#দেওয়ানা(আমার ভালোবাসা)
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৭৭
.
🍂
বাগানে দাঁড়িয়ে আছে মায়া, দাঁড়িয়ে আছে বললে ভুল হবে বাগানে মধ্যে অদ্ভুত সব কাজ করছে এই মূহুর্তে মায়া, বাগানের অতি সুন্দরতম মূর্তিটার জরিয়ে ধরে কানে ফিসফিস করে কিছু বলে যাচ্ছে নিজের মতো করে, হয়তো নিজের কাউকে না বলা কথা গুলো সবসময়ের মতো এই বারও বলছে নিজের পরিমাটাকে,,,,,
.
মায়ার ইশারা ইংগিতে বলা কথা গুলো মাটির মূর্তিটা অবধি পৌঁছাতে পারছে কিনা তা জানে নেই কিন্তু কারও একজনের কান অবধি ঠিকই পৌঁছাচ্ছে,,, সেই ব্যাক্তি মায়ার ফিসফিস করে করা কথা গুলো শুনতে শুনতে বাগানে মায়ার সামনে এসে দাড়িয়ে পরে মায়ার দিকে তাকিয়ে থেকে,, কেউ মায়ার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে সেদিকে মায়ার কোনো খেয়াল নেই সে নিজের মতো করে সামনে দিকে ঘুরে মাটির মূর্তিটাকে জরিয়ে ধরে ননস্টপ ফিসফিস করেই চলছে,,, মায়ার এমন ফিসফিস করার মধ্যে দিয়েই পিছনে থাকা ব্যাক্তি বলে উঠে……..
.
—” বউ এটাকে ভালোবাসা বলে, বউ তুমি তোমার স্বামীকে ভালোবাসতে শুরু করেছো এটা পাবলিক জানে সবাই…..
.
রিদের এমন কথায় মায়া চমকে উঠে সাথে সাথে পিছনে ঘুরে রিদের দিকে তাকায় পরে কনফিউজড হয়ে বলে উঠে……
.
—” মানে….
.
—” মানে হলো তুমি এতোক্ষণ ধরে মূর্তিটাকে কানে কানে বলছিলে, যে আমি তোমার সামনে আসলে তোমার বুক ধুকপুক করে, আমি তোমার কাছে আসলে কেমন কেমন জানি লাগে তোমার, আমাকে তোমার কাছে আদুর আদুর লাগে আমার সাথে সারাক্ষণ থাকতে মন চাই আমাকে তোমার পেটের ভিতর রাখতে মন চাই,, এই এতো কিছু যে তোমার মন চাই সেই সব চাওয়াটাই হলো ভালোবাসা,,, মানে হলো তুমি তোমার স্বামীকে ভালোবাসতে শুরু করেছো, সেটাই বলছিলাম আমি তোমাকে…….
.
রিদের এমন কথায় মায়া চমকে উঠে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থেকে অবিশ্বাস কন্ঠে বললো…..
.
—” আপনি এতো এতকিছু কি করে জানেন, আমিতো ফিসফিস করে বলেছি সব গুলো কথা তাহলে আমি কি করে শুনতে পেলেন আমার শব্দ বিহীন কথা গুলো,, আমিতো শব্দ করে কথা বলি নি…..
.
মায়ার এমন কথায় রিদ বাঁকা হেঁসে একটা হাত বাড়িয়ে ইশারা করে বললো…..
.
—” নেমে আসো বলছি…..
.
নিজের করা প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে মায়া জিদ্দি সুরে ঠোঁট উলটিয়ে গাল ফুলিয়ে বললো……
.
—” না, আগে শুনব…..
.
মায়াকে জেদ্দ করতে দেখে আরেক দফা বাঁকা হাসে রিদ, বউ এখন তার সাথে জিদ করতেও শিখে গেছে ভালো করে, যে বউ তার সামনে আসলে ভয়ে সিটিয়ে যেতো সে এখন তার সাথে জিদ করে সবকিছুতে, কথাটা ভেবেই রিদ এগিয়ে গিয়ে মায়াকে কোলে তুলে নেই সাথে সাথে মায়া কিছু বুঝে উঠার আগেই রিদ মায়াকে কোলে তুলে নেই, এতে করে মায়া খানিকটা ভয় পেয়ে সাথে সাথে রিদের গলা জরিয়ে ধরে শক্ত হাতে, মায়াকে এমন করতে দেখে রিদ মায়ার দিকে খানিকটা ঝুঁকে রহস্য হাসি দিয়ে আস্তে করে বলে উঠে……
.
—” ম্যাডামের কি মনে হয়, ম্যাডামের লুকায়িত কথা গুলো আমি জানি না আহ, তুমি যবে থেকে আমার সামনে এসেছো তখন থেকে আমি তোমার না বলা কথা গুলো তোমার লুকায়িত সব কথা গুলো জানি আমি, সেটা এখন থেকে নয় গত একটা বছর ধরেই জানে আসচ্ছি ক্রমাগত আমি, আর তুমি যে রোজ রোজ এই সব মূর্তির সাথে ফিসফিস করে পেটের কথা গুলো বলো সেই গুলোও জানি আমি,,,
.
রিদের এমন কথায় মায়া চমকে উঠে চোখ বড় বড় বললো…..
.
—” কি করে…..
.
মায়াকে চমকে উঠতে দেখে রিদ আরও খানিকটা ঝুঁকে মায়ার নাকে সাথে নাক ঘষে দিয়ে রহস্য নিয়ে বললো…..
.
—” ম্যাডামকে সব বলা যাবে না বললে ম্যাডামের মনের কথা গুলো আমি আর শুনতে পারবো না, তখন আমার ম্যাডাম পাগলামো করা ছেড়ে দিবে আর সে পাগলামো করা ছেড়ে দিলে আমার কি হবে হুমমম…..
.
রিদের এমন কথায় মায়া অনুরোধ সুরে বলে উঠে…..
.
—” এমন করছেন কেন, বলুন না প্লিজ…..
.
—” উঁহুম…..
.
রিদের এমন কথায় মায়াও জিদ ধরে নাহুচ সুরে বললো….
.
—” তাহলে আমি কথা বলবো না আপনার সাথে….
.
—” তাহলে আমি আপনাকে খেয়ে ফেলবো…..
.
—” রাক্ষস…..
.
—” তাই তাহলে দেখাই রাক্ষস কাকে বলে……
.
কথাটা বলেই রিদ মায়া কোলে নেওয়া অবস্থায় নিজের সাথে চেপে ধরে কিছু একটা করতে যাবে তার আগেই মায়া রিদকে ধাক্কা দিয়ে রিদের কোল থেকে নেমে বাগানের ভিতর উল্টো ঘুরে দৌড় লাগায় মায়াকে দৌড়াতে দেখে রিদও মায়ার পিছন পিছন দৌড় দিয়ে মায়ার একটা হাত শক্ত করে ধরে ফেলে, মায়া হাসতে হাসতে সামনে দিকে তাকিয়ে থেকে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে রিদও মায়ার হাত ধরে রাখে এমনত অবস্থায় পিছন থেকে কেউ এক বলে উঠে…..
.
—” এখানে কি হচ্ছে……
.
কারও কন্ঠ কানে আসতেই চমকে উঠে মায়া ও রিদ দুজনেই পিছন ফিরে তাকায়, পিছন ঘুরে তাকাতেই তখনি চোখে পড়ল আয়নকে, চোখ সামনে আয়নকে ভ্রুঁ কুচকে নিজেদের দিকে তাকাতে দেখে মায়া ভয়ে কাচুমাচু করতে করতে হাত মুচড়িয়ে রিদের হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিতে চাই আয়নের ভয়ে যদি হেনা খাঁনকে বলে দেয় সে এতক্ষণ রিদের সাথে ছিল এই ভয়ে,,, কিন্তু রিদের এতে কোনো ভাবান্তর নেই আয়নকে চোখে সামনে দেখেও তখনো শক্ত করে মায়ার হাতটা চেপে ধরে আয়নের দিকে তাকিয়ে থাকে স্বাভাবিক দৃষ্টি বগিতে,,,,,,
.
রিদ মায়ার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে কপাল কুচকে এলো আয়নের, টানা দশদিন লন্ডন থেকে এই মাত্র বাড়িতে ফিরলো আয়ন, বাড়িতে আসতেই চোখের সামনে এমন কিছু দেখবে সেটা জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না আয়ন, আয়ন মনে করছে রিদ মায়াকে মারার জন্য বা শাসন করার জন্য এমন শক্ত করে হাত চেপে ধরে আছে কারণ মায়ার হাতটা মুচড়া মুচড়িতে আর ভয় পেতে দেখে তাই প্রকাশ পাচ্ছে আয়নের সামনে, আয়ন রিদ সম্পর্কে ভুল ধারণা নিয়ে মায়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে থেকে রিদকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে………
.
—” রিদ কি করছিস ওর হাতটা ছাড়….
.
আয়নের এমন কথায় আরও ভয় পেয়ে যায় মায়া তাই এখন আবারও হাতটা মুচড়াতে থাকে জোরে জোরে রিদ মায়াকে এমন করতে দেখে খানিকটা রেগে যায়, মেয়েটি এত কেন ভয় পাচ্ছে সেটা বুঝতে পারছে না রিদ, সে কি জানে না তার স্বামী পাশে থাকতে ওকে কেন কেউ নিয়ে যেতে পারবে ওর কাছ থেকে এমন সব চিন্তা ভাবনায় মাঝে রিদ রেগে কর্কশ কন্ঠে বলে উঠে……
.
—” কি সমস্যা কি তোমার এমন করছো কেন তুমি, চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো নারে……
.
রিদের এমন কর্কশ গলায় কথা গুলো শুনেই মূহুর্তে চুপ হয়ে যায় মায়া কোনো রকম নড়াচড়া না করে নিজের মাথাটা নিচু করে দাঁড়িয়ে পরে রিদের সামনে, রিদ মায়াকে শান্ত হতে দেখে নিজের দৃষ্টি সরিয়ে এবার রিদের দিকে স্থির রাখে পরে ভ্রুঁ কুঁচকে বলে উঠে…..
.
—” তুই যেন কি বললি আয়ন আবার বলতো, আসলে বউকে শান্ত করতে হয়েছে আমার তাই তোর কথা ঠিক করে শুনতে পাইনি,,, তুই কি আবার রিপিট করবি নাকি বউ নিয়ে চলে যাবো আমি…..
.
রিদের এমন গা জ্বালানো কথায় মূহুর্তে আয়ন নিজের দুটো হাতে মুষ্টি বদ্ধ করে নিয়ে নিজের রাগটা কন্ট্রোল করে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে রিদকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে……
.
—” মায়ার হাতটা ছাড় রিদ…..
.
—” কেন, আমি কি তোকে বলে নিজের বউয়ের হাতটা ধরবো নাকি….
.
রিদের বারবার গান জ্বালানো কথায় তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে আয়ন, মায়াকে বারবার বউ বউ বলে সম্মোধন করাটা যেন আয়নকে আরও বেশি রাগি দিচ্ছে দৃঢ় ভাবে আর আয়ন সেই রাগের বশবতী হয়ে ক্ষেপ্ত কন্ঠে বলে উঠে…..
.
—” বেশি হচ্ছে কিন্তু রিদ, আর মায়া তো সাথে কম্ফোর্টেবল ফিংল করছে না ওহ তোকে ভয় পাচ্ছে, তাই ওর হাতটা ছাড়…..
.
আয়নের এমন কথায় রিদ পাল্টা প্রশ্ন করে বললো…..
.
—” আমার বউ তোকে বলেছে যে ওহ ওর স্বামীর সাথে কম্ফোর্টেবল ফিল করছে না এমন কিছু?……
.
.
চলবে………
