প্রেমের_প্রদীপ_জ্বলে [২৫-বর্ধিতাংশ]
প্রভা আফরিন
দিলশান যখন মায়ের স্পেশাল এক্সপেরিমেন্টাল রান্নাটা আনতে বলেছে তখনও শোভা বুঝতে পারেনি একটু পর তার সঙ্গে কী হতে চলেছে। যখন বুঝল ততক্ষণে তার মস্তক হাড়িকাঠে উঠে গেছে। সদা ধৈর্যবান পুরুষটি একটা বক্র হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে সিরামিকের বোলটা এগিয়ে দিলো ওর দিকে। হালকা গলায় বলল,
“মায়ের নতুন রেসিপি। ফ্লাওয়ার পুডিংকেক।সব এডিবল ফ্লাওয়ার দিয়ে মেইক করা। গোলাপ দিয়ে গার্নিশ করা। টেস্ট ইট। ইংলিশ আন্টি তোমার এত প্রিয় একজন মানুষ। তার রান্নাও নিশ্চয়ই প্রিয় তোমার?”
শোভা সবেই দিলশানের স্টেকের দিকে হাত বাড়িয়েছিল। দিলশান ওর হাতে ধরিয়ে দিল পুডিংয়ের বোল। পুডিংয়ের ডেকরেশন চমৎকার হয়েছে। খাওয়ার বদলে শোপিস করে সাজিয়ে রাখার মতো। কিন্তু খেতে কেমন হবে তা নিয়ে সন্দেহ হচ্ছে। বিশেষ করে দিলশান যখন আদর করে সাধছে তখন গোলমাল অবশ্যই আছে। ইংলিশ আন্টি ছেলের কথায় উৎসাহ পেয়ে শোভাকে জোড়াজুড়ি করলেন। শোভা গাইগুই করেও নিষেধ করার কোনো ভাষা খুঁজে পেল না। অগত্যা পুডিং উঠল তার পাতে। এক চামচ মুখে দিয়েই ও যেন জগতের সবচেয়ে রেয়ার টেস্টের সন্ধান পেল। একাধিক ফুলের ফ্লেভার মিলে ভজঘট কিছু একটা হয়েছে। জিভে লাগা মাত্রই স্ট্রং ফ্লেভারের ধাক্কায় সর্বাঙ্গে কাঁপুনি দিয়ে গেল। ইংলিশ আন্টি উৎসুক হয়ে জানতে চাইলেন,
“কেমন হয়েছে, শোভা? এটা কিন্তু হেলদি। গুগল ঘেটে পুষ্টিগুণ জেনেছি। নিয়মিত খেলে রূপ-লাবন্য বেড়ে যায়।”
শোভা মুখ খুলল না। একহাতে মুখ ঢেকে অপর হাত দিয়ে ইশারায় বোঝালো দারুণ। সুলেখা বিগলিত হয়ে আরেকটু তুলে দিলেন ওর পাতে। দিলশান তখন স্টেকের গায়ে ফোর্ক-নাইফ চালিয়ে মিটমিট করে হাসছে। যে হাসির অর্থ,
“আমাকে ফাঁদে ফেলতে চাওয়া! আমার মায়ের রান্না একাই যথেষ্ট তোমার মতো পাঁজি মেয়েকে শায়েস্তা করতে।”
দিলশান সেই প্রথম মায়ের এই এক্সপেরিমেন্টাল রান্নাকে সমর্থন করল।
___________
সাদা গাড়িটা চলছে ব্যস্ত রোড ধরে। দিলশান একমনে ড্রাইভ করছে। পাশেই হাত পা মেলে তাকে বিরক্ত করছে বিশিষ্ট নারী। উঁহু, শোভা ব্যতীত পৃথিবীতে কারো এতটা স্পর্ধা বা ক্ষমতা নেই দিলশানকে বিরক্ত করার। সুতরাং শোভা তার দায়িত্ব চমৎকারভাবে পালন করছে। মূলত তার ইভেন্টের শেষ মুহূর্তের কেনাকাটার লিস্ট মিলিয়ে দেখা বাকি। বাকি স্বেচ্ছাসেবীরা মিলেই সমস্ত কাজ গুছিয়ে নিয়েছে। তবুও শোভার ফাইনাল একটা তদারকির ব্যাপার আছে। পাছে কমতি রয়ে গেল! সেই উদ্দেশ্যেই বেরোতে হতো। দিলশানও তার ক্লিনিকে ফিরছে তখন। যথারীতি শোভা এডভান্টেজ চাইল। ইংলিশ আন্টি যেহেতু অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হবেন তাই তিনিও সায় দিয়ে ছেলেকে বললেন যাওয়ার পথে শোভাকে যেন নামিয়ে দিয়ে যায়। অতঃপর তারা একইসঙ্গে গাড়িতে। দিনটা ভ্যাপসা গরমের। শোভার প্রচুর ঘাম হচ্ছে। এদিকে দিলশান ইচ্ছে করেই এসি অন করেনি। শোভা শার্টের কলার ঝাঁকিয়ে বলল,
“ভীষণ গরম! ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড…খুলব?”
দিলশান বিস্ফোরিত চোখজোড়া পথের দিক থেকে একশ আশি ডিগ্রি ফিরিয়ে শোভার দিকে চাইল। এক সেকেন্ডের মাঝেই আবারো দৃষ্টি ফেরালো পথে। চিড়বিড় করে বলল,
“ডোন্ট ক্রস ইয়োর লিমিট, শোভা। নাহলে আর কোনোদিন তোমার মুখ দেখব না।”
শোভা চোখ ছোটো ছোটো করে চেয়ে বলল,
“আই হেইট ইয়োর মাইন্ড। আমি জানালা খোলার কথা বলেছি। আপনার দেখি চোখের মতো কানেরও চশমা লাগবে? কথাবার্তা এমন ঝাপসা শোনেন কেন?”
দিলশান থতমত খেয়ে গেল। শোভা যে অঙ্গভঙ্গিতে কথাটা বলল তাতে যে কেউ নেতিবাচক ভাবার কথা! নাকি সেই অতিরিক্ত ভেবে ফেলেছে! শোভা ততক্ষণে জানালা মেলে দিয়েছে। দিলশান একটু চুপ করে থেকে হঠাৎ বলল,
“তেষ্টা পেয়েছে। গাড়িতে পানি নেই। একটু গলা ভেজাতে চাইছি। তুমি কি রোডসাইড থেকে একটা মিনারেল ওয়াটার কিনে আনতে পারো?”
শোভা বিগলিত স্বরে বলল, “এভাবে চাইলে তো আমি জীবনও দিতে রাজি, মাই শান।”
দিলশান একই বিগলিত কণ্ঠে বলল,
“পানির অপর নামও কিন্তু জীবন। আপাতত সেই জীবনটাই দিলে উপকার হতো।”
শোভা অভিমানী হয়ে বলল, “ধুর! কোথায় বলবেন, ‘তোমার অধরসুধায় আমার তেষ্টা মিটিয়ে দাও।’ তা না তিনি মিনারেল ওয়াটার চাইছেন! ডাক্তাররা এত আনরোমান্টিক হয় জানা ছিল না।”
দিলশান শাণিত চোখে চেয়ে বলল, “নাও আই হেইট ইয়োর মাইন্ড। ছেলেদের মতো বেশভূষা, অঙ্গভঙ্গিতে চলাফেরা করো। অথচ মনের মধ্যে এত!”
“মনের কিছুই তো দেখালাম না। এখনই এই অবস্থা! নাহ, আপনাকে নিয়ে বড্ড জ্বালা হবে আমার।”
“পাকামো ছেড়ে একটা কথা বলেছি, শুনবে?”
দিলশান পথের ধারে গাড়ি থামিয়ে দিয়েছে। শোভা পারবে বলে মাথা দুলিয়ে গান ধরল,
“চক্ষে আমার তৃষ্ণা
ওগো তৃষ্ণা আমার বক্ষ জুড়ে
আন্টির ছেলে আনরোমান্টিক
কবে ঢুকব তাহার মনের ঘরে…”
দিলশান বিড়বিড় করে উচ্চারণ করল, “টু মাচ আনপ্রেডিক্টেবল!”
শোভা মিনারেল ওয়াটার কিনে দোকান থেকে
বেরোতেই দেখল দিলশান গাড়ি নিয়ে হাওয়া। লোকটা তাকে কথার ফাঁদে ফেলে ধোঁকা দিলো!
চলবে…
দিলশান-শোভা আরেকটুখানি বোনাস! পরের পর্ব থেকে আবারো চোর-আর্মিতে দৌড় হবে।