দেওয়ানা( আমার ভালোবাসা) #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া #পর্বঃ_৮৯

0
834

#দেওয়ানা( আমার ভালোবাসা)
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৮৯

.
🍂

কান্তিময় শরীরে বাড়িতে প্রবেশ করে রিদ,, বেখেয়ালি বাড়িতে ঢুকতেই হঠাৎ করে চোখে পড়ল বাড়ির চাকচিক্যময়,, খান বাড়ি ডেকোরেশন দেখে মূহুর্তে ভ্রুঁ কুঁচকে আসে রিদের,, আজ যে ফিহার হলুদ সন্ধ্যা সেটা একদমই ভুলে বসে আছে রিদ,, সারাদিনের কাজের চাপের জন্য কিছু মনে নেই তার,,, তাই সবকিছু মনে করে ড্রয়িংরুমে ঢুকে কান্তিময় শরীরে চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিজের বউকে খুঁজে চলছে রিদ,, কাজে চাপে মায়ার খবরও একদমই নিতে পারিনি রিদ, তাই এখন এক পলক বউকে দেখার আশার রিদ তৃষ্ণান্ত চোখে চারপাশে চোখ বুলিয়ে নেই,, কিন্তু কোথাও মায়াকে দেখতে না পেয়ে কপাল কুচকে এলো রিদের,, বাড়ির সবাই এখানে থাকলে তার বউ যাবে কোথায় বিষয় ভেবেই আবারও তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় চারপাশে ভালো করে,,,

.

রিদ চোখ বুলাতে বুলাতে হঠাৎ করেই ফিহার দিকে তাকাতেই চোখে পড়ল মায়াকে,, সেখানে বসে বসে হাতে মনোযোগ সহকারে মেহেদী লাগাচ্ছে মায়া,, রিদ মায়াকে স্বাভাবিক অবস্থায় মেহেদী লাগাতে দেখে স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে রিদ,, কান্তিময় শরীরে নিয়ে আস্তে আস্তে হেঁটে সামনে আসে মায়ার দিকে তাকিয়ে থেকে,, পরে রিদ ফিহার সামনে এসে দাড়াতেই ফিহা হঠাৎ করে বলে উঠে…………..

.

—” রিদ ভাই তুমি এতক্ষণে ফিরেছো আমার হলুদ অনুষ্ঠান শেষ করে,,,,

.

ফিহার এমন কথা রিদ ফিহা দিকে তাকিয়ে থেকে কান্তিতে শরীরে গম্ভীর মুখে বলে উঠে……..

.

—” হুমমম, কাজে চাপ একটু বেশি ছিল তাই টাইমলি পৌঁছাতে পারিনি হলুদে তাই লেট হয়েছে……..

.

রিদের এমন শান্ত সুরে কথা শুনে মূহুর্তেই খুশি হয়ে যায় ফিহা,, কারণ রিদ কখনো তার কাজের জন্য কাউকে কৈফিয়ত দেওয়াটা পছন্দ করে না,, আর আজ শান্ত সুরে ফিহাকে কথা গুলো বললো এতেই ফিহার খুশি হওয়া ভাবটা যেন আরও এক ধাপ বেড়ে যায়,,, তাই খুশি মনে ফিহা আস্তে করে চুপ করে যায় আর কোনো রকম কথা না বলে,, যদি ফিহা আরও কিছু জিজ্ঞেসা করে তো রিদ দমক দিয়েও বসাতে পারে,, রিদ ফিহাকে চুপ করতে দেখে আবারও চোখ তুলে তাকায় মায়ার দিকে মায়া তখনো রিদের দিকে তাকাচ্ছে না হয়তো রিদের সাথে কোনো কারণে রাগ করে বসে আছে,, তাই জেদ ধরে বসে আছে শক্ত করে রিদের দিকে না তাকিয়ে,,, রিদ মায়ার এমন আচরণ দেখতে পেয়ে বুঝতে পারে বউ তার সাথে ভিষণ বাজে ভাবে রাগ করে আছে,, হয়তো আজ মায়াকে সময় না দেওয়ার জন্য রিদ সম্পূর্ণ বিষয়টি বুঝতে পেরে করুণ দৃষ্টিতে মায়ার দিকে তাকিয়ে থেকে আহত সুরে মায়াকে উদ্দশ্যে করে শুনিয়ে শুনিয়ে ফিহাকে বলে উঠে………

.

—” ফিহা তোকে বলেছিতো সারাদিন ব্যস্তছিলাম,, কাজের চাপটা একটু বেশিই ছিল তাই আসতে পারিনি,, তাছাড়া এক সাপ্তাহ পরে আমাদের বিয়ে তার জন্য সুইজারল্যান্ড যেতে হবে সবাইকে আর সেই এ্যারেজমেন্ডের কাজেও অনেকটা ব্যস্ত ছিলাম তাই তোর খবর নিতে পারিনি,, তুই কি বুঝতে পারছিস আমি কি বলছি তোকে হুমমমম……..

.

রিদের এমন কথা মায়ার আরচোখে রিদকে এক পলক দেখে নিয়ে গাল ফুলিয়ে রিদকে পিছন মোড়ে বসে পরে এতে করে রিদের যেন অসহায় ফেসটাতে আরও একধাপ অসহায়ত্ব বেড়ে যায়,,, করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মায়ার পিছনের দিকে,,, আর ফিহা রিদের এমন ইশারা ভিত্তিক কথার মানে বুঝতে পেরে পাশে তাকিয়ে মায়াকে এক পলক দেখে নিয়ে ঠোঁট কামড়ে আলতো হেসে রিদের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে ফিহা ঝটপট নিজের মাথা নাড়িয়ে সুমতি জানিয়ে রিদকে বলে উঠে…….

.

—” হ্যাঁ হ্যাঁ ভাই আমি বুঝতে পেরেছি তোমার কথা,, তুমি অনেক ব্যস্ত ছিলে কাজে তাই আসতে পারোনি আমার হলুদের,, তাতে কি হয়েছে হলুদে আসতে পারুনি আমার মেহেদীতে তো ঠিক সময়ে চলে এসেছো,, তাই আমার কেউ কিছু মনে করবো তোমাকে নিয়ে,, তুমি কেমন রুমে গিয়ে ঝটপট রেডি হয়ে চলে আসো নিচে তাহলেই হবে,, আর কেউ রাগ করে থাকবে না তোমার ওপর,, সত্যি বলছি আমি…………

.

রিদ ফিহা কথার মানে বুঝতে পেরে মায়াকে এক পলক দেখে নিয়ে মুচকি হেসে কিছু না বলে রুমে চলে যায়,,, সাথে মনে মনে ভাবতে থাকে,,, বউ তার আজ কাল তার থেকেও বেশি পাগলামো করা শুরু করে দিয়েছে,,, রিদ রাত করে বাসায় ফিরলেই বউ তার গাল ফুলিয়ে বসে থাকে কথা বলে না,, পরে রিদের বউকে মানাতে হয় এটা অবশ্য রিদের বেশ ভালোই লাগে কারণ সে সবসময়ই চাইতো তার বাচ্চা বউ তার জন্য বসে বসে অপেক্ষা করুক যাহ আজ মায়া করছে…………

.

কথা গুলো ভাবতে ভাবতে সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিজের রুমে চলে যায় রিদ,, আর নিচে আড়াল থেকে কেউ একজন রিদ ও মায়া খুনসুটি ভালোবাসা গুলো দেখে রাগে গজগজ করতে থাকে,,, হয়তো এটা তার কোনো কালেই পছন্দ না রিদের এমন ভালোবাসাটা মায়ার প্রতি,,,

.

রিদ নিজের রুমে গিয়ে ফেস হয়ে মালাকে(কাজের মহিলা) বলে এককাপ হট কফি আনিয়ে নিয়ে সেটা খেতে খেতে আবারও ল্যাপটপ নিয়ে বসে পরে কাজে,, ফিহার মেহেদী কথা মনে থাকলেও সেদিকে আপাতত কোনো রকম ভ্রুঁ ক্ষেপ নেই রিদের,,, এখন মূলত রিদের হাতে প্রচুর পরিমানে কাজ জমা পরে আছে তাই আপাতত অন্য কিছু মনোনিবেশ করতে পারছে না সে,, আর রিদের এই ব্যস্ততা কেউ একজন বিশাল বড় সুযোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে সেটা রিদের অজানা,,,,,

.

রিদ মনোযোগ সহকারে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করতে থাকে কারণ,, কিছু দিন পর রিদ ও মায়ার বিয়ের জন্য হয়তো কাজ করতে পারবে না সেই জন্য,, আগের থেকেই রিদ তার সব গুলো অফিসিয়াল কাজ গুছিয়ে রাখছে যাতে তার অনুপস্থিত কোনো রকম ঝামেলা সৃষ্টি না হয়,,, রিদ মনোযোগ সহকারে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করতে করতে হঠাৎ করে কান্তিতে ঘুম পেয়ে যায় তার,, রিদ অনেকটা টায়াড থাকার কারণে আস্তে করে সোফার মধ্যেই নিজের গা এলিয়ে দিয়ে ঘুমের রাজ্যে পারি জমায় রিদ,,,,,

.

.

🍁
রিদ মায়াকে নিয়ে খান বাড়ির বাগানে দাঁড়িয়ে আছে,, রিদ ব্যস্ততা সহিত ফোনে কথা বলছে বাগানের একপাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে,, আর মায়া রিদের পিছনে বাগানের মধ্যে উচ্চ স্বরে হাসি হাসি এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে আনন্দ উৎফুল্লতা হয়ে,, নিজের খুশিতে লাফাতে লাফাতে হঠাৎ করেই চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো মায়ার,,,

.

মায়ার চিৎকার কানে আসতেই রিদ চমকে উঠে দ্রুত পিছন ফিরতেই চোখে পড়ল মায়ার লুটিয়ে পড়া দেহটা মাটিতে,, কি হয়েছে দেখার জন্য রিদ দৌড়ে মায়ার কাছে যাওয়ার জন্য এগোতেই চোখে পড়ল একটা কালো বিষাক্ত সাপ মায়াকে চুবল মারতে,,, সাপটি দেখে সাথে সাথে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পরে জায়গায় রিদ কারণ এই বিষাক্ত কাল সাপ ছুবল দিলে মানুষ বাঁচানো কারও পক্ষেই সম্ভব নয়,, রিদের এমন বেখেয়ালি পূনার জন্য মায়াকে সাপে ছুবল মারতে পেরেছে,, যদি রিদ পিছন ঘুরে ফোনে কথা না বলতো তাহলে হয়তো রিদ দেখতে পেতো সাপটি মায়াকে ছুবল মায়ার আগে,,,

.

মায়ার শরীর কাল সাপের ছুবলে সাথে সাথে নীল র্বণ ধারণ করে,, মাটিতে লুটিয়ে পরতেই মুখ দিয়ে পেঁনা বের হতে লাগে,, রিদ মায়ার এমনত অবস্থা দেখে আবারও দৌড়ে মায়ার কাছে আসতে যাবে তার আগেই সাপটি আবারও মায়ার মাথা বরাবর চলে যায় ছুবল মারার জন্য,, এটা দেখে রিদ আবারও প্রাণপূণ দৌড় লাগায় মায়াকে বাঁচানোর জন্য কিন্তু তার আগেই আবারও সাপটি মায়ার কপালে তার বিষাক্ত ছুবল মেরে চলে যায় জায়গা ছেড়ে,, আর কাল সাপটির ছুবলের সাথে সাথে মায়ার নিজের নিশ্বাসটা ত্যাক করে মারা যায়,, আর রিদ সবটা নিজের চোখের সামনে হতে দেখেও কিছু করতে পারিনি থামাতে পারেনি কোনো কিছু,, তাই রিদ নিজেও সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে বসে পরে হাঁটু গেড়ে মায়ার সামনে…………….

.

.

.

.

চলবে………………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here