#দেওয়ানা(আমার ভালোবাসা)
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৮৭
.
🍂
গভীর রাত ছাঁদের ওপর খুলা আকাশে নিচে মন্ত হয়ে বসে আয়ন,, চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকারে ছেয়ে আছে আয়নের জীবনের মতো, হঠাৎ মায়া পরিবর্তন আয়নকে ছেড়ে চলে যাওয়া কিছুই মেনে নিতে পারছে না আয়ন, তাই তো বিগত কয়েকদিন ধরেই আয়ন ইচ্ছা করেই মায়ার সামনে পরছে না লুকিয়ে বেড়াচ্ছে পরিবার ও মায়া থেকে,, আর আয়ন পরিবারকে বলেছে সে কিছুদিন যাবত একটু কাজের চাপে আছে তাই লেট হচ্ছে বাড়িতে আসতে,,,,,
.
আয়নের এই মিথ্যাটা আয়নের মা-বাবাকে বিশ্বাস করাতে পারলেও বিশ্বাস করাতে পারিনি হেনা খাঁন ও আরাফ খানকে, হেনা খাঁন আর আরাফ খান জানে আয়নের ফিলিংস সম্পর্কে তারা এটাও জানে মায়া রিদকে চাই রিদও মায়াকে চাই, সবচেয়ে বড় কথা রিদ মায়াকে ভালোবাসে আর রিদ যাহ একবার চাই তা কখনো কারও জন্য স্যাকরিফাইস করে না সেটা ওর নিজের ভাই হোক না কেন তা রিদের দেখার প্রয়োজন বোধ করে না,, আর এখন তো নিজের বউ বলে কথা এমনই এমনই ছেড়ে দিবে সেটা কোনো কালেই হবার নয়,, তাই হেনা খাঁন ও আরাফ খান দুজনই আয়নকে এই বিষয়ে কিছু না বলে একা ছেড়ে দিয়েছে আয়নকে কারণ আয়ন গম্ভীর মুখের মানুষ তাঁকে বুঝানোর প্রয়োজন নেই নিজ দ্বায়িত্বে সবটা বুঝবে নিজে নিজেই হয়তো একটু সময় লাগবে তারপরও ঠিক বুঝবে আয়ন কিন্তু যদি কেউ আয়নকে বুঝাতে যায় মায়ার বিষয়ে তো এতে বিপরীত কিছুও হতে পারে আয়ন বিষয়টা না বুঝে উল্টো রিয়েক্ট করে বসতে পারে তাই কারণ হেনা খাঁন ও আরাফ খানও দ্বায়ী আয়নের এমন অবস্থার জন্য ওনারা দুজনই আয়নের ফিলিংস সম্পর্কে জেনে আয়নকে সুমতি দিয়েছে মায়াকে ভালোবাসার আর আজ তারা আয়নের কথা বলতে পারছে না রিদের ভয়ে,,,
.
আয়ন রাতের আবছা আলোয় নিশ্চুপে আকাশে দিকে তাকিয়ে থেকে নিরবে চোখের জল পরছে, আয়নের এত কষ্টটা কাকে বুঝাবে, কে শুনবে আয়নের মনে শত কষ্ট গুলো, আয়নের এখন নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে, সেতো কখনো জীবনে কাউকে ভালোবাসতে চাইনি তারপরও ভালোবাসাটা হঠাৎ করেই চলে আসে এখন আবার চলে গেছে,, আর এখন সেই ভালোবাসার থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে তাঁকে এই কষ্টটা যেন গুইয়ে গুইয়ে জ্বলছে আয়নে ভিতরে,, আয়নের এমন অশ্রু বিষর্জন সময় হঠাৎ করে আয়নে পাশে কেউ বসে পরে নিরবে, নিজের পাশে কারও উপস্থিত টের পাওয়ায় আয়ন চমকে উঠে দ্রুততার সঙ্গে ওপাশ ফিরে নিজের চোখের জল মুছে ফেলার সময় পাশের জন্য ব্যাক্তিটি অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠে………..
.
—” নিজের চোখের জল লুকাস না ভাই এটাকে পরতে দেয়,, আমি কিছু মনে করবো না ক্যারি অন ভাই………
.
ফিহার গম্ভীর মুখের কন্ঠ শুনে আয়ন নিজের চোখের জল দ্রুত মুছে ফিহার দিকে তাকিয়ে থেকে নিজেকে স্বাভাবিক করে বিনিময় সুরে বলে উঠে…….
.
—” তুই কিহ বেশি পেঁকে গেছিসরে বুড়ি…….
.
আয়নের কথায় ফিহা নিজের ফেঁইসটা খানিকটা মন খারাপ ভাব বজায় রেখে গাল ফুলিয়ে আয়নকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে…….
.
—” ভাই তোমার বুড়ি এখন বিয়ে হতে চলেছে, তাই সে এখন অনেকটাই পেকে গেছে বরাবর মতোই হুহহহ……….
.
ফিহার এমন কথায় আয়ন মজা করে বলে উঠে……
.
—” ওহ হ্যাঁ তাই তো বুড়ী তো এখন সত্যি পেঁকে গেছে বিয়ে যে করছে………
.
আয়নের এমন হেয়ালিপনা কথায় ফিহা গাল ফুলিয়ে বিরক্ত সুরে কথা বলে উঠে…….
.
—-” উফ ভাই………
.
ফিহাকে গাল ফুলাতে দেখে আয়ন কৃত্রিম হেঁসে বলে উঠে……….
.
—” কিহ ভাই………
.
ফিহা আয়নে কৃত্রিম হাসতে দেখে এক পলক আয়নের দিকে তাকিয়ে থেকে আবারও আকাশে দিকে তাকায় পরে শান্ত সুরে আয়নকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে……..
.
—” একটা জিনিস কি ভাই জানিস, জীবন কখনো কারও জন্য থেমে থাকে না, সে তার নিজ গতিতে চলতেই থাকে তাই আমাদেরও উচিত অতীত মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া, অতীতে যাহ কিছু হারিয়েছি সেটা হয়তো আমাদের জন্য ভালো ছিল তাই কষ্ট হয় কিন্তু আমরা সামনে না আগালে বুঝবো কিভাবে যে আমাদের জন্য সামনে বেস্ট কিছু অপেক্ষা করছে,,,, তাই আমাদের উচিত থেমে না থেকে সময়ে সাথে সাথে এগিয়ে চলা,, আমাদের জীবনকে নতুন করে একটা সুযোগ দেওয়া……..
.
ফিহার এমন শান্ত সুরে কথা শুনে মূহুর্তেই চমকে উঠে আয়ন, ফিহা যে আয়নকে মায়ার বিষয়ে বুঝানো চেষ্টা করছে তা বুঝার বাকি নেই আয়নের,, কিন্তু আয়ন এটা বুঝতে পারছে ফিহা মায়ার বিষয়টা কিভাবে জেনেছে,, তাই আয়ন চমকে ফিহা দিকে তাকাতেই ফিহা আগের নেয় আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠে……….
.
—” ভাই জানিস তুই যার জন্য কষ্ট পাচ্ছিস তার সামনে যেতে চাইছিস না, নিজেকে শাস্তি দিচ্ছিস যদি এটা সে(মায়া) তুই ওর জন্য নিজেকে কষ্ট দিচ্ছে তাহলে মায়াই হয়তো তোর থেকে আরও বেশি কষ্ট পাবে,, আর নিজেকে দোষী ভেবে তোর সামনে আসতে চাইবে না তোর থেকে আরও অনেকটায় দূরে দূরে থাকবে,, তখন হয়তো তুই নিজের সাথেই চোখ মিলাতে পারবি না,, তোর নিজেকে তখন অপরাধী মনে হবে আর কষ্টও পাবি কেন তোর থেকে মায়া দূরে দূরে থাকছে সেটা নিয়ে,,, ভাই আমরা যে কাউকে ভালোবাসতেই পারি,, ভালোবাসাটা খারাপ না, তবে আমরা যাকে ভালোবাসতেছি তার লাইফে অন্য কেউ আছে কিনা তার ভালোবাসার মানুষ সেটা জানতে হবে প্রথমে,, যদি থাকে তো আমাদের ফিলিংস সেই ব্যাক্তির সামনে প্রকাশ না করে চেপে রাখায় শ্রেয়,,, কিন্তু যদি না থাকে তাহলে তাকে পাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা কর যদি বুঝতে না চাই তোর রিদ ভাইয়ে মতো হহ জোর করে চিনিয়ে নে,,, আমি কিন্তু আরিফের ক্ষেত্রে তাই করছি জোর করে ওকে আমার করে নিয়েছি কারণ আমি জানি আরিফের ভালোবাসাটা শূন্য কৌঠাটায় পরে আছে,, দখল করে নিচ্ছি জোর করে আর এটা আমি রিদ ভাইয়া কাছ থেকেই শিখেছি,, ভাই তুই কিন্তু জানিস মায়া খুবই বোকা টাইপের একটা মেয়ে,, একটা বিষয় যদি ওকে ভেঙ্গে গুলিয়ে বুঝানো হয় তো সেটাও উল্টো বুঝে পাল্টা কাজ করে,, আর ওর এমন বোকা বোকা আচরণেই সবাইকে মায়াকে এতটা পছন্দ করে হয়তো তুই আর রিদ ভাইও ঠিক একিই কারণে মায়াকে পছন্দ করিস,,,, তুই মায়াকে পছন্দ করিস এটা বড় কথা নয়,, মায়া কাকে চাই সেটা বড় কথা,, তুই যদি মায়াকে ভালোবাসে বিয়ে করিস আর মায়া যদি তোকে ভালো না বেসে অন্য কাউকে ভালোবাসতো তো ভাই তুই কি এটা মেনে নিতে পারতিস, না একদমই পারতিস না তাই মাঝে মাঝে ভালোবাসার মানুষটা সুখের জন্যও আমাদেকে অনেক কিছু সয্য করতে হয় আর সেটা তুই না হয় করলি,,,
.
কথা গুলো শেষ করেই ফিহা দ্রুত আয়নের পাশ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আয়নকে একা রেখেই চলে যেতে থাকে আর আয়ন ফিহা কথা গুলো মানে বুঝতে পেরে চুপচাপ নিচের দিকে তাকায়,, ফিহা সামনে দিকে যেতে যেতে হঠাৎ থেমে পিছন ফিরে আয়নকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে…….
.
—” কাল থেকে আমার বিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হতে যাচ্ছে, তাই বোন হিসাবে আমি আমার ভাইকে আগের মতো করে আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দেখতে চাই,, এটা আমি আশাবাদি আমার ভাইয়ের কাছে……….
.
কথা গুলো বলে ফিহা আর এক মূহুর্তেও থাকিনি ছাঁদে আয়নের সামনে দ্রুততা সঙ্গে সাথে সাথে নিচে চলে যায়,, কারণ ফিহা যে কারণে আয়নের কাছে এসে ছিল সেটা করে ফেলেছে আয়নকে বুঝানো হয়ে গেছে বাকিটা আয়ন নিজ দ্বায়িত্বেয় করে নিবে,,,,
.
আয়ন মন্ত হয়ে এতক্ষণ ফিহার সবগুলো কথা শুনে আবারও আকাশে দিকে তাকায় অনুভূতি শূন্য চোখে কিছুক্ষণ চুপ থেকে থেকে হঠাৎ করে গলা ফাটিয়ে কান্নায় মেতে উঠে চিৎকার করে,, কষ্টে যেন বুকটা ফেটে যাচ্ছে আয়নের কিন্তু কাউকেই বুঝাতে পারছে না,,,,,,
.
হলুদ শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে মায়া, চারপাশে হৈ হুল্লোড় জমজমাট পরিবেশ সবার মুখে খুশিতে চকচক করলেও মায়ার চোখে দুটো টলমলে ভাব,, তাই কাউকে কিছু না বলে ড্রয়িংরুমে এক পাশে দাঁড়িয়ে নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে বার বার নিজের চোখ মুচ্ছে আর চারপাশে তাকাচ্ছ………
.
চলবে………………..