#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_২৬
জাহিন সবে মাত্র চার কদম পেরিয়েছে বাড়ির ভেতরে এসে এর মাঝে ফোনের রিং টোন বেজে উঠে। এই সময় শারাফকে ফোন করতে দেখে জাহিন কিছুটা অবাক হয়। তবে এত কিছু না ভাবে ফোন ধরে বলে।
“হুম শারাফ বল?”
“ভাই তুমি কই?”
“এই তো মাত্র বাড়িতে আসলাম। কেন কি হয়েছে?”
“ভাই তোমাকে একবার থানায় আসতে হবে।”
জাহিন ভড়কালো থানায় যাওয়ার কথা শুনে। হঠাৎ থানায় যাওয়ার কথা বলছে কেন এই ছেলে? কার কি হয়েছে? জাহিন ভ্রু কুঁচকে বলে, “হঠাৎ থানায় আসতে বলছিস কেন?”
শারাফ আমতা আমতা করে বলে, “আসলে ভাই নুহাশকে এরেস্ট করা হয়েছে।”
জাহিন উত্তেজিত হয়ে বলে, “মানে নুহাশকে এরেস্ট করা হয়েছে মানে? ও তো।”
“ভাই তুমি থানায় আসো ফোনে এত কথা বলা সম্ভব নয়।”
বলেই ফোন কেটে দেয় শারাফ। জাহিন স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। নিজের কানকে যেন এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না যে নুহাশ এরেস্ট হয়েছে। কিন্তু ছেলেটা এটুকু সময়ের মাঝে কি এমন করল যে এরেস্ট হল?
ছেলেকে এভাবে স্তব্দ হয় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জোহরা বেগম বলেন, “এই জাহিন কি হলো? আর নুহাশ এরেস্ট হয়েছে মানে?”
জাহিন বিড়বিড় করে বলে, “আমায় এক্ষুণি থানায় যেতে হবে।”
মায়ের প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়েই জাহিন দৌঁড়ে বাড়ি থেকে বের হতে নিবে তখনই রিহান সদর দরজা পেরিয়ে ভেতরে ঢুকে। রিহান সবে বাড়িতে এসে পৌঁছেছে। ভাইকে এভাবে দৌঁড়ে আসতে দেখে রিহান উদগ্রীব হয়ে বলে।
“ভাইয়া কি হয়েছে এভাবে দৌঁড়াচ্ছ কেন?”
জাহিন উত্তেজিত হয়ে বলে, “আমার সাথে চল রিহান।”
“কিন্তু কোথায় যাব?”
“তুই চল আগে আমার সাথে।”
রিহান আর জাহিন একসাথে বেরিয়ে পড়ল। দূরে দাঁড়িয়ে থাকা অয়ন্তি চিন্তিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এখন আবার কি বিপদ হল? তার এই বাড়িতে আসার পর থেকেই একটা না একটা বিপদ হয়েই যাচ্ছে। শেখ রেজাউল আর রোকেয়া বানু ত্রস্ত পায়ে হেঁটে আসেন। রেকেয়া বানু উৎকণ্ঠা হয়ে বলেন।
“কি হয়েছে বউমা?”
“জানি না মা কি হয়েছে? শুধু বুঝতে পারলাম নুহাশকে পুলিশ এরেস্ট করেছে।”
রেকেয়া বানু দিশেহারা গলায় বলেন, “কি বলছো তুমি বউ মা আমার নুহাশ দাদু ভাইকে এরেস্ট করেছে মানে?”
বেশি উত্তেজিত হয়ে যাওয়াতে রেকেয়া বানু মাথা ঘুরে পড়তে নিলেই পাশে থাকা স্বামী নামক বট বৃক্ষের মতো আগলে রাখা মানুষটা স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে বলেন, “রোকেয়া তুমি ঠিক আছো? বসো এখানটায়।”
স্ত্রীকে সোফায় বসিয়ে দেন শেখ রেজাউল সাহেব। অয়ন্তি দৌঁড়ে গিয়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে এসে বলে, “দাদু আপনি পানিটা খান ভালো লাগবে।”
রেকেয়া বানু রেগে বাজখাঁই কন্ঠে বলে উঠেন, “এই মেয়েকে আমার চোখের সামনে থেকে দূরে সরাও ও এই বাড়িতে আসার পর থেকেই একটার পর একটা বিপদ হয়েই যাচ্ছে। বিপদ যেন পিছু ছাড়ছে না আমাদের।”
অয়ন্তি কথাটা শুনা মাত্রই আনমনে দু কদম পিছিয়ে যায়। জোহরা বেগম অয়ন্তির কাছ থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে বলেন, “মা আপনি কি বলছেন এসব নুহাশ এরেস্ট হয়েছে তাতে অয়ন্তির দোষ কোথায়?”
এমন সময় আহান ট্যাব হাতে নিয়ে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামে তার পেছন পেছন আসছেন রুনা আক্তার। আহান নিচে নেমেই হাঁপাতে হাঁপাতে বলল।
“চাচী নুহাশ ভাই নাকি একটা মেয়ের সাথে অসভ্যতামি করেছে আর তার জন্য নাকি লোকজনরা নুহাশ ভাইকে মেরে থানায় নিয়ে গেছে।”
আহানের কথাটা বলার সাথে সাথে বিকট একটা আওয়াজ হয়। আওয়াজের উৎস কোথায় সেটা দেখার জন্য কিচেনের সামনের দিকে তাকাতেই আতকে উঠে সকলে। জারা দাঁড়িয়ে আছে তার পায়ের উপরে গরম কফির মগ পড়েছে। গলায় ঝুলছে হেডফোন, জ্যাকেটেরে পকেটে ফোন। জারা ফুল সাউন্ড দিয়ে গান শুনছিল আর নিজের জন্য কফি বানাচ্ছিল। কফি বানিয়ে কিচেন রুম থেকে ড্রয়িং রুমে এসে দাদুর এমন অবস্থা দেখে কান থেকে হেডফোন খুলে কিছু বলতে যাবে সাথে সাথে আহান দৌঁড়ে এসে তিক্ততায় ভরা কথাটা বলে আর তার পরেই ঘটে যায় দুর্ঘটনাটা। জারার পায়ে গরম কফি পড়েছে তাতে ওর কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই সে এক দৃষ্টিতে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে। টাটকা গরম কফি আর ভারি কফির মগ নিজের পায়ের উপরে যেভাবে পড়েছে তাতে জারা ব্যথায়, যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠার কথা ছিল কিন্তু জারা পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে রইল। অয়ন্তি দৌঁড়ে জারার কাছে গিয়ে শংকিত গলায় বলে।
“জারা এটা কি করলে তুমি? তোমার পা তো লাল হয়ে গেছে।”
পরপর জোহরা বেগম আর রুনা আক্তার দৌঁড়ে আসেন। মেয়েকে এভাবে পাথরে মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জোহরা বেগম ধরা গলায় বলেন, “এই জারা কি হয়েছে মা তোর?”
জারার মুখে কোনো কথা নেই। তার কানে এখনো বেজে যাচ্ছে আহানের বলা কথাটা। তার নুহাশ ভাই একটা মেয়ের সাথে অসভ্যতামো করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে জনগণের কাছে এই কথাটা যেন তার বিশ্বাসই হচ্ছে না। জারা তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সবাইকে উপেক্ষা করে আহানের দিকে এগিয়ে গিয়ে ঠান্ডা গলায় বলে।
“ট্যাবটা দে।”
আহান কোনো অশান্তি করল না চুপচাপ বোনের হাতে ট্যাবটা দিয়ে দিল। অন্য সময় হলে জীবনেও নিজের ট্যাবটা জারাকে দিত না কিন্তু এখন পরিস্থিতি অন্যরকম। জারা অন লাইনে ঢুকে নিউজফিড স্ক্রল করতে লাগল। সারা নিউজফিড জুড়ে নুহাশের নিউজ। একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে নুহাশকে জনগণরা মিলে হেনস্তা করছে। জারা কমেন্ট বক্স গিয়ে সবার কমেন্ট পড়তে শুরু করল। কেউ বলছে “ছি ছি এসব রাজনীতি করা ছেলেরা এমনই করে আমার আগে থেকেই জানা ছিল। এসব ছেলেদের গণ ধোলাই দেওয়া উচিত।” কেউ বলছে “ভাল মানুষীর মুখোশের আড়ালে এই ছিল তাহলে এদের অসল পরিচয়। এদেরকে পুলিশের হাতে নয় এদেরকে মেয়েদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হোক তারপর মেয়েরা এর শোধ তুলে নিবে। জা*নোয়ার একটা।” আরো অনেক বাজে বাজে কমেন্ট করেছে যেগুলা জারার পড়তে রুচিতে বাঁধছে। জারা ট্যাবটা আহানের হাতে দিয়ে দেয় আর কমেন্ট পড়ার শক্তি পাচ্ছে না সে। চোখ দুটো জলে টলমল করছে আর এক মুহূর্ত দেরি না করে গরমে ঝলসে যাওয়া পা নিয়ে দৌঁড়ে নিজের ঘরে চলে যায়। বাড়ির সবাই হতবাক হয়ে জারাকে দেখে গেল। হঠাৎ করে মেয়েটার হলো কি? অয়ন্তিও দৌঁড়ে জারা জারা বলতে বলতে জারার পেছন পেছন গেল।
বাড়ির প্রবীণ পুরুষ সদস্যরা বাড়িতে নেই। জোহরা বেগম তাড়াতাড়ি করে স্বামীকে ফোন করে সবটা খুলে বলেন। কিন্তু দুই ভাই গেছে শহরের বাইরে বিজনেসের কাজে আসতে মিনিমাম রাত দশটা তো বাজবেই।
_______
রিহান গাড়ি ড্রাইভ করছে যতটা জোরে গাড়ি ড্রাইভ করা যায় ততটাই জোরে ড্রাইভ করছে। জাহিন নেহালকে ফোন করেছে আগে নুহাশের জামিনের ব্যবস্থা করতে হবে পরেরটা পরে দেখা যাবে। আর এটা জাহিন সিউর হয়ে গেছে নুহাশকে এই কেসে যে ইচ্ছে করে ফাঁসিয়েছে। নেহাল ফোন ধরতেই জাহিন বলে।
“কোথায় তুই? বাড়ি পৌঁছে গেছিস?”
“না আর কিছুক্ষণের মাঝে পৌঁছে যাব।”
“গাড়ি ঘুরিয়ে থানায় আনায়।”
নেহাল গাড়িটা এক সাইডে থামিয়ে চিন্তিত হয়ে বলে, “থানায় কেন?”
“নুহাশকে জামিন করাতে হবে।”
“মানে নুহাশ তো।”
“ওকে সে*ক্সচুয়াল হ্যারেসমেন্টের কেসে ফাঁসানো হয়েছে।”
“কিভাবে?”
“জানি না আমি। আমি থানায় যাচ্ছি তুই ওর জামিনের ব্যবস্থা কর প্লিজ।”
“কিন্তু এত তাড়াতাড়ি কি করে জামিনের ব্যবস্থা করব?”
“আমি কিছু জানি না তুই যে করেই হোক একটা ব্যবস্থা কর প্লিজ।”
“ঠিক আছে আমি দেখছি।”
বলেই ফোন কেটে দেয় নেহাল। নেহাল গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে চলল নিজের অফিসে। ওখানে গিয়ে নুহাশের জামিন পাওয়ার জন্য আগে রসিদ তৈরি করতে হবে তারপর তা কোর্টে নিয়ে সেটা মঞ্জুর করে তারপর থানায় যেতে হবে।
_______
তিন জন পুরুষ মানুষ বসে আছে ত্রিভুজ আকারে ফেলে রাখা তিনটা সিঙ্গেল সোফায়। দুই জন পুরুষ পঞ্চান্নের ঊর্ধ্বে বয়স তো আরেকজন পঁচিশ থেকে ছাব্বিশ বছরের বয়সের এক যবুক। যবুকটি পায়ের পা তুলে ফোন টিপছে তার সামনে যে বয়স্ক দুজন মানুষ বসে রয়েছে তাতে তার কোনো প্রকার ভ্রুক্ষেপ নেই। বয়স্ক দুজন পুরুষের মাঝ থেকে একজন তিরিক্ষি মেজাজে বলেন।
“তোমার প্ল্যান তো ফেইল হয়ে গেল।”
যুবকটি ফোনের দিকে দৃষ্টি রেখেই শান্ত গলায় বলল, “ফেইল কোথায় দেখলেন আমার প্ল্যান তো সাকসেসফুল হল শুধু জাহিনের জায়গায় নুহাশ ফেঁসে গেছে।”
মধ্যবয়স্ক লোকটি কপট রাগ দেখিয়ে বলল, “আমরা নুহাশকে নয় জাহিনকে ফাঁসাতে চেয়েছিলাম।”
যুবকটি মধ্যবয়স্ক মানুষটির দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল, “কথায় আছে কান টানলে মাথা আসে। জাহিনের কান হচ্ছে নুহাশ। তো নুহাশের কান টানলে মাথা আপনাআপনি আসবে। মাথা আসার ব্যবস্থা আপনার লোকজনকে বলেন করে দিতে তাহলেই তো ল্যাটা চুকে যায়। আর আমি ছাড়া আপনি অচল মেয়র খলিল সাহেব। ওই দিনের অরহান ফাউন্ডেশনে আগুনটা কিন্তু আমি লাগাতেই আপনাকে সাহায্য করেছি। আমি ওই দিকের সব রকমের খবরাখবর দিলে তারপর আপনি আপনার চাল চালতে পারেন।”
খলিল তলুকদার একটু নড়েচড়ে বসে ওনার পাশে থাকা মধ্য বয়স্ক লোকটির দিকে তাকাতেই লোকটি বলে উঠে, “চিন্তা করবেন না মেয়র সাহেব এবারের নির্বাচনে আপনিই জিতবেন। পারলে রাতারাতি টাকা দিয়ে ভোট কিনে আপনাকে জিতিয়ে দিব আমি।”
এর মাঝে যবুকটি বলে উঠল, “আমাকে যেতে হবে এবার কারণ এই দুঃখে তো আমাকেও একটু শামিল হতে হবে নাকি। আপন মানুষ যদি এমন ভারাক্রান্ত সময়ে না পাশে থাকে তাহলে কিসের আপন মানুষ।”
কথাটা বলেই চলে গেল যবুকটি। খলিল তালুকদারের পাশে থাকা মধ্যবয়স্ক লোকটি বলল, “ও নাকি আপন মানুষ। ঘরের শত্রু বিভীষণ একটা।”
খলিল তালুকদার রাশভারি গলায় বলল, “এই বিভীষণকেই সবসময় আমার পাশে চাই চেয়ারম্যান সাহেব।”
________
নুহাশ আগের ন্যায় বসে রয়েছে। তবে চোয়াল শক্ত রেখে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে। কানের মাঝে তিক্ততাময় কথা গুলা মনে হচ্ছে কেউ জোর করে ঠেলে দিচ্ছে। নুহাশ টেবিলের উপরে থাকা পানির বোতলটা হাতে নিয়ে ছুঁড়ে মারে দেয়ালে সাথে সাথে শব্দ করে বোতলটা নিচে পড়ে। নুহাশ দু হাত দিয়ে নিজের উসকোখুসকো হয়ে থাকা চুল গুলা আঁকড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে নেয় ভেসে উঠে রাতের আঁধারের কয়েক প্রহর আগে ঘটে যাওয়া বিভীষিকাময় ঘটনাটা ।
গাড়ির টায়ার চেঞ্জ হওয়ার পর নুহাশ গাড়ি ড্রাইভ করে অর্ধেক রাস্তায় আসতেই হঠাৎ করেই গাড়ির সামনে একটি মেয়ে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে। নুহাশ সাথে সাথে গাড়ি ব্রেক করাতে মেয়েটি এ যাত্রায় বেঁচে যায়। এ রাস্তায় দিয়ে সচরাচর বেশি গাড়ি চলফেরা করে না হাতে গুনা পাঁচ থেকে ছয়টা গাড়ি চলতে দেখা যায়। মেয়েটি দৌঁড়ে গাড়ির কাছে আসে নুহাশ গাড়ির কাঁচ নামিয়ে কপট রাগ দেখিয়ে বলে।
“এভাবে কেউ গাড়ির সামনে আসে যদি এক্সিডেন্ট হতো তখন কি হত?”
মেয়েটি ক্লান্ত গলায় বলে, “সরি ভাইয়া যতগুলা গাড়ি গিয়েছে হাতের ইশারা করে তাদের কাছে লিফট চেয়েছি কিন্তু গাড়ি থামায় নি। তাই বাধ্য হয়ে আপনার গাড়ির সামনে চলে এসেছি।”
নুহাশ বুঝতে পারল মেয়েটি বিপদে পড়েছে তাই এভাবে হয়ত গাড়ির সামনে চলে এসেছে, “কোথায় যাবেন আপনি?”
“এই তো সামনের কলেজ রোডে। প্লিজ আমায় একটু লিফট দিবেন ভাইয়া। আমার অসুস্থ মা বসায় একা।”
নুহাশ কিছু একটা চিন্তা করে বলে, “ঠিক আছে উঠুন।”
“ধন্যবাদ অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।”
নুহাশ গাড়ি থেকে নেমে পেছনে দরজা খুলে দিতেই মেয়েটি আমতা আমতা করে বলে, “আমি সামনের সিটে বসি।”
“সামনের সিটে বসবেন?”
“জি।”
“আচ্ছা বসুন গিয়ে।”
নুহাশ গাড়ি ড্রাইভ করা শুরু করল। কিন্তু কিছু দূর যেতেই আকস্মিক মেয়েটি চেঁচিয়ে বলা শুরু করল, “প্লিজ আমাকে কেউ বাঁচান এই অসভ্য লোকটার হাত থেকে। এই অসভ্য লোকটা আমাকে ব্যবহার করতে চাইছে প্লিজ কেউ বাঁচান আমাকে।”
নুহাশ মেয়েটির কথা শুনে হতবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে বলে, “কি বলছেন আপনি এসব? আমি আপনাকে কখন!”
নুহাশের কথার কোনো উত্তর না দিয়েই মেয়েটি আবারো চেঁচিয়ে বলা শুরু করল, “দয়া করে আমাকে কেউ এই জা*নোয়ারটার হাত থেকে বাঁচান প্লিজ।”
নুহাশ না চাইতেই গাড়ি থামাতে বাধ্য হল। মেয়েটা যাতা বলে চিৎকার চেঁচামেচি করেই যাচ্ছে আর তার উপরে হঠাৎ করে কোথায় থেকে এত মানুষ এসে জড়ো হয়ে গেছে তার গাড়ির সামনথ। মেয়েটি গাড়ি থেকে নেমে দৌঁড়ে লোক গুলার কাছে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে।
“প্লিজ বাঁচান আমাকে, ওই লোকটা আমার সাথে।”
বলেই কান্নার গতি বাড়িয়ে দিল। নুহাশ গাড়ি থেকে নামতেই দুই তিন জন লোক এসে আকস্মিক নুহাশের কলার ধরে বলে, “এই কু*ত্তার বাচ্চা মেয়েদের সাথে অসভ্যতামো করিস।”
নুহাশ লোক গুলা কে বুঝানোর স্বরে বলল, “বিশ্বাস করুন মেয়েটা মিথ্যা কথা বলছে আমি তো ওনাকে লিফট দিয়েছিলাম।”
“এই শালা চুপ কর লিফট দেওয়ার নাম করে মেয়েদের হ্যারেস করা। চল তোকে থানায় নিয়ে যাই।”
এর মাঝে একজন লোক বলে উঠে, “আরে এ তো নুহাশ রহমান জননেতা জাহিনের সাথে যে সবসময় থাকে। ছিহ ছিহ এরা জনগণের সাহায্যের নাম করে এসব করে বেড়ায়। না জানি ওই জননেতা জাহিন কি করে বেড়ায়? আবার সে নাকি শুনলাম মেয়র পদে দাঁড়াচ্ছে।”
নুহাশ চিৎকার করে বলে উঠে, “একদম আমার ভাইয়ের নামে উল্টাপাল্টা কথা বলবেন না।”
“এই শালা চুপ কর অপরাধ করে আবার বড় বড় ভাষণ দিচ্ছিস। সব জায়গাতে তোর ভাষণ চলবে না। চল তোকে তোর মামার বাড়ি নিয়ে যাই।”
নুহাশকে নিয়ে থানায় আসল। থানার কর্মরত লোকজন কিছু বোঝার তারা সোজা নুহাশকে নিয়ে এসআই এর রুমে নিয়ে যায়। শারাফ ফোনে একটা কেস নিয়ে কথা বলছিল হঠাৎ করে বন্ধুকে এভাবে দেখে হতভম্ব হয়ে যায় আর যখন নুহাশের করা কাজটা শুনতে পারল তখন যেন বিস্ময়ের শেষ চূড়ায় পৌঁছে যায়। শারাফ অসহায় নু্হাশের দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে। মানুষজন নানা ধরণের কথা বলে যাচ্ছে প্রাণের বন্ধুর নামে। এক সময় শারাফ এসব সহ্য করতে না পেরে টেবিলের উপরে পুরুষালী শক্ত হাতের তাবা মেরে গগন কাঁপিয়ে চিৎকার বলে।
“স্টপ ইট! চুপ করুন আপনারা সবাই চুপ করুন। থানাটা কি মাছের বাজার পেয়েছেন যে যেভাবে পারছেন চিৎকার চেঁচামেচি করে যাচ্ছেন। সবাই এই মুহূর্তে থানা থেকে বেরিয়ে যান আর না হলে সব কয়টাকে লাকআপে ভরে দিব। আর ভিকটিম কোথায়? তাকে নিয়ে আসুন এখানে, আপনাদের শুকনো কথায় আমি কাউকে এরেস্ট করতে পারব না। ভিকটিম এসে নিজের মুখে স্টেটমেন্ট দিবে তারপর আমি এর অ্যাকশন নিবো।”
জনগণের মাঝ থেকে একজন বলে, “অবশ্যই ভিকটিম আছে আমাদের সাথে তাকে আমরা নিয়ে আসছি।”
মেয়েটিকে আনা হল থানার ভেতরে এতক্ষণ মেয়েটি বাইরে ছিল। মেয়েটি ভেতরে আসার পরপরেই একজন লোক গিয়ে তাকে কানে কনে কিছু একটা বলে গেল যেটা শারাফ তীক্ষ্ণ চোখে দেখেছে। মেয়েটি এসে শারাফের সামনের চেয়ারে বসল। কিন্তু থানার ভেতর থেকে এখনও কেউ বের হয় নি। শারাফ চেয়ারের বসতে বসতে কনস্টেবল হান্নান করিমকে হুকুম করে সবাইকে থানার ভেতর থেকে বের করে দিতে। সবাই চলে গেল রয়ে গেছে শুধু শারাফ আর মেয়েটি। শারাফ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে মেয়েটিকে প্রশ্ন করল।
“নাম কি আপনার?”
মেয়েটি ঢোক গিলে বলল, “রুমানা রুমা।”
শারাফ টেবিলের উপরে দু হাত রেখে গম্ভীর গলায় বলল, “তো মিস রুমা লোকটি কানে কানে আপনাকে কি বলে গেল?”
রুমা আতকে উঠে শারাফের দিকে তাকাল। আমতা আমতা করে বলল, “কোন লোকটি?”
“ওই যে রুমের ভেতরে ঢোকার সময়।”
“ও ওনি ভয় পেতে না করেছে আমাকে।”
শারাফ মাথা দুলাতে দুলাত বলল, “আচ্ছা ওনি ভয় পেতে না করেছে আপনাকে। তা ওনি কি আপনার পরিচিত কেউ?”
“না।”
“পরিচিত না হয়ে এত চিন্তিত আপনাকে গিয়ে। আজকালকার যুগে এমন মানুষও হয়।”
রুমা মেয়েটি চুপ করে রইল। শারাফ পুনরায় বলল, “আচ্ছা আপনি কি করেন?”
“পড়াশোনা করি।”
“ওও তা আপনি সন্ধ্যা বেলা কোথা থেকে আসছিলেন?”
“আসলে আমি আমার অসুস্থ মায়ের জন্য ঔষধ কিনতে গিয়েছিলাম কিন্তু গাড়ি পাচ্ছিলাম না তখন ওনার কাছে আমি লিফট যাই আর ওনি আমাকে সাহায্য করার নাম করে কুপ্রস্তাব দিচ্ছিল আর বাজে ভাবে আমার শরীরের স্পর্শ করেছিল। আর তখন আমি সুযোগ বুঝে চিৎকার করে সাহায্য চাই সবার কাছে।”
বলেই কান্না শুরু করে দিল। শারাফ টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বলল, “ঠিক আছে আপনার কেসটা আমি নিলাম। এর শেষ পর্যন্ত আমি যাব আপনি চিন্তা করবেন না। তবে আপনাকে আমাদের কোন দরকার পারলে প্লিজ থানায় এসে হাজির হবেন।”
রুমা হতবাক হয়ে বলে, “কি আমাকে থানায় আসতে হবে।”
শারাফ ঠোঁটের কোণে হাঁসি রেখে বলে, “অবশ্যই আসতে হবে।”
“আচ্ছা এবার তাহলে আমি আসি।”
“যাওয়ার আগে আপনার ফোন নাম্বারটা দিয়ে যান।”
রুমা ফোন নাম্বারটা দিয়ে চলে যেতে নিবে তখনই শারাফ রাশভারি গলায় বলে উঠল, “ও আরেকটা কথা সাবধানে যাবেন নুহাশের থেকেও আরো বড় জা*নোয়ার হয়ত আপনার জন্য ওত পেতে বসে রয়েছে। বলা যায় না কখন কোথায় আপনার উপরে হামলা হতে পারে।”
রুমা ভয় পেল শারাফের কথা শুনে। রুমা চলে যেতেই শারাফ জাহিনকে ফোন করে থানায় আসতে বলে।
#চলবে
গত পর্বে একটা জায়গাতে আমি ভুল করে ফেলছি পৌরসভা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হয় না বরং অনেক গুলা ওয়ার্ড নিয়ে পৌরসভা গঠিত হয়। এই ভুলটা জন্য সরি।