প্রেমের প্রদীপ জ্বলে [২]
প্রভা আফরিন
বিচ্ছেদ! একটি হৃদয়ঘটিত সম্পর্কের চূড়ান্ত ও করুণ পরিণতির নাম। এক সময়ের উথাল-পাতাল করা ভালোবাসার মানুষটা বিচ্ছেদের পর প্রাক্তন হিসেবে গন্য হয়। এরপর হুটহাট দেখা হলে জেঁকে বসে অস্বস্তি, সংকোচ কিংবা হৃদয়ের কুঠুরিতে আত্মগোপন করা গোপন ব্যথা। কারো কারো কাছে আবার প্রাক্তনের ছায়াও বিষাক্ত হয়ে ওঠে! অন্তত শাওনের কাছে তাই। অপেক্ষারত হবু স্বামীর নিকট যাওয়ার বদলে সে আটকা পড়েছে প্রাক্তনের কাছে। ওর সর্বাঙ্গে বধূসাজ। ভারী বেনারসি ও গহনার ভারে ন্যুব্জ দেহ। একটু আগেই সে বিবাহ সভায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। এমন সময় আননোন নাম্বারে ফোনকল আসে। যেখানে স্পষ্ট হুমকি দেওয়া হয় যদি শাওন তার প্রাক্তন আমিনের সঙ্গে এই মুহূর্তে দেখা না করে তবে আমিন ভরা সভায় দুজনের সম্পর্ক নিয়ে তামাসা করে ছাড়বে। বাড়ির সম্মানে আঘাত লাগার ভয়েই শাওন ছুটে এসেছিল তেতলার ছাদ সংলগ্ন স্টোররুমে। বিচ্ছেদের ছয়মাস পরও মাঝে মাঝে আমিন আসে ওকে মানাতে। বিয়ে করে নিতে অনুনয় করে। শাওন সেসব কানেই তোলেনি। মনের আসনে ঠাঁই দিয়েছিল যত্ন করে, কিন্তু সেই আসনের যোগ্য সম্মান যে দেয়নি তার জন্য সামান্যতম মায়াও আর অনুভব করে না ও। তবে আমিনকে আজ সেই পুরোনো দিনের মতো অসহায়, অম্লানবদন লাগছে না। উগ্র ভঙ্গিমায় পথ রোধ করেছে। আর তখনই শাওন টের পেল, উত্তেজিত মস্তিষ্কে একটা ভুল করে ফেলেছে। কাউকে জানিয়ে আসা কিংবা সঙ্গে করে নিয়ে আসা প্রয়োজন ছিল। শাওন নিজের ভীতি আড়াল করে শক্ত গলায় বলল,
“আমি তোমাকে আর চাই না, আমিন। কতবার বলব এক কথা? পথ ছাড়ো আমার।”
কথাটা বলা মাত্রই বলিষ্ঠ হাতের থাবা পড়ে মেয়েটির চুলের গোছায়। আলো-আঁধারির বিভ্রম ছড়ানো গুমোট কক্ষে পুরুষালি হাতের জোরে শাওন হাঁসফাঁস করে ওঠে। আমিন দাঁতে দাঁত চেপে হিসহিসিয়ে বলে ওঠে,
“বড়োলোক, সুদর্শন পাত্র পেয়ে মন ঘুরে গেছে, সোনা? তাই এখন আর গরীব আমিনকে ভালো লাগে না?”
শাওনের মুখ রক্তশূন্য, চোখে দুর্বার বিস্ময়। আমিন ওর গায়ে হাত তুলল! এতটা নীচে নামতে পারল সে! ক্রমাগত পুরুষালী হাতের চাপ বৃদ্ধির ফলে শাওনের চুলের প্রতিটা গোড়া বিষিয়ে যায়৷ তবে যন্ত্রণাকে ছাপিয়ে গেছে ভয়। ব্যস্ত বিয়ে বাড়ির আনাচে-কানাচে আত্মীয় পরিজনের আনাগোনা। হুট করে কেউ স্টোর রুমের দরজাটা খুলে দিলেই দুজনকে দেখে ফেলবে। বিয়ের কনের সঙ্গে বন্ধ স্টোর রুমে প্রাক্তন প্রেমিককে আবিষ্কার করলে এর পরিণতি যে কোথায় গিয়ে ঠেকবে ভাবতেও গা শিউরে ওঠে। শাওনের বুকের পাজর কাঁপিয়ে যেন রেলগাড়ি ছুটছে। তবুও আমিনের মিথ্যা অপবাদে দমে গেল না। ধস্তাধস্তি জারি রেখে দাঁতে দাঁত চিপে বলল,
“প্রেম করার সময় তোমারও মনে রাখা উচিত ছিল ‘আই লাভ ইউ’ বললেই কেউ তোমাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকবে না। ভালোবাসাকে প্রায়োরিটি দিতে হয়। তাকে যোগ্য সম্মান দিতে হয়। তুমি আমাকে কক্ষনো দু আনার দাম দাওনি। বরং আমিই বেহায়ার মতো ছুটে গেছি, তোমাকে শোধরাতে চেয়েছি। তুমি শোধরাওনি। নিজের বেপরোয়া জীবনকে আমার চেয়েও বেশি প্রাধান্য দিয়েছো। তাহলে এখন আমাকে পাওয়ার জন্য উতলা হচ্ছো কেন? সোনার ডিম পাড়া হাঁস হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে বলে?”
আমিন আরো কাছে এগিয়ে আসে। শাওন কুঁকড়ে যায়। যে সান্নিধ্য এক সময় ওর ঠোঁটে হাসি ফোটাতো আজ তা ঘৃণার উদ্রেক করে। প্রণয়ের শুরুতে যে মাদকতার ঘোর ছিল, সম্পর্কের দুটো বছরে আমিন নিজের কর্মকাণ্ড দিয়েই সেই ঘোর কাটিয়ে দিয়েছিল। অন্তরকে করে তুলেছিল তিক্ত। ফলে বিচ্ছেদ শাওনের নিকট হয়ে উঠেছিল মুক্তি। তাহলে আজ এই সুখের দিনে তিক্ত অতীত কেন বন্দি করতে এসেছে ওকে।
আমিন বলল,
“মুখে মুখে তর্ক করতে শিখে গেছো দেখি?”
“আর কী আশা করো? প্রতারক তুমি তখনও ছিলে, এখনও আছো। আমার বাড়িতে ঢোকার সাহস কোথায় পেলে?”
আমিন একটা বিদঘুটে হাসি দিল। শাওনের গলায় পরিহিত সোনার সাতনরি হারের ওপর আঙুল চালিয়ে গর্ব করে বলল,
“বড়োলোকের বিয়েতে কত্ত কাজ! কতশত মানুষের আনাগোনা। ঢুকে গেছি ক্যাটারিং সার্ভিসের লোকেদের সঙ্গে। নিরাপত্তা কর্মীরা টেরই পায়নি। আজ তো আমাকে আসতেই হতো।”
“কী চাও তুমি, আমিন?”
“তোমাকে। তোমাকে তুলে নিয়ে যেতে এসেছি। সুখে সংসার বাঁধব। এখন থেকে তোমার সব কথা শুনব। প্রমিস।”
“অসম্ভব! আমাকে নিয়ে যাওয়ার সাহসও যদি তুমি করো, আমার চাচা-ভাইয়েরা তোমাকে জ্যন্ত পুতে রাখবে।”
“আর হবু বউকে প্রাক্তনের বাহুতে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় আবিষ্কার করার পর তোমার হবু স্বামী ফিরে তাকাবে তো? আমার উচ্ছিষ্ট গ্রহণ করার মতো মহত্ত্ব আছে তোমার হবু স্বামীর?”
আমিনের ঠোঁটে অত্যন্ত রুক্ষ, হিংস্র ও উদ্দেশ্যপ্রবণ হাসি ফুটে ওঠে। ওর অভিপ্রায় বুঝে শাওন ধীরে ধীরে বলহীন হয়ে পড়ে। যেন কেউ নিংড়ে নিচ্ছে সমস্ত শক্তি। আজকের পর জাওয়াদ ওকে বিশ্বাস করবে তো! বাইরে থেকে তখন শোরগোল ভেসে আসছে,
“শাওন কই গেল? ছেলের বাড়ির লোকেরা সব অপেক্ষা করছে। জাওয়াদ এসে থেকেই শাওনের খোঁজ করছে। বর তো বিয়ের আগেই বউ পাগল হয়ে গেছে!”
_________________
পুষ্প পবিত্রতার প্রতিক। পুষ্প সৌন্দর্যের আখ্যান। যুগে যুগে তাই সকল সৌন্দর্যপ্রেমির মন ফুলের রূপে মুগ্ধ, সৌরভে সুবাসিত। প্রণয় নিবেদনের অন্যতম সংকেত ফুল। একটি গোলাপ নিবেদনে যেমন প্রণয়ের সূচনা হয় তেমনই একটি রজনীগন্ধার মালা খোপায় জড়িয়ে দিয়ে রমনীর অভিমানের পাহাড় ভেঙে ফেলা যায়। আগুন যে মনের বরফ গলাতে ব্যর্থ, প্রেমময় ফুলের স্পর্শ তা নিপুণতার সাথে করতে পারে। বিয়ে শব্দটার সঙ্গেও ফুলের বেশ অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। দুটি মানুষের পবিত্র পথচলায় শুভেচ্ছা জ্ঞাপনে ফুলের উপস্থিতি আবশ্যক। তাই বিয়ে বাড়ি মানেই ফুলের ছড়াছড়ি। সে হোক গাছ থেকে তোলা ফুল কিংবা ফুলের উপমাবিশিষ্ট সুন্দরী রমনী।
বিবাহের আসরে তরুণ পুরুষের দল জ্যন্ত ফুলেদের সৌন্দর্য অনুসন্ধানে ব্যস্ত। অবিবাহিত, সিঙ্গেল ছেলেরা পছন্দের রমনী নির্বাচনে অগ্রাধিকার পায়। বরযাত্রীর বহরে আজ অনেক রূপবতী, মধুমতী ফুলের সন্ধান মিলেছে। সেই ফুলের কাছে কীভাবে ভ্রমর হয়ে পৌঁছানো যায় তার কৌশল আঁটতে ব্যস্ত জোয়ানের দল। সেই দলের নেতা হয়েছে অনন্ত। তরুণের অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিতে প্রথমেই গেঁথে গেল এক রূপবতী তরুণী। যার খোপায় জড়ানো গোলাপ ফুল। অনন্ত তার পিছু নিয়ে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল,
“ওহে সখী, আমি তোমার খোপার ফুল হতে চাই। বরন করে নাও আমায়।”
যাবীন পিছু ফিরে চাইল। বন্ধুর দুষ্টুমিপূর্ণ চাহনির বিপরীতে একটা ব্যঙ্গাত্মক হাসি নিক্ষেপ করে জবাব দিল,
“ওহে সখা, আমি যে চাঁপা ফুল খোপায় দেই না।”
অনন্তের মুখে আঁধার নামল। অভিমানী স্বরে বলল,
“এভাবে বলতে পারলে, সখী? গায়ের রং শ্যামলা বলে আমাকে চাঁপার দলে ফেলে দিলে?”
“প্রেমিকদের ফুল হতে নেই। ফুল তো ঝরে যায়। প্রেমিকদের হতে হয় সুই-সুতোর মতো। যা প্রেম থেকে শুরু করে ফুল, সব দিয়েই মালা গাঁথতে পারে। কখনো বা প্রেয়সীর মনও গেঁথে নেয়।”
ভারী স্বরের জবাবে অনন্ত ও যাবীন দুজনেই পেছনে তাকায়। পাঞ্জাবির হাতা গোটাতে গোটাতে ওদের দিকে এগিয়ে আসে নিশান্ত। সদ্য গোসল করেছে বোঝা যাচ্ছে। আফটার শেভের গন্ধটা পিছু ছাড়েনি।
অনন্ত বড়ো ভাইয়ের কথাটা ছেড়ে দিল না। বলল,
“কিন্তু প্রেয়সীর মন গাঁথতে গিয়ে যে ক্ষত হয়ে যাবে, ভাই।”
নিশান্ত ওর কাঁধে চাপড় দিয়ে জবাব দিল,
“নির্ভর করে প্রেমিকের ওপর। তার ক্ষতে যন্ত্রণা বেশি নাকি প্রেম। অবশ্য প্রেমের চেয়ে বড়ো ক্ষত মনের জন্য আর কী হতে পারে?”
অনন্ত বেশ বুঝেছে এমন ভঙ্গিতে মাথা দুলিয়ে বলল,
“এবার থেকে প্রেমিকার মনে সুচ হয়ে ঢুকে ফাল থুক্কু সুতা হয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করব।”
নিশান্ত চোখ রাঙায়। সে যতটাই গম্ভীর তার ছোটো ভাই ততটাই দুষ্টু। অন্যদিকে যাবীন এই স্থান হতে পালানোর চেষ্টা করছে। করিডোরের সামনে বিয়ের আসরে যাওয়ার মুখে দুই ভাই তালগাছের মতো দাঁড়িয়ে আছে। বেচারীকে তাদের সামনে নতমুখী সুপুরি গাছের মতো লাগছে। ওকে ইতিউতি করতে দেখে নিশান্ত পথ ছেড়ে ব্যাঙ্গাত্মক স্বরে স্বগোতক্তি করল,
“আমাদের বাড়িতে চিপাচাপা নেই। প্রশস্ত, চওড়া ও খোলামেলা পরিবেশে সকলের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে হয়। যেটা আড়ালে থাকা মানুষদের জন্য কষ্টকর।”
যাবীন বিস্ময়ে তাকায়। অপমানে, লজ্জায় দৃষ্টি নুয়ে যায় আপনাতেই। কথার ইঙ্গিত ওকে টেনে নিয়ে যায় আট বছর আগের সেই রেস্টুরেন্টে। একটা দিন, কিছু মুহূর্তই সে অতিবাহিত করেছিল সেখানে। বাইরের দুনিয়া সম্পর্কে অজ্ঞ কিশোরী জানত না ওমন পরিবেশকে ভদ্রলোকেরা খারাপ বলে। সায়নের বাজে কোনো উদ্দেশ্য ছিল কিনা তাও বুঝতে পারেনি। অথচ সেটুকুকে কেন্দ্র করে এই লোক এখনো সুযোগ পেলে ওকে খোঁচা দিতে ছাড়ে না। কে জানে, ওর চরিত্র নিয়ে আর কী কী ভাবে! যাবীনের কোমল মনে কথাগুলো কুঠারাঘাত করে। সাধে কী লোকটার ছায়াও মাড়াতে ইচ্ছে জাগে না! তবে মুখ বুজে নিরবে ও চলেও গেল না।
“আমাকে যে আড়ালে থাকা মানুষ বলছেন, আপনি নিজে কী? নিজে চিপাচাপায় থাকেন বলেই না অন্যদেরও দেখতে পান।”
নিশান্তের চোয়াল শক্ত হয়। দু-পা এগিয়ে এসে কর্কশ স্বরে বলে,
“কী বললে তুমি?”
যাবীনও দমে গেল না। অন্তরের রাগ কুণ্ডলী পাকিয়ে যেন প্রকাশ পেল,
“অন্যকে খোঁচা দিতে সব সময় এগিয়ে থাকেন। আমি কী কখনো বলেছি যে আমাকে রেস্টুরেন্টে আপনি কীভাবে দেখলেন? নিজেও যান বলেই না…”
নিশান্তের রক্তবর্ণ চোখের দিকে চেয়ে কথাটা সমাপ্ত করতে পারল না যাবীন। নিশান্ত ওর নিকটে দাঁড়িয়ে হিসহিসিয়ে বলল,
“বড়ো হয়ে গেছো বলে আরেকটা চড় যে মারতে পারব না সেই নিশ্চয়তা কেউ দেয়নি।”
নিশান্ত দুই পরিবারের ছেলেমেয়েদের মাঝে সবার বড়ো। সবার কাছেই সে বড়ো ভাই। নিশান্তও সেই সম্বোধনের জোরেই ছোটোদের শাসন করে। ব্যতিক্রম ঘটে যাবীনের বেলায়। ও নিশান্তকে সহ্যই করতে পারে না। নিশান্তও ছেড়ে দেয় না। ফলে দুজনের দেখা হওয়া কখনোই সুখকর হয় না৷ অনন্ত ঢুকে গেল দুজনের মাঝে। ভাইকে কিছু বলার সাহস নেই বলে যাবীনকে টেনে ধরে ভেতরের দিকে নিয়ে যেতে যেতে বলল,
“ছাড় তো এসব। আজকের খুশির দিনে কেন শুধু শুধু রাগ করছিস তোরা৷ একটু বাদেই বিয়ে পড়ানো হবে। ফাইজাটা এখনো শাওনকে নিয়ে নামছে না কেন? চলতো দেখি।”
অনন্ত, যাবীন ও শাওন প্রায় সমবয়সী হওয়ায় ভীষণ ভালো বন্ধু। ওদের আরেক বন্ধু ফাইজা, যে পারিবারিক সূত্রে নয়, পড়াশোনার সূত্রে বন্ধু হয়ে গেছে। ওকে সিড়ির কাছে চিন্তিত ভঙ্গিতে পায়চারী করতে দেখে অনন্ত ও যাবীন সেখানেই গেল। অনন্ত বলল,
“তুই এখানে কী করিস? শাওন কই?”
ফাইজা দাঁত দিয়ে নখ কামড়াতে কামড়াতে বলল,
“দোস্ত সর্বনাশ হইছে।”
“সর্বনাশ মানে? বউ সাজাতে গিয়ে আমার বোনটাকে ভূত বানিয়ে দিসনি তো?”
ফাইজা কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল, “তাহলেও ভালো ছিল। কিন্তু ওকে আমি খুঁজেই পাচ্ছি না।”
“খুঁজে পাচ্ছিস না মানে?” যাবীন আঁতকে ওঠে। ওরা সকলেই আমিনের বিষয় সম্পর্কে শুরু থেকেই অবগত। এ-ও জানে আমিন অনেকদিন ধরেই শাওনকে ফুসলাতে চেষ্টা করছে। ছেলেটা মোটেও ভালো ছিল না। শাওনকে ভাঙিয়ে টাকা আদায় করাই ছিল লক্ষ্য৷ অনেক চেষ্টায় বন্ধুকে ওই ছেলের কবল থেকে উদ্ধার করেছে ওরা। জাওয়াদ আগে থেকেই শাওনকে পছন্দ করত। সে বিয়ের প্রস্তাব দিলে শাওন নিজেকে আরেকটা সুযোগ দেওয়ার জন্যই রাজি হয়। চারিদিকে যখন সব ভালো চলছিল এমন সময় শাওনের নিরুদ্দেশ হওয়া ওদের মনে ভয় ধরিয়ে দিল। তীরে এসে তরী ডুবল নাতো! দুই বাড়ির মানুষের জন্যই এ বিরাট অপমান। ওরা ছুটে যাচ্ছিল খোঁজ করতে। এমন সময় দোতলা থেকে শোভার চিৎকার ভেসে এলো।
“বউ এসে গেছে।”
সকলে চমকে ওপরে তাকায়। দেখে বধূ সাজে শাওন দাঁড়িয়ে আছে দোতলার সিড়ির কাছে। তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে শোভা। ওর শাড়ির অবস্থা দেখে এটাকে আর শাড়ি নয়, বরং কাপড়ের স্তুপ মনে হচ্ছে। যাবীন ছুটে উপরে আসে। দুজনের চোখমুখ দেখেই বুঝতে পারে কিছু একটা ঠিক নেই। শোভাকে অস্বাভাবিক হাঁপাতে দেখে সন্দেহি স্বরে জিজ্ঞেস করে,
“শাড়ির একি হাল করেছিস? এত ঘেমেছিসই বা কেন? কোথায় ছিলি তোরা?”
শোভা হাত ডলতে ডলতে দাঁত বের করে হেসে জবাব দিল,
“কুস্তি করে এসেছি। একটু ঘাম না ঝরলে চলে?”
চলবে…