যেখানে_দিগন্ত_হারায় #পার্ট_৩১ জাওয়াদ জামী জামী

0
279

#যেখানে_দিগন্ত_হারায়
#পার্ট_৩১
জাওয়াদ জামী জামী

পরদিন রাতের গাড়িতে আরমান ঢাকা যায়। সব পেপার সংগ্রহ করে, পাসপোর্ট রিনিউসহ অন্যান্য কাজ করে দশদিন পর বাড়ি ফিরে।

মাশিয়ার রেজাল্ট দিয়েছে। মাশিয়ার ডিপার্টমেন্টে টিচার আরমানকে ফোন দিয়ে জানিয়েছে। সিজিপিএ তে মাশিয়া সেকেন্ড পজিশনে আছে। মাশিয়ার রেজাল্ট শুনে সবাই খুশি হয়েছে। কল্পনা মোর্তাজা, মিরাজ মোর্তাজাও ভিষণ খুশি। তারা আয়েশা খানম এবং আরমানের কাছে ফোন দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন বারবার করে। কল্পনা মোর্তাজা মেয়ের সাথে কথা বলতে চাইলে মাশিয়া কথা বলেনা। বিষয়টা আরমানকে ভাবাচ্ছে। মাশিয়া ওর সাথে ঠিকই সহজ হয়েছে এরপরও বাবা-মা’র সাথে কথা বলছেনা কেন? অনেক চেষ্টা করেও কোন উত্তর পায়না আরমান। পরক্ষনেই ও ভাবে, হয়তো এখনও বাবা-মা’র ওপর অভিমান করে আছে। আর ওর অভিমান এতটাই তীব্র যে সহজেই ভাঙ্গার নয়। আরমান সিদ্ধান্ত নেয় মালয়েশিয়া থেকে ফিরেই ও মাশিয়াকে নিয়ে ঢাকা যাবে। মেয়েটাকে ওর বাবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিয়ে আসবে। মান-অভিমান ঘোচানোর সময় এবার এসেছে।

রাতের বাসেই আরমান ঢাকা যাবে। একদিন পরেই ওর ফ্লাইট। মাশিয়া আরমানের ব্যাগ গুছিয়ে দিয়েছে। আয়েশা খানমের মন খারাপ। আগামী চারমাস তিনি ছেলের মুখ দেখতে পারবেননা। ছেলে অন্তপ্রান তিনি। তিনি ছেলেকে এটাসেটা বলছেন, সাবধান করছেন। মাশিয়া সব শুনে মিটিমিটি হাসছে। এতবড় ছেলের জন্য মা’কে চিন্তা করতে ও এই প্রথমবার দেখল। ওর ভাইয়া কিংবা ও যখন বিদেশে ট্যুরে যায় তখন ওর মম এতটা চিন্তা কখনোই করেনা।

” সত্যিই যাচ্ছেন? দীর্ঘ চারমাস আপনার সাথে ঝগড়া না করে কিভাবে থাকব! ঝগড়াটা মিস করব খুব। ফোনে ঝগড়া করবেনতো আমার সাথে? ” যেন ছোট্ট একটা মেয়ে আবদার করছে এমন ভঙ্গিতে বলল মাশিয়া।

মাশিয়ার বায়না শুনে আরমান হাসবে না কাঁদবে ভেবে পায়না। ঝগড়া করার শখও যে মানুষের হয় আজই জানল বেচারা।

” রিয়েলি এই চারমাস তুমি শুধু ঝগড়াটাই মিস করবে? তুমি কি কখনোই বড় হবেনা? ”

” শুনুন, আমি যথেষ্ট বড় হয়েছি। আপনার সাথে ঝগড়া করতে ভালো লাগে, সেই দোষটা কি আমার? ঝগড়ায় আপনার পারফরম্যান্সও যে ওয়ান ক্লাসের সেটা অন্তত স্বীকার করেন। অপরপক্ষ ঝগড়ায় পারফেক্ট না হলে ঝগড়া জমেনা, সেটা আমি আপনার কাছ থেকেই শিখেছি। ”

” এই তুমি থামবে? ওকে একা রেখে আমি যে কতদিনের জন্য বাহিরে যাচ্ছি সেই চিন্তায় আমার ঘুম হারাম হয়েছে। আর ও আছে ঝগড়া নিয়ে! সাবধানে থাকবে। আম্মার সাথে ঘুমাবে। হুটহাট বাহিরে যাবেনা। তোমার যখন যেটা প্রয়োজন হবে আম্মাকে জানাবে। বুঝতে পেরেছ? ”

” হুম, জানাবো। ”

” পড়াশোনায় যেন কোন গাফিলতি না হয়। থার্ড সেমিস্টারে তোমাকে টপার হতে হবে। আমি প্রতিদিনই তোমার পড়াশোনার খোঁজ নিব। নোটস করে দেব। কিছু নোট করে রেখেছি। সেগুলো কমপ্লিট করবে। আমি সময় বের করে প্রতিদিন তোমাকে একটু করে পড়া দেখিয়ে দেব।তোমার ফোন তো গায়েব করে দিয়েছ। চারমাস শশীর ফোন দিয়ে কাজ চালাও। আমি বাড়িতে এসেই তোমাকে ফোন কিনে দেব। তোমার ফোন থাকলে নিজেই টিচারদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের সাহায্য নিতে পারতে। ”

মাশিয়া বুঝতে পারছে আরমান একটু রেগে গেছে। তাই ও আরমানকে শান্ত করতে বলে উঠে,

” শশীর ফোন দিয়েই আমি ডিপার্টমেন্টের স্যারদের সাথে কথা বলব। তৃষা, মিতুলতো আছেই। ওরাও সাহায্য করবে। আপনি চিন্তা করবেননা। এবারেও ভালো রেজাল্ট করব দেখবেন। ”

” মনে থাকে যেন। ”

” খুব মনে থাকবে। আপনিও ভুলে থাকবেননা কিন্তু। ”

আরমান ভ্রু কুঁচকে তাকায় মাশিয়ার দিকে। ওর কথা বুঝতে পারেনি।

” কি ভুলতে পারবনা? ”

” মেয়েদের থেকে দূরে থাকবেন। চুল পরিপাটি করে রাখবেননা, বডি স্প্রে ইউজ করবেননা। কলারের কাছের বোতাম লাগিয়ে রাখবেন। সুন্দর করে হাসবেননা। মোটকথা মেয়েরা যাতে আপনার আশেপাশে না ঘেঁষে এমনভাবে চলবেন। ”

আরমান মাশিয়ার কাছে এগিয়ে এসে ওকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরল বুকের ভেতর। মাশিয়াও নিজেকে সঁপে দিল আরমানের হাতে।

” ব্রাশ করতে পারবোতো? নাকি ঐটাও বন্ধ রাখতে হবে? মুখে গন্ধ থাকলে মেয়েরা আমার আশেপাশে ঘেঁষবেনা। আর এমনটা কি আজীবন চলতে থাকবে? শেষে এই মেয়েটা আমার কাছে ঘেঁষবেতো? ”

” আমার কাছে আসলে ফিটফাট হয়ে আসবেন। আমি আবার অপরিচ্ছন্ন মানুষ দেখতে পারিনা। আমার জামাই হল মোস্ট হ্যান্ডসাম পার্সোন। তাকে স্মার্ট হতেই হবে। ”

” আচ্ছা, তাহলে আমি হলাম তোমার বলির পাঁঠা! তোমার ইচ্ছেমত আমাকে চলতে হবে? এটা হবেনা, ম্যাম। আমি আরমান আজ পর্যন্ত নিজের ইচ্ছেতেই চলেছি এত বছর যাবৎ। এতদিন আমি যেভাবেই চলেছি, ভবিষ্যতেও এভাবেই চলব। ” মাশিয়াকে রাগানোর সুযোগ আরমান ছাড়লনা।

” তারমানে আপনি আমার কথা শুনবেননা? অসভ্য মাস্টার, আমি আপনার গলা টিপে মে’রে ফেলব। লুচু একটা, খালি মেয়েদের সান্যিধ্য পাওয়ার জন্য ছোঁকছোঁক করে! আমি এখনই আম্মাকে বলে আপনার মালয়েশিয়া যাওয়া ক্যান্সেল করব। আপনার যাওয়া কিভাবে বন্ধ করতে হবে সেটা আমার জানা আছে। ” রাগে আরমানের গাল টানছে মাশিয়া।

” দেশে পুরুষ নির্যাতন বিরোধী আইন হওয়া দরকার। নয়তো দেখা যাবে আগামী এক বছর পর আমি নামক কারও অস্তিত্ব থাকবেনা। শুধু একটা কংকাল হয়ে ঝুলব কোন ডক্টরের চেম্বারে। দেশে ডাকিনী নারীদের সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ”

আরমানের কথা শুনে মাশিয়া রাগে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। ও সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত আরমানের আশেপাশে ভিড়লনা। আরমান সবার কাছ থেকে বিদায় নিলেও মাশিয়া ওর কাছে একবারও আসলনা।

আরমান যাওয়ার পর দশদিন মাশিয়া ওর সাথে কথা বলেনি। ও নিজের মতই থেকেছে। শশীর ফোন দিয়ে তৃষা আর মিতুলের সাথে যোগাযোগ করে নোটস সংগ্রহ করেছে। মন দিয়ে পড়াশোনা করছে।

আয়েশা খানম জায়নামাজে বসে দোয়াদরুদ পাঠ করছেন। ফোনের শব্দে তার মনযোগে বিঘ্ন ঘটে। তিনি জায়নামাজ ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। ড্রেসিংটেবিল থেকে ফোন হাতে নিয়ে দেখলেন আরমান ফোন দিয়েছে। তিনি হাসিমুখে রিসিভ করলেন।

” বাপ, কেমন আছো তুমি? গত দুইদিন ফোন করোনাই কেন? তোমার শরীলডা ভালো আছে? ” একসাথে কয়েকটা প্রশ্ন করে থামলেন আয়েশা খানম।

” আসসালামু আলাইকুম, আম্মা। আমি ভালো আছি। গত দুইদিন ঝামেলায় ছিলাম, আম্মা। তাই ফোন করতে পারিনি। তুমি কেমন আছো? শশী, মাশিয়া ওরা কেমন আছে? ”

” ওয়ালাইকুমুসসালাম। আমরা সবাই ভালো আছি, বাপ। কিন্তু তুমি কি ঝামেলায় পরছিলা? এখন সব ঠিক আছে তো? ” আয়েশা খানম উদগ্রীব হয়ে জানতে চাইলেন।

” অন্য কোন কিছু হয়নি, আম্মা। কোর্স নিয়ে একটু ঝামেলা হয়েছিল। এখন ঠিক হয়ে গেছে। তোমার শরীর ভালো আছে, আম্মা? ঔষধ খাচ্ছ নিয়মিত? ”

” আমার জন্য চিন্তা কইরোনা, বাপ। আমি ভালো আছি। বউমা নিয়ম কইরা তিনবেলাই আমারে ঔষধ দেয়। তুমি নিজের খেয়াল রাইখো। ঠিকমত খাওয়াদাওয়া কইরো। ”

” ঠিক আছে, আম্মা। ”

” বউমার লগে কতা কইবা? ”

” কোথায় সে? তোমাকে বিরক্ত করছেনাতো? পড়াশোনা ঠিকমত করছে? ”

” হেয় কি ছুডু মানুষ, আমারে বিরক্ত করব? হেয় পড়াশোনাও করতাছে, আবার বাড়ির টুকটাক কাজও করতাছে। হেয় আর আগের মত নাই। তুমি ইকটু অপেক্ষা কর, আমি হেরে ডাকতাছি। ”

” আম্মা, ঐ অসভ্য মাস্টারকে বলে দিন, আমি তার সাথে কথা বলবনা। পাশের বাড়ির পাগলের সাথে কথা বলতেও আমি রাজি আছি কিন্তু ঐ অসভ্য মাস্টারের সাথে জীবনেও কথা বলবনা। তাকে দেশে আসতে নিষেধ করে দিন। সে যেন ঐখানকার কোন সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করে সেখানেই সংসার করে। ” মাশিয়া বারান্দায় বসে ছিল সেটা আয়েশা খানম লক্ষ্য করেননি। হঠাৎ মাশিয়ার কথা শুনে তিনি একটু চমকেই উঠেছেন।

এদিকে আরমানের কানে মাশিয়ার বলা কথাগুলো ঠিকই পৌঁছে গেছে। ও বুঝল এখনও মাশিয়ার রাগ কমেনি। একমাসেও ওর রাগ কমেনি দেখে আরমানের চিন্তা হচ্ছে। না জানি ভবিষ্যতে রাগ করলে কতমাস লেগে যাবে শান্ত হতে!

” আমি রাখছি, আম্মা। ওর রাগ কমলে আমাকে ফোন দিতে বলো। তোমরা সাবধানে থেক। ”

” তুমি ভালোভাবে থাইক, বাপ। আর তিনটা মাস গেলেই আমার শান্তি। তুমি দেশে আইসা একটা চাকরি করবা। তোমার সুখের সংসার দেখলেই আমার সুখ হইব। ”

সুধা প্রতিদিনই কোচিং-এ যাচ্ছে। ওকে কোন কাজই করতে হয়না। কল্পনা মোর্তাজা যে মেইড ওর কাছে রেখেছেন, সে-ই সব কাজ করছে। সুধার কাজ শুধু পড়াশোনা করা। ও রাস্তাঘাট মোটামুটি চিনে গেছে। কয়দিন থেকেই ওর মন আনচান করছে বাড়ির জন্য। আরমান দেশে থাকলে ঠিকই ওকে দেখতে আসত। দুইদিন ও বাড়িতে ফোন করে কান্নাকাটি করেছে। আয়েশা খানম মেয়ের কান্না সইতে পারেননি। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মাশিয়া আর শশীকে নিয়ে ঢাকা যাবেন। তিনি আরমানকেও বলেছেন এই কথা। সব শুনে আরমানও রাজি হয়েছে। আয়েশা খানম ঢাকায় যাওয়ার তোড়জোড় করছেন। তিনি মাশিয়ার বাবার বাড়ির জন্য কয়েকরকম পিঠা, আতপ চাল, পোলাওর চাল, হাঁস, মুরগী আরও অনেক জিনিস প্যাকিং করেছেন।

প্রায় দুইমাস পর মা-বোনকে দেখে সুধা কেঁদে ফেলল। আয়েশা খানমও কাঁদছেন। শশীর চোখেও পানি। সুধা কখোনো এতদিন মা’কে ছেড়ে থাকেনি। কল্পনা মোর্তাজা মেয়ের সাথে কথা বলতে চাইলে মাশিয়া এড়িয়ে যায়। বাধ্য হয়ে তিনি মন খারাপ করে ছোট ড্রয়িংরুমের এককোনে দাঁড়িয়ে আয়েশা খানম আর তার মেয়েদের মিলন দেখতে থাকেন। মাশিয়া ফ্ল্যাটের একমাত্র বেডরুমে গিয়ে শুয়ে পরল। ওর ভিষণ মাথাব্যথা করছে।

রাতের খাবার পর কল্পনা মোর্তাজা বিদায় নিলেন। তিনি যাওয়ার আগে আয়েশা খানমকে নিজের বাড়িতে দাওয়াত করলে আয়েশা খানম জানান, তার ছেলে দেশে ফিরলে ছেলেকে নিয়ে তিনি যাবেন বেয়াই বাড়িতে। কল্পনা মোর্তাজা বুঝলেন আয়েশা খানম তার ছেলের আগে ছেলের শ্বশুর বাড়িতে যেতে চাননা। তাই তিনি আর জোড় করলেননা। মিরাজ মোর্তাজা দেশে না থাকায় তিনি একাই এখানে এসেছিলেন।

সাতদিন ঢাকা কাটিয়ে আয়েশা খানম মেয়ে আর ছেলের বউকে নিয়ে গ্রামে ফিরে যান। এই সাতদিন কল্পনা মোর্তাজা একবার করে মাশিয়াকে দেখতে এসেছেন। সেই সাথে নিয়ে এসেছেন খাবার। তিনি এই কয়দিন আয়েশা খানমকে রান্না করার সুযোগ দেননি। এছাড়াও তিনি আয়েশা খানমসহ সবাইকে নতুন পোশাক দিয়েছেন। আয়েশা খানম এসবে আপত্তি করলেও তিনি মানেননি। আয়েশা খানম এই সাতদিনে বুঝে গেছেন কল্পনা মোর্তাজা মানুষ হিসেবে অসাধারণ। তিনি যেমন দ্বায়িতশীল তেমনি উদার। দুই বেয়ানে মিলে এই কয়দিন বেশ আড্ডাও দিয়েছেন। তাদের বিদায় বেলায় কল্পনা মোর্তাজা কেঁদে ফেলেছেন। কল্পনা মোর্তাজার কান্না দেখে তার জায়গায় নিজেকে কল্পনা করে কেঁদেছেন আয়েশা খানমও। তার মেয়েদেরও একদিন শ্বশুর বাড়িতে যেতে হবে। হয়তো সেদিন এভাবেই কাঁদবেন।

বাড়িতে এসে মাশিয়া দেখল পুরোদমে ধানের বীজ বপনের কাজে ব্যস্ত গ্রামবাসী। আয়েশা খানমও কোমড় বেঁধে লেগে গেলেন কাজে। ফোন দিয়ে কয়েকজন মজদুর ডেকে নিলেন। তারা জমি চাষ দেয়া থেকে শুরু করে বীজ বপন এমনকি চারা লাগানোর কাজও করবে।

মাশিয়া আর শশীর তেমন কোন কাজ নেই। কাজের মেয়েটাই রান্নাসহ বাড়ির সব কাজ করে দেয়। তাই বিকেল হলেই ওরা বাহিরের উঠানে কিংবা বাগানে গিয়ে আড্ডা দেয়। আজকেও ওরা বাগানেই আড্ডা দিচ্ছিল। এমন সময় মাশিয়া লক্ষ্য করল কয়েকমাস আগে যে তিনজন মেয়েকে লুকিয়ে আরমানকে দেখার জন্য লজ্জা দিয়েছিল, সেই তিনজন মেয়েই আজ আবারও রাস্তায় দাঁড়িয়ে ওদের বাহিরের উঠানে উঁকিঝুকি মারছে। মাশিয়া আজও সুযোগ হাতছাড়া করলনা। ও পায়ে পায়ে এগিয়ে যায় কাঁটাতারের বেড়ার দিকে।

” এই যে, খুকুমণিরা, আগামী দুইমাস উঁকিঝুঁকি মে’রে কোনও লাভ নেই। তোমরা যে খোকাবাবুকে দেখার জন্য উদগ্রীব হচ্ছ, সেই বান্দাটি এখন মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করছে। যে বয়সে তার আণ্ডাবাচ্চাকে পড়ানোর কথা, সেই বয়সে বুড়ো ধামড়াটি নিজে পড়ছে। তাই আগামী দুইমাস এভাবে উঁকিঝুঁকি মে’রে এনার্জি লস করোনা। অবশ্য দুইমাস পর আসলেও তোমাদের কোনও লাভ নেই। আমার মত সুন্দরী বউ ফেলে যে খোকাবাবু দূর পরবাসে মাস্তি করতে পারে, সে আদৌও তোমাদের দিকে তাকাবে কিনা সেই সন্দেহ আমার আছে। ” মাশিয়ার কথা শুনে মেয়ে তিনজন আজকেও চরম লজ্জা পেয়েছে। তবে একটা মেয়ে লজ্জাকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে আসল মাশিয়ার দিকে।

” তার ফোন নম্বর দেয়া যাবে? কথা বলে শিওর হতাম, তিনি আমাদের সাথে কথা বলবেন কিনা। তাকে দেখে ভালো মানুষ মনে হয়েছে। নিশ্চয়ই তিনি আমাদের মনের কথা বুঝবেন। দিননা তার নম্বর। ”

মেয়েটির কথায় মাশিয়া দাঁত কিড়মিড়িয়ে শশীর দিকে তাকালো। এরপর শশীর কাছ থেকে ফোন নিয়ে আরমানের বর্তমান নম্বর বের করল।

” শোন, তোমাদের রোমিওকে বলো তার বউ নম্বরটা তোমাদের দিয়েছে। তাকে বলে দিও, সে যেন আসার সময় তোমাদের জন্য ডাভ সাবান, ফেয়ার এ্যান্ড লাভলী স্নো, চকলেট এসব নিয়ে আসে। হাজার হলেও তোমরা তার কাছের মানুষ। সম্মান বলে তো একটা কথা আছে, তাইনা? ”

মেয়েরা নম্বর পেয়ে হাসিমুখে বিদায় নেয়। তারা মাশিয়ার কথার কোনো জবাব দেয়না। এদিকে মাশিয়া রাগে ফুঁসছে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here