আমার_নিঠুর_মনোহর #লেখিনীতে_জেনিফা_চৌধুরী #পর্ব_বিশ[শেষাংশ] [১৮+ এলার্ট]

0
211

#আমার_নিঠুর_মনোহর
#লেখিনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_বিশ[শেষাংশ]
[১৮+ এলার্ট]
“আমার স্বামী প্রতিদিন আমার গায়ে হাত তুলে। দেখেন, আমার গালে থা’প্পড়ের দাগ বসে আছে এখনো।”
তারিনের কথা শেষ হতেই সবাই ওর দিকে তাকালো বিস্মিত চোখে। তামজিদের বিস্ময়ের ঘোর যেনো কাটছেই না। নিজের মাথাটা দেয়ালে ঠুকে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। কে বলেছিলো এই মেয়ের সাথে কথা বাড়াতে? সবাই যখন তারিনের গালে দাগ খুঁজতে তখন তামজিদ নিজেকে শান্ত করে সন্দিহান গলায় বলে উঠল,
“কই, তোমার গালে তো কোনো দাগ নেই। বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলছো কেনো?”
তারিন থেমে গেলো। হাতটা নিজের অজান্তেই গালে চলে গেলো। এক হাত গালে দিয়ে আমতা আমতা করে বলল,
“আরে স্যার, দুইদিন আগের চিহ্ন তো চলে গেছে।”
তামজিদ এবার রাগী দৃষ্টিতে তারিনের দিকে তাকাতেই তারিন মেঁকি হাসলো। অতঃপর শান্ত বানীতে বলতে লাগলো,
“এতক্ষণ একটু আপনাদের সবাইকে এন্টারটেইনিং করার জন্য মজা করছিলাম। আমার স্বামী খুব ভালো। আমার শশুড় বাড়ির সবাই খুব ভালো। তাদের জন্য আমি নিজের স্বপ্ন পূরণ করার সুযোগ পাচ্ছি। আমার মতো খুব কম মেয়ে আছে যাদের ভাগ্যে এত ভালো একটা শশুড় বাড়ি জুটে। এদিক থেকে আমি খুব ভাগ্যবতী।”
তামজিদের মুখে এতক্ষণে হাসি ফুটলো। তারিন সে হাসি দেখে নিজেও হাঁফ ছাড়লো। কিন্তু পুনরায় মুখ অসহায় করে দুষ্টুমির ছলে বলে উঠল,
“তবে সত্যি স্যার, আমার স্বামী বুইড়া বেডাই। আমার থেকে গুনে গুনে কমপক্ষে ১৩বছরের বড়। এখন আপনিই বলেন, সে কি বুইড়া বেডা না?”
তামজিদের মুখটা পুনরায় চুপসে গেলো। তারিন ঠোঁট চেপে হাসি নিয়ন্ত্রণ করলো। তামজিদ এবার জোরালো শব্দে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“চুপচাপ বসো। শিট ডাউন। এই নেক্সট কে আছো? দাঁড়াও।”
তারিন বসে পড়লো ঠিকই। কিন্তু তামজিদের ফেস রিয়েকশন দেখে খুব বেশি হাসি পাচ্ছে। ক্লাস শেষ হতেই তামজিদ যাওয়ার সময় তারিনের দিকে তাকিয়ে ইশারায় বুঝিয়ে গেলো, ‘বাসায় চলো দেখাচ্ছি মজা’। তামজিদ চলে যেতেই তারিন ফিক করে হেসে দিলো। প্রথম দিন প্রতিটা ক্লাসেই পরিচয় পর্ব হয়েছে। ক্লাস শেষ করেই তামজিদ রাস্তায় এসে দাঁড়ালো। কিছুক্ষণ পর ওর সামনে তামজিদ গাড়ি নিয়ে এসে থামতেই তারিন দেরি না করে উঠে পড়ল। গাড়িতে বসতেই তামজিদের রাগী চেহারাটা দেখে তারিনের বেশ হাসি পেলো। তবুও নিজের হাসি নিয়ন্ত্রণ করে, কিছু না জানার ভান করে জিজ্ঞেস করলো,
“মাস্টার মশাই! ও মাস্টার মশাই! শুনছেন?”
তামজিদ চুপ করে রইলো। উত্তর দিলো না। কত্ত বড় সাহস তামজিদকে বুড়া বেডা বলে! আবার বলে কিনা তামজিদ বউ নির্যাতন করে। কত্ত বড় অপবাদ দিয়েছে! ভাবা যায়? তারিন এবার চিৎকার করে ডেকে উঠল,
“মাস্টার মশাই, শুনছেন?”
তামজিদ হঠাৎ জোরে আচমকা গাড়ি ব্রেক কষলো। আচমকা তাল সামলাতে না পেরে তারিন ঝুঁকে পড়েছে। মাথায় যে বড্ড জোরে আঘাত হানবে তা টের পেয়েই ভয়ে চোখ, মুখ বুঝে ‘মা গো’ বলে চিৎকার করে উঠলো। কিন্তু কিছুক্ষণ যেতেই যখন দেখলো ব্যাথা পেলো না৷ তখন চোখ খুলে দেখলো তামজিদের হাত তারিনের কপাল ছুঁয়ে আছে। তারিন নিজেকে সামলে উঠে, তড়িৎ গতিতে বলে উঠল,
“আরে মে’রে ফেলবেন নাকি?”
তামজিদ ও বেশ হাসি খুশি ভাবে উত্তর দিলো,
“অবশ্যই! মে’রেই তো ফেলবো।”
তারিন চোখ বড় বড় করে বললো,
“কিহ!”
তামজিদও সুর মিলে বলল,
“কিহ, না জ্বি।”
তারিন কোমরে হাত রেখে কপাল কুঁচকে বলে উঠল,
“আমাকে মে’রে ফেলে আরেকটা বিয়ে করার চিন্তা ভাবনা করছেন নাকি আবার ওই দিশা পেত্নীকে ফিরে আনার প্লেন করছেন? কোনটা?”
তামজিদের রাগটা তরতর করে বাড়লো। এই মেয়েটা এত বকবক করে কেনো? সেই প্রথমদিন থেকে কেমন ফড়ফড় করে কথা বলে। তামজিদ রাগী স্বরে বলল,
“চুপ করো। কিছুক্ষণ আগে না বললে, তোমার স্বামী তোমাকে নির্যাতন করে? তো সেটা সত্যি করতে হবে না?”
তারিনের মুখটা চুপসে গেলো। আমতা আমতা করে বলল,
“আমি তো মজা করছিলাম।”
তামজিদ এবার তারিনকে জব্দ করার সুযোগ পেলো। এক সেকেন্ডের ব্যবধানে তারিনের দিকে বেশ খানিকটা ঝুঁকে আসলো। তারিন আর তামজিদের নাকের মধ্যকার দূরত্ব দুই/তিন ইঞ্জি হবে হয়তো! তারিনের বুকের ভেতরটা ধুকপুক করে উঠলো। হৃদযন্ত্রটা শব্দ করে বাজতে শুরু করলো। গলা শুকিয়ে আসছে। এই প্রথম তামজিদ নিজের থেকে তারিনের এতটা কাছে এসেছে৷ তারিনের লজ্জা পাওয়া মুখটা দেখে তামজিদ ঠোঁট টিপে হাসলো। তারিনের লজ্জাটা দ্বিগুণ করে দেওয়ার জন্য বলে উঠল,
“আমি তোমার স্বামী, তাই না?”
তারিন কোনোরকমের উত্তর দিলো,
“হ্যাঁ।”
“আমি বুইড়া বেডা?”
তারিন ঝোঁকের বশে বলে ফেললো,
“হ্যাঁ।”
কথাটা বলেই জিভে কামড় দিয়ে তামজিদের চোখের দিকে তাকালো। তামজিদের রাগান্বিত চাহনী চোখে পড়তেই মেঁকি হাসলো। হাস্যজ্বল স্বরেই বললো,
“আরে না। কে বলেছে এ কথা? যে বলছে সে নিশ্চিত অন্ধ। নয়তো আপনার মতো একজন হ্যান্ডসাম মানুষকে কেউ বুইড়া বলে? ছিহ! কি লজ্জা! কি লজ্জা!”
তারিনের পাম শুনে তামজিদ হাসবে না কাঁদবে ভেবে পাচ্ছে। তবুও নিজেকে শান্ত রেখে তারিনের চোখে চোখ রাখলো। বললো,
“না, না। আমি আসলেই বুড়ো। আর বুড়ো মানুষের মধ্যে প্রেম বেশি থাকে জানো তো? আমারো এখনো অনেক প্রেম প্রেম পাচ্ছে। চলো না একটু প্রেম করি। বাড়িতে যাওয়ার জন্য তর সইছ না। এখানেই তোমাকে আদর করার বড্ড ইচ্ছে জাগছে। চিন্তা করো না কালো গ্লাস আছে, বাইরে থেকে কেউ কিছু দেখবে না।”
তামজিদের মুখে এমন কথাবার্তা শুনে তারিনের মাথা ঘুরতে শুরু করছে। তামজিদ এসব কথা বলছে? তারিন কি স্বপ্ন দেখছে? নাকি কল্পনা? নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। বিস্ময়ে চোখের পাতা ফেলতে ভুলে গেলো। তারিনের এমন মুখ দেখে তামজিদ কিছুতেই নিজের হাসি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। তবুও খুব কষ্ট নিয়ন্ত্রণ করলো। তারিন লজ্জায় কোথায় মুখ লুকাবে খুঁজে পাচ্ছে না। ইচ্ছে করছে মাটি খুঁড়ে ভেতরে ঢুকে যেতে। তারিন দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। তামজিদ এবার আরো একটু ঝুঁকে আসতেই তারিন চোখ বন্ধ করে নিলো। হাত দুটো নিজের অজান্তেই তামজিদের শার্ট খামচে ধরলো। তারিন এই মুহূর্তে চোখ বন্ধ করে আছে। তামজিদ এক নজরে তারিনের মুখপানে তাকিয়ে আছে। এই প্রথম ও তারিনকে এতটা কাছের থেকে নিঁখুত ভাবে দেখছে। তারিনের ঠোঁট দুটো লজ্জায় তিরতির করে কাঁপছে। গোলাপি বর্ণের ঠোঁট জোড়ার নিচে কালো তিলটা বড্ড আকর্ষণীয়। তামজিদ এতক্ষণ মজার ছলে তারিনের কাছে আসলেও এবার আর ওর দূরে যাওয়ার সাধ্য নেই। তারিনের ঠোঁট জোড়া ছুঁয়ে দেখার অদম্য এক ইচ্ছে জেগেছে মনের কুঠুরিতে। কিছুতেই ইচ্ছাটাকে দমানো সম্ভব হচ্ছে না। তারিনের লজ্জামাখা মুখটা তামজিদকে বড্ড কাছে টানছে৷ তামজিদ আলতো করে তারিনের নাকে নাক ঘষলো। তারিন অজানা, অচেনা অনুভূতিতে সিক্ত হয়ে তামজিদের শার্ট আরো শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো। তামজিদ এক হাত তারিনের ঘাড়ের পাশে রাখতেই তারিন নড়েচড়ে বসলো। তামজিদ নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না। ইচ্ছাটা পূরণ করার বাসনায় তারিনের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবালো। গভীর ভাবে ছুঁয়ে দিলো ঠোঁটের নিচে থাকা তিলটা কে। তারিন লজ্জায় তামজিদের ঘাড়ে মুখ লুকালো। শ্যাম্পু করা সিল্কিং চুলের ঘ্রান তামজিদের নাকে বিধলো। তামজিদও সেই চুলপানে নিজের মুখ ডুবালো। দুটো আত্মা আজ শান্ত। তাদের মস্তিষ্ক জুড়ে প্রেমের ছড়াছড়ি। তারিনের মনে হচ্ছে ওর হৃদপিন্ড টা এক্ষুনি বেরিয়ে আসবে। আজ কি তারিনের স্বপ্নের দিন ছিলো? কি থেকে কি হয়ে গেলো ভাবতেই পারছে না। তামজিদ সজ্ঞানে তারিনকে ছুঁয়েছে? ভাবতে পারছে না তারিন। তামজিদ চাইলেও তারিনের থেকে দূরে সরে যেতে পারছে না৷ কোনো এক অজানা বাঁধনে বাঁধা পড়েছে গেছে। বুকের ভেতরে নতুন কিছু অনুভূতির টের পাচ্ছে তামজিদ। তবে কি তামজিদ তারিনকে ভালোবাসতে শুরু করেছে? ভেবেই এক ঝটকায় দূরে সরে আসলো তামজিদ। তামজিদকে এভাবে দূরে সরে যেতে দেখে তারিন বেশ অবাক হলো। কি হলো? তবে কি তামজিদ ঝোঁকের বশে তারিনের কাছাকাছি এসে বলে এভাবে অনুশোচনায় দূরে সরে গেলো? নাকি অন্য কিছু?

#চলবে

[আপনাদের কি মনে হয় বলুন তো? দয়া করে নিজেদের মনের ভালো, খারাপ দুই অনুভূতি, ও মতামত কমেন্টে জানাবেন। তামজিদ আর তারিনের মোমেন্টটা কেমন লেগেছে? এমন কিছু সুন্দর মুহূর্ত চান নাকি? ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here