#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_২৫
Writer #প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী
আনিকা কেকের পিস নিয়ে খেয়ে বলল
সুজানা আসলেই টেস্ট হয়েছে। ভীষণ সফট হয়েছে। কয়টা ডিম ইউজ করেছেন?
আম্মা বেক করেছে। আমি জাস্ট ডেকোরেশন করেছি। এই প্রথম পুরো কেক ডেকোরেশন করলাম।
মনেই হচ্ছে না। যাইহোক আপনি আপনার মায়ের মতোই ব্রিলিয়ান্ট।
থ্যাংকস।
আচ্ছা আপনি কি বাইরে? গাড়ির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।
হ্যা তো। আমি তো অফিসের নীচে দাঁড়িয়ে। মাত্রই গাড়ি থেকে নামলাম। ভাইকে দিয়ে কেকটা পাঠিয়েছি। দুজনেই একসাথে বেরিয়েছি বাসা থেকে। যাইহোক আমার কষ্ট স্বার্থক।
আনিকা হাসলো। বলল
আপনার স্টুডেন্টরা এখন নতুন টিচারের কাছে পড়ছে। টিচারের কেক দেখলে তো হামলে পড়বে।
হ্যা হ্যা আমি তো ওদের জন্যেই পাঠিয়েছি।
আনিকা হেসে উঠে অভিককে বলল
হায় হায় অভি তোর স্টুডেন্ট কি বলছে দেখ।বলছে কেকটা নাকি বেবিদের জন্য পাঠিয়েছে তোর জন্য না।
সেটা কেকের উপরে লিখে দেয়া উচিত ছিল উনার।
সুজানা শুনে জিভে আলতো করে কামড় বসালো। সে ভেবেছে স্যার পাশে নেই। বসে বসে কথা শোনা হচ্ছে। সে আর কোনো কথাই বলবে না।
আনিকা হেসে বলল
সুজানা আপনার টিচার কি বললেন দেখলেন তো?
হুম, পরেরবার লিখে দেব।
পরেরটাতে যেন আমার নাম লেখা থাকে। এবারেরটা তো বেবিদের জন্য। পরেরটা আমার নামে হোক।
সুজানা ওপাশে মৃদু হাসলো। মমতাজ বেগম হাসলেন। আনিকাকে বললেন
নাতবৌ তুমি কেন মধ্যস্থতা হিসেবে কাজ করছ? ফোনটা দাদুভাইকে ধরিয়ে দাও। কথা তো তারা বলছে। তুমি শুধু শুধু কষ্ট করছ।
আনিকা হেসে অভিকের দিকে চাইলো। অভিককে দেখে মনে হলো না সে কথাটা অত গায়ে মেখেছে। কেক খাওয়ায় মনোযোগ রেখে ফোনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল।
আনিকা ফোন দিয়ে দিতেই সুজানা ওপাশ থেকে বলল
আচ্ছা ম্যাডাম এখন রাখি। হ্যা?
হুম। রাখতেই পারেন। কিন্তু আমার ট্র্যাকসুইটটার কি অবস্থা করেছেন? ওটা কুঁচকে গিয়েছে কেন?
আনিকা বলল
হুহ এই তোর জরুরি কথা?
অভিক কেকটা ঠেলে দিয়ে বলল
মা আর জেম্মাকে দেখাও।
ওকে।
আনিকা কেকটা নিয়ে চলে গেল। সুজানা ওপাশে চুপচাপ। অভিক বলল
এখন ভয় পেয়ে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে।
সুজানা সাথে সাথে প্রতিবাদ করে উঠলো।
একদম না। কেন ভয় পাব? আপনিই তো বলেছিলেন আমাকে করতে কাজটা। আমি কি অত পারি নাকি? আম্মা করলে কুঁচকাতো না।
আপনার অজুহাত আমার চাইনা। আপনি অজুহাতের রাণী। ওটা আমি ওয়ার্ক আউটের সময় পড়ি। আমি কুঁচকে যাওয়া ড্রেস পড়িনা। ট্র্যাকসুইটটা ঠিক করে দেবেন। ব্যস। ওটা আপনি অব্দি পৌঁছানোর দায়িত্ব আমার।
সুজানা কিছু বলার আগেই ফোনটা টুট টুট শব্দ করে কেটে গেল। অভিক বাকি কেক টুকু মুখে পুরে ফোনটা টি টেবিলে রেখে চলে যেতে উদ্যত হবে তখনি বৃদ্ধা জানতে চাইলেন
অজুহাতের রাজার খোঁজে আমি।
অভিক চোখতুলে বিমূঢ় চোখে চাইলো। বলল
আই থিংক সেটার খবর তোমাদের কাছে ভালোই আছে। আজকাল তো সেসবের বেশ চর্চা হয় এই বাড়িতে। সকাল সন্ধ্যা। যাইহোক কাজ আছে আমার।
হাত ঝেড়ে উঠে গেল অভিক। যেতে যেতে শুনলো
ভাই মনে হচ্ছে রেগে কথা বলছে।
রাগ আমার ধাতে নেই। ড্রপ দিজ ম্যাটার প্লিজ।
নাতির কথা শুনে মৃদু হাসলেন বৃদ্ধা।
_____________________
সুজানা অফিসের ডেস্কে গিয়ে বসতেই সেদিনের ছেলেটা কথা বলতে এগিয়ে এল।
হ্যালো সুজানা। কেমন আছেন? কাগজপত্র সব এনেছেন?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। হ্যা এনেছি। ম্যামের কাছে যেতে হবে?
নো । ম্যাম আসবেন। এন্ড গুড নিউজ একটা কোম্পানির সাথে আমাদের বেশ ভালোই ডিল হয়েছে। আপনাকে মেবি ওখানকার ব্র্যান্ড ডিজাইনের দায়িত্বটা দেয়া হবে।
আচ্ছা এটা তো এজেন্সির মতো? ডেভেলপার আছে?
না। আপাতত মার্কেটার এবং ডিজাইনাররা কাজ করছে।
আচ্ছা। বুঝতে পেরেছি।
ওদের কথাবার্তার মাঝখানেই নীলা মজুমদার এল। সবাই গুড ইভিনিং জানাতেই উনি সবার সাথে হেসেখেলে কথা বলে সুজানার দিকে এগিয়ে এল। নীল রঙা আইডি কার্ডের ফিতা সুজানার গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে বলল
আমার সাথে আসুন ম্যাডাম। অনেক কথা আছে।
সুজানা মৃদু হাসলো। ম্যামকে তার ভারী পছন্দ হয়েছে। সুন্দর মহিলাটির মনটাও নিশ্চয়ই সুন্দর। নইলে এমপ্লয়িদের ম্যাডাম বলে সম্বোধন করাটা যে সে পারেনা।
নীলা যাওয়ার কিছু পরেই সুজানা উনার অফিসের কামরায় গেল। নীলা খুশি হলো। বলল
বসুন সুজানা। সাইফ ওয়াহিদ সম্পর্কে কতটুকু জানেন?
ততটুকুই জানি যতটুকু জানলে আর জানা লাগেনা।
গুড।
ও আমার বন্ধু হয়। আপনি জানেন?
সুজানা বিস্ময় নিয়ে তাকালো।
বন্ধু?
হুমম। আমরা কলেজে একসাথে পড়েছি। ও খুবই ট্যালেন্ডেট পার্সন। আপনি দেখুন ও বিসিএস দিচ্ছে আর আমি বিজনেস সামলাচ্ছি।
একটা প্রশ্ন করব যদি কিছু মনে না করেন।
হুমম।
আপনি ম্যারিড?
নীলা হেসে উঠলো।
নো নো। একজনের পেছনে নিজের জীবনের মূল্যবান সময়গুলো নষ্ট করার পর আর কারো সাথে জড়াতে ইচ্ছে হয়নি। নিজেকে ব্যস্ত করে নিয়েছি। তুমি সাইফের কাছের বোন তাই বলে ফেলেছি। দেখো আবার। হাউএভার, আমরা কাজের কথা শুরু করতে পারি।
সরি ম্যাম। আপনাকে কষ্ট দেওয়াটা উদ্দেশ্য ছিল না।
ইট’স ওকে সুজানা। সাবধান ভুল মানুষের পেছনে সময় ব্যয় করোনা। ওহ সরি তুমি বলা শুরু করে দিয়েছি।
শুনতে ভালো লাগছে। তুমি বলতে পারেন। আপনার ছোট বোনের মতোই তো।
ওকে ডান। তুমি করেই বলি। যে কথাটা বলতে চাচ্ছিলাম সেটা হচ্ছে রিসেন্টলি আমরা যে ব্র্যান্ড ডিজাইনটা নিয়ে কাজ করব সেটা হচ্ছে বাবার এক বন্ধুর কোম্পানির জন্য। কোম্পানিটা রিসেন্টলি লঞ্চ করেছে। সো তাদের কাজগুলি আপনাকে করতে হবে।
সুজানাকে শঙ্কিত দেখালো।
আপনি ভাবছেন আমি পারব?
কেন নয়? সাইফ আমাকে বলেছে তুমি গত ছ’মাস আগে থেকে শিখে আসছ। আর তোমার পোর্টফলিও দেখেছি আমি। বিশ্বাস রাখো নিজের উপর। পারবে।
আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করব ম্যাম।
অল দ্য বেস্ট সুজানা। এখন ডেস্কে যাও। আজ তেমন কাজ নেই। মেইন কাজ কাল থেকে। আমি তোমাকে উনাদের ওয়েবসাইটটা দিচ্ছি, ওটা থেকে অনেক ধারণা নিতে পারবে তুমি। আজ শুধু ওই ওয়েবসাইটটা ভিজিট করো। এবং ক্রিয়েটিভ ডিজাইন আইডিয়া নিয়ে রিসার্চ করো।
ওকে ম্যাম।
সুজানা ডেস্কে গিয়ে বসলো।
কাজ এবং কলিগদের সাথে অল্প আলাপসালাপ সেড়ে কথাবার্তা শেষে বেরিয়ে এল অফিস থেকে। এশার আজান পড়ে গেছে অনেক আগে। সময় দেখলো ন’টা বাজে। যত দ্রুত সম্ভব বাড়ি ফিরতে হবে। গাড়িতে উঠার সময় সেদিনের কুকুরটা ছুটে এল তার দিকে। সুজানা বড়সড় দম ফেললো। ইশশ ভাগ্যিস সে ঠিক সময় গাড়িটা পেয়েছে।
বাসার কাছাকাছি নামতেই সুজানা দেখলো গেইটের পেছনেই মা দাঁড়িয়ে আছে। সুজানা মাকে দেখে হেসে ফেলল।
এখানে কেন আম্মা? আমি আসছি বললাম না?
আমার তো চিন্তা হয়। মা হ বুঝবি।
সবসময় এই কথা বলে।
সাজিয়া বেগম মাথা নেড়ে বললেন
তুই তোর সন্তানসন্ততিকে চোখের আড়ালও করবি না। আমি তো হাতের বাইরে ছেড়ে দিয়েছি। আল্লাহ দেখবে।
সুজানা হতাশ। তার মা’টাকে কোনো কিছু বুঝানোর সাধ্যি নেই।
_______________
ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে হৈচৈ হাসি তামাশা চলছে অবিরত। কিছু আগেই সম্পন্ন হওয়া ক্লাসের মোর্শেদ স্যার তথা তাদের টাকলু স্যারকে নিয়ে।
হৈহুল্লোড় হাসাহাসি পিনপতন নীরবতা ঢেলে সবার প্রিয় স্যারটি প্রবেশ করলো। সবাই ফিসফিসানি বন্ধ করে জানতে চাইলো
স্যার কেমন আছেন?
স্যার মৃদু হেসে উত্তর দিল,
আপনারা ভালো থাকতে দিচ্ছেন কই? যে মাছের বাজার বসিয়েছেন। যাইহোক, অনেকগুলো দিনপর মাছের বাজার দেখলাম। Interesting!
স্যার আমরাও হ্যাপী।
অভিক অদ্ভুত চোখে তাকালো তাদের দিকে। বলল
কান ধরে সবাইকে দাঁড় করিয়ে রাখব। ডিসিপ্লিন এখনা না শিখলে শিখবেন কেমন?
সবাই যেন ভ্যাঁবাছ্যাঁকা খেয়ে গেল। মাঝসারিতে বসা সুজানা মেহুল আর শান্তা একসাথে ফিক করে হেসে উঠলো। সুজানা বলল
ভালোই বাঁশ দিয়েছে।
বাকিরা কাঁচুমাচু করে তাকালো।
আমরা লেসন শুরু করতে পারি?
সবাই সমস্বরে আওয়াজ তুললো।
ইয়েস স্যার।
অভিক লেসনের ফাঁকে ফাঁকে তার ব্যাক্তিগত কিছু লেসনে মনোযোগ দিতে ভুলেনি আজও।
সুজানা জীবনেও এত ভুল কখনোই করেনি যতটা ভুলভাল নোট আজ সে খাতায় তুলেছে। হয়ত এলইডি স্ক্রীনের পাশেরজনকে একটু বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়ে?
তারা দুটো মানুষ আড়ালে আবডালে একে অপরকে দেখে নেয় রোজ। তাদের “সে” আশেপাশে থাকলে সবটা সুন্দর লাগে, ভালো লাগে, প্রশান্তি লাগে।
**
সুজানা ক্লাস শেষে লাইব্রেরিতেও গিয়েছে। ফেরার পথে একটা ছেলে বই ধরিয়ে দিয়েছে তার হাতে। আর বলেছে অভিক স্যার পাঠিয়েছে। সুজানা নিল। বন্ধুদের বিস্ময়কর চাহনি তার দিকে নিক্ষিপ্ত। তাদের অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর সুজানা এড়িয়ে গেল। তাদের কি বলবে সে?
বাড়িতে গিয়ে দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষে বইটা খুললো সে। বইটার মাঝখানেই একটা চিরকুট।
তাতে লেখা,
সুজানা!
বইটা জাস্ট অজুহাত। একটা প্রশ্ন জানার ছিল আমার।
কাল রাতে আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি।
একটা অন্ধকার ঘর
সেখানে আপনি
এবং অনেকগুলো ছায়া নৃত্য করছে আর আমি
এটার ব্যাখ্যা দিন। এবং এটা সত্যি আগের সব প্রশ্ন আমি ভুলে গিয়েছি তাই উত্তর জানতে চাইবো না। আপনি জাস্ট এটার উত্তর দিন।
কিভাবে আমাকে উত্তরটা জানাবেন তাও বলে দিচ্ছি। ফোনে মেসেঞ্জার ওপেন করুন। অভিক ফারদিনের নামের পাশের সবুজ বাতি কিন্তু রোজ চলে। আপনার চোখের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে চোখে পড়েনা।
সুজানা ফোন হাতে নিয়ে মেসেঞ্জার ওপেন করলো। অভিকের আইডিতে অলরেডি মেসেজ পাঠানো তার দিক থেকে। এসব উনার কাজ, ওইদিন কমেন্ট পড়ে হাসাহাসি সময় উনি সুজানার ফোন থেকে মেসেজ পাঠিয়েছিল নিজের ফোনে।
সুজানা মেসেজ পাঠালো
বইটা পড়া শেষ হলে উত্তরটা নিয়ে হাজির হবো। আমি জানি বইটা অজুহাত না।
উত্তর এল।
ইনটেলিজেন্স! কিন্তু সময় অতিক্রম হয়ে গেলে আমি এই স্বপ্নটাও ভুলে যাব সুজানা।
না ভুলে যাবেন না।
আপনাকে ভুলব না। স্বপ্ন ভুলার কথা বলছি। আপনাকে ভুলা তো অসম্ভব। আপনি আমার আত্নীয়ের বাড়িতে বউ হতে যাচ্ছেন। একদম অসম্ভব।
সুজানা হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো।
আহ! তার এসব শুনতে ভালো লাগেনা।
চলবে…..
ওয়াইফাই চলে যাওয়ায় আপলোডে দেরী হয়েছে