প্রিয়_ইরাবতী #পর্ব-৫ #Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)

0
240

#প্রিয়_ইরাবতী
#পর্ব-৫
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অন্ধকার রুমে ইরা শুনতে পেলো কারো সুদীর্ঘ দীর্ঘশ্বাসের শব্দ। ইরা কারো স্পর্শ অনুভব করতেই, দ্রুত উঠে বসলো, কিন্তু কাউকে দেখতে পেলো না সে। বেশ কয়েকদিন ইরা লক্ষ্য করছে, ঘুমের মাঝে কেউ চুপিসারে তার রুমে আসে। তার মাথায় হাত বুলায় কিন্তু নিজের মনের ভুল কিংবা স্বপ্ন ভেবে তা উড়িয়ে দিলেও আজ কেমন যেন মনে হচ্ছে ঘটনাটি স্বপ্ন নয় বরং বাস্তব! ইরা একপলক নিজের রুমের দরজার দিকে তাকায়, দরজা বন্ধ, তাহলে কেউ কীভাবে ভিতরে প্রবেশ করবে? ইরা উঠে, একপা -দুপা করে এগিয়ে গেলো। অত:পর বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতেই, তার বুক কেঁপে উঠলো। তার বারান্দার টি- টেবিলে ব্ল্যাক রোজ ফুলদানিতে খুব সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। ইরার খুবই গোপন পছন্দের মধ্যে একটি কালো গোলাপ,সে যে কালো গোলাপ ফুল বড্ড পছন্দ করে, তা শুধুমাত্র সে জানে কিন্তু সেই আগন্তক কী করে জানলো? ইরা খেয়াল করলো ফুলদানির সাথে ছোট্ট একটা চিরকুট, তাতে লিখা, ‘ কালো গোলাপ আপনার কাছে যতটা প্রিয়, তার থেকে বেশি প্রিয় আপনি আমার কাছে। ‘
চিরকুটটা পরে একমুহূর্তের জন্যে থমকে গেলো ইরা। ইরার বারান্দার ঠিক সামনাসামনি বাগানে দাঁড়িয়ে, পকেটে হাত রেখে মাহির ইরাকে লুকিয়ে দেখছে। গোলাপ ফুল পেয়ে যতটা চমকেছে ইরা তার থেকে দ্বিগুনভাবে ফুলগুলো পাওয়ার আনন্দ ফুটে উঠেছে ইরার মুখশ্রীতে। চাঁদের স্নিগ্ধ আলোতে ইরার হাসিখুশি সুন্দর মুখশ্রীখানা খুব ভালোভাবে দেখছে মাহির। ইরা আনন্দ বড্ড সুখ দেয় মাহিরকে। মাহির আলতো হেসে চলে যায়।

__________

সকালে মাহির ড্রাইনিং টেবিলে বসতেই, তার মামা আফজাল হোসেন বলে উঠলেন, ‘ মাহির, আমি অর্নবের সাথে আলাপ -আলোচনা করলাম। তুই বিসনেজ নিয়ে পড়াশোনা করছিস, লন্ডনে নিজের চেষ্টায় রেস্টুরেন্টের বিসনেজ ও দাড় করিয়েছিস শুনলাম। ‘

মাহির ব্রেড হাতে নিয়ে বললো, ‘ হ্যা, শুরু করেছি ছোট্ট একটা বিসনেজ। ‘

‘ আমি বলে কি, তোর বাবার এত্তো বড় ব্যাবসা আমি তো অনেক দেখলাম, আমার বয়স হয়েছে বাবা, তুই তো এইবার বেশ কয়েকদিন দেশে আছিস, আমি চাই এইবার তোকে সবটা বুঝিয়ে দিতে। ‘

আফজাল হোসনের কথার মাঝে স্নেহা বলে উঠে,
‘ মামা, তোমার কি এমন বয়স হয়েছে শুনি? আর মাহিরকে তো, ইরার বিয়ে পরেই লন্ডনে ফিরে যেতে হবে। মাহির কী করে ব্যাবসার দায়িত্ব নিবে?’

‘ তা জানি কিন্তু যতই হোক, তোদের বাবার কষ্টের দাঁড় করানো ব্যাবসা,তোদেরই এখন দেখা উচিৎ। তাছাড়া মাহিরকে তো এখুনি সব দায়িত্ব নিতে বলছি না, পড়াশোনা শেষ করে না হয় সব দায়িত্ব নিবে। আপাতত ব্যাবসাটাকে বুঝে নিক। ব্যাবসা বুঝে নিতেই অনেকের কত বছর যে লেগে যায়, তার হিসেব নেই। তাছাড়া, আমার শরীর খারাপ হচ্ছে দিনের পর দিন, এই আছি এই নেই।’

ইরার বাবার কথা শুনে বিরক্ত সুরে বলে, ‘ উফ বাবা! এইসব কি কথা? তোমার কী কখনো কথা মুখে একটুও বাঁধবে না?’

‘ আমাকে ক্ষমা করে দে মা। ‘

অর্নব মাহিরের কাঁধে হাত রেখে বলে, ‘ শালাবাবু, আমার মনে হয় মামার কথায় যুক্তি আছে, তুমি বরং ব্যাবসা ভালো করে বুঝে নাও। অফিসে গিয়ে কয়েকদিন বসো।’

‘ আচ্ছা, তোমরা যখন বলছো, আমি তখন যাবো। ‘

__________
গাড়িতে পাশা-পাশি বসে আছে মাহির এবং ইরা। মাহির আড়চোখে বার বার ইরাকে দেখছে, কেমন বিষন্নভাবে বসে আছে ইরা, যা মোটেও ভালো লাগছে না মাহিরের। ইরার বিষন্ন মুখশ্রী তাকে যে পীড়া দেয়, তা কী বুঝে ইরা? হয়তো বুঝে না, জানে না, কখনো জানবেও না। মাহির হাল্কা কেশে জিজ্ঞাসা করে, ‘ আপনার কি কোন কারণে মন খারাপ?’

‘ হু!’

‘ কেন?’

‘ তুই আজকেও আমার সাথে আমার ভার্সিটি যাচ্ছিস তাই।’

‘ তো তাতে কি হয়েছে? আমার অফিসের পথ আপনার ভার্সিটির কাছেই, তাই মামিই তো বললেন আপনাকে ড্রপ করে যেনো আমি অফিসে যাই। ‘

‘ সমস্যা তো সেখানেই…’

‘ কি সমস্যা?’

‘ নিজের দিকে ভালো করে তাকালেই বুঝবি?’

‘ আমার এমন কি পরিবর্তন এসেছে?’

ইরা মুখ কালো করে জবাব দেয়, ‘ আজকে তুই সাদা শার্ট এবং কালো ব্লেজার পরে পুরো বিজনেসম্যান এর গ্যাটাপ দিয়েছিস, তুই কি জানিস? আজকে তোকে দেখে মনে হচ্ছে কোন তামিল মুভির হিরো। তোকে যদি এই রুপে আমার ভার্সিটির শাকচুন্নি মেয়েগুলো দেখে তাহলে কী অবস্হা হবে বুঝতে পারছিস?’

মাহির ঠোট টিপে হেসে বলে, ‘ তাতে আপনার কি? আপনার কিসের এতো জেলাসি?’

‘ আজব তো! আমার আবার কিসের জেলাসি হবে? আমি তো ভাবছি এত্তো বড় বড় দামড়ি মেয়েগুলো শেষে তোকে কিডন্যাপ করে জোড় করে বিয়ে করতে চাইবে তখন কি করবি তুই? তুই তো ছোট মানুষ, এদের হাত থেকে তুই কীভাবে বাঁচবি? তাও জানিস আমি ওদের ওয়ার্ন করে এসেছি, যাতে তোর দিকে ভুলেও নজর না দেয়। ‘

‘ ওহ আচ্ছা, তাই বুঝি?’

‘ হ্যা তাই, আমি বলেছি শুন আমি আমার ফুপাতো ভাইয়ের জন্যে ছোট্ট পুতুলের মতো মেয়ে আনবো, তাই তোরা ভুলেও নজর দিবি না। ‘

মাহির কথাটি শুনেই গাড়িতে জোরে ব্রেক কষে। ইরা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, ‘ কিরে গাড়ি থামালি কেন?’

মাহির গম্ভীর গলায় জবাব দেয়,
‘ গাড়ি থেকে নেমে যান। ‘

‘ কিন্তু কেন?’

‘ কারণ আমার জরুরী একটা কাজের কথা মনে পরেছে, তাই আমি এখন আপনাকে ড্রপ করে দিতে পারবো না। আপনি রিক্সা নিয়ে ভার্সিটি চলে যান। ‘

ইরা মুখ বেকিয়ে বলে, ‘ তাই বলে এইভাবে আমাকে মাঝরাস্তায় নামিয়ে দিবি তুই? তুই সত্যিই খুবই বাজে মাহির। আমি আর কখনো তোর সাথে কোথাও যাবো না। ‘ কথাটি বলেই ইরা গাড়ি থেকে নেমে যায়। মাহির হাত মুঠো করে চোয়াল শক্ত করে, গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যায়। মাহির হাবভাব বড্ড অদ্ভুদ লাগছে ইরার। ছেলেটা মাঝে মাঝে এমন আচরণ কর, যা মোটেও বুঝতে পারে না ইরা।

________

সকাল থেকে ইরার নাম্বারে ফোন দিচ্ছে আহরার কিন্তু ইরাকে ফোনে পাচ্ছে না। নিশ্চই ফোনটা সুইচঅফ করে রেখে দিয়েছে এবং ফোনটা অন করতে ও ভুলে গেছে ইরা। এমন কাজ ইরা একবার নয় বার বার করেছে। একবার তো ইরার ফোন বন্ধ পেয়ে, ভয়ে ইরার বাসায় ছুটে গিয়েছিলো এবং সেখানে গিয়ে দেখে তার রুপকথার রাণী নিশ্চিন্তে তার বিছানায় ঘুমিয়ে আছে এবং তার পাশে ফোনটা অযত্নে পরে আছে, সুইচঅফ অবস্হায়। ইরার কথা মনে পরতেই, মুচকি হাসে আহরার। আহরার ভেবে রেখেছে আজ হুট করে ইরার ভার্সিটিতে গিয়ে ইরাকে চমকে দিবে আহরার। আহরার মা নিতা এসে বললেন, ‘ আহরার, আজ মেহরুনের ভার্সিটির প্রথমদিন, মেহরুন তো সব চিনে না, বাবা তুই কি মেহরুন কে আজ ভার্সিটি নামিয়ে আসবি? ‘

‘ কেন মা, বাবা কোথায়?’

‘ তোর বাবা জগিং করতে সেই সকালে বেড়িয়েছেন, এখনো ফিরেনি। হয়তো কোন বন্ধুর সাথে গল্প করতে করতে, তার বাড়িতে চলে গেছেন চা খেতে। ‘

‘ আচ্ছা, মেহরুনকে রেডি হতে বলো। ‘

‘ আচ্ছা বাবা। ‘

মিসেস নিতা হাক ছেড়ে মেহরুনকে ডাকতে থাকেন, ‘ মেহরুন, মা নীচে আসো জলদি। ‘

মেহরুন গোলাপী একটি চুরিদার পরে, চশমা ফ্রেম ঠিক করতে করতে নীচে নামলো। আহরার তাকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।

________

ভার্সিটি গেটে আসতেই, ইরার কাছে এসে আনিকা হাফাতে হাফাতে বললো,’ তুই এখানে? রাস্তায় আসার পথে আহরার ভাইয়ের গাড়িতে একজন অপরিচিত মেয়েকে দেখলাম। তুই কি সেই মেয়েকে চিনিস?’

‘ কি বলছিস এইসব? আহরার তো আমাকে কিছু বলেনি। ‘

তাদের কথার মাঝেই, ইরা দেখতে পায়….

চলবে কী?
(কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here