#অলিখিত_অধ্যায়
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৪৯।
বাগানের অংশটাতে একটা বড়ো বসার জায়গা আছে। এই মুহুর্তে সেখানেই বসে আছে সবাই। নীহাল আর ফারজাদ নিজেদের গল্পে ব্যস্ত। প্রিয়তা আর মৌমি ছবি তুলাতে। তখনই ফারজাদের নাম্বারে কল আসে। সেইভ না থাকা সত্ত্বেও নাম্বারটা তার মুখস্থ। কলটা কেটে দেয় সে। পরক্ষণেই আবার কল। নীহাল জিজ্ঞেস করে,
‘কে কল করছে?’
‘জারা।’
‘নাম্বার কেটে ব্লক করে দাও।’
ফারজাদ সেটাই করবে ভাবছে। সে কলটা ফের কাটার ক্ষণ মুহুর্ত পরেই জারার মেসেজ। সেখানে লেখা, “আমার ইমারজেন্সি র ক্ত লাগবে, ফারজাদ। ইট’স আর্জেন্ট।”
মেসেজ দেখে কপালে ভাঁজ পড়ে ফারজাদের। নীহালের দিকে চেয়ে বলে,
‘র ক্ত প্রয়োজন।’
দিলরুবা বেগম হকচকিয়ে বলেন,
‘মোটেও না। ঐ মেয়ের আর কোনো কথা বিশ্বাস করা যাবে না।’
দিলরুবা বেগমের গলার স্বর পেয়ে মৌমি আর প্রিয়তা তাদের কাছে আসে। জিজ্ঞেস করে,
‘কী হয়েছে, আম্মি।’
‘ঐ জারা না-কি এখন আবার রক্ত চাইছে।’
প্রিয়তা আঁতকে উঠে তা শুনে। বলে,
‘না না, একদম র ক্ত দিতে যাবেন না। নিশ্চয় এটা নতুন কোনো চাল।’
এর মাঝেই জারা কল করে আরো একবার। প্রিয়তা বলল,
‘আমাকে দিন, আমি কথা বলছি।’
ফারজাদ জিজ্ঞেস করে,
‘আপনি কী কথা বলবেন?’
‘দিন না।’
সে দিল। কল রিসিভ করল প্রিয়তা। ওপাশ থেকে শোনা গেল জারার বিচলিত সুর। সে বলছে,
‘আমার র ক্তের খুব প্রয়োজন, ফারজাদ। নয়তো আমি আমার ফ্রেন্ডকে বাঁচাতে পারব না।’
‘কেন, ব্লাড ব্যাংকে কি রক্ত নেই?’
মেয়েলী স্বর পেয়ে জারা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,
‘কে আপনি? মৌমি?’
‘না, প্রিয়তা।’
প্রিয়তার নাম শুনে রাগে শরীর রি রি করে উঠে জারার। মেয়েটা ফারজাদের কল ধরার সাহস পেল কী করে। জারা ক্ষিপ্ত সুরে বলল,
‘তুমি কেন কল রিসিভ করলে? ফারজাদ কোথায়?’
‘আসলে আমরা ঘুরতে এসেছিলাম। আর আপনি অযথা কল দিয়ে আমাদের বিরক্ত করছিলেন। ফারজাদ তো আপনার কল ধরতেই চাইছিলেন না, পরে আমি বলাতে তাও আমাকে ধরতে দিয়েছে।’
কাটা ঘা’য়ে নুনের ছিটা বোধ হয় এটাকেই বলে। জারার অন্তঃস্থল জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে যেন। সে ক্ষুব্ধ গলায় জিজ্ঞেস করে,
‘তুমি আর ফারজাদ ঘুরতে গিয়েছ?’
প্রিয়তা একবার ফারজাদের মুখের দিকে তাকায়। সে ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে। প্রিয়তা ক্ষীণ হেসে বলে,
‘জি।’
জারা রাগে সাইড টেবিলে রাখা ফুলের টবটা ভেঙে ফেলে। শব্দটা বাইরেও আসে। প্রিয়তা জিজ্ঞেস করে,
‘কিছু ভাঙলেন না-কি?’
‘এই ফুলের টবের মতো যদি তোমাকে আছাড় মেরে ভাঙতে পারতাম তবে শান্তি পেতাম খুব।’
প্রিয়তা হাসল। তার হাসি দেখে বাকি তিনজন অবাক। মৌমি কান পাতল ফোন বরাবর। প্রিয়তা বলল,
‘অত শক্তি আপনার আছে না-কি?’
বলে ফের হাসল সে। জারা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘আমার থেকে ফারজাদকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না, কেউ না।’
প্রিয়তা ছোট্ট নিঃশ্বাস ছাড়ল। বলল,
‘কেউ কারোর কাছ থেকে জোর করে কিছু কেড়ে নিতে পারে না, ম্যাডাম। যে যাওয়ার সে এমনিতেই যাবে। আপনি তাকে হাজার চেষ্টা করেও নিজের করতে পারবেন না।’
‘আমি পারব। সেই ক্ষমতা আছে আমার।’
‘ঠিক আছে, চেষ্টা করে দেখতে পারেন, অল দ্যা বেস্ট। আর আপাতত আমাদের ডিস্টার্ব করবেন না। ফারজাদের শরীরে এমনিতেই র ক্ত কম, উনি কাউকে র ক্ত দিতে পারবেন না। রাখছি।’
প্রিয়তার শেষ কথা শোনে সবাই হেসে ফেলে। ফোনটা ফারজাদকে ফিরিয়ে দেয় প্রিয়তা। ফারজাদ ফোন নিতে নিতে বলে উঠে,
‘আমার শরীরে রক্ত কম?’
‘মিথ্যে বলেছি, এত সিরিয়াস হওয়ার মতো কিছু হয়নি।’
ফারজাদ কপাল কুঁচকাল তার কথা শুনে। মৌমি আর নীহাল ঠোঁট চেপে হাসছে এখনো। দিলরুবা বেগম জিজ্ঞেস করলেন,
‘কী বলছে মেয়েটা?’
‘ফারজাদকে না-কি নিজের করেই ছাড়বে।’
‘ফারজাদ তার হওয়ার জন্য বসে নেই। ফারজাদ অন্য কারোর।’
মৌমি বুক ফুলিয়ে কথাটা বলে ভাইয়ের দিকে তাকিয়েই চুপসে গেল আবার। পরে দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,
‘না মানে, তুমিও তো ঐ জারাকে পছন্দ করো না, তাই বলছিলাম।’
ফারজাদ বিরক্ত গলায় বলল,
‘উল্টা পাল্টা কথা বলবি না, আমার পছন্দ না এসব।’
মৌমি মাথা নুইয়ে বলল,
‘আচ্ছা।’
প্রিয়তা বলল,
‘নাম্বারটা ব্লক করে দিন।’
‘হু, করেছি।’
‘আর ভুলেও উনার কোনো কথার জালে পা দিবেন না। নিশ্চয় চুল দিয়ে কিছু করতে পারছে না বলে এখন আবার র ক্ত চাইছে।’
দিলরুবা বেগমও ভীত সুরে বললেন,
‘হ্যাঁ, আমারও তাই মনে হয়।’
সবাই থমথমে মুখ করে বসে আছে। মৌমি নাক মুখ কুঁচকে সবাইকে একবার পরখ করে বলল,
‘ঘুরতে এসেও এমন মুখ করে বসে থাকলে ভালো লাগে, বলো তো?’
নীহাল বলল,
‘এটা ঠিক বলেছেন। এই সবাই সব দুশ্চিন্তা দূর করে একটু হাসো তো।’
‘হ্যাঁ, সবাই চলো আমরা ছবি তুলি। ছবিগুলো স্মৃতি হয়ে থাকবে।’
মৌমির কথা মতো সবাই দাঁড়াল ছবি তুলতে। অনেকগুলো ছবি তুলল। প্রিয়তা দিলরুবা বেগম আর মৌমির সাথে বেশ কয়টা ছবি তুলল নিজের ফোনে। গ্রুপ ছবিও তুলেছে সবাই। মৌমি বলল,
‘আপু আর ভাইয়া, তোমরা দুজন একসাথে দাঁড়াও এবার, ছবি তুলে দিই।’
প্রিয়তা অস্বস্তি নিয়ে ফারজাদের পাশে দাঁড়াল। তবে দূরত্ব রাখল বেশ। মৌমি বিরক্ত গলায় বলল,
‘মাঝখানে হাতি যাওয়ার জায়গা রেখেছ কেন? আরেকটু কাছাকাছি দাঁড়াও না।’
প্রিয়তা আরেকটু আগাল। মৌমি বলল,
‘আরো একটু।’
ফারজাদ ভ্রু কুঁচকাল। বলল,
‘থাপ্পড় খেতে না চাইলে ছবি তোল।’
মৌমি নাক ফুলিয়ে ছবি তুলে বলল,
‘হয়েছে, যাও।’
প্রিয়তা হাসল তার নাক ফুলানো দেখে। বলল,
‘তুমি আর নীহাল ভাইয়াও দাঁড়াও একসাথে।’
‘উনার সাথে কে দাঁড়াবে?’
নীহাল কপাল কুঁচকে বলল,
‘কেন, আমার সাথে দাঁড়ালে কি গায়ে ফোস্কা পড়বে?’
‘পড়তেও পারে, বলা তো যায় না।’
ফারজাদ বলে উঠে,
‘মৌমি, এটা কেমন আচরণ?’
‘ভাইয়া, তুমি শুধু আমারটাই দেখলে? উনি যে এভাবে বলছেন, সেটা দেখলে না?’
‘তুই এত কথা বলছিস কেন? ছবি তুলতে বলেছে যখন ছবি তোল।’
মৌমি ফোঁস ফোঁস করতে করতে নীহালের পাশে দাঁড়াল। প্রিয়তা হেসে বলল,
‘এবার তোমাদের মাঝ দিয়ে তো ডাইনোসোর চলে যেতে পারবে।’
‘আমি সেটাই চাই।’
মৌমি ক্ষুব্ধ গলায় জবাব দিল। ফারজাদ মা’কে বলল,
‘মেয়েটা কি পাঁজি হয়েছে দেখেছেন, আম্মি।’
দিলরুবা বেগম হেসে বললেন,
‘দুজনের মাঝে কেমন টম এন্ড জেরি সম্পর্ক দেখ, আমি কিন্তু বেশ মজা পাচ্ছি।’
ফারজাদ অবাক হয় মায়ের কথা শুনে। ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে বলে উঠে,
‘ছবি তোলা শেষ হলে এবার খেতে চলো সবাই।’
সবাই রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে যাচ্ছে। এর মাঝেই মৌমি হঠাৎ আবিষ্কার করল, তার এক কানে দুল আছে অন্যটাতে নেই। প্রিয়তা আর দিলরুবা বেগম কথা বলছেন আর হাঁটছেন। মৌমি দুল খোঁজার জন্য তাদের না জানিয়েই পূর্বের জায়গাতে আসে আবার। এদিক ওদিক অনেক খোঁজে। কিন্তু পায় না কোথাও।
তখন সন্ধ্যা নামার মুহুর্ত। চারদিকে লাল আভা। খানিক বাতাসও বইছে বোধ হয়। মৌমি মন খারাপ করে দুল খোঁজে যাচ্ছে এখনো। আচমকা তার সামনে এসে একজন দাঁড়িয়ে বলে উঠে,
‘এটা খুঁজছিলে না-কি, সুন্দরী?’
মৌমি চমকে তাকিয়ে দেখে সেই ছেলেটা, যাকে সে পানিতে ফেলে দিয়েছিল। আর তার হাতে তার’ই কানের দুল। সে বলে উঠে,
‘জি, এটা আমার; ফিরিয়ে দিন।’
ছেলেটি ঘাড় কাত করে জিজ্ঞেস করল,
‘তার কী প্রমাণ?’
মৌমি তার অন্য কান দেখিয়ে বলল,
‘এই যে দেখুন, আমার এই কানে সেইম দুলটা আছে। এটা আমার’ই। ফিরিয়ে দিন।’
‘এত সহজেই?’
মৌমি ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘মানে?’
‘দেখে মনে হচ্ছে, দুলটা স্বর্ণের; দামি জিনিস, আর দামি জিনিস পেতে গেলে তো দামি কিছু দিতে হয় তার বিনিময়ে।’
মৌমি ক্ষিপ্ত সুরে বলল,
‘আমার জিনিস আমাকে দিবেন, তাতে এত বিনিময়ের প্রসঙ্গ আসছে কোথ থেকে।’
ছেলেটা তার আপাদমস্তক পরখ করল। মৌমির এই দৃষ্টি সুবিধার মনে হলো না মোটেও। অস্থির সুরে বলল,
‘আমার দুলটা ফিরিয়ে দিন, প্লিজ।’
‘একটু রুমে চলো আমার সাথে।’
ছেলেটার ইঙ্গিত বুঝতে পেরে ভীষণ ক্ষেপল মৌমি। বলল,
‘বাজে কথা বলবেন না একদম।’
‘বললে কী করবে, সুইটহার্ট? আবার পানিতে ফেলে দিবে?’
‘না, এবার কবর খুঁড়ে মাটিতে পুঁতে দিব একেবারে।’
পেছন থেকে গলার স্বর পেয়ে মৌমি পেছনে তাকায়। প্রিয়তাকে দেখে খুশি হয় সে। ছেলেটা হেসে বলে,
‘এই তো আমার আরেক সুন্দরীও চলে এসেছে।’
চলবে…..
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/