স্রোতস্বিনী #মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা পর্ব ২৫

0
250

#স্রোতস্বিনী
#মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা
পর্ব ২৫

গাড়ি যখন চট্টগ্রাম সেনানিবাসের সামনে এসে থামে তখন পশ্চিমা আকাশে আলোর রোশনাই দেখা দিয়েছে। সবাই ওয়েটিং রুমে বসে আছে।এখানে কেউ কিছু বলছে না।উপরমহল থেকে আদেশ করা হয়েছে মুখ বন্ধ রাখতে।সবাই শুধু লেফটেন্যান্ট জেনারেলের জন্য অপেক্ষা করতে বলছে।উনি আসার পর যা বলার বলবেন।অপেক্ষার প্রহর যেনো শেষ হচ্ছে না।অনেক্ষণ বাদে স্রোতের সামনে এক সুন্দরী ইউনিফর্ম পড়া অফিসার এসে দাঁড়ায়। স্রোত মুখ তুলে দেখে সেই অতিপরিচিত নারীকে।মানবীর চেহারায়ও আষাঢ়ে মেঘ।স্রোত উঠে দাঁড়ায়। অস্পষ্ট স্বরে বলে,
“ক্যাপ্টেন সামিরা!”
“ম্যাম আপনাকে কি বলে সান্ত্বনা দিবো আমি জানি না।শুধু বলবো নিজেকে সামলান।” নতমুখে বলে সামিরা।
“অনেক্ষণ যাবৎ অপেক্ষা করছি ম্যাম।কেউ কিছু বলছে না।সবাই মুখে কুলুপ এঁটেছে।প্লিজ কিছু বলুন।” সামিরার হাত ধরে বলতে বলতে কেঁদে ফেলে স্রোত।
“আমরা কিছু বলতে পারবো না ম্যাম।আমাদের উপর অর্ডার আছে।ধৈর্য্য ধরুন।”

স্রোত হাল ছেড়ে বসে পড়ে।মাহিরা এগিয়ে এসে বলে,
“ম্যাম,আমাদের অন্তত বলুন ভাই কোথায়?কেমন আছে?আদৌ বেঁচে আছে কিনা!আমাদের ডেডবডিটা অন্তত দেখান,ম্যাম।”
কান্নায় ভেঙে পড়ে মাহিরা।ডেডবডি কথাটা শুনে যেনো স্রোতের অন্তর আত্মা কেঁপে উঠে।

তখনই ক্যাপ্টেন সামিরার ফোনে কল আসে।তিনি কথা বলে,সকলের উদ্দেশ্যে বলেন,
“জেনারেল স্যার এসেছেন। তিনি কথা বলবেন আপনাদের সাথে।উনার কেবিনে যেতে হবে।তবে সবাই না,দুইজন আসুন আমার সাথে।”

একটা বিশাল কক্ষে বনলতা বেগম আর স্রোত বসে আছে লেফটেন্যান্ট জেনারেলের সামনে।জেনারেল স্যার দু হাতে কপাল ঠেকিয়ে টেবিলে ভর দিয়ে নতমুখী হয়ে বসে আসেন।তিনি কিছু ভাবছেন।টেবিলের পাশেই ক্যাপ্টেন সামিরা এবং আরো দু’জন অফিসার দাঁড়ানো।এই নিরবতা কারোর সহ্য হচ্ছে না।বনলতা বেগম নিরবতা ভাঙ্গলেন।মৃদু স্বরে বললেন,
“স্যার চুপ করে থাকবেন না।অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছি।কিছু বলুন।”

স্রোত কাতর স্বরে বলে উঠলো,
“স্যার কিছু বলুন,অপেক্ষারাও যেনো ফুরিয়ে এসেছে।আর পারছি না।সত্যিই পারছি না।ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে।চুপ করে থাকবেন না।”

জেনারেল স্যার এবার চোখ তুলে চাইলেন।স্রোত প্রতিক্ষীত পথিকের মতো চেয়ে রইলো জেনারেলের দিকে।বনলতা বেগম আবার বললেন,
“চুপ করে আছেন কেনো স্যার?আমার কোল কি সত্যিই খালি হয়ে গেলো?মেহরাদ কি বেঁচে…..

কথাটা শেষ করতে পারলেন না বনলতা বেগম। এর আগেই জেনারেল স্যার গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
” আপনার কোল খালি হয় নি।মেহরাদ বেঁচে আছে।”

কথাটা যেনো বজ্রপাতের মতো আঘাত হানলো।সবার চোখে মুখে খুশির ঝলক।স্রোতের চোখে খুশির অশ্রু।বনলতা বেগম সাথে সাথে বললেন,
“আলহামদুলিল্লাহ।আমি জানতাম আমার ছেলের কিছু হয় নি।হাজার শুকরিয়া আল্লাহ তায়ালার নিকট।”

লেফটেন্যান্ট জেনারেল স্যার চিন্তিত স্বরে বললেন,
“কিন্তু!”
“কিন্তু কি স্যার?” স্রোত বলে উঠলো।
“মেহরাদ এখন আইসিইউতে।বো মা বিস্ফোরণের পূর্ব মুহূর্তেই মেহরাদ গু লিবিদ্ধ হয়।গু লিটা হার্টের ঠিক পাশ দিয়ে যায় বলে এ যাত্রায় বেঁচে যায়।হাতেও গু লি লেগেছে।গু লিবিদ্ধ হয়ে মেহরাদ পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়ে যায়।ফলস্বরূপ,মেহরাদের ডান হাত আর বাম পা ভেঙে যায়।এই দু’জন অফিসার সেখানে উপস্থিত ছিলেন।তারা তাকে রক্ষা করে হসপিটালে নিয়ে আসে।অনেক গোপনীয়তার সহিত কাজটা করা হয়েছে বিধায় আমাদের গুটি কয়েক অফিসার,উপরমহল ছাড়া কেউ জানে না মেজর মেহরাদ বেঁচে আছে। ”
উপস্থিত দু’জন অফিসারকে দেখিয়ে কথা শেষ করলেন জেনারেল।
স্রোতের চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।তার মেজর সাহেব দু’টো দিন আইসিউতে।না জানি কতটা কষ্ট সহ্য করছেন।সে সব কষ্ট ঠিক করে দিবে,সব।
স্রোত কান্নামাখা স্বরে বললো,
“আমরা উনার সাথে দেখা করতে চাই।”
“অফিসার আপনি উনাদের নিয়ে যান।খেয়াল রাখবেন মিডিয়ার লোক যেনো এখনই কিছু না জানে।”
“জ্বি স্যার”

একজন অফিসারকে উদ্দেশ্য করে বললে সে স্রোতদের নিয়ে রওয়ানা হয়।পরপর তিনটে গাড়ি শো শো করে ত্যাগ করে চট্রগ্রাম সেনানিবাস,উদ্দেশ্য স্বনামধন্য একটি প্রাইভেট হাসপাতাল।সকলের মুখে হাসি,প্রশান্তি।যেই অবস্থাতেই থাকুক না কেনো বেঁচে তো আছে,পৃথিবীতে তার অস্তিত্ব আছে এটাই অনেক।বনলতা বেগম পুরোটা রাস্তা স্রোতকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
“আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করো স্রোত।আল্লাহ তোমাকে স্বামীহারা করেন নি।আমি জানতাম আমার ছেলের কিছু হবে না,হতে পারে না।”

সেদিন রাতে দ স্যুরা আর্মিদের উপস্থিতি টের পেয়ে সাবধান হয়ে যায়।আর রুখে দাঁড়ানোর পদক্ষেপ নিতে থাকে।আর্মিসদস্যরা অতর্কিতে আক্রমণ চালালেও দ স্যুরা আগে থেকে জানার কারণে সুরাহা করতে পারে নি।ফলস্বরূপ মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে এক সেনাসদস্যকে বাঁচানোর জন্য তাকে সরানোর জন্য ধাক্কা দিতে আসলে সেই গু লি মেহরাদের হাত ছিটকে বেরিয়ে যায়।মেহরাদ নিজেকে সামলে উঠার আগেই তার বুকে গু লি লাগে।ফলস্বরূপ তার বুকের আর হাতের ব্যাডজ্ দুটো ঐ জায়গায় পড়ে যায়।আর সে পাহাড় থেকে গড়িয়ে পরতে শুরু করে।দুজন অফিসার তাকে সেইভ করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছাতেই তারা বো মা বিস্ফো রণের শব্দ পায়,পাহাড় যেনো কেঁপে উঠে।

#চলবে….
[ছোট্ট করে বোনাস পার্ট দিলাম।শান্তি?
কান্না করিয়েছি আমি,হাসাবোও আমি।যদিও ঐদিন আমি নোটে বলে দিছিলাম শেষটা সুন্দর হবে।
আবার কেউ বলিয়েন না এতো ছোটো কেন!আমি একটানা অনেক্ষণ ফোনের স্ক্রিনে তাকাতে পারি না,চোখ ঝাপসা হয়ে যায়।অস্পষ্ট দেখা শুরু করি।ধন্যবাদ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here