#অসম্ভবেও আমার তুমি
নুসরাত সুলতানা সেজুথি
পর্ব–১৩
এভাবে কাঁদলে কি কোনও সমস্যার সমাধান হবে??
অকারনে তুই চোখের জল গুলো নষ্ট করছিস,,আর কষ্ট পাচ্ছিস….আবরার কখনওই ফিরবে না তনু। ও আমাদের নাগালের বাইরে এখন। শান্ত কর নিজেকে,,,,,
বাবার কথায় তনয়া উত্তর না দিয়ে চোখের পানিগুলো মুছে নেয়। মুখ শক্ত করে তাকায় ,,, দৃঢ় গলায় বলে,,
— আবরার কে ফিরতেই হবে বাবা।আমি বাধ্য করবো ওকে,,
— কি করবি তুই??
— আমি এবার সত্যি সত্যি আবরারের নামে মামলা দায়ের করবো বাবা।
তোফায়েল অবাক হয়ে বলে,,
— মানে কিসের মামলা??
তনয়া বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ায়। কয়েক কদম এগিয়ে গিয়ে জানলা ঘেষে দাঁড়ায়৷ বাইরের দিকে চোখে রেখে বলে ওঠে,,
— আগের মতোই শ্লীলতাহানির।
তোফায়েল ধৈর্য হীন হয়ে বলে,,
— মানে টা আমাকে একটু বুঝিয়ে বলবি?? আমিতো কিছুই বুঝতে পারছিনা।
আগের বার না হয় আবরারের সাথে একটা মোটামুটি সম্পর্ক ছিলো তোর,,,কিন্তু এবার কিসের থেকে কি করবি আমি তো মেলাতেই পারছিনা..?
তনয়া বাবার দিকে তাকালো,,,প্রগাঢ় গলায় জবাব দিলো,,
— তুমি অফিসার আমিনুল কে কল করো বাবা,,,যা বলার ওনাকেই বলবো।
___________________________________________
তোমাকে আর আমাদের বাঙলো তে মালির কাজ করতে হবেনা মজিদ…!!
আবরারের গম্ভীরমুখের কথায় হতবাক চোখে তাকায় মজিদ।
ব্যাতিব্যস্ত হয়ে বলে ওঠে,,
— কেন সাহেব? আমি কি আমার অজান্তে কোনও ভুল করে ফেলেছি??
আবরার জবাব দেয়না,,,ডান পাশের ভ্রুতে হাতের আঙুল দিয়ে মৃদু চুলাকাতে থাকে,,
মজিদ হাত জোর করে বিনম্র হয়ে বলে,,
— সাহেব আমি কিছু করে থাকলে আমাকে ক্ষমা করে দিন,,,আমি জীবনে এরকম কাজ আর করবোনা। তবুও আমার কাজ টা নিয়ে নেবেন না। আমি যে না খেয়ে মরে যাবো…
আবরার মুচকি হেসে মজিদের জোর হাত নিজের হাত দিয়ে চেপে ধরে,,,আস্বস্ত গলায় বলে ওঠে,,
— আমি তোমাকে কাজ থেকে বরখাস্ত করছিনা মজিদ।
মজিদ ব্যাগ্র হয়ে বললো,
— তাহলে সাহেব??
আবরার জবাব দেয়,,
— তুমি আমাদের মালি হলেও তোমার প্রথম পরিচয় তুমি স্নিগ্ধার বাবা। আর সেই ক্ষেত্রে স্নিগ্ধা আমার স্ত্রী হলে আমি তোমার মেয়ে জামাই।
যার দরুন জামাইয়ের বাড়িতে মালির কাজ করা কোনও শ্বশুর কেই মানায়না। তাই আমি বলছিলাম তোমার আর এই কাজ করার দরকার নেই।
কথা শেষ করে মজিদের দিকে ঘাড় বাকিয়ে তাকায় আবরার। মজিদ কেমন অসহায় চোখে চেয়ে আছে।
সম্পর্কের যুক্তির কাছে তার কাজ ফিরে পাওয়ার আর্জি হয়তো বা এখন বড্ড বেশিই ফিকে লাগবে। তাই মুখ বুজে অপ্রকাশিত আকুতি জানান দিচ্ছে চোখের।
হঠাৎ ই আবরার ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,,
— তুমি অল্পতে এত ভয় পাও কেন মজিদ??
মজিদ চোখ নামিয়ে নেয়,,,আস্তে ধীরে জবাব দেয়,,
— ঘর পোড়া গরু তো সাহেব,সিদুরে মেঘ দেখলেই ভয় লাগে৷
আবরার চুপ করে তাকিয়ে থাকে,,,মজিদ ছোট্ট করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারও তাকায় আবরারের দিকে। ধীর গতিতে বলে ওঠে,,
— ছোট মুখে একটা বড় কথা বলছি সাহেব। আসলে গরিব মানুষ কোনও রকম পেটে ভাতে চলি যেখানে সেখানে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেয়া, আমাদের কাছে মৃত্যূর দুয়ারে পৌঁছে দেয়ার মত।
তবুও আপনি চিন্তা করবেন না সাহেব,,আপনার সন্মান যেখানে বিন্দুপরিমান আমার জন্যে নষ্ট হবে সেখানে আমি থাকবোনা। কখনওই না। আমি আজ থেকেই আর এ বাড়ির চারপাশে ঘিষবোনা সাহেব।
মজিদ উল্টো ঘুরে হাটা দেয়,,,চোখ ছলছল করতে থাকে তার,এই বুঝি পানিটা টুপ করে গড়িয়ে পরবে।স্ত্রী সন্তান নিয়ে দিন আনা দিন খাওয়ার মত জীবন যাপন ছিলো যেখানে,সেখানে আজ পায়ের নিচের মাটি টুকুও সরে যাচ্ছে,,,,রাস্তায় ভিক্ষা করা ছাড়া এরপর হয়তো আর উপায়ই থাকবেনা।
হঠাৎ পেছন থেকে ডেকে উঠলো আবরার।
— মজিদ শোনো,,,
মজিদ ,,কৌতূহলী চোখ নিয়ে,,,ঘুরে তাকালো
— জ্বী সাহেব..??
আবরার এগিয়ে এসে মজিদের মুখোমুখি দাড়ায়।ভ্রু নাঁচিয়ে বলে,,
— এই তুমি আমাদের এত দিনে চিনলে মজিদ?? আমি তোমাকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দিচ্ছি?? বললাম আর বিশ্বাসও করে নিলে??
বিষয় টা বোধগম্য হলোনা মজিদের,,,,
— তাহলে সাহেব???
আবরার পকেটে দু হাত গোজে,,,চঞ্চল গলায় জবাব দেয়,,
— আজ থেকে তোমার কাজ করার দরকার নেই,,,তার কারণ এবার থেকে তোমার পুরো পরিবারের দায়িত্ব আমি নিলাম।
মজিদ অবাক হয়ে বলল,
— মানে সাহেব…??
আবরার মৃদূ ঠোঁট বাকিয়ে হেসে মজিদের দুই বাহুতে হাত ঠেকিয়ে বলে,,
— মানে হলো,এখন থেকে তোমরা সবাই আমার এই বাঙলো বাড়িতে থাকবে,,,সব সময়ের জন্যে।
মজিদ প্রথম দফায় বিস্মিত হয়,,,পরবর্তীতে ব্যাস্ত হয়ে উত্তর দেয়,,
— না না সাহেব এ কি করে হয়?? আমি এ বাড়িতে কি করে থাকি।গরিব হলেও মেয়ে জামাইয়ের বাড়িতে থাকবো ছি ছি সাহেব…! এ হয়না…
আবরার হাত নামিয়ে ভ্রুদ্বয় কুঁচকে বলল,
— তুমি আমার কথা অমান্য করবে মজিদ??
মজিদ চোখ নামিয়ে নিয়ে বলল,,
— মাফ করবেন সাহবে,,কিন্তু এ আমি কখনোই পারবোনা।
আবরার দৃঢ় গলায় বলে,,
— বেশ আমি বুঝে গিয়েছি,,তুমি আমাকে এতদিন মালিক ভেবে এসছো আর এখন মেয়ের জামাই ভাবো।কিন্তু নিজের ছেলে কখনও ভাবোনি।
হ্যা যতই পুরোনো অভ্যাসের কব্জায় থেকে আমি তোমাকে নাম ধরে ডাকি,,,সম্পর্কে তো তুমি আমার শ্বশুর,,,, আমার বাবার মতো,,,তাহলে আপত্তি কোথায়??
মজিদ চট করে তাকায়,,,নরম গলায় বলে,
— সাহেব,, আপনি বুঝতে পারছেন না…আমি..
— থাক আমাকে আর কিছু বোঝাতে হবেনা।তুমি আমাকে পর ভাবছো তাই আমার বাড়িতে থাকতে অসুবিধে হচ্ছে তোমার,গায়ে লাগছে।আমি বুঝে গিয়েছি সেটা।
আমার আর কিছু বলার নেই,,,
মজিদ চিন্তিত চোখে আবরারের অভিমানি মুখের দিকে তাকায়,,,আবেগের কাছে বিবেকের বিভ্রান্তিতে পরে যায়। তবুও আবরারের মন রাখার উদগ্রীবতা জেকে বশে কাধে। চোখ ঘুরিয়ে খানিক ক্ষন ভেবে বলে ওঠে,,
— ঠিক আছে সাহবে।আপনি যা বলবেন তাই হবে।
আবরার মুচকি হাসে,,
— খুব তাড়াতাড়ি ভালো সিদ্ধান্ত নিলে,,,তাহলে যাও,,বাড়ি গিয়ে নিতু আর তোমার স্ত্রীকে নিয়ে এসো।
রমিজ আছে ও সব কিছু বুঝিয়ে দেবে তোমাদের,,
এটুকু বলে থামে আবরার। মজিদ মাথা কাত করে সায় জানায়।আবরার হাতের কব্জিতে বাধা,, ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে বলে,
— এসেছি অনেকক্ষন।বাড়িতে স্নিগ্ধা একা আছে,,,আমি আসছি তাহলে।
আবরার হাটতে ধরলে মজিদ নিচু গলায় ডাকে,,
— সাহেব..?
আবরার ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে বলল,,
— কিছু বলবে.??
মজিদের চোখ ভরে আসে,,,ভাঙা গলায় বলতে লাগে,,
— আপনি ঠিক বড় সাহেব এর মতোই উদার আর নরম মনের হয়েছেন । আমার মেয়েটা বড় ভাগ্যবতী আপনার মত স্বামী পেয়ে,,,আল্লাহ আপনার ভালো করবেন সাহেব। দেখবেন সব সময় ভালো করবে।
আবরার সামান্য হাসে,,,জবাবে বলে,,
— আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে আসছি।
_________________________________________
ম্যাডাম আপনি বুঝতে পারছেন না।এই কেস কিছুতেই দায়ের হবেনা।
আমিনুলের কথায় তনয়া ক্রোধ নিয়ে ভ্রু নাঁচিয়ে বললো,
— কেন হবেনা?? আপনি সাহায্য করলে অবশ্যই হবে।
আমিনুল দুদিকে মাথা নেড়ে বললো,,
— না ম্যাডাম,,,এখানে অনেক বড় ঝামেলা হতে পারে,,
তোফায়েল মেয়ের পাশেই বসে ছিলো,,আমিনুলের কথায় কৌতুহল নিয়ে বলল,
— কিসের ঝামেলা?আগের বার ভয় দেখিয়েছিলাম মামলা করার,,এবার করেই দেবো,,আর তখন মিথ্যে ছিলো কিন্তু এবার তো আরো সহজ হবে কারণ এক বছর ওরা এক ঘরে ছিলো।
আমিনুল ব্যাস্ত চোখে তনয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,,
— আমার তো মনে হয়না আবরার ফাহাদ আপনাকে ছুয়েছে এতদিনে।
তনয়া কথাটায় বাবার সামনে বিব্রতবোধ করে,,, কোনও রকম ইতস্ততভাবে বলে,,
— না ছোয়নি।
আমিনুল চট করে বলে,,
— ঝামেলাতো এখানেই,,,যেখানে উনি আপনাকে ছোয়ইনি সেখানে রেপ কেস কিভাবে হবে?? এতে তো হীতে বিপরীত হয়ে আপনি মামলা খেয়ে বসবেন।
তনয়া বাবার দিকে তাকায়। মেয়ের চোখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট দেখে তোফায়েল উত্তেজনা নিয়ে বলল,,
— আমরা মিথ্যে বলবো,,,
মিথ্যে টা কিভাবে প্রমান হবে?? যে আসামি হবে তার কথা তো আর কেউ বিশ্বাস করবেনা।সহানুভূতি মেয়েদের দিকেই থাকে সব সময়।
আর সব থেকেই বড় কথা বন্ধ কামড়ায় ওদের মধ্যে কি ঘটেছে সেসব কে জানবে,,,,একটা ছেলে এক বছর একটা মেয়েকে নিয়ে থাকলে তাকে চুল পরিমান ছোয়নি,,, সবার কাছে এরকম কথা হাস্যকর মনে হবেনা অফিসার??
আমিনুল বিরক্ত হয়,,,উদ্বেগ নিয়ে বলে,,
— স্যার,,,আবরারকে শায়েস্তা করা বাদেও একটা ব্যাপার ভাবুন,,,মেয়ের শ্লীলতাহানির অভিযোগ কোর্টে উঠলে প্রেস মিডিয়া সব জানাজানি হয়ে যাবে,,,তখন আপনার আর আপনার মেয়ের সন্মান কোথায় যাবে?? তাছাড়া এতে আবরার কে কাবু করতে পারবেন না,,,,ওর ক্ষমতাও কিছু কম নয়,,,ছেলে ভীষণ চালাক।জাল ছিড়ে ঠিক বেরিয়ে আসবে,,,
তোফায়েল ভারি নিঃশ্বাস ফেলে,,, পাশ থেকে তনয়া শান্ত গলায় বলে ওঠে,,
— থাক বাবা,,,এই ব্যাপারটা বাদ দাও,,,তোমার সন্মান যাক সেরকম কিছু করে আবরার কে শাস্তি দেয়ার দরকার নেই,,,আর আমিতো ওকে শাস্তি দিতেও চাইনা,,,চাই ও আমার কাছে ফিরে আসুক।অফিসার আমিনুল ভুল কিছু বলছেন না,,
এই মামলা করলে আবরার আমার হাতের মুঠোয় তো আসবেইনা উল্টে আমার হাত থেকে বেরিয়ে যাবে,,,
জবাবে তোফায়েল উৎক গলায় বলে,
— তাহলে এখন কি করবি তনু??
তনয়া ঠোঁট কামড়ে ভাবতে থাকে,,,আমিনুল ব্যাস্ত হয়ে বলে,,
— এমন কিছু করতে হবে যাতে সাপও মরে আর লাঠিও না ভাঙে।বুঝতে পারছেন তো??
তনয়া শিথিল হাসে,,, বলে,,
— বুঝতে পেরেছি,,,,আমাকে একটু ভাবতে দিন অফিসার,,আমি সত্যিই এমন কিছু করবো যাতে আবরার সারাজীবন এর মত আমার হয়,,আর ওই স্নিগ্ধা নামের কাটাটাকেও উপড়ে ফেলা যায়।
আমিনুল তোফায়েল দুজনেই মাথা নাড়ে তনয়ার কথায়,তাৎক্ষণিক তাদের ঠোঁটে খেলে ওঠে রহস্যময় হাসি,,,ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে ব্যাস্ত হয়ে পরে তিনজনের মস্তিষ্ক।
__________________________________
কাল সকাল সকাল তৈরি থেকো,,,
—- কেন??
আবরার বিছানায় আধশোয়া হয়ে ছিলো।স্নিগ্ধার প্রশ্নের উত্তরে চোখ উঠিয়ে ওর দিকে তাকায়। কিছু না বলে পায়ের ওপর রাখা ল্যাবটব সরিয়ে পাশে রেখে দেয়,,,আচমকা স্নিগ্ধার এক হাত টান মেরে বসিয়ে দেয় নিজের কোলের ওপর।
স্নিগ্ধা হতভম্ব হয়ে পরে,,লজ্জ্বা লজ্জ্বা অনুভূতি হয়,,,কাপা গলায় বলে,,
— ককি ক..র….ছে…ন??
আবরার স্নিগ্ধার লজ্জ্বা বাড়িয়ে দিতে ওর গলায় নাক ঘষে নেয় নিজের।শিউরে ওঠে স্নিগ্ধা।গায়ের লোম দাড়িয়ে পরে,,,
কাচুমাচু মুখ করে আবরারের দিকে তাকিয়ে বলে,,
— এরকম করবেন না প্লিজ,সুরসুরি লাগে খুব।
কথাটায় আবরার উচ্চশ্বব্দে হেসে ওঠে,,,স্নিগ্ধা ঠোঁট উল্টে তাকিয়ে থাকে। আবরার কোনও মতে হাসি থামায়,,পরক্ষনেই শীতল গলায় বলে,
— আসলে আমার দোষ নেই,,,তুমি দেখতে এতোটাই পুতুলের মত যে আমি না ছুয়ে পারিনা।
লজ্জ্বায় চোখ নামিয়ে নেয় স্নিগ্ধা। শরীরে অদ্ভূত রকমের শিহরন বইতে থাকে স্রোতের মত।
কোনও রকম কাপা চোখে আবরারের মুখের দিকে তাকায়,,,আবরার মুচকি হেসে বলে,,
— থাক আর লজ্জ্বা পেতে হবেনা। এখন যেটা বলছি শোনো…
স্নিগ্ধা উত্তর না দিয়ে তাকিয়ে থাকে,,,আবরার পরক্ষনে ভ্রু নাঁচিয়ে বলে,
— কোলে বসেই শুনবে নাকি..??
স্নিগ্ধার লজ্জ্বায় মাটিতে নিশে যাওয়ার মত অবস্থা হয়,,,ধড়ফড় করে উঠতে নিলেই আবারো কোমড় চেপে ধরে বসিয়ে দেয় আবরার।বলে ওঠে,,
— বসেছিলে যখন বসেই থাকো,,এত সময় ছিলে আর এখন কিনা এইটুকু রাখতে পারবোনা?
স্নিগ্ধা ভ্রু কুঁচকে ঠোঁট উল্টে বলে,
— আপনি খুব বাজে লোক,,আমাকে ইচ্ছে করে লজ্জ্বা দিচ্ছেন তাইনা..??
আবরার মৃদূ হাসে,,চট করে স্নিগ্ধার নাকে নাক ঘষে বলে,,
— জ্বি হ্যা।
স্নিগ্ধা চোখ বন্ধ করে বলল,,
— তাড়াতাড়ি বলুন,,,কাল কেন তৈরি হয়ে থাকবো??
আবরার দুষ্টু হেসে বলল,
— আগে চোখ খোলো,,
স্নিগ্ধা দুদিকে মাথা নেড়ে বলল,
— না আপনি আবার লজ্জ্বা দেবেন আমায়..।আমি আপনাকে দেখবোইনা।
— কিন্তু চোখ না খুললে আমি যে বলবোনা।
অগত্যা চোখ খুলে তাকায় স্নিগ্ধা, আবরার ঠোঁট টিপে হাসলেই তাড়াহুড়ো করে বলে ওঠে,,
— এই দেখলেন আবার কেমন বিশ্রি করে হাসছেন?? আমাকে হাতের নাগালে পেয়ে এখন পুতুল নাচ নাচাচ্ছেন তো,,,দাড়ান দিন আমারো আসবে।
কথাটায় আবরারের ঠোঁটে হাসি আরো গাঢ় হয়ে আসে,,,স্নিগ্ধার ফোলানো গাল স্বাভাবিক হয়ে যায় আবরারের হাসি খেয়াল করতেই।মুগ্ধ চোখ নিয়ে তাকিয়ে থেকে বলে ওঠে,,
— আপনার হাসিটা ভীষণ সুন্দর।
চট করে হাসি থামিয়ে তাকায় আবরার,,,মুখে গম্ভীর ভাব এনে বলে,
— আর আমি বুঝি সুন্দর নই?
স্নিগ্ধা দুষ্টুমিতে দুদিকে মাথা নেড়ে বলে,
— উহু,একটুও নাহ।
আবরার মুখ কালো করে বলল,
— সত্যি?? এটা আজ প্রথম শুনলাম।
পরক্ষনেই আবরারের গলার স্বর শীতল হয়ে আসে,,স্নিগ্ধার চোখে গভীর দৃষ্টি দিয়ে বলে,
— অবশ্য ভালোও তো প্রথম বেসেছি।
কথাটায় হৃদস্পন্দন বেড়ে আসে স্নিগ্ধার। তাড়াহুড়ো করে পলক ফেলতে থাকে,,আবরার বাকা হেসে বলে,,,
— এসব ছাড়ো,,,মূল কথা শোনো,,তোমার ভর্তির ব্যাপারে
আমার পরিচিত এক আঙ্কেলের সাথে কথা বলেছি,,,উনি একটা ভার্সিটির অধ্যক্ষ।এখন তো বছরের মাঝামাঝি সময়,, তাই ভর্তির ব্যাপারে একটু আকটু ঝামেলা হতে পারে,,,
তবে উনি বলেছেন সেসব উনি সামলে নেবেন। কাল একবার যেতে হবে তোমাকে নিয়ে,,তারপর ফরমালিটিস গুলো কম্পলিট করলেই তুমি ওখানে ভর্তি হয়ে যাবে।তারপর মন দিয়ে ক্লাশ করবে আর পড়াশুনা।
(একটু থেমে)
তুমি গ্রাজুয়েশন শেষ করবে,,,,সাফল্যের হাসি হাসবে আর আমি তোমার সেই হাসিটা মন ভরে দেখবো।
কথা শেষ করে থামলো আবরার।স্নিগ্ধা একভাবে তাকিয়ে আছে আবরারের দিকে। আবরার থেমে যেতেই স্নিগ্ধা মৃদূ গলায় বলল,,
— বাবা ঠিকই বলতো,,আপনাদের তুলনা আপনারাই।
স্নিগ্ধার ভাড় মুখ চোখে পরতেই আবরার ভ্রু কুঁচকে বলল,,
— তোমার মন খারাপ হয়ে গেলো কেন ?? তুমি খুশি হওনি??
স্নিগ্ধা আবরার দিকে চোখ উঠিয়ে তাকায়,,,চোখের কোটর ভর্তি পানি দেখে আবিরার অবাক হয়ে বলল,
— কাঁদছো কেন তুমি??
কথা শেষ করতে না করতেই স্নিগ্ধার গাল বেয়ে পানি গুলো গড়িয়ে পরতে শুরু করে,,
আবরার ধৈর্য হীন হয়ে স্নিগ্ধার চোখ মুছে দিতে দিতে বলল,,
— কি হয়েছে আমাকে বলো?? বাড়ির কথা মনে পরছে??
স্নিগ্ধা উত্তর না দিয়ে কাঁদতে থাকে।আবরার স্নিগ্ধার মুখ দুহাতের আজলে নিয়ে নেয়,,শান্তস্বরে বলে,,
— আমাকে বলো,,,কি হয়েছে??
স্নিগ্ধা আবরারের হাতে হাত ছোয়ায় নিজের,,,গাল থেকে নামিয়ে নিজের মুঠোর মধ্যে আবরারের হাত চেপে ধরে। কান্নামাখা ফিচেল গলায় বলে ওঠে,,
— আমি আপনাকে কত ভুল বুঝেছিলাম আবরার।কত খারাপ ব্যাবহার করেছিলাম আপনার সাথে,,,যেসব বিষয় নিয়ে আপনাকে দোষারোপ করে এসেছি তার একটাও আপনি করেন নি। আপনি সব সময় আমাকে ভালোবেসে গিয়েছেন,,,আমিই পারিনি আপনাকে বুঝতে,,,
আমাকে ক্ষমা করে দিন আবরার,,,প্লিজ!
স্নিগ্ধার কথায় আবরার প্রথম দফায় বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে,পরক্ষনে মুচকি হেসে বলে,,
— তোমার মুখে আবরার শব্দ টা বেশ মিষ্টি লাগেতো।
স্নিগ্ধা কান্না থামিয়ে ভ্রু কুচকে তাকায়,,,ঢোক গিলে বলে,,
— আপনি কি সিরিয়াসলি নিচ্ছেন না আমার কথা??? আমি কি বলছি আর আপনি কি বলছেন??
আবরার শব্দ করে হেসে স্নিগ্ধার মাথা টেনে বুকের সাথে চেপে ধরে। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,,
— তোমার দেয়া কষ্ট আমার কাছে ভালোবাসার আরেক নাম।
স্নিগ্ধা চুপ করে যায়। আজ আর মাথা তুলতে ছটফটায় নাহ।উল্টে আবেশে চোখের পাতা এক করে নেয়। আবরারের টি শার্টের অংশ শক্ত হাতে চেপে ধরে। মনে মনে ইচ্ছে পোষন করে আমৃত্যু এই প্রসস্থ বুকে ঠাই পাবার।
চলবে।