প্রেমের_প্রদীপ_জ্বলে [১৮] প্রভা আফরিন

0
497

প্রেমের_প্রদীপ_জ্বলে [১৮]
প্রভা আফরিন

শরতের সমাপ্তি আসন্ন। আকাশে ভেসে বেড়ানো বাউণ্ডুলে মেঘেদের আনাগোনা কমেছে। হেমন্তকে বরন করতে প্রস্তুত হচ্ছে দিনে দগ্ধ, রাতে স্নিগ্ধ প্রকৃতি। সেই মেঘমুক্ত ঘন নীল আকাশ দেখতে দেখতে একজোড়া শিল্পী চোখ তার পরবর্তী কোনো আর্টপিসের কল্পনা করছিল। অবশেষে আজ মেহযাবীন তার ক্যানভাস, রঙ-তুলির জগতে ফিরে যাবে। মনের অলিগলিতে উঁকি দেওয়া সব রঙিন কল্পনা ওকে হাত বাড়িয়ে ডাকছে। ক্যানভাসের ফাঁকা কাগজ ওর স্পর্শ পেতে চাতকের মতো প্রতিক্ষায় আছে। মেহযাবীনও তৃষিত। শখ যখন নেশায় পরিণত হয় তখন তাকে ছেড়ে থাকা মুশকিল।

সিটে গা ছেড়ে নিরবে বসে আছে সে। গাড়ির কাচ তুলে দেওয়া। এসি চলছে। কিন্তু এই কৃত্রিম শীততাপ যাবীনের ভালো লাগছে না। কাচ নামাতে বলতেও ইচ্ছে করছে না। এমনিতেই বাড়ি থেকে বের হবার পথে একটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে গেছিল সে। কিংবা বলা যায় ভুল সময়ে নিশান্তের আগমন ওকে বিব্রত করে দেয় প্রতিবার। এই ব্যক্তির হুটহাট আগমন কোনোদিন তার জীবনে সুখবর হয়ে এসেছে বলে মনে পড়ে না। সুতরাং মৌনতা ধরে রাখাই ভালো।

নিশান্ত চোখে কালো রোদচশমা পরে স্মুথলি ড্রাইভ করছে। কোনো তাড়াহুড়া নেই, উদ্বেগ নেই। যেন নিখুঁতভাবে ড্রাইভ করাই তার একমাত্র কাজ। বাইরে বের হলে কালো চশমাটা যেন তীক্ষ্ণ দৃষ্টির নিত্য সঙ্গী হয়ে যায়। অবশ্য তামাটে ত্বকের গম্ভীর মুখশ্রীতে চশমাটা ভালো কমপ্লিমেন্ট দেয়। যাবীন কোণা চোখে চেয়ে মনে মনে ঠোঁট বেঁকায়। নিশান্ত উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের অধিকারী ছিল। সেনাবাহিনীতে যোগদানের পর গায়ের রঙ তামাটে বর্ণের হয়েছে। দেহে অনেক ক্ষতের চিহ্নও আছে। অবশ্য সুঠাম দেহ এবং অঙ্গভঙ্গিতে আকর্ষণ আরো বেড়েছে। সুপুরুষ বটে কিন্তু আচরণ অত্যন্ত কর্কশ। এর জন্যই বোধহয় বলে, ডোন্ট জাজ আ বুক বাই ইটস কভার! হুহ!

গাড়িটা সকালের ব্যস্ত নগরী ছেড়ে গলিতে ঢুকতেই যাবীনের ধনুকের ন্যায় বাঁকানো ঘন ভ্রু জোড়া কেন্দ্রমুখী হয়ে কুচকে আসে। প্রশ্নোক্ত চোখে চাইতেই নিশান্ত হালকা গলায় বলল,
“ছবি এনেছো তো?”

“তা এনেছি। কিন্তু কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?”

নিশান্ত নির্বিকার স্বরে জবাব দিল,
“বেচে দেব। আপাতত ছবিটা আমার হোয়াটসঅ্যাপে সেন্ড করো।”

যাবীন চোখ ছোটো করে তাকায়। একটা কথা স্বাভাবিক করে বলতে পারে না! অপ্রসন্ন মুখে বলল,
“আমার কাছে আপনার কন্টাক্ট নেই।”

এ উত্তরে নিশান্ত এমনভাবে ঘাড় ফিরিয়ে চাইল যেন আশ্চর্য কিছু শুনে ফেলেছে। রোদ চশমার আড়ালেও তার দৃষ্টির আশ্চর্যভাব ঠিক বুঝে গেল যাবীন। থতমত খেয়ে বলল,
“এভাবে তাকানোর কী আছে? আপনার সঙ্গে কোনোকালে আমার ফোনে কথা হয়েছে? না প্রয়োজন পড়েছে?”

নিশান্ত পুনরায় পথে চোখ ফিরিয়ে জবাব দিল, “সেভ করে নাও। এই ঝামেলা যতদিন ঘাড়ের ওপর ঝুলে আছে প্রয়োজন পড়বেই।”

“সাতে পাঁচে না থেকেও আমাকেই কেন প্রয়োজন পড়বে? আপনার গুণধর ভাই-বোন আছে না!”

“কারণ তুমি শাওনের সবচেয়ে ক্লোজ ফ্রেন্ড। ও আমাদের যা জানাতে পারবে না, বা আমরা জানি না, সেসব তুমি জানো। দ্যাটস হোয়াই আই নিড ইয়োর হ্যাল্প।”

যাবীন প্রতিবাদ করতে পারল না। এ কথা সত্যিই। শাওন অন্তর্মুখী ও লাজুক স্বভাবের মেয়ে। সবার সঙ্গে সব কথা খোলাখুলি বলতে পারে না। জীবনের এমন অনেক গোপন কথা আছে যেসব প্রিয় বন্ধু হিসেবে যাবীন জানলেও আর কেউ জানে না। তাই অতিশয় বিরক্তি নিয়ে নিশান্তের নম্বরটা টুকে নিল। ফোনবুকে সেভ করল “রাম গরুরের ছানা” নামে। সাথে বিরক্তির ইমোজি। হোয়াটসঅ্যাপে আমিনের ছবিটা সেন্ড করে ও পুনরায় জিজ্ঞেস করল,

“আমাকে কী বলবেন কোথায় যাচ্ছেন? বাড়ি ফিরব তো।”

“আপাতত একটা ছোটো তথ্য নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এরপর তোমায় পৌঁছে দিয়ে আসব।”

এটুকু বলেই গাড়িটা থামিয়ে দিল নিশান্ত। হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকে আমিনের ছবিটাকে তীক্ষ্ণ নজরে দেখল। বিয়ের দিন এটাকে দেখেছিল সে। ছেলেটার কাজে অপটুত্ব ছিল বলে বিরক্তও হয়েছিল। ভেবেছিল নতুন কর্মচারী। কে জানত যে এই ছেলের এতই সাহস যে ক্যাটারিং সার্ভিসের লোকেদের ছদ্মবেশ নিয়ে দ্বীপশিখার অন্দরে ঢুকে গেছিল! এভাবে যে কেউ বাড়িতে ছদ্মবেশ নিয়ে ঢুকে যাওয়ার সাহস পেলে তো মুশকিল।

একটা মোটরজান সারানোর দোকানের সামনে গাড়ি পার্ক করেছে নিশান্ত। বাতাসে ডিজেলের গন্ধ ভেসে আসছে। যাবীন বুঝল না গাড়িতে কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা। ভালোই তো চলছিল এতক্ষণ। ওর ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করে নিশান্ত দোকানে ঢুকে এক মধ্যবয়সী পুরুষের সঙ্গে কথা বলল।

দ্বীপশিখায় পত্রিকা বিলি করা বদরুদ্দীনকে ফোনের ছবিটা দেখাতেই তিনি চিনে ফেললেন আমিনকে। উত্তেজিত স্বরে বললেন,
“এই ছেলেটাই৷ এই ছেলেটাই আমার সাইকেল নিয়ে গেছিল সেদিন। তাই তোমাগো বাড়িতে পেপার দিতে পারি নাই। ওরে কী খুঁইজা পাইছো? আমার সাইকেলটা কি ফিরা পাব?”

বদরুদ্দীনের কণ্ঠে আকুতি। ওই সাইকেলে চড়েই পত্রিকা বিলি করার কাজটা করতে পারতেন। এই বয়সে পায়ে হেঁটে পাড়ায় পাড়ায় যাওয়া ভীষণ কষ্টের হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিশান্ত বলল,
“মারা না গেলে ওকে খুঁজে বের করবই, চাচা। আপনার সাইকেল পেয়ে যাবেন শীঘ্রই।”

নিশান্ত গাড়িতে ফিরে আসতেই যাবীন প্রশ্ন করল,
“কী কথা বললেন লোকটার সঙ্গে?”

“নিশ্চিত হলাম। গতদিনের কাণ্ডটা আমিনই ঘটিয়েছে।”

যাবীন মুখ চেপে ধরে। বিস্মিত স্বরে বলে,
“ও এতটা ডেস্পারেট হয়ে গেছে! বাড়িতে ঢুকল কীভাবে?”

“পত্রিকা দিতে আসার ছলে। এই লোকটাই আমাদের বাড়িতে রেগুলাত পত্রিকা দেয়। উনার সাইকেলসহ পত্রিকা ছিনিয়ে নিয়েছিল। কাজেই আমিনকে তিনি দেখেছেন। নিশ্চিত হতেই আসা।”

র’ক্তাক্ত গাড়িটার দৃশ্য মনে পড়তেই যাবীনের দেহে কাটা দিয়ে ওঠে। কণ্ঠনালী শুষ্ক হয়ে ঢোক গিলে অনবরত। নিশান্ত ওর রক্তশূণ্য মুখটা দেখেই বিদ্রুপের সুরে বলল,
“ইদুরের কলিজা! সিটবেল্ট বাঁধো। বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসি।”

খোঁচাটা গায়ে লাগল যাবীনের। সরোষে বলল, “আর আপনার তো আয়রন হার্ট!”

নিশান্ত তীক্ষ্ণ হেসে বলল,
“কী করে জানলে? ঠুকে দেখেছো?”

“লোহাকে খালি চোখে দেখলেই বোঝা যায় সেটা লোহা। তার জন্য ঠুকে দেখতে হয় না। এদেরকে কোনো অনুভূতিই ভেদ করতে পারে না।”

নিশান্ত ওর রুষ্ট চোখপানে চেয়ে জবাব দিল,
“লোহার মতো কঠিন ধাতবকে যে কেউ ভেদ করার ক্ষমতা থাকা উচিত নয়। সেই ক্ষমতা তেজস্বী কারোই থাকতে হয়। যেমন আগুন। উত্তাপের সংস্পর্শে এলে লোহা গলে যায়।”

যাবীন স্থির চেয়ে রইলো নিশান্তের তীক্ষ্ণ চোয়ালের দিকে। অনন্ত বলেছিল শিলা নাকি নিশান্তের জন্য পারফেক্ট নয়। কারন দুই ধাতবে ঠোকাঠুকি লাগবে। এখন নিশান্তের কথা শুনে মনে হচ্ছে কথাটা ঠিক না। এই হাসতে না জানা রাম গরুরের ছানার জন্য শিলাই পারফেক্ট। মেয়েটি তেজস্বী। হয়তো তাই ভেবেই বলল কথাটা। যাবীনও সম্মতি দিয়ে বলল,
“রাইট! আপনার জন্য তেজস্বী শিলা আপুই পারফেক্ট।”

হুট করে প্রসঙ্গে শিলার নাম আসতেই নিশান্ত ভ্রুকুটি করে। কথাটা তার কানে শ্রুতিমধুর লাগল না। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে পথের দিকে চেয়ে গম্ভীর স্বরে জবাব করল,
“তেজস্বী শুধু ব্যক্তিত্ব হলেই হয় না। অনুভূতিও হতে হয়৷ ব্যক্তিত্ব মুগ্ধতা সৃষ্টি করে, আর অনুভূতি বন্ধন।”

যাবীন সিটবেল্ট বাঁধেনি। আচমকা গাড়ি টান দেওয়ায় ঝাঁকুনি খেল সর্বাঙ্গে। মেজাজ খারাপ হলো ওর। সিটবেল্ট বাঁধতে বাঁধতে বলল,
“কাজের কথায় আসি একটু? ওই সাইকো আমিনকে খুঁজে বের করবেন কীভাবে?”

নিশান্তের যেন সব ভাবাই ছিল। জবাব দিল,
“প্রথমে থানায় সম্পূর্ণ ব্যাপারটা ইনফর্ম করব। এরপর যাব ক্যাটারিং সার্ভিস কোম্পানিতে। বিয়ের দিন আমিন ক্যাটারিং কোম্পানির লোকেদের সঙ্গে এসেছিল। অর্থাৎ তাদের কারো কানেকশনেই এটা সম্ভব হয়েছে। ওই কোম্পানির খবর নেব। তুমি ওর ব্যাপারে যা কিছু জানো তার একটা ডিটেইলস প্রস্তুত করে আমাকে দেবে। শাওনের হেল্প নেবে।”

যাবীন একটু ভীত হয়। শাওন যখন আমিনের সঙ্গে প্রণয়ে জড়িয়েছিল সবার আগে ওকেই জানিয়েছে। যাবীনের আপত্তি ছিল না। বরং বন্ধুদের কারো প্রেম হলে অন্য বন্ধুরা যেমন স্বভাবসুলভ শুভকামনা জানায় সেও তাই করেছে। ওদের অনেক স্মৃতির সাক্ষীও সে। পরবর্তীতে ক্রমাগত টাকা নেওয়ার বিষয়টা বুঝতে পেরে যাবীন সতর্ক করেছিল সরে যেতে। জাওয়াদ যে শাওনকে পছন্দ করে সেটা তখন কেউই জানত না। যাবীন বিমর্ষ কণ্ঠে বলল,
“বিষয়টা সবার সামনে চলে আসলে বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। বড়োদের না জানালে হয় না?”

নিশান্ত বুঝল কথার অর্থ। শাওন এখন বিবাহিত। তার অতীত সামনে এলে শুধু বাপের বাড়ি নয়, শ্বশুর বাড়িতেও প্রভাব পড়বে। ও জবাব দিল,
“সেটা আমি বুঝে নেব। জাওয়াদের সঙ্গেও কথা বলে নেব।”

এরপর দুজনের কথা ফুরাল। কিন্তু যাবীন ধাতস্থ হতে পারল না। তার কেন জানি বিষয়টা বড্ডো বেখাপ্পা লাগছে। আমিনের যে ফ্যামিলি স্টেটাস ও লাইফস্টাইল তাতে সে কোন সাহসে শাওনের অনিষ্ট করতে পেছনে লাগল! তাও আবার পুরো পরিবারকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বামুন হয়ে চাঁদে বো’মা মারার মতোই দুঃসাহের ব্যাপার! ও বলল,
“আমার বিষয়টা অস্বাভাবিক লাগছে জানেন। আমিনকে আমি কাছ থেকে দেখেছি। ভালোমতো চিনতান একসময়। ওর এতটা সাহস দেখানোটাই যেন বেমানান লাগছে। সাইকো হলে কী মানুষের দুঃসাহস বেড়ে যায়?”

“মানে? বুঝিয়ে বলো।”

“বিয়ের রাতে অনন্ত-শোভার কাছে ধরা পড়ে পর্যন্ত আমিন ভীত হয়েছিল। কান্নাকাটি করেছিল। সে-ই পালিয়ে গিয়ে একের পর এক অঘটন ঘটাচ্ছে। তাও আবার এক ব্রিগেডিয়ার এর বাড়িতে। অথচ ও কখনোই এতটাও সাহসী ছিল না। আমিনের সাহসের উৎস কী? মা’দক নাকি মদদ?”

কথাটা নিশান্তের কপালে সৃষ্ট ভাজের রেখাকে আরো গভীর করে তুলল। ভাবনাগ্রস্ত ক্ষণেও পাশে বসা বিচক্ষণ রমনীকে খোঁচা দিতে কার্পণ্য করল না ওর কর্কশ কণ্ঠ,

“ইঁদুরের কলিজা হলেও ব্রেইনটা ইঁদুরের বুদ্ধিমত্তা পায়নি তাহলে!”
___________

জাওয়াদের আজ বাড়ি ফেরার কথা থাকলেও সন্ধ্যা নামার মুখে তার গাড়িটা এসে থামল দ্বীপশিখার সামনে। জাওয়াদ ব্যস্ত ভঙ্গিতে গাড়ি থেকে নেমে সদর দরজার সামনে আসতেই পথ রোধ করল শোভা। দরজায় হেলে দাঁড়িয়ে সে বলে উঠল,
“এখানে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত।”

জাওয়াদ স্মিত হেসে বলল,
“প্রবেশাধিকার পাওয়ার উপায়টা যদি বলতেন, সাহেবা।”

“এত তাড়া কীসের, দুলাভাই?”

“একটু আরাম চাই।”

“আরামের অপর নাম কী শাওন আপা?” শোভা দুষ্টু হেসে ভ্রু নাচায়।

চাঁদনী বেগম দরজার কাছে এসে জাওয়াদের বিক্ষিপ্ত মুখশ্রী দেখে শোভাকে ধমক দিল,
“ওকে ঢুকতে দে। খাটাখাটুনি করে এসেছে সবে। পরে জ্বালাস।”

শোভা নাক ফুলিয়ে বলল,
“এই বুড়ো বালিকা, আমি তার একমাত্র শালিকা। তুমি কেন নাক গলাও?”

চাঁদনী বেগম গরম চোখে তাকালেন। বললেন, “তোমার বিচার তো বাকি আছে। ভাঙা পা নিয়ে দুনিয়া ঘুরে বেড়াচ্ছো!”

চাঁদনী বেগম হাতের ছড়িটা নিয়ে দু-পা এগিয়ে আসতেই শোভা পথ ছেড়ে দিয়ে বলল,
“বুড়ির স্বভাবের যেই বাহার
কোনো বিশ্বাস নেই তাহার
এবার জায়গা ছাড়ি
নয়তো পিঠে পড়বে বারি।”

শোভা ভৌ-দৌড় দিয়ে ভেতরে চলে গেল। তাদের বাইরে যাওয়ার ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে নিশান্ত। অনন্ত সারাদিন ঘর ছেড়ে বের হয়নি। শাওনও মুখ গোমড়া করে আছে। বাড়ির সবাই ভাবছে গতকালের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রভাবেই এই অতিরিক্ত সতর্কতা।

জাওয়াদ ব্যস্ত পায়ে দোতলায় উঠে শাওনের বেডরুমে ডুকে গেল। ঘরটা ফাঁকা। ফাঁকা বলেই যেন একটু স্বস্তি পেল সে। গলার টাই ঢিলে করে বসে পড়ল খাটে। সদা শান্ত, স্থির জাওয়াদের ঠোঁটের কোণে হালকা একটা স্নিগ্ধতা মিশে থাকে সর্বদা। আজ তা অনুপস্থিত। তার চোখের মণিতে চঞ্চলতা। কোনো কারণে আজ তার মনঃসংযোগ বিঘ্নিত। অফিসে গিয়েও আজ কাজে মন বসেনি। ক্লায়েন্ট মিটিং সেরেছে দায়সারাভাবে। সারাদিন বারবার মনটা চলে যাচ্ছিল ফোনের ম্যাসেজ বক্সে। যে ম্যাসেজটা সকালেই এসে জমা হয়েছে। জাওয়াদ একান্তে বসে পুনরায় পড়ল বাক্যটা,
“সত্য কখনো চাপা থাকে না, মি. জাওয়াদ শেখ।”

কে করল এই ম্যাসেজ? এই কয়েকটা শব্দের পেছনের কারণ কী? ভাবনার মাঝেই জাওয়াদের বুকের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ল শাওন। গা কাঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল,
“আ’ম সরি, জাওয়াদ।”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here