#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_৩১
#লেখনীতে_প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী
ঝুল বারান্দার গ্রিলের ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে সোনারঙা চাঁদের আলো। হালকা বাতাসে লতানো গাছগুলো দুলছে।
দু মানব মানবীকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গলা খাঁকারি দিলেন সালমা বেগম। বললেন
কফি চেয়েছিলি না?
অভিক সুজানার মিনমিনে করে বলা কথা শোনার অপেক্ষায় ছিল। মায়ের ডাকে ধ্যান ভেঙে গেল। ট্রে থেকে মগ দুটো তুলে নিয়ে বলল
থ্যাংকস মা। তুমি ঘুমিয়ে পড়ো। গুডনাইট।
সুজানা জড়োসড়ো হয়ে তাকালো সালমা বেগমের দিকে। সালমা বেগম চোখ সরিয়ে বললেন
বেশি রাত জেগে থাকবি না।
ওকে।
উনি চলে যেতে গিয়ে আবারও থামলেন। কন্ঠ খাদে নামিয়ে বললেন
মেয়েটাকে ছেড়ে দে। ওর মা ওকে সকাল সকাল পাঠিয়ে দিতে বলেছে।
জিজ্ঞেস করে দেখো আমি বেঁধে রেখেছি কিনা।
অভি?
অভিক মৃদু হাসলো। বলল
গুডনাইট মাআআ। কফি শেষ হলেই উনি চলে যাবেন। ডোন্ট ওয়ারি।
আমাকে খুব জ্বালাতনে ফেলে দিয়েছিস অভি। আমি জানিনা কি করছিস তুই।
অভিককে কিছু বলতে না দিয়ে চলে গেলেন উনি।
অভিক কফির পেয়ালা নিয়ে এগিয়ে গেল সুজানার কাছে।
সুজানা বলল
এখন কি কেউ কফি খাই?
আমি খাই । তাই এখন আপনাকেও খেতে হবে। মা খুব ভালো কফি বানায়। আপনি কফি বানাতে জানেন?
সুজানা কফির মগ নিয়ে নিল। অভিক ছোটখাটো মিনি টেবিলে মগ রেখে চেয়ার টেনে দিল সুজানাকে। সুজানা চেয়ারে বসে বলল
হুম। তবে বানাইনি কখনো। ওটা কঠিন কাজ নয়। আপনি কেন অসময়ে কফি খান?
অভ্যাস।
সুজানা তার মগ দেখিয়ে বলল
এতগুলো কখন শেষ করব? আমার জন্য কেন আনতে বললেন?
অভিক ওর মগটা টেনে নিল। নিজের মগে ঢেলে নিল কিছু। বলল
এবার ঠিক আছে?
সুজানা বলল
কিন্তু আমি খেয়েছি ওটা।
আপনার ছোঁয়াচে রোগকে আমি ভয় পাচ্ছি না। তার চাইতে ভয়ানক অসুখে ভুগছি আমি।
ডাক্তার দেখাচ্ছেন না কেন?
এখনো টিকেট পাইনি।
সুজানা গোলগাল চোখে তাকালো। অভিক কফির মগে চুমুক দিয়ে ভুরু উঁচালো। সুজানা দুপাশে মাথা নেড়ে হেসে বলল,
নাহ, কিছু না।
আপনি চাকরি শেষে বাসায় গিয়ে পড়েন?
হুম।
সত্যি?
হুম।
নিজের উপর এত চাপ দিচ্ছেন কেন? এখন আপনার পড়াশোনায় ফোকাস করা দরকার।
এটুকু কথায় সুজানার কেমন অনুভূতি হলো সে জানেনা। এমন অদ্ভুত সুখে পাগল পাগল অনুভূতিগুলোর কাছে বড্ড নতুন সে। তাকে নিয়ে কেউ ভাবে এত?
জীবনে খুবই কম পরিমাণে অভাব অনটন শব্দগুলোর সাথে পরিচিত থাকা অভিক আজ জীবনকে অন্যরকমভাবে উপলব্ধি করলো।
একটা মেয়ে কত সুন্দর করে পরিবারের জন্য লড়াই করছে। আপনদের ভালো রাখার জন্য। এত সুন্দর উপলব্ধির জন্য মনে মনে কৃতজ্ঞ হলো ছোট মেয়েটির প্রতি।
সুজানা যেন ভারমুক্ত হলো। যার মনের চোখে সে আকাশ বাতাস উপভোগ করছে তার সাথে এত দ্বিধা কভু মানায় না। অভিক ফারদিন যেমন খোলাখাতা তার কাছে সেও খোলা খাতা অভিক ফারদিনের কাছে।
খুবই বড়দের মতো কথা আবার মাঝেমাঝে বোকাবোকা প্রশ্নগুলো শুনে অভিক হাসে আর ভাবে,
হাসি-আনন্দ ভাগ করে নেয়ার মতো এত ভয়ংকর সুখ থাকতে কেন মানুষ সুখের অভাবে ভোগে?
পুরো অর্ধরাত্রি কেটে গেল কিন্তু দু’জনের গল্প শেষ হওয়ার কথা নেই । ক্লান্তি নেই। নেই কোনো সংকোচ।
তাদের এই গল্পগুলোও ভালোবাসার ছিল না। তবে,
ভালোবাসা মানেই তো ঠাণ্ডা কফির পেয়ালার সামনে অবিরল কথা বলা। আর শেষ হয়ে-যাওয়া কথার পরেও মুখোমুখি বসে থাকা।
চলবে……..