#দমকা_প্রেমের_গল্প
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_১৬
__________________
” আন্টি আমি কি সাহায্য করবো? আমাকে কিছু কাজ দেন হাতে হাতে করা হয়ে যাবে ”
পিছনে থেকে অরিত্রার কথা শুনতে পেয়ে মুচকি হেসে পিছনে তাকালেন প্রিতী আলম। মাথা নাড়িয়ে বলে উঠলেন, ” কিছু করা লাগবে না মা তুমি দেখো তোমার বান্ধবী কোন গোলমাল পাকায় কি না। যা ঘাড়ত্যাড়া মেয়ে আমার! আমার কপাল টা ভালো পড়লো না বুঝলে! বাপ বেটি মিলে হাড় মাংস জ্বালিয়ে খেলো আমার! দুটো দিন শান্তিতে বাপের বাড়ি গিয়ে ও থাকতে পারি না। আমি আছি বলেই না এই সংসার এখনো টিকে আছে নয়তো কবেই বানের জলে ভেসে যেতো ”
অরিত্রা হাসলো, আরেকটু সামনে এগিয়ে যেতে যেতে বলল, ” তা যা বলেছেন আন্টি। প্রাপ্তি একদম আপনার মতো হয় নি। অলসের অলস! আমাকে তো রুম থেকে বের করে দিলো আন্টি বলল সে নাকি পারবে রেডি হতে। ”
” রেডি হচ্ছে তাহলে! যাক ”
অরিত্রা প্রিতী আলমের সাথে কাজে হাত লাগালো, মহিলা একা একা আর কত করবে! প্রাপ্তির বাবা ও অফিসে, এক মাত্র মেয়ে বলে আদরের শেষ নেই। ঘরের কুটো টাও নাড়তে দেয় না। এই মেয়ে জামাইর বাড়ি তে গিয়ে কি রাজকার্য উদ্ধার করবে ভেবে পায় না অরিত্রা।
হঠাৎ ক্রলিং বেল বাজতেই প্রিতী আলম ব্যস্ত হয়ে উঠলেন এদিকে চুলোয় মাছ ও হয়ে এলো বলে। তিনি অরিত্রা কে তাড়া দিয়ে বললেন, ” অরি মা যাও একটু দরজা টা খুলে দাও না। আমি এখন গেলে মাছ টা পুড়ে যাবে ”
অগত্যা অরিত্রাকেই যেতে হলো, মাথায় কাপড় টেনে দরজা খুলতেই দুজন মহিলা আর দুজন পুরুষ কে নজরে এলো তার। কিন্তু তা মধ্যে কোনটা পাত্র বুঝতে পারছে না অরিত্রা। দরজায় অরিত্রা কে দেখে মহিলা দুটো চোখ বড়ো করে তাকালো,
” আসুন ভেতরে আসুন। আপনারা বসেন আমি আন্টিকে ডেকে নিয়ে আসি”
বলেই অরিত্রা ভেতরে চলে গেলো। মহিলা দুজন সোফায় বসে চারপাশ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে বাসাটা যে তাদের বেশ পছন্দ হয়েছে তা বেশ বোঝা যাচ্ছে।
অরিত্রা রান্না ঘরে যেতেই প্রিতী আলম চুলো থেকে তরকারি নামিয়ে অরিত্রার দিকে তাকালো, ” ওরা ক’জন এসেছে অরিত্রা?”
অরিত্রা কিছু একটা চিন্তা করতে করতে বলল,” ওরা চার জন, দুজন মহিলা আর দুজন পুরুষ, কিন্তু পাত্র কোনটা সেটাই চিন্তা করছি। পাত্র আসে নি? ”
আন্টি মুচকি হেসে বাইরে বের হতে হতে বলল, ” আসার তো কথা। তুমি বরং প্রাপ্তিকে নিয়ে এসো আমি যাই ”
অরিত্রা মাথা নাড়িয়ে প্রাপ্তির রুমের দিকে অগ্রসর হলো, ” এই প্রাপ্তি দরজা খোল, সবাই এসে পড়েছে”
দরজায় খট করে আওয়াজ হতেই অরিত্রা পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো সে দিকে। প্রাপ্তিকে দেখে অরিত্রার কাশি উঠে গেলো তৎক্ষনাৎ। এতো জঘন্য সাজ আগে কখনো দেখেছে কি না সন্দেহ অরিত্রার।
প্রাপ্তি মুচকি হেসে ভ্রু উঁচু করে তাকালো অরিত্রার দিকে। অরিত্রা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো ওকে, চোখে মোটা করে কাজল দেওয়া উপরে এবং নিচে মনে হচ্ছে কাজল হাফ শেষ। নীল রঙের শাড়ির সাথে রক্ত লাল লিপস্টিক কি জঘন্য বাবাহ্ মাথার অবস্থা না হয় না ই বললাম, কাউয়ার বাসা বললেও কম হবে।
” কি সাজছিস তুই প্রাপ্তি ”
” কেন সুন্দর হয় নি? পছন্দ হবে না আমাকে? ”
অরিত্রা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল, এই মেয়ে এতো বদমাইশ! প্রাপ্তি অরিত্রার দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে হেসে আঁচল টা মাথার উপর টেনে লম্বা ঘোমটা দিলো, ঘোমটার আড়ালে তার জঘন্য সাজের মুখ। অরিত্রাকে পাশ কাটিয়ে চলল ড্রয়িং রুমের দিকে।
অরিত্রাও নাটক দেখার উদ্দেশ্যে পিছনে পিছনে গেলো। প্রাপ্তি গিয়ে মহিলাদের সামনে সোজা হয়ে দাড়িয়ে লম্বা সালাম দিলো। তৎক্ষনাৎ মহিলা দুজন প্রাপ্তির দিকে হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে বলল,
” বসো মা বসো ”
প্রাপ্তি ঘোমটা টেনে বসলো সামনে। মহিলা দুজন খুটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে শুরু করলো যদিও মেয়ের মুখ এখনো তারা দেখে নি।
” মা একটু ঘোমটা টা সরাও তো ”
প্রাপ্তি ঠাস করে ঘোমটা সরাতেই একজন মহিলা “ও মা গো ” বলে পিছনে ঝুঁকে গেলো ততক্ষণে অপর আরেকজন চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে রইলো মেয়ের মুখের দিকে। পুরুষদের অবস্থা ও করুন, হয়তো তারাও এমন ঘটনা আশা করে নি। প্রাপ্তির মা দুরে দাঁড়িয়ে কপাল চাপড়ালো।এই মেয়ে তার মান সম্মান কিছু ই আর অবশিষ্ট রাখলো না!
” আমাকে পছন্দ হয় নি আন্টি? ”
একজন মহিলা আমতাআমতা করে বলল, ” আবব হ্যা। পছন্দ হবে না কেন! অনেক সুন্দর ”
” তাহলে কিছু বলছেন না যে? ”
” তোমার নাম কি মা? ”
প্রাপ্তি অদ্ভুত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল, ” ওমা বউ দেখতে আসছেন নামটা জেনে আসেন নি? নট ফেয়ার আন্টি! ”
মহিলা খানিকটা থতমত খেয়ে গেলো। অপর মহিলা বলল, ” একটু হেটে দেখাবে মা ? ”
” এখানে কি আমি উড়ে উড়ে এসেছি আন্টি? ”
প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্ন মহিলার মোটেও পছন্দ হয় নি। সামনে থাকা মিষ্টির প্লেট থেকে একটা মিষ্টি নিয়ে মুখে পুরতে পুরতে বলল,
“আচ্ছা ঠিক আছে। শোনো মা, লজ্জা পেয়োনা কিছু বলার থাকলে বলতে পা’রো!”
“বলছি যে আপনারা যদি রসমালাই গুলা না খান, তাহলে আমি খে’য়ে ফে’লি? এমনিতেই সব গুলা খেয়ে সাবার করে ফেললেন এটলিস্ট রসমালাই টা আমার জন্য রেখে দেন আন্টি ”
অপমানে মুখ থমথম হয়ে গেলো। পাশে থাকা মহিলা তৎক্ষনাৎ দাঁড়িয়ে বলল, ” আপা আমার ভাগ্নে কে আমি এখানে কিছু তেই বিয়ে করাবো না, বেয়াদব মেয়ে মানুষ ”
পাশের সিটে বসে থাকা মোটাসোটা থলথলে চর্বি ওয়ালা একটা ছেলে উঠে দাড়িয়ে নাকি স্বরে বলল, ” খালামনি আমি বিয়ে করবো না? ”
প্রাপ্তি চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে বলল, ” ওওও তুমি তাহলে আমার হনে ওয়ালা জামাই! ” প্রাপ্তি উঠে ছেলেটার সামনে গিয়ে দু হাতে ছেলেটার গাল দুটো টেনে ডানে বামে করতে করতে বলল, ” ওললে আমার সোনা বাবু! বিয়ে করবে তো তুমি! কিউটি পিউটি সুইটি বাবু! তোমার এখনো বিয়ের বয়স হয় নি বাবু, তুমি এখন তোমার আম্মুর আর খালামনির আঁচলের তলায় লুকিয়ে থাকো কেমন! ”
মহিলা দুজন রাগে গজরাতে গজরাতে পাত্রের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলো পিছনে পিছনে সেই ভদ্রলোক টা চলে গেলো।
ওরা চলে যেতেই প্রাপ্তি পেট চেপে হাসা শুরু করলো। সাথে অরিত্রাও। এই মেয়ে পারেও বটে!
_______
আকাশের অবস্থা মুটামুটি বললেই চলে, হালকা বাতাসে পার্কের একটা বেঞ্চে বসে স্বচ্ছ আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে এক রমনী। পড়নে তার সাদা গোলামী মিশ্রনের চুড়িদার। মুখে নেই কোন প্রসাধনীর ছোয়া তবুও যেন খুব বেশিই সুন্দর লাগছে।
” জান পাখি! ”
অতি পরিচিত কন্ঠ শুনতে পেয়েও যেন মেয়েটা অভিমানে অটল হয়ে আছে। কিছু তেই ফিরবে না। ছেলেটা মাথা চুলকে মুচকি হাসলো, এগিয়ে গেলো তার প্রিয়তমার দিকে, ঘা ঘেঁষে বসে বলল,
” রাগ করে আছো জান পাখি? ”
” নাহ” অকপটে জবাবে আবারো হাসলো ছেলেটা। মেয়েটার সামনে হাটু ভেঙে বসে তার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিয়ে বলল,
” রাগ করো না জান প্লিজ, এই দেখো কানে ধরলাম, আর কখনো লেট করব না! তুমি যদি বলো কানে ধরে ওঠবস ও করতে পারি! করবো?”
বলেই মেয়েটির উত্তরের অপেক্ষা না করেই ওঠবস শুরু করতেই তৎক্ষনাৎ হাত জোড়া ধরে পাশে বসিয়ে দেয় মেয়েটি। আতঙ্কিত কন্ঠে বলল, ” কি করছেন কি ইফতেখার ভাই। মানুষ দেখলে কি বলবে? মান সম্মানের কথাও একটু ভাবুন ”
ইফতেখার মেধার গাল দুটো টেনে দিয়ে বলল, ” ইসস কত চিন্তা আমার জন্য! ”
” চিন্তা না হলে কি আর বাড়ি তে না গিয়ে সোজা আপনার সাথে দেখা করতে আসি না কি!
মেধা তার হাত বাড়িয়ে বলল৷ “তা আমার গিফট কই? ”
ইফতেখার দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বুক পকেট থেকে বেলি ফুল গুলে বের করতে করতে বলল, ” তোমার এই মহা মূল্যবান গিফট আনতে গিয়ে কত কিছু যে করতে হয় আমাকে তা যদি তুমি জানতে! ”
মেধা হাসে, বেলি ফুল তার ভালেবাসার একটা অনন্য অংশ। ফুল গুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো সে।
আর ইফতেখার তার প্রিয়সী কে! বড্ড বেশিই ভালোবাসে মেয়েটাকে।
চলবে…
[ আজকের পর্ব কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু ]