হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_৩০

0
618

#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৩০

জাহিনের বাড়ি ফিরতে ফিরতে ঘড়ির কাটা প্রায় বরোটার ঘরে পৌঁছে গেছে। নুহাশ অনেক আগেই বাড়ি ফিরে এসেছে কিন্তু জাহিন কোন এক কাজের দোহাই দিয়ে বাড়িতে পরে আসবে বলে নুহাশকে আগেভাগেই বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। কলিং বেলের আওয়াজ শুনে বাড়ির কাজের লোক সদর দরজা খুলে দিল। বাড়ির সবাই খাওয়া দাওয়া করে যে যার ঘরে চলে গেছে শুধু জাহিনের অপেক্ষায় রয়ে গেছেন জোহরা বেগম। জোহরা বেগম সময়টা পাড় করার জন্য সোফায় বসে নকশি কাঁথা সেলাই করতে ব্যস্ত ছিলেন। ছেলেকে আসতে দেখে কাঁথাটা সোফার উপরে রেখে ছেলের দিকে এগিয়ে এসে বলেন।

“এত দেরি হলো যে আসতে? নুহাশ বলল কি একটা কাজ আছে তোর সেটা কি কমপ্লিট হয়েছে?”

“না এখনও হয় নি তবে হয়ে যাবে জলদি।”

“আগমীকাল থেকে একটু আগে আসার চেষ্টা করবি মেয়েটা না খেয়ে অপেক্ষায় ছিল তোর।”

জাহিন ভ্রুদ্বয় কিঞ্চিত কুঁচকে বলল, “কে অপেক্ষা করছিল?”

জোহরা বেগম হতাশার শ্বাস ফেলেন। তার ছেলে কি এই জগতে আছে নাকি অন্য জগতে আছে। বিয়ে করেছে আর কে অপেক্ষা করতে পারে তার জন্য সেটা বুঝতে পারছে না মহাশয়। জোহরা বেগম কঠিন গলায় ছেলেকে বলল, “তোর বউ অপেক্ষায় ছিল তোর জন্য।”

“কিন্তু মা আমি তো খেয়ে এসেছি ওনি কি খায় নি?”

“খেতে চায় নি কিন্তু জোর করাতে খেতে বাধ্য হয়েছে।”

“ওও।”

“আগামীকাল থেকে তাড়াতাড়ি আসবি।”

“আসব।”

জাহিন কথাটা বলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে জ্যাকেটটা খুলে ফেলে। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে দেখে রুম অন্ধকার তবে রুমে লালচে রঙের ড্রিম লাইট জ্বলছে। ড্রিম লাইটের মৃদু আলোয় জাহিন বুঝতে পারল অয়ন্তি ঘুমিয়ে পড়েছে। তার বড্ড খারাপ লাগল মেয়েটা তার অপেক্ষায় ছিল আর সে এত রাত করে আসল। এরপরের বার থেকে জলদি আসার চেষ্টা করবে।জাহিন জ্যাকেটটা সোফার উপরে রেখে গায়ের পরিহিত অ্যাশ রঙের শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে হাতে টি-শার্ট আর ট্রাউজার নিয়ে ওয়াশরুমে যায় ফ্রেশ হতে। জাহিন যেতেই অয়ন্তি চোখ মেলে তাকায় সে ঘুমাই নি এখনও, স্বামীর চিন্তায় দু চোখের পাতায় ঘুম আসে নি তবে এখন ঘুম আসবে। অয়ন্তি‌ গায়ে মাথায় ব্ল্যাঙ্কেটটা ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করে।‌

রাত আড়াইটা বাজে। নিস্তব্ধ রাত, কোথাও কোনো কোলাহল নেই, ব্যস্ত শহরটা শান্ত হয়ে আছে, দূর থেকে ঝিঁঝিঁ পোকা ডাকার শব্দ ভেসে আসছে। জাহিন তখন ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে। পা দুটো সেন্টার টেবিলের উপরে রেখে কোলের উপরে ল্যাপটপ রেখেছে। খুব মনযোগ দিয়ে কিছু একটা দেখছে। আকস্মিক অস্ফুটে ভাবে কারো গুঙ্গানোর আওয়াজ ভেসে আসে। জাহিন ল্যাপটপের স্ক্রিন থেকে নজর সরিয়ে সামনের দিকে তাকাল। গুঙ্গানোর শব্দটা কোথা থেকে আসছে সেটা বুঝার চেষ্টা করছে। জাহিন যখন বুঝতে পারল এমনটা অয়ন্তি করছে তাড়াতাড়ি করে ল্যাপটপটা সোফার উপরে রেখে দৌঁড়ে অয়ন্তির কাছে আসে। অয়ন্তি কাঁপছে অস্বাভাবিক ভাবে আর অস্পষ্টভাবে কি যেনো বলছে। জাহিন বিছানায় উঠে অয়ন্তির দিকে ঝুঁকে অয়ন্তির গালে হাত রেখে ভয়ার্ত গলায় বলে।

“অয়ন্তি কি হয়েছে? এমন করছেন কেন? কোথায় কষ্ট হচ্ছে?”

জাহিন অয়ন্তির মুখের কাছটায় কানটা নিয়ে শুনতে পারে অয়ন্তির বলা কথা, “মা যেও না মা আমাকে ছেড়ে যেও না আমাকে সাথে করে নিয়ে যাও মা। তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাতে চাই মা।”

অয়ন্তির কাঁপুনি ক্ষণে ক্ষণে বেড়ে যাচ্ছে হাত পা খিঁচে আসছে। অয়ন্তির খিঁচুনি শুরু হয়ে গেছে। অয়ন্তির কাঁপুনিতে সারা বেড কেঁপে উঠছে। জাহিন কি করবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। মেয়েটার হঠাৎ হলো টা কি? জাহিন অয়ন্তির শক্ত করে মুঠো করে রাখা হাতটা খুলার চেষ্টা করল কিন্তু পারল না। জাহিন দু হাটু ভাঁজ করে সারা ঘর নজর বুলাল। এতো রাতে কাউকে ডাকতেও পারছে না। কোনো‌ উপায় না পেয়ে জাহিন অয়ন্তিকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে পাগলের মতো বলতে শুরু করল।

“শান্ত হোন অয়ন্তি শান্ত হোন কিচ্ছু হয় নি আপনার সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। প্লিজ শান্ত হোন।”

অয়ন্তি বা হাত দিয়ে শক্ত করে খামচে ধরল জাহিনের গলার কাছটায়। জাহিন অয়ন্তির শক্ত নখের খামচিটা চোখ বন্ধ করে সহ্য করে নিল। ধীরে ধীরে অয়ন্তি স্বাভাবিক হতে শুরু করল, কাঁপুনি কমতে শুরু করল। শরীর নিস্তেজ হয়ে এলো অয়ন্তির হাত পা ছেড়ে দিয়েছে এক প্রকার। জাহিন হাতের বাঁধন নরম করল। আরো কিছুক্ষণ বুকের মাঝে রেখে অয়ন্তির মাথাটা নিজের হাতের উপরে রেখে ড্রিম লাইটের মৃদু আলো দিয়ে এক নজরে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে রইল। জাহিনের হাতের মাঝে টুপ করে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরল বুঝতে পারল অয়ন্তির চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। ঘুমের মাঝে মেয়েটা কান্না করছে এতটা চাপা কষ্ট জমে রয়েছে মেয়েটার মনে। জাহিন অয়ন্তির চোখের নোনা জল মুছে দিয়ে আবারো নিজের বুকের সাথে চেপে ধরল। অয়ন্তিও ঘুমের মাঝে ছোট বাচ্চাদের মতো লেপ্টে রইল জাহিনের বুকে। জাহিন জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়ছে খানিকক্ষণ আগে অয়ন্তির এমন শোচনীয় অবস্থা দেখে যেন তার রুহ উড়ে গিয়েছিল। এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল অয়ন্তিকে হারিয়ে ফেলেছে সারা জীবনের জন্য। জাহিন অয়ন্তির কপালে গভীর চুম্বন বসাল। অয়ন্তির অযত্নে ফেলে রাখা বা হাতটা ধরে জাহিন নিজের মুখের কাছে এনে হাতের পাতায় ঠোঁট ছুঁয়ে দিল। মেয়েটার হাত পা ঠান্ডা বরফ হয়ে গেছে। জাহিন অয়ন্তিকে নিজের বুকে আগলে রেখে শুয়ে পড়ল আর গায়ে মাথায় ব্ল্যাঙ্কেট টেনে দিল। জাহিন চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইল কিন্তু তার ঘুম আসছে না অয়ন্তির হঠাৎ করে‌ এমনটা হলো কেন বুঝতে পারছে না, নাকি‌ এমনটা অয়ন্তির হয়েই থাকে মাঝে মধ্যে। আচ্ছা অয়ন্তি কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখে নি তো। মায়ের কথা বলছিল, স্বপ্নে কি অয়ন্তি তার মাকে দেখেছিল। জাহিনের দুচোখে আর ঘুম এলো না শত শত চিন্তায় তবে শেষ রাতে জাহিনের দু চোখ লেগে আসে।

_______

ভোরের আলো ফুটেছে। ঘড়ির কাঁটায় সবে মাত্র পাঁচটা বিশ বাজে। পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে ভোরের পরিবেশ। এই হিম ঠান্ডার মাঝেও যেন পাখিদের দু চোখে ঘুম নেই তারা নিজেদের মনের আনন্দে গান গাইতে ব্যস্ত। অয়ন্তির ঘুম হালকা হলো ধীরে ধীরে। ঘুমের মাঝে মনে হচ্ছে যেন কেউ তাকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে রেখেছে। অয়ন্তি পিট পিট চোখে তাকাল। নিজের অবস্থা বুঝতে পেরে অয়ন্তি চমকে উঠে চোখ বড় বড় করে জাহিনের মুখ পানে তাকাল। জাহিন ঘুমাচ্ছে। অয়ন্তি জাহিনের ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে রইল। এলোমেলা হয়ে থাকা চুলগুলা কপালে পড়ে রয়েছে। গালের কাটা স্থানটা লালচে হয়ে আছে, ব্যান্ডেজ খুলে ফেলেছে জাহিন গত রাতেই। অয়ন্তির কি হলো কে জানে হাত বাড়িয়ে জাহিনের কাটা স্থানটা ছুঁয়ে দিলে। তাতে জাহিন ভ্রু কুঁচকে নেয়। অয়ন্তি তা দেখে আস্তে করে সরে আসতে নিলে অয়ন্তির মেদহীন কোমরে রাখা জাহিনের হাতের বাঁধন আরো দৃঢ় হল। অয়ন্তি আরো এক দফা‌‌ অবাক হয়ে জাহিনের দিকে তাকাল। জাহিন তাকিয়ে আছে তার দিকে চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে সারা রাত ঘুম হয় নি। তার মানে লোকটা জেগে ছিল এতক্ষণ। অয়ন্তি জাহিনের দিক থেকে নজর সরিয়ে নিয়ে আবার চেষ্টা করল জাহিনের বুক থেকে সরে আসতে কিন্তু এবারও ব্যর্থ হল। জাহিন জড়ানো কন্ঠে বলে।

“সরে যেতে চাইছেন কেন?”

অয়ন্তি আস্তে করে বলে, “আমি আসলে বুঝতে পারি নি…।”

জাহিন অয়ন্তির কথার মাঝেই বলে উঠে, “এতো বুঝতে হবে না আপনাকে।”

অয়ন্তি চোখ তুলে জাহিনের পানে তাকল। জাহিন আড়ষ্ট গলায় বলে, “ঘুম ভালো হয়েছে।”

অয়ন্তিকে উত্তর দেওয়ার সুযোগ না দিয়েই জাহিন ভরাট কন্ঠে বলে, “অবশ্যই ঘুম ভালো হয়েছে। স্বামীর বুকে মাথা রেখে ঘুমালে সকল স্ত্রীদেরই ঘুম ভালো হয়।”

অয়ন্তি চুপ রইল। কি বলছে এসব? লোকটা কি পাগল হয়ে গেল নাকি গালে আঘাত পেয়ে, কিন্তু মানুষ তো পাগল হয় মাথায় আঘাত পেলে। কিন্তু জাহিনের ক্ষেত্রে তো উল্টো হয়ে গেল বিষয়টা? জাহিন চোখে মুখে চিন্তিত ভাব এনে বলল।

“উমম! এবার একটা এক্সপেরিমেন্ট করতে হবে।”

অয়ন্তি জাহিনের কথার কোনো মানে বুঝতে পারল না। কি এক্সপেরিমেন্ট করার কথা বলছে মানুষটা? অয়ন্তি নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল স্বামীর পানে। জাহিন অধর কোণে হাসি রেখে আকস্মিক অয়ন্তিকে ঝড়ের বেগে নিজের বুক থেকে নামিয়ে বালিশে শুইয়ে দিল। অয়ন্তি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে চোখ বড় বড় করে জাহিনের দিকে তাকিয়ে রইল। কি হচ্ছে এসব সে কি স্বপ্ন দেখছে নাকি? জাহিন অয়ন্তির উপরে হালকা ঝুঁকে এসে বলল।

“এক্সপেরিমেন্ট তাহলে শুরু করা যাক।”

অয়ন্তির ভ্রু কুঁচকে এলো। কি এক্সপেরিমেন্ট করবে জাহিন? জাহিন অয়ন্তিকে অবাক করে দিয়ে এক হাত দিয়ে অয়ন্তিকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল। অয়ন্তি তাতে বরফের ন্যায় জমে গেল। বুকের উঠানামা অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেছে, শরীর অসাড় হয়ে গেছে তার, নড়াচড়া করার শক্তিটুকু পাচ্ছে না, গলা শুকিয়ে গেছে, চোখের দৃষ্টি ছাদের দিকে নিবদ্ধ। জাহিনের গরম নিঃশ্বাস অয়ন্তির গলার কাছটায় এসে বারি খাচ্ছে। অয়ন্তি কি করবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। হাতির মতো মানুষটা তার উপরে শুয়ে আছে চাইলেও নিজ থেকে সরিয়ে দিতে পারছে না। অয়ন্তি শুকনো ঢোক গিলল। জাহিন চোখ বন্ধ রেখে কোমল কন্ঠের গাঢ় ডাক ভেসে আসলো।

“অয়ন্তি।”

অয়ন্তির সমস্ত কায়া কেঁপে উঠে। জাহিনের গলায় এই ডাকটা যখনই অয়ন্তি শুনে তখনই মনের ভেতরে অচেনা অজানা শীতল এক স্রোত বয়ে যায়। অয়ন্তি না চাইতেও আস্তে করে বলে, “হু।”

জাহিন আকুতি ভরা কন্ঠে অবদার করল, “মাথায় হাত বুলিয়ে দিন। সারা রাত ঘুমাতে পারি নি টেনশন, এখন একটু ঘুমাতে চাই পরম শান্তিতে আপনার বুকে মাথা রেখে।”

অয়ন্তি থম মেরে রইল। জাহিনের এ কোন রুপ দেখছে সে? এমন আকুতি ভরা কন্ঠে অবদার করলে কি ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব, না সম্ভব নয়। কিন্তু অয়ন্তির হাত নাড়ানোর শক্তিটুকু পাচ্ছে না। আবারো জাহিনের জাড়ানো কন্ঠ স্বর ভেসে আসলো।

“এভাবে লৌহার মতো শরীর শক্ত করে রেখেছেন কেন? শরীর ছাড়ুন।”

অয়ন্তির কন্ঠ নালি কাঁপছে। তারপরও কাঁপাকাঁপা গলায় বলে, “আপনি এভাবে…!”

জাহিন মাথা তুলে অয়ন্তির দিকে তাকালো। জাহিনের চোখে চোখ পড়াতে অয়ন্তি নজর সরিয়ে নিল। এই গভীর চোখের দিকে সে তাকিয়ে থাকতে পারে না কেমন জানি অদ্ভুত অনুভূতি হয় মনের গহীনে যেটা প্রকাশ করা সম্ভব হয়ে উঠে না। জাহিন কিছু বলল না বুঝতে পারল বউ তার বড্ড লাজুক নিজ থেকে কিছু করতে পারবে না, যা করার তাকেই করতে হবে। জাহিন অয়ন্তির ডান হাতটা নিজেই নিজের মাথা রেখে বলে।

“নিন এবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিন আর আমি ঘুমাই। খবরদার আমি যতক্ষণ ঘুমাব ততক্ষণ আপনি এই বিছানা থেকে উঠবেন না। এটা আপনার শাস্তি আমাকে সারা রাত জাগিয়ে রাখার জন্য।”

বলেই জাহিন আবারো মাথাটা হেলিয়ে দিল অয়ন্তির বক্ষস্থলে। অয়ন্তি বোকা বনে গেল জাহিনের এহেন কথা শুনে, সে জাগিয়ে রেখেছে মানে কি? রাতে কি হয়েছিল? অয়ন্তি এসব ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে স্বামীর মাথা বুলাতে শুরু করল। জাহিনও মুচকি হেসে অয়ন্তিকে নিবিড়ভাবে আরেকটু জড়িয়ে ধরল। এক সময় অয়ন্তিও ঘুমিয়ে পড়ল জাহিনের সঙ্গে।

________

অয়ন্তির ঘুম ভাঙল নয়টা দশে। আধ বোজা চোখে পুরো ঘরটায় নজর বুলিয়ে নিল। হঠাৎ করেই জাহিনের কথা মনে পড়তেই তড়িৎ বেগে পাশে তাকায় কিন্তু না জাহিন নেই। গেলো কোথায় লোকটা? অয়ন্তি কিছুক্ষণ বসে রইল, মনে করল জাহিনের ভোর বেলার পাগলামি গুলা। অধর কোণে ফুটে উঠল মিষ্টি হাসি কিন্তু পরক্ষণে হাসিটা মিলিয়ে গেল এটা ভেবে এতো বেলা অব্দি সে ঘুমিয়েছে কি ভাববে বাড়ির সবাই। অয়ন্তি তাড়াতাড়ি করে বিছানা গুছিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে আসতে আয়নায় দেখতে পায় গোলাপি রঙের একটা স্টিকি নোট লাগানো। অয়ন্তি স্টিকি নোটটা হাতে নিল‌ সেখানে লেখা।

“সরি! ভোর বেলায় আপনাকে এভাবে জ্বালানোর জন্য।” নিচে ছোট্ট করে লেখা জাহিন।

অয়ন্তি হাসল। ভারী মিষ্টি সেই হাসি। এই‌ লোক নিশ্চিত পাগল হয়ে গেছে। সকলে নিজেই এমন উদ্ভট কান্ড ঘটালো আর‌ এখন সেটার জন্য স্টিকি নোটে চিঠি লিখে ক্ষমা চাইছে। এতো ভালো কেন লোকটা? বার বার অয়ন্তি মুগ্ধ হচ্ছে জাহিনের করা প্রত্যেকটা কাজে, সাথে অবাকও হচ্ছে। অয়ন্তি স্টিকি নোটটা একটা বইয়ের ভাঁজে রাখল সেখানে জাহিনের লেখা প্রথম চিঠিটাও অয়ন্তি যত্ন করে রেখেছে। অয়ন্তি বইটা রেখে নিচে গেল। ভেবেছিল হয়ত বাড়ির কেউ কিছু বলবে কিন্তু না সবাই আরো তার ঘুমের খবর নিচ্ছে। অয়ন্তি নিজেকে এই‌ প্রথম বারের মতো ভাগ্যবতী মনে করল এমন স্বামী আর এমন ভালো শ্বশুরবাড়ি পেয়ে।

#চলবে

ঈদ কেমন কাটল সবার?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here