#অসম্ভবেও আমার তুমি
নুসরাত সুলতানা সেজুথি
পর্ব–৩৩
মৃনালের এমন অসহায় দৃষ্টি গুলোকে বেশিক্ষন উপেক্ষা করতে পারলোনা স্নিগ্ধা। একটা মানুষের বন্ধুত্ব গ্রহন করাই যায়। অন্তত এমন মধুর সম্পর্কে তো আর পাপ নেই।আর না পাপ আছে তার মনের মধ্যে।আবরার বলেছিলো ছেলেদের সাথে না মিশতে। সেতো আর গায়ে পরে মিশতে যাচ্ছেনা? হ্যা এখানে যদি অন্য ছেলে হতো স্নিগ্ধা প্রথমবারেই নাকচ করে দিতো।কিন্তু মৃনাল তো নিজেকে ঠিক করতে সময় চাইছে। সেতো তার ভুল টাকে শুধরে নিতে চাইছে।তাই এখানে তার বন্ধুত্ব গ্রহনে আবরার কে নিশ্চয়ই ছোট করা হবেনা?
এমন হাজার রকমের যুক্তি নিজের মত করে সাজিয়ে নিয়ে অবশেষে মৃনালের মুখের দিকে চোখ তুলে তাকালো স্নিগ্ধা। মৃনাল এখনও হাত পেতে রেখেছে।স্নিগ্ধা মৃদূ হেসে বলল,
— আমি আপনার বন্ধু হবো। কিন্তু আমার কিছু শর্ত আছে।
মৃনাল প্রথম দফায় ভ্রু কুঁচকে তাকায়।পরমুহূর্তে উদ্বেগ নিয়ে বলল,
— বলো কি শর্ত? আমি সব মেনে নেবো।
স্নিগ্ধা জ্বিভ দিয়ে নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বলল,
— আমি আপনার সাথে বন্ধুত্ব করবো।তবে তার একটাই শর্ত হচ্ছে ভবিষ্যতে আপনি কখনওই পুরোনো কথাগুলো তুলবেন না।আর বাকি পাঁচটা ফ্রেন্ডশিপের মত আমার এত মাখোমাখো ফ্রেন্ডশিপ পছন্দ নয় তাই…
মৃনাল মাঝপথেই বলে ওঠে,
— আমি রাজি!
জবাবে স্নিগ্ধা ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো।মৃনাল আকুলতা নিয়ে বলল,
— হাতটা কি খালিই পেতে রাখবো?
কথার মানে বুঝতে পেরে খানিকক্ষণ ঠোঁট কামড়ে ভাবলো স্নিগ্ধা।কিছু একটা ভেবে নিয়ে ইতস্তত করে মৃনালের হাতে আলতো করে হাতটা রাখলো নিজের। খুব একটা স্পর্শও লাগেনি তাতে।
স্নিগ্ধার এতটুকু ছোয়াই মৃনালের জন্যে অনেক কিছু। মুহুর্তেই অন্য রকম অনুভূতির নাড়া দিলো তার হৃদস্পন্দনে। মিনিটের কম সময়ে স্নিগ্ধা আবারো হাতটা সরিয়ে নিলো। শান্ত গলায় বলল,
— আমি এখন আসছি।বেল পরে যাবে ক্লাসের।
মৃনাল কোনও রকম ঘাড় কাত করে স্বায় দিলো।স্নিগ্ধা আর কথা না বাড়িয়ে উল্টো ঘুরে হাটা ধরে ক্লাশ রুমের দিকটায়। মৃনাল সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে নিজের হাতটাকে উচিয়ে ধরলো চোখের সামনে। ঠোঁটে বাকা হাসিটা খেলে উঠলো সাথে সাথে।
_______________________________
বেশ দুরুত্বে মুখমন্ডলে এক দলা কালো মেঘ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আবরার। একটু আগেই এসেছে সে। গাড়ি থেকে নামতেই স্নিগ্ধার মৃনালের হাত ধরার দৃশ্যটা চোখবন্দি হতে ভুল হয়নি ।এরুপ দৃশ্য প্রকট ভাবে বিদঘুটে ঠেকলো আবরারের।
মৃনালের সমস্ত খোঁজ খবর নেয়ার জন্যে যে লোককে রেখেছিলো সেই আবরারকে জানালো মৃনাল স্নিগ্ধাকে মাঝপথে আটকেছে এমন কিছু। খানিকক্ষণ আগেই স্নিগ্ধাকে গেটের সামনে নামিয়ে দিয়ে গেছিলো আবরার।এর মধ্যে এমন কি ঘটলো এই উদগ্রীবতায় মাঝরাস্তায় গাড়ি ঘুরিয়ে আবারো ভার্সিটি এসেছে সে।আর এসেই এমন দৃশ্য। কোনও কিছু ই ঠিকঠাক হজম করে উঠতে পারলোনা আবরার। শুকনো ঢোক গিলে কালো মুখ নিয়েই আবারো উঠে পরলো গাড়িতে।
_____________________________________________
তুই কি আমার ওপর রেগে আছিস??
মেঘের কথায় স্নিগ্ধা ভ্রু কুঁচকে বলল,
— রেগে কেন থাকবো?
মেঘ মুখ কালো করে মাথা নামিয়ে বলল,
— না মানে ওই ফোনটা ভাইয়া আমাকে দিয়ে পাঠালো তোর জন্যে।কিন্তু আমি মিথ্যে বলে তোকে দিয়েছিলাম।তাই…
স্নিগ্ধা মাঝপথে গলা বাড়িয়ে বলল,
— তুই এখনও ওই ফোনের ব্যাপার নিয়েই পরে আছিস? আরে বোকা! আমি ওসব কিছু মনেই রাখিনি।
মেঘ স্নিগ্ধার দিকে মলিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
— তারপর ভাইয়া যে তোকে পছন্দ করতো সেটা জেনেও আমি তোকে জানাইনি,,
স্নিগ্ধা ফিক করে হেসে উঠলো। মেঘ ভড়কে গিয়ে ভ্রু কোচকালো। মৃদূ ক্ষেপে বলল,
— আমি ইমোশোনাল কথা বলছি আর তুই হাসছিস? দিস ইজ নট ফেয়ার!
স্নিগ্ধা হাসি থামিয়ে কৌতুক মাখানো স্বরে বলল,
— আহারে! থাক রাগ করিস না বাচ্চা।কি করবো বল,তুই যেভাবে বলছিস আমার হাসি ছাড়া কিছু পেলোনা। আচ্ছা আমি আর তুই বন্ধুতো তাইনা?
মেঘ ওপর নিচ মথা নেড়ে বলল — হ্যা তো..
— তাহলে এইসব সামান্য ব্যাপার নিয়ে আমাদের মধ্যে কেন মন কষাকষি হবে?
এটুকু বলে পাশে রাখা মেঘের বাম হাতটা মুঠো করে ধরলো স্নিগ্ধা। হেসে বলল,
— তোর আর আমার বন্ধুত্ব অটুট থাকবে সব সময়। সেখানে কোনও সম্পর্ক কোনও যুক্তি আসবেনা।আসবেনা কোনও পিছু টান।যত যাই হয়ে যাক আমরা যত দূরেই থাকি আমাদের বন্ধুত্ব সারাজীবন থাকবে।
মেঘ এতক্ষনে ঠোঁটে গাঢ় হাসি টেনে হাসলো।
কোনও উত্তর না দিয়ে এক হাত দিয়ে জাপটে ধরলো স্নিগ্ধাকে। স্নিগ্ধাও জড়িয়ে নিলো মেঘকে। মেঘ মৃদূ আওয়াজে বলল
— তুই বড্ড ভালো স্নিগ্ধা। সম্পর্কের মূল্য তোর থেকে ভালো কেউ দিতে পারবেনা। তোর এই কথাগুলো আমি সারাজীবন মনে রাখবো স্নিগ্ধা।সারাজীবন।
________________________________________
গেট থেকে বের হতেই হেনালের গাড়ি দেখে কপালে ভাঁজ পরলো স্নিগ্ধার। এগিয়ে এলো গাড়ির দিকে। স্নিগ্ধাকে দেখতেই হেনাল বেরিয়ে এসে দরজা খুলে দিতে উদ্যত হয়।তার আগেই স্নিগ্ধা ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে,
— আপনার স্যার আসবেন না আজ? আপনি এলেন যে?
হেলান ঝুঁকতে গিয়েও সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
— স্যারের কিছু জরুরি কাজ পরে গেছে ম্যাডাম।তাই আমাকে আসতে বলল।
স্নিগ্ধার মন খারাপ হয়ে এলেও এ নিয়ে আর কথা তুললোনা। কাজ তো থাকতেই পারে।এত বড় ব্যাবসা একা হাতে সামলায় তার পরেও তাকে এত সময় দেয় এইতো ঢেড়।কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই হেলান দরজা খুলে দিলে গাড়িতে উঠে পরলো স্নিগ্ধা।খট করে দরজা লাগালে ওপাশ থেকে গাড়িতে স্টার্ট করলো হেনাল।
স্নিগ্ধার গাড়ি ভার্সিটির গেট পার হয়ে যেতেই মৃনাল এগিয়ে এলো গেটের কাছে। মুখে তার তৃপ্তির হাসি আবরার আসেনি তাই।
নিজের সাথে বিড়বিড় করে বলল,
— এমন কিছু করতে হবে যাতে ওই আবরার স্নিগ্ধাকে আর নিতেও না আসে।
_________________________________________
স্নিগ্ধা মাত্রই দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো। দরজা লাগিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই তাৎক্ষণিক চমকে উঠলো। হুট করে সামনে এসে দাড়িয়েছে নিরু। পরমুহূর্তে বুকে হাত দিয়ে স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেললো স্নিগ্ধা। উদ্বেগ নিয়ে বলল
— এভাবে হুট করে কেউ সামনে দাড়ায়? ভয় পেয়ে গেছিলাম তো!
নিরু চোখটা নামিয়ে নিলো। ক্ষীন আওয়াজে বলল,
— দুঃখিত ম্যাডাম।
স্নিগ্ধা সামান্য হেসে নিরুর পাশ কাটিয়ে হেটে এসে সোফায় বসতে বসতে বলল,
— তা এভাবে আসার মানে টা কি? দেখেতো মনে হলো আমার আসার অপেক্ষাতেই ছিলে।
নিরু তাড়াহুড়ো করে এগিয়ে গিয়ে বসে পরলো স্নিগ্ধার পায়ের কাছে।ব্যাপারটায় স্নিগ্ধা ভ্রু কুঁচকে বলল,
— একি! এখানে বসলে যে।
নিরু মলিন মুখে স্নিগ্ধার দিকে তাকায়। নরম গলায় বলে,
— আমাকে কদিনের ছুটি দেবেন ম্যাডাম?
স্নিগ্ধা কিছু বলার জন্যে হা করতে গেলে নিরু পুনরায় উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,
— আমি জানি আমি কাজে এসেছি এক মাসও হয়নি।এর মধ্যে ছুটি চাওয়া একদম নিয়মের বাইরে।কিন্তু কি করবো বলুন তো? ছোট বোনটার ক্লাস ফাইভের পরীক্ষা শুরু হবে কাল। মাতো অসুস্থ তাই বোনটা আজ আমায় ফোনে খুব করে বলল ওকে কটা দিন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া আসা করতে। ছোট মানুষ একা এতদূর পেরে উঠবেনা। তাই…
নিরু থামতেই স্নিগ্ধা চট করে বলল,
— হয়েছে তোমার বলা?
নিরু ভয়ে গুটিয়ে তাকায় স্নিগ্ধার এমন গম্ভীর আওয়াজে। কয়েক সময় স্নিগ্ধা নাক মুখ কুচকে তাকিয়ে থেকেই শব্দ করে হেসে উঠলো,
হাসতে হাসতে বলল,
— বাপ রে! ছুটির জন্যে এত কথা বলতে হয়? আরে ছুটিই তো চাচ্ছো এতে এত ভয়ের কি আছে?
নিরু মুখ ছোট করে বলল,
— না মানে সাহেব আপনার খেয়াল রাখতে আমায় রেখেছিলেন কিন্তু আপনি এমন অসুস্থ তার মধ্যে আমাকে যেতে হবে দেখে…
স্নিগ্ধা নিরুর কথা থামিয়ে দিয়ে শান্ত ভাবে বলল,
— এসব নিয়ে ভেবোনা।আমি সব সামলে নিতে পারবো। তুমি বরং যাও।তোমার বোন তোমাকে পাশে পেলে পরীক্ষায় আরো ভালো করবে দেখবে।
নিরুর মুখে হাসি ফুটে উঠলো। উদ্বেগ নিয়ে বলল,
— সত্যি আমি যাবো ম্যাডাম? শুধু তিন দিন আমাকে দিন।আমি আর একটা দিনও বেশি থাকবোনা। আর আপনার যাতে কোনও কষ্ট না হয় তাই আমি সব কাটাকাটি করে ফ্রিজে রেখে দিয়েছি।
— আচ্ছা বাবা ঠিক আছে। তোমার যেকদিন লাগে তুমি থেকে আসো।তোমার বোনের পরীক্ষা শেষ হলেই এসো ঠিক আছে? উম! তুমি একটু দাড়াও আমি আসছি।
নিরুকে ওভাবে বসিয়ে রেখেই উঠে দাড়ালো স্নিগ্ধা। নিজ রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। নিরুও কৌতুহলী মুখ চোখ নিয়ে উঠে পরে।খানিক বাদেই স্নিগ্ধা বেরিয়ে এলো রুম থেকে। নিরুর সামনে এসে দাড়িয়ে ওর দিকে হাজার টাকার দুটো নোট এগিয়ে দিয়ে বলল,
— এটা রাখো।
নিরু অবাক হয়ে বলল,
— এটা দিয়ে আমি কি করবো ম্যাডাম?
স্নিগ্ধা ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,
— টাকা দিয়ে কি করে সবাই?
নিরু গোল চোখ করে বলল,
— না না ম্যাডাম।এটা আমি নিতে পারবোনা।
স্নিগ্ধা রাগে নাক ফুলিয়ে বলল,
— এটা আমি তোমাকে দিচ্ছিওনা।এটা তোমার বোনের জন্যে। বুঝলে?
এটুকু বলে স্নিগ্ধা টাকায় চোখ বুলিয়ে হেসে বলল,
— আসলে ছোট বেলায় যখন আমি পরীক্ষা দিতে যেতাম তখন বড়দের পা ছুয়ে সালাম করলে তারা টাকা দিতো।দশ টাকা কেউ আবার পাঁচ টাকা। আমি এটা তোমার ছোট্ট বোনটাকে দিচ্ছি। ওকেই দিও এটা।
নিরু খানিকক্ষণ স্নিগ্ধার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। গভীর কৃতজ্ঞতা খেলে যায় তার চোখে। স্নিগ্ধা ভ্রু কুঁচকে বলে– কি দেখছো নাও?
নিরু হাত বাড়িয়ে টাকাগুলো নিয়ে নেয়। মৃদূ আওয়াজে বলে
— আপনি খুব ভালো মনের ম্যাডাম।আমি আপনাকে যতটা ভালো ভাবি তার থেকেও। আল্লাহ আপনার সব সময় ভালো করুক।সব সময়।
স্নিগ্ধা জবাবে মিষ্টি হেসে বলল,
— আচ্ছা আচ্ছা।তা কখন যাচ্ছেন আপনি?
— এইতো রাতের রান্নাটা করে রেখেই..
স্নিগ্ধা মাঝপথে বলে উঠলো,
— না থাক।রান্না করার দরকার নেই।রাতের টা আমি চালিয়ে নেব।রাত বিরেত করে যাত্রা করা শুভ নয়।তুমি বরং দুপুরে খেয়েই বেরিয়ে পরো।
নিরু ইতস্তত করে বলল — কিন্তু…
— কোনও কিন্ত নয়।আমি যা বললাম সেটাই হবে।
স্নিগ্ধার মৃদূ শাষানোতে নিরু হেসে ঘাড় কাত করে বলল,
— আচ্ছা।
_____________________________________________
গম্ভীরমুখে বাড়িতে এলো আবরার। সামান্য বিষয় নিয়ে তার মুখের গম্ভীরতা একটু বেশিই ফুটে উঠেছে। বসার ঘর থেকে নিজের রুমে এগিয়ে গেলো আবরার। রুম ফাকা দেখে ভ্রু কুঁচকে বারান্দায় গেলো,স্নিগ্ধা সেখানেও নেই দেখে ওয়াশরুমে দেখলো। স্নিগ্ধাকে না পেয়ে আবার এলো বসার ঘরে,,স্নিগ্ধা বাসায় এসেছে তো কনফার্ম, তবে গেলো কোথায়? এদিকে ওদিকে খুঁজে নিয়ে এবার আর উদ্বিগ্নতা ধরে রাখতে পারলোনা আবরার। নিরুর থেকে খোঁজ পাওয়ার আশায় পা বাড়ালো রান্নাঘরের দিকে। অজান্তেই কেমন বুক ঢিপঢিপ করছে তার।কিছু বিশ্রী কথা মাথায়আসছে, যেগুলোকে কোনও ভাবেই আবরার প্রকাশ করতে চায়না।আর না চায় সে চিন্তাগুলোকে প্রশ্রয় দিতে।
রান্নাঘরে এসেই থমকে দাডালো আবরার।স্নিগ্ধা রান্না করছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। স্নিগ্ধাকে পেছন থেকে দেখেই স্বস্তির মৃদূ নিঃশ্বাস ফেললো আবরার। সাথে সাথে কপালে ভাঁজও পরলো তার। গলা বাড়িয়ে ডেকে উঠলো,
— পরি?
আবরারের স্বর শুনেই ঘুরে তাকাতে দেরি করলোনা স্নিগ্ধা। স্নিগ্ধা তাকাতেই আবরার দু পা এগিয়ে এসে উদগ্রীব হয়ে বলে ওঠে,
— তুমি কেন রান্না করছো? নিরু কোথায়?
কথাটায় স্নিগ্ধা আবারো সামনের দিকে ঘোরে। কড়াইয়ে খুন্তি নাড়তে নাড়তে বলে ওঠে,
— নিরুকে আমি কদিনের ছুটি দিয়েছি।
আবরার ভ্রু কুঁচকে বলল,
— ছুটি? কেন?
–ওর ছোট বোনের পরীক্ষা তাই।
স্নিগ্ধার ঝটপট উত্তরে আবরার নিজের রাগ ভুলে এগিয়ে আসে ওর দিকে। আবরারের উপস্থিতি টের পাওয়ায় স্নিগ্ধা হাতের কাজ থামিয়ে জিজ্ঞাসু মুখে তাকায় আবরারের দিকে।
— কিছু বলবেন?
আবরার স্নিগ্ধার দুগালে হাত রেখে বেশ নরম গলায় বলল,
— নিতে যাইনি দেখে রাগ করলে?
স্নিগ্ধা হেসে মাথা নাড়লো।যার অর্থ না। পরমুহূর্তে ব্যাস্ত গলায় বলল,
— আপনি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমার রান্না বেশি দূর নেই।
বলতে বলতে কড়াইয়ে কষানো মশলার মধ্যে মাংসের টুকরোগুলোকে ছেড়ে দিলো স্নিগ্ধা। আবরার সেদিকে চোখ বুলিয়ে বলল,,
— বাহ।রান্নায় ইদানিং বেশ পটু হয়েছো দেখছি।
জবাবে স্নিগ্ধা ঠোঁট এলিয়ে হাসলো ওর দিকে তাকিয়ে। মুহুর্তে মুখের ভঙিমা আবারো পাল্টে এলো তার। মুখে হাত দিয়ে দৌড় লাগালো ওয়াশরুমের দিকে।
ব্যাপারটায় আবরার উদ্বিগ্ন হয়ে ওর পেছন পেছন ছুটলো।
স্নিগ্ধা কয়েক দফা বমি সেড়ে ওয়াশরুমের দরজা ঠেলে বের হতে না হতেই আবরার কোলে তুলে নিলো ওকে। স্নিগ্ধা কিছু বলতে ধরলে আবরার মৃদূ রাগ নিয়ে বলল,
— একটা কথাও শুনছিনা এখন।ওনার শরীরের অবস্থা কত্ত খারাপ আর এই অবস্থায় উনি রান্না করতে গেছিলেন।হাহ!
কথাটা বলতে বলতে স্নিগ্ধাকে বিছানায় শুইইয়ে দিলো আবরার। স্নিগ্ধা মুখ কাচুমাচু করে বলল,
— আমি একটু যাই না ওদিকে। রান্না যে পুড়ে যাবে।
আবরার চোখ রাঙিয়ে বলল–না। গেলে যাক।এখান থেকে এক পাও নড়বেনা।রান্নার বাকিটা আমি দেখছি।
স্নিগ্ধা অবাক হয়ে বলল — আপনি রান্না করবেন?
আবরার মৃদূ ভাব নিয়ে বলল — ইয়েস।আর আবরার ফাহাদ চৌধুরী পারেনা এমন কোনো কাজই নেই।আমার রান্না খেলে হাতপা সব চেটে খেয়ে ফেলবে।
স্নিগ্ধা অবাক হওয়ার ভান করে বলল — ও বাবা তাই নাকি।তাহলে তো খেতেই হচ্ছে।
আবরার এবার কোমল গলায় বলল,
— তুমি বরং বিশ্রাম করো। আমি আসছি। আর খারাপ লাগলে আমাকে ডাকবে কেমন?
স্নিগ্ধা মাথা নেড়ে হ্যা বলল
আবরার ঝুঁকে এসে স্নিগ্ধার কপালে চুমু খেলো। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গায়ের কোর্ট আর টাই টা খুলে রাখলো স্নিগ্ধার পায়ের কাছে। এরপর পা বাড়ালো রান্নাঘরের দিকে।
যেতে গিয়েও আবারো পিছু ফিরলো আবরার।মৃনালের ব্যাপার নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করতে মন চাইলো তার। কিন্তু আগের বার স্নিগ্ধার মুখ কালো করার কথা মনে পরতেই দমে গেলো। দেখা যাবে সে জিজ্ঞেস করবে একভাবে আর স্নিগ্ধা উল্টে ভেবে বসলো হয়তো আবরার তাকে বিশ্বাস করেনা,কিংবা তার পেছনে সত্যিই লোক লাগিয়েছে।এসব ভেবে আর কথাগুলো বললোনা আবরার। আবরারকে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে স্নিগ্ধা কৌতুহলে ভ্রু নাঁচিয়ে বলল
— কিছু হয়েছে?
আবরার মুচকি হেসে চোখের পাতা এক করে বোঝালো– কিছুনা।
এটুকু বলে আবরার বেরিয়ে পরলো রুম ছেড়ে। সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে স্নিগ্ধা বেডের সাথে আধশোয়া হয়ে বসলো। চোখ গুলো বন্ধ করতে যাবে তার আগেই পাশ থেকে ল্যান্ডাফোনটা বেশ শব্দ নিয়ে বেজে উঠলো
চলবে,
আজকের পর্বের প্রত্যেকটা পয়েন্টই কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ।আর ফোন বাজলো কে ফোন করতে পারে বলুন তো?
আমি গ্রামের বাড়িতে এসেছি।রাতের বেলা ঘরে নেটওয়ার্ক পাওয়া অনেক দুষ্কর। তাই ভাবছি এইকটা দিন গল্প সকালে না হয় বিকেলে পোস্ট করবো।কেমন হবে? আপনাদের সুবিধা অসুবিধা জানাবেন অবশ্যই।
Tara tari porer porbo din sob somoy majh pothe golpo ses hoye jay kno. Complete korte paren na??