই খাঁন বাড়ির সবাই এখন এতো এতো ব্যস্ততা মূল কারণ,,,

.
মায়া সেই ব্যস্ততার সাথে পাল্লা দিয়ে আড্ডায় মেতে ওঠে সবাইকে নিয়ে, যদিও মায়ার মন-মানসিকতা ভালো নেই তারপরও সবার সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার জন্য সেই চেষ্টা চালিয়ে যেতেই আড্ডায় বসতে হয় মায়াকে,, নিহা, ফয়সাল, আরিফ, সাহিল (ফয়সালের চাচাতো ভাই) শিখা, (ফয়সালের চাচাতো বোন) সবাই এক সাথে বসে গল্প করলেও আরিফ সবারই থেকে খানিকটা দূরত্ব বজায় রেখে বসেছে,,

.
আরিফ সবার সাথে বসে থাকলেও তার মনো স্থির করে আছে কাজের মধ্যে সকাল সকাল কিছু জরুরি কাজের জন্য ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে তাঁকে, এখানে বসে থাকা কোনো ইচ্ছাই ছিল না তাঁর কিন্তু হেনা খাঁনের জোরে বাঁধ্য হয়ে বসে থাকতে হচ্ছে তাঁকে,, যদিও মাঝে মাঝে চোখ তুলে সবাইকে এক পলক দেখে আবারও কাজে মনো স্থির করছে,,,,

.
ফিহা ঘুম ঘুম চোখে ঢুলতে ঢুলতে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে সবার সাথে আড্ডায় বসে পরলেও ঘুমের রেশটা কাটাতে না পারার জন্য হালকা হালকা ঝিমাচ্ছে, কারণ সকাল সকাল হেনা খাঁন সবাইকে ডেকে তুলে দিচ্ছেন তাই ঘুমটা সম্পূর্ণ না হওয়ার কারণে এখন তাঁকে সবার সামনে বসে বসে ঝিমাইতে হচ্ছে,,

.
ফিহা ঘুম ঘুম চোখে ঢুলতে ঢুলতে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামার সময় আরিফ বেখেয়ালি ভাবেই সিঁড়ি দিকে হঠাৎ তাঁর চোখে যায়, ফিহাকে নিচে নামতে দেখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ফিহার ঘুম জড়ানো চোখ মুখ দিকে, কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর আস্তে করে নিজের চোখ সরিয়ে আবারও ল্যাপটপ তাকায়, ফিহা গিয়ে বেখেয়ালি ভাবেই সাহিলের পাশে বসে পরতেই চোখে তুলে তাকায় সাহিল ফিহার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর সবার সামনেই সাহিল ফিহাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে…….

.

—” গুড মুর্নিং,

.
সাহিলের এমন কথায় ফিহা হালকা হেঁসে তাকিয়ে থেকে মিষ্টি করে বলে ওঠে…..

.
—” গুড মুর্নিং…..

.
—” কি ঘুমের রেশটা কি এখনো কাটে নি,,

.
—” তেমন কিছু না ঐ একটু আরকি, সকাল সকাল উঠতে হয়েছে তো তাই আরকি,,,, (মিষ্টি হেঁসে)

.
—” তাই বুঝি, তবে আপনি চাইলে আমি আপনার এই ঘুমের রেশটা কাটাতে পারি। তার জন্য আপনাকে কষ্ট করে আমার সাথে বাগানে যেতে হবে হাটার জন্য,, কি যাবেন,,, (ভ্রুঁ কুঁচকে)

.
সাহিলের এমন কথায় কপাল কুঁচকে তাকায় ফিহা পরে সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে ওঠে……

.

—” আচ্ছা তাই, আপনি কি আমার ঘুমটা কাটাতে চাইছেন নাকি নিজেকে বোরিং ফিল করা থেকে বাঁচাতে চাইছেন কোনটা? নাম দিচ্ছেন আমার আর কাজ হচ্ছে আপনার হুমমম…….

.
ফিহার এমন কথায় সাহিল খুব মিষ্টি হেসে লাজুক বগিতে বলে উঠে……

.
—” ঐ আরকি! আমরা আমরাই তো বুঝতে পারছেন না কেন, আপনি আমাকে কোম্পানি দিবেন আর আমি আপনাকে এন্টারটেইনমেন্ট করব সিম্পল….

.
সাহিলের কথা হেঁসে উঠে ফিহা সুমতি জানিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে পরে ফিহা সাথে সাথে সাহিল ও উঠে দাঁড়ায় দুজন একসাথে বাগানে যাওয়ার জন্য,,, ফিহা সাহিলকে নিয়ে বাহিরে যাওয়ার সময় চোখ পড়ে ড্রয়িংরুমে এক কোণায় আরিফকে ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকতে।আরিফ যদিও কাজের জন্য বসে ছিল কিন্তু সাহিল আর ফিহা কথায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তাদের দুজনের দিকে কাজ রেখে, আরিফের মোটেও ভালো লাগছে না ফিহার আর সাহিলের সক্রিয়তাটা। এতো আদুরে সুরের কথা বলাটা,, ফিহা আরিফের দিকে এক পলক তাকিয়ে থেকে নিজেকে শান্ত রেখে হাসি মুখে বেড়িয়ে পরে সাহিল কে নিয়ে,, নিজেকে আরিফের কাছে আর ছোট করবে না এমনটা মনেমনে স্থির করে রেখেছে সে, আর কখনোই আরিফের রাস্তায় কাটা হয়ে থাকতে চাই না সে, আরিফের যা ভালো লাগে সে তাই করুক, কখনোই আর আরিফকে নিজের সাথে জাড়াতে চাইবে না……

.

.

🍁
অফিসের জন্য রেডি হয়ে দুপদাপ পা ফেলে নিচে নেমে আসে রিদ, দুপদাপ পায়ে শব্দ কানে আসতেই আস্তে করে মাথা তুলে তাকায় সিঁড়ি দিকে, চোখের সামনে রিদকে দেখে কোনো রকম প্রতিক্রিয়া না করে আবারও আস্তে করে নিজের মাথাটা নিচু করে ঘাপটি মেরে বসে থাকে সোফায় মায়া, রিদ সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে মায়াকে এমন করতে দেখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতে তাকাতে ডাইনিংয়ে গিয়ে বসে পরে নাস্তা করার জন্য, রিদকে ডাইনিংয়ে বসতে দেখে হেনা খাঁন হাসি মুখে নাস্তা দিয়ে নিজের কাজে চলে যায়। রিদ নিজের নাস্তায় হালকা চামচ নাড়াতে থাকে মায়াকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখতে দেখতে, মায়া মন খারাপ ভাবটা ফেসে বজায় রেখে আঁড়চোখে রিদের দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হয় দুজনের। মায়া সাথে সাথে নিজের চোখ নামিয়ে নিলেও রিদ তখনো তাকিয়ে ছিল তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মায়ার দিকে।

.

রিদ নিজের নাস্তায় চামচ নাড়িয়ে টংটং শব্দ করছে। তার কারণ মায়াকে সে নিজের পাশে বসে থাকতে দেখতে চাইছে কিন্তু মুখে কিছুই বলছে না আর নাহ কোনো রকম ইশারা করছে মায়াকে শুধু তাকিয়ে আছে মায়ার দিকে। মায়াও রিদের এমন দৃষ্টি অপেক্ষা করে নিজের মতো করে কিছুটা সময় ঘাপটি মেরে বসে ছিল সোফার মধ্যে। কিন্তু পরে আর নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে ধীর পায়ে এগিয়ে যায়, রিদের পাশের চেয়ারটা হালকা হাতে টেনে বসে পরে নত মস্তিষ্কে।

.

রিদ মায়া মন খারাপের কারণটা বুঝতে না পেরে কিছুটা সময় তাকিয়ে থেকে আস্তে করে নিজের নাস্তা খাওয়ায় মনোযোগী হলো মায়ার দিকে তাকিয়ে থেকে। রিদের প্রতিটা চামচ নাস্তা মুখে তুলছে মায়া দিকে তাকিয়ে থেকে। মায়া হঠাৎ চুপ করে যাওয়াটা রিদের চোখে পরছে ভিষণ। হঠাৎ করেই বা কি এমন হলো যে, তাঁর বউয়ের এমন চুপচাপ হয়ে গেল সেটাই বুঝতে পারছে না রিদ……

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here