#শ্রাবনে_প্রেমের_হাওয়া।
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ৭
বাসস্ট্যান্ডে জনমানুষের ভিড় এড়িয়ে নাজকে একপ্রকার ভাবে বুকের সাথে আগলে রেখে ভিড়ের থেকে ফাঁকা রাস্তায় নিয়ে আসলো ওমর। নাজের শীতল দৃষ্টি শুধু পিটপিট করে ওমরের দিকে তাকিয়ে আছে। পাহাড়ি এলাকার শিতল আবেশেও যেন ঠিক ঘা’য়েল করতে পারছে না ওমরকে। কপাল বেয়ে ঘাম ছুটে যাচ্ছে শুধু ওমরের।
—পানি খাবেন?
—উমম, নাহ ঠিক আছে। তুমি এখানে দাঁড়াও আমি সিএনজি নিয়ে আসছি। ওমরের মৃদু কন্ঠের স্বর কানের কাছে এসে স্পর্শ করে গেলে নাজ ধীর ভাবে মাথাটা নাড়ালে ওমরের ভ্রুদ্বয় কিঞ্চিৎ পরিমান ভা’জ হয়ে এলো যেন। ওমরের গম্ভীর মুখশ্রী দেখে হুট করেই নাজের ওমরের বলা কথাটা মনে গেল,
—মাথা ঝাকানো কি জিনিস নাজ? মুখে বলা যায় না৷
পরক্ষণেই নাজ ওমরের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোনে শুকনো হাসি ফুটিয়ে মৃদুস্বরে বললো।
— আচ্ছা ঠিক আছে। নাজের উত্তর শুনে ঠোঁটের কোনে রাজ্যের হাসি এসে জমা হলো যেন ওমরের। নাজের সামনে ধরা না দিয়ে সিএনজির উদ্দেশ্যে সামনে আগাতে থাকলে হাসি যেন আর থামতে চাইছে না ওমরের। ওমর চাইলেই জহিরুল সাহেবকে দিয়ে গাড়ি আনিয়ে নিতে পারে। কিন্তু সে চায়না নাজ তাঁর সম্পর্কে বড়লোকি কিছু মনোভাব পোষন করুক। আর পাঁচটা সাধারন মনুষের মতোই ভালোবাসতে চায় নাজকে সে।
.
মুশলধারা বৃষ্টি থেমে গেলেও পরিবেশ এখন দক্ষিণা শীতল হাওয়ায় পরিপূর্ণ। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির উ’ষ্ণতায় ঝড়িয়ে দিচ্ছে যেন সমস্ত পাহাড়ি এলাকা জুড়ে।
সিএনজি নিয়ে নাজের কাছে এগিয়ে আসতে থাকলে দূর থেকে নাজকে রাস্তার পাশে থাকা কদম গাছের ডালে থাকা থোকা-থোকা ফুলের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে নাজের দৃষ্টি অনুসরন করে ধীর চাহনিতে কদমফুল গুলোর দিকে তাকালো ওমর। এক পলক ফুলগুলোর দিকে তো আরেক পলক নাজের দিকে তাকিয়ে হাসলো সে।
— ফুলগুলো তোমার মতোই পবিএ মহারানী৷ ভালোবাসা দূর থেকে সুন্দর। থাকোনা তুমি অন্যকারো হৃদয়জুড়ে। কিন্তু আমার হৃদয় আঙিনায় চীরকাল তুমি অন্য এক অনুভুতিতে রয়ে যাবে।
“সিএনজি চলছে তাঁর নিজ গতিতে। বাহিরের উত্রা হাওয়া সো-সো শব্দে সিএনজির ভিতরে ঠেলে প্রবেশ করতে থাকলে নাজের নেকআপটা কেমন উড়ে-উড়ে বেড়াচ্ছে যেন।” হাতে থাকা মুঠোভর্তি কদমফুলগুলোর দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে নাজ। তাঁর চোখে এখনও যেন ঘোর লেগে আছে। তখন সিএনজি নিয়ে নাজের সামনে হাজির হলে হুট করেই সিএনজি থেকে নেমে নাজের কোমর জড়িয়ে উপরে তুলে নিয়েছিল ওমর। নাজ বিষ্ম’য় নিয়ে তাকালে ওমর শীতল কন্ঠে বলেছিল।
—যত ইচ্ছে ফুল নিয়ে নেও তুমি নাজ। আরও ফুলের বাগান করে দেব তোমাকে আমি। শুধু তোমার মুখের হাসিটা যেন কখনো মিলিয়ে না যায়। ওমরের এরমধারা কান্ডে সত্যিই নাজ প্রচন্ড পরিমানে অবাক হয়েছিল তখন। রাস্তায় হেঁটে চলা পথযাএী তাঁদেরকে ঘুরেফিরে দেখছিল আর মিটিমিটি করে হাসছিল। যেন সদ্য বিয়ে হওয়া নব দম্পত্তি তাঁরা। কথাটা মনের আনাচে-কানাচে ঘুরঘুর করতে থাকলে বিতৃষ্ণা গুলো যেন ঝেঁকে বসেছে ওমরকে। সৃতি মুছে ফেলা যে দায় পরে গেল আজ থেকে তাঁর।
.
সিএনজি এসে প্রাচীর ঘেরা পাঁচতলা গেস্ট হাউসের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরলে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো শুধু সেদিকে নাজ। এত আভিজাত্যে পরিপূর্ণ বিশালাকার গেস্ট হাউস ওমরদের। তবুও এত সাধারন আচারন যেন মুগ্ধ করে দিচ্ছে নাজকে।
— নেমে পরুন এখন মহারানী। ওমরের শীতল কন্ঠস্বর শুনে তাঁর দিকে পিটপিট করে তাকালো নাজ। ধীর কন্ঠে বললো।
— আপনি যে আমাকে আপনার সাথে করে নিয়ে এলেন,এতে আপনার কি উপকারটা হবে শুনি? নাজের এরুপ প্রশ্ন শুনে ওমরের দৃষ্টিদ্বয় দূরপানে পাহাড়িয়া সিলেটের চা বাগানের দিকে স্থির করলো। প্রকৃতি যেন তাঁর সাথে হেসে উঠেছে আজ।
— তোমার মনটা না পেলাম। নয়নভরে তোমাকে দেখতে তো পাব। ধরে নেও তোমাকে দেখার একবিন্দু পরিমান লো’ভ সামলাতে চাইছি না আমি। তবে রাদিফের কাছে তোমাকে সসম্মানে ফিরিয়ে দেওয়ার দায়ভার আজ থেকে আমি নিলাম। ওমরের কথা শুনে নাজের অসস্থি’তে মাথাচাড়া দিয়ে যাচ্ছে যেন। ওমরও নাজের সাথে আর কথা বাড়াল না। সিএনজি বিদায় দিলে ভিতর থেকে গার্ডরা দৌড়ে আসলে জহিরুল সাহেব অবাক হলেন যেন। দৌড়ে এসে বলতে লাগলেন।
— আপনি গাড়িতে না এসে সিএনজিতে এলেন যে? তাও গেস্ট হাউসে। আমাকে একটা ফোন দিলেই তো চলে যেতাম।
— সবসময় কি আর গাড়িতে চলাফেরা করতে ভালো লাগে কাকা। এসব লোকদেখানো আভিজাত্যের থেকে বাস, সিএনজি, এসবও ঢের আরামদায়ক। ওমরের কথাটা শুনে মৃদু হাসলেন জহিরুল সাহেব। সেই ছোটবেলা থেকে ওমরকে দেখে এসেছেন তিনি। ওমর বরাবরই এ রকম নিজের মর্জি মতো চলাফেরা করতে পছন্দ করে৷ তাই আর কথা বাড়ালেন না তিনি৷ চলে যেতে নিতে হুট করেই নাজকে দেখে থেমে গেলেন তিনি। পিছুফিরে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বললেন।
—এনাকে তো ঠিক চিনলাম না।
—আমার বন্ধু। খুব কাছের। আজ থেকে ওনাকে দেখেশুনে রাখবেন। ওমরের উত্তরে নাজও জহিরুল সাহেবকে সালাম দিলে জহিরুল সাহেব হেসে উত্তর দিলেন শুধু। এই প্রথম ওমরের কোনো মেয়ে বন্ধু দেখছেন তিনি৷ এ যেন বিষ্ণ’য়কর একটি কথা শোনাল ওমর তাঁকে। মনে-মনে দিব্য খুশি হলেন যেন তিনি।
.
নাজ বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পর রাদিফের মুখদ্বয় আর বাড়িতে দেখতে পায়নি লাবনী। হাসিনা খালা রান্নাবান্না করে দিলেও সে খাবার যেন গ’লা দিয়ে নামতে চায় না তাঁর। কোথায় নাজের হাতের রান্না,আর কোথায় হাসিনা খালার। এ যেন,আকাশ পাতাল তফাৎ।
রাদিফ বাড়িতে টাকা পয়শাও খুব একটা পাঠাচ্ছে না। আর এদিকে রাফিও তাঁর সাধ্যমতো টাকা পাঠায় বাড়িতে। তাই আর নতুন কাজের মানুষের খোঁজ করা হয়ে ওঠেনি লাবনীর। উঠতে-বসতে এখন রাদিফকে নাজের জন্য গা’লি>গা’লাজ করা ছাড়া কোনো কাজ নেই তাঁর। কয়েকবার ফোন ধরেছিল রাদিফ। বলেছে তাঁর নাকি প্রমোশন হয়েছে। তারজন্য অফিসের বস তাঁকে ট্রান্সফার করে তাঁদের আর একটা অফিসে জয়েন দিয়েছেন। আজকেই সেখানে জয়েনিং। তাই সে ফাইল নিয়ে ব্যাস্ত আছে৷ এদিকে লাবনীও নাছোরবান্দা। রাদিফের কানের কাছে বিয়ে কর, বিয়ে কর বলে,বলে মাথা খা’রাপ করার উপক্রম।
রাদিফের মেজাজ বিগ’ড়ে গেলে দাঁত চে’পে ধরে রাগান্বিত কন্ঠে বললো।
—আমি শুধুশুধু নাজকে ছেড়ে দেয়নি বুঝলে আপা৷ তাই আমার সাথে আর বিয়ে নিয়ে চেঁ’চামে’চি করে মাথা খে’য়ো না আমার। আমিতো বিয়ে করব আমার সোনার ডিমপাড়া হাঁসকে। একটু-একটু করে বা’গে এনেছি মেয়েটাকে। আর মাএ কদিনের অপেক্ষা। দেশের মাটিতে পা পরলেই ওর সব টাকা নিজের করে নিতে হবে আমার। তুমি টেনশন নিও না আপা। সব ঠিক হয়ে যাবে। শুধু একটু সময় চাই। কথাটা বলেই ফোনটা কেঁ’টে দিতে ওপাশ থেকে লাবনী যেন তেঁ’তে উঠলো রাদিফের উপর।
—সে তুই যা ইচ্ছে কর,শুধু বাড়িতে টাকা পাঠানোর ব্যাবস্থা কর। রাদিফ? আরে শুনবি তো নাকি? ফোনটা কেঁ’টে দিল! বাড়িতে আয়, তোর হবে৷
—মাং’সে কি মশলাটা বেশি দিতাম নাকি লাবনী আপা? রান্নাঘর থেকে হাসিনা খালার কন্ঠস্বর শুনে বিরক্ত হলো লাবনী। ঘরদোরের দিকে তাকানো যাচ্ছে যেন। এখানে-ওখানে ম’য়লা পরে রয়েছে। ঘরের কোনে-কোনে জমে রয়েছে তাঁর পুরোনো ধুলো। সত্যি নাজ থাকাকালীন বাড়ির কোনে এক ফোঁটা আঁচ’ও অব্দি পরতে দেয়নি মেয়েটা। আর আজ দেখভালের মানুষের অভাবে বাড়িটা পুরো ধুলোতে ছেঁ’য়ে পরেছে। একটু হলেও আফসোস লাগল এবার যেন লাবনীর। কদিন যাবৎ কোমরে চিনচিন ব্যা’থাও অনুভব করতে পারছে সে। আগে হলে নাজ মালিশ করে দিত। কিন্তু এখন আর সেটি হওয়ার নয়। মি’ন>মি’নে স্বরে ঠোঁট নাড়িয়ে শুধু হাসিনা খালার উদ্দেশ্যে বললো।
—মশলা কম দিও খালা। আজকে হয়তো রাদিফ আসবে বাড়িতে। হাসিনা খালা মাথা নাড়িয়ে সায় দিলে নিজের রুমে এসে বিছানায় গা এলি’য়ে দিল লাবনী৷ শরীরটা কদিন যাবৎ ঠিক লাগছে না যেন তাঁর। আগের মতো ঘন্টায়-ঘন্টায় চা, কফি, স্যুপ, এসব যেন আর নিজের রুমে টাইমে এসে হাজির হয় না। বরং সময় মতো খাবার খাওয়াই দূর্লভ হয়ে পরেছে বাড়িতে।
.
ওমর নাজকে একটা রুমে নিয়ে এসে ধীর কন্ঠে আসছি বলে চলে গেলে পুরো রুমটা খুব মনোযোগ সহকারে দেখতে লাগল নাজ। চারপাশ যেন খুব যত্ন সহকারে নিজ হাতে কেউ সাজিয়েছে। বড়-বড় ঘর সাজানোর সরঞ্জামের উপর ফুলদানিতে নানারকম প্লাস্টিকের ফুলে সজ্জিত রুম। সাদারাঙা দেয়ালের উপর তাঁর নিদারুন চিত্রশিল্পের অবয়ব। নাজের দৃষ্টি যেন সরাতে পারছে না আজ। হুট করেই বৃষ্টির রেশে মৃদু মধুর স্নিগ্ধ হাওয়া সমস্ত শরীর জুড়ে শিহরণ হেনে গেলে শীতল দৃষ্টিতে বারান্দায় চোখ গেলে ধীর পায়ের গতিতে সেদিকে এগিয়ে গেল নাজ।
বারান্দা থেকে স্পষ্ট পাহাড়ের দেখা মিলছে যেন। চারপাশে খুব যত্নের সহিত হরেক রকম ফুলগাছ তো সিলেটি চা বাগানে ভর্তি। এই পুরো বাউন্ডারিই যেন ফুলের কারনে খুব সহজেই প্রিয় হয়ে উঠলো নাজের।
— সুন্দর না?
—হুম পর্যাপ্ত। বেখেয়ালে উত্তরটা দিলে পিলে চমকাল নাজ। ভয়ের সহিত পিছন ঘুরে তাকালে নাজের দিকে চায়ের কাপটা এগিয়ে দিল ওমর। ঠোঁটের কোনে হাসি ঝু’লিয়ে বললো।
— হুম। সুন্দর, কিন্তু এখানে ভালোবাসা ছিল না এতদিন। আজ যেন তাঁর স্পর্শে সতেজ হয়ে উঠেছে পরিবেশ। কান পেতে শোনো, পাখিদের গান। খুব মাধুর্যের সঙ্গে তাঁদের গুনগুন করা প্রেমালাপ।
ওমরের শিতল কন্ঠের রেশ নাজের খুব একটা বোধগম্য হলো না ঠিক। হাতে থাকা চায়ের কাপটাতে চুমুক দিতে প্রশান্তিতে মনটা ভরে উঠলো যেন নাজের। চোখদ্বয় আপনাআপনি বন্ধ হয়ে আসলে ওমর নাজের দিকে তাকিয়ে হাসলো। বললো।
— আমাদের বাগানের চা পাতা দিয়ে বানানো। কেমন হয়েছে?
— আপনি বানিয়েছেন!
—উমম, তোমার কি মনে হয়? ওমরের পাল্টা প্রশ্নে থ’ত’ম’ত খেয়ে গেল যেন নাজ। কি বলবে এখন সে। কিছুক্ষণ ভাবনা চিন্তা করতে থাকলে ওমরের কন্ঠ শোনা গেল।
— সেই ছোটবেলা থেকে ছেলে হওয়া সর্তেও রান্নাবান্নার প্রতি একটু বেশিই এট্রাকশন ছিল আমার। লুকিয়ে-লুকিয়ে মায়ের রান্না দেখতাম। কখনো-কখনো তো নিজেও সবাইকে না জানিয়ে রান্না করে অবাক করে দিতাম। মা মা’রা যাওয়ার পর আর সে রকম কখনো হয়ে ওঠেছি। এত বছর পর আবার কেন জানিনা মন সায় দিল। জানো, এই বাড়ি, টাকা-পয়সা, এসব আমার কিছু চাইনা। শুধু চেয়েছি একটু ভালোবাসা। যেটা আমি আমার ড্যাডের থেকে কখনো পাইনি। যাইহোক, তোমাকে এসব বলছি কেন। কথাটা বলে ওমর যেতে নিতে তাঁর ফোনটা বেজে উঠলে নাজ তাঁর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুধু। হয়তো এই মানুষটার জীবনেও কোনো লুকানো কষ্ট জমে আছে। যার ক্ষ’ত সারাক্ষণ তাঁকে কুড়ে>কুড়ে খায়।
“—- তুমি এখন কোথায় আছো ওমর?” ফোনের ওপাশ থেকে রায়ানুল সাহেবের গম্ভীর কন্ঠ শুনে মৃদু হাসলো ওমর। বললো।
— পাহাড়ের কাছে গেস্ট হাউজে আছি আপাদত। আর এখানেই থাকব কদিন। আর কিছু জানার আছে? ওমরের সোজাসাপটা উত্তরটা যেন ঠিক হ’জম করতে পারলেন না রায়ানুল সাহেব। রাগ নিয়ে বললেন।
— আমি দেশে এসেছি জেনেও তুমি বাড়িতে না এসে গেস্ট হাউসে গেলে কেন ওমর?
— আমার ইচ্ছে ড্যাড।
—এটা কেমন উত্তর!
— নিজের প্রফেশনাল ইনভেস্টমেন্টের জন্য বিদেশে ব্যাবসা করা যখন তোমার ইচ্ছে হতে পারে,তো সময় কাঁ’টানোর জন্য গেস্ট হাউসে আসাটাও আমার ইচ্ছে ড্যাড। এটা নিয়ে নিশ্চয়ই আর প্রশ্ন করা ঠিক নয় তোমার।
ওমরের উত্তরে চুপ হয়ে গেলেন রায়ানুল সাহেব। তিনি জানেন ওমরের থেকে এ রকম কিছু একটাই উত্তর হিসেবে আসবে। তাই কিছু আর বলতে পারলেন না তিনি। ওমর ফোন কেঁ’টে দিতে নিতে ওপাশ থেকে ওমরের বোন অথৈ রায়ানুল সাহেবের থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলে উঠলো।
—ভাইয়া তুমি বাড়িতে আসলে না কেন? অথৈর কন্ঠস্বর শুনে হেসে উঠলো ওমর। বললো।
— খুব জলদি আসব ছুটকি। আপাদত এখানে একটা কাজ শেষ করেই চলে আসব প্রমিস।
—তোমার ভাইকে বলো যে, ওর অফিসে একজন জয়েন হবেন আজকে। আমি পাঠিয়েছি তাঁকে। গেস্ট হাউসে পৌঁছালে ফাইলটাতে সাইন করে দিতে বোলো। রায়ানুল সাহেব কথাটুকু বলে চোখের পানি আড়াল করে চলে গেলে অথৈর চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলো যেন। কবে যে তাঁদের এই ভা’ঙা পরিবারটা এক হবে। আর কবে রায়ানুল সাহেবের সাথে ওমরের স্বাভাবিক আচারন চোখে পরবে। রায়ানুল সাহেবের কথাটা উচ্চস্বরে হওয়ায় অথৈকে আর কিছু বলতে হলো না তাঁকে। ওমর ভ্রূদ্বয় কিঞ্চিৎ পরিমান করে সময় নিয়ে বললো।
—রাখছি।
” ওমরের বাকি সবদিক ভালো লাগলেও বাবার সাথে করা আচারনটা যেন নাজের খুব একটা ভালো লাগলো না।” কিছু জিজ্ঞেস করতে গিয়েও থেমে গেছে সে।
—কি দরকার। আমিতো দুদিনের পথিক মাএ।
.
সন্ধ্যা নামো-নামো অবস্থা। গগনের কোনে-কোনে এলেমেলো হয়ে রয়েছে তাঁর আষাঢ়ে মেঘদ্বয়। টুপ করেই হয়তো বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পরবে শহরজুড়ে। হুট করেই কলিংবেলটা বেজে উঠলে সেদিকে ধীর চাহনিতে তাকাল শুধু নাজ।
সারাটাদিন হেলেথে’লে কেঁ’টে গেছে যেন তাঁর। ওমরের সাথে বেশ ভালো ভাবেই বন্ধুত্ব হয়ে গেছে নাজের৷ চাকরির কথাটা মাথার ভিতর ঘুরঘুর করতে থাকলে ওমর জোরপূর্বক তাঁর কাছ থেকে জানলে ওমর তাঁকে তাঁর অফিসের এসিস্ট্যান্ট হওয়ার জন্য বললে প্রথমেই নাকোচ করে দিয়েছিল নাজ। সে কারো দ’য়া কিংবা সিম্পাথি নিতে চায়না। ওমরও বলেছে তাঁর সত্যিই একজন এসিস্ট্যান্ট দরকার। আর নাজকেও ইন্টারভিউ দিয়েই নেওয়া হবে। তবুও নাজ কিছুক্ষণ উসখুস করে শেষমেশ রাজি হয়েছে। তবে গেস্ট হাউসে থাকার জন্য ভাড়া দিয়ে থাকবে এটা সে সাফ>সাফ জানিয়ে দিয়েছে ওমরকে। ওমরের একটু মনোক্ষু’ণ্ণ হলেও নাজের আত্মসম্মান বোধের কাছে হেঁড়ে গেল সে।
কলিংবেলটা আবারও বেজে উঠলে এবার আর দাঁড়িয়ে থাকলো না নাজ। ওমর কিছুক্ষণ হলো একটু বাহিরে গেছে৷ তাই সে দ্রুত পায়ে দরজার কাছে এসে দরজাটা খুলে দিলে, থ’মকে গেল যেন নাজ। হৃৎস্পন্দনের গতি দ্রিমদ্রিম শব্দে ছন্দের হারে বাজতে থাকলে শীতল চাহনিতে তাকিয়ে রইলো শুধু সেদিকে। কন্ঠনালী চি’ড়ে অস্পষ্ট স্বরে ভেসে আসলো শুধু একটাই শব্দ।
—আপনি….
চলবে…..
(আসসালামু আলাইকুম। এতদিন গল্প না দেওয়ার কারনে আমি দুঃখীত। আমার ফুপা মা’রা যাওয়ার কারনে সেখানে ছিলাম। গল্প লেখার মানসিকতা ছিল না তখন। আশা করি আমার দিকটাও একটু বোঝার চেষ্টা করবেন আপনারা৷ দোয়া করবেন যাতে আমার ফিপা জান্নাত নসিব করতে পারেন৷ গল্পটা একটু অন্য ধাঁ’চের৷ সব কিছুতেই ভালো লাগবে কিনা জানিনা। তবে এ রকমই সাদা’মা’টা ভাবে শেষ করে দেব।🥲🖤)