আমার_নিঠুর_মনোহর #লেখিনীতে_জেনিফা_চৌধুরী #পর্ব_বাইশ [১৮+ এলার্ট]

0
215

#আমার_নিঠুর_মনোহর
#লেখিনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_বাইশ
[১৮+ এলার্ট]

“আপনি আপনার প্রাক্তনকে এখনো ভুলতে পারেন নি, মাস্টার মশাই?”
মাঝ রাতে তামজিদের ঘুম ভেঙে যায়, কারোর কান্নার স্বরে। বুকের ভেতর ভেজা ভেজা স্পর্শ টের পেতেই নিশ্চিত হলো এটা তারিন। তারিন কাঁদছে! কিন্তু কেনো? কি হলো? তামজিদ ফট করে চোখ মেলে তাকায়। ধড়ফড়িয়ে উঠে বসার চেষ্টা করতেই, তারিন থামিয়ে দেয়। তামজিদ তারিনের মাথায় হাত বুলিয়ে চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
“ তারিন, কি হয়েছে? শরীর খারাপ লাগছে? মাথা ব্যাথা করছে? কি হয়েছে বলো?”
তারিন ফুঁপিয়ে কাঁদছে৷ অস্পষ্ট স্বরে তামজিদকে উপরোক্ত প্রশ্নটি করলো। তারিনের প্রশ্নে তামজিদ কিছুক্ষণ অবাক হয়ে স্তব্ধ থাকলেও পরে হেসে দিলো। তামজিদকে হাসতে দেখে তারিন বিস্মিত স্বরে বলে উঠল,
“আপনি হাসছেন, কেনো?”
তামজিদ তারিনকে আরো শক্ত করে বুকে চেপে ধরলো। তারিনের কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বললো,
“আমার পাগলী, তুমি কেনো এই প্রশ্নটা করেছো আমি বুঝেছি। সকালে তোমার থেকে হঠাৎ দূরে সরে আসার কারণ জানতে চাচ্ছো, রাইট?”
তারিন ছোট্ট করে উত্তর দিলো,
“হুম।”
তামজিদ পুনরায় হাসলো। শান্ত স্বরে বলতে লাগলো,
“আমি তখন নিজের অনুভূতি নিয়ে ভাবনা চিন্তার মাঝে ভুলেই গিয়েছিলাম তুমি এখনো ছোট। অন্তত আমার থেকে বয়সে ছোট। সেই হিসেবে শারীরিক ভাবে আমার কাছে আসার জন্য তোমার কিছু মানসিক প্রস্তুতি দরকার। ওই মুহূর্তে তুমি এতকিছুর জন্য প্রস্তুত ছিলে না৷ তাই ভেবেছিলাম যদি তোমার এই ছোট্ট মাথায় এসবের উল্টো রিয়েকশন পড়ে। তাই দূরে সরে গিয়েছিলাম। বুঝলে আমার মনোহারিণী? ”
তারিন আহাম্মক হয়ে গেলো। তামজিদের কথা শুনে বুকের উপর থাকা ভারী পাথরটা সরে গেলো। তামজিদ কিছুসেকেন্ড চুপ থেকে পুনরায় বলা শুরু করলো,
“শোনো আমার ব্যক্তিগত চাঁদ? প্রত্যেক মানুষের জীবনে অতীত থাকে। কারোরটা হয়তো খারাপ বা কারোর ভালো। তাই বলে কি সব মানুষ অতীত নিয়ে পড়ে থাকে? অবশ্যই, না! অতীত নিয়ে পড়ে থাকা বোকামি। উপরওয়ালা জীবন দিয়েছে একটা। এই জীবনে চলার পথে আপ/ডাউন হতেই থাকবে৷ কিন্তু থেমে থাকা উচিত না। আমিও থেমে নেই। ভুলে গেছি সব৷ তুমি ভুলিয়ে দিয়েছো। তুমি আমার মন থেকে আমার অতীত ভুলিয়ে দিয়েছো। তুমি প্রমাণ করে দিয়েছো, আমার মা তোমাকে চয়েস করে ভুল করে নি। একদম করেনি। আমার জন্য বেস্ট পার্টনার খুঁজে এনেছে। যে আমাকে মানসিক শান্তিতে রাখছে। আমার বাবাকে যত্ন, ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখছে । আমার মায়ের সংসারটা মায়ের মতো করেই সাজিয়ে রাখছে৷ আর কি চাই আমার? যে মানুষটা আমার জন্য এত কিছু করছে সেই মানুষটাকে কি ভালো না বেসে পারা যায়, বলো? আমি ও পারলাম না নিজেকে ধরে রাখতে৷ সেই দূর্বল করে দিলে তুমি আমাকে। ভীষণ ভাবে দূর্বল করে দিয়েছো, আমার মনোহারিণী। এখন তোমাকে ছাড়া আমার এক মুহূর্ত কল্পনায় অন্য কিছু আসে না৷ ভালোবাসি কিনা এখনো বুঝে উঠতে পারছি না। শুধু এইটুকু বুঝেছি, এখন আমার তোমাকে ছাড়া চলে না। একদম চলে না। আজকে সারাদিনে তোমার ইগ্নোর করাটা আমাকে প্রচন্ড কষ্ট দিয়েছে। অনেক বেশি। বিশ্বাস করো, বার বার বুক কেঁপে উঠছিলো। ফাঁকা হয়ে যাচ্ছিলো সব কিছু। বুকের ভেতরটা যন্ত্রণায় হাহাকার করছিলো। আমার থেকে দূরে যেও না, প্লিজ। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না, মনোহারিণী। বিশ্বাস করো?”
তারিনের চোখ থেকে পানি ঝরছে। নাহ! কষ্টের না। সুখের অশ্রু যাকে বলে। কথাগুলো শুনে তারিনের উথালপাথাল হৃদয়ে শীতল বাতাস বইছে। তারিন এবার শব্দ করে কান্না করে উঠতেই, তামজিদ ভয় পেয়ে যায়। ভয়ার্ত স্বরে বলে উঠে,
“কি হয়েছে? কাঁদছো কেনো? কিছু হয়েছে? তোমার কি এখনো আমাকে বিশ্বাস হচ্ছে না? আমি মিথ্যা বলছি না, মনোহারিণী। বিশ্বাস করো, একদম মিথ্যা বলছি না। আ…।”
তারিন তামজিদের মুখে হাত দিয়ে থামিয়ে দিলো। কান্নারত স্বরেই বললো,
“আমি আপনাকে অনেক বেশি বিশ্বাস করি, মাস্টার মশাই। নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করি।”
“তাহলে কাঁদছো কেনো?”
তামজিদের পাল্টা প্রশ্নে তারিন এবার হাসলো। তামজিদের গলায় মুখ লুকিয়ে বলল,
“আপনি কি বোকা?”
“না।”
“তাহলে বুঝছেন না কেনো কাঁদছি?”
“কেনো কাঁদছো?”
“এটা সুখের কান্না, মাস্টার মশাই। আপনার ভালোবাসা পাওয়ার লোভে আমি এতদিন দূর্বল হয়ে পড়েছিলাম। আজকে সব দূর্বলতা কাটিয়ে উঠার কান্না এটা।”
তামজিদ এবার শান্ত হলো। তারিনের কপালে পুনরায় ঠোঁটে ছোঁয়ালো। তারিন যেনো লজ্জায় আরো মিশে গেলো তামজিদের দেহে। তামজিদ এবার বেশ দুষ্টুমির স্বরে বলে উঠল,
“ভেবেছিলাম, আমার মনোহারিণী এখনো ছোট তাই তখন নিজের অনুভূতিটাকে কন্ট্রোল করেছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি আমার মনোহারিণী আমাকে কাছে পাওয়ার জন্য পাগল হয়ে আছে।”
তারিন লজ্জা পেলো। লজ্জায় মনে হচ্ছে তামজিদের বুকের মধ্যে ঢুকে যেতে। তারিন লজ্জা মাখা স্বরে বলে উঠল,
“চুপ করুন।”
তামজিদ এবার আরো সুযোগ পেলো। তারিনের কানে ঠোঁট ছুঁয়ে ফিসফিস করে বলে উঠল,
“তোমার মাঝে মিশে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে, মনোহারিণী।”
তারিন চুপ। তামজিদ পিঠে নখের শক্ত আঁচড় টের পাচ্ছে। তবুও থামছে না। পুনরায় বললো,
“আমাকে দূরে ঠেলে দিয়ে আমার তৃষ্ণা বাড়িয়ে দেওয়ার মতো যন্ত্রণা দিতে চাচ্ছো, নাকি?”
তারিন এবার মুখ খুললো। বললো,
“আপনি আমার নিঠুর মনোহর, মাস্টার মশাই। যাকে একবার লাগরের পাওয়ার তৃষ্ণা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে।”
তামজিদে এক হাত তারিনের শাড়ি ভেদ করে পেটের উপর রাখলো। অন্য হাত ঘাড়ের পাশে রেখে তারিনের গলায় গভীর চুমু এঁকে দিলো। অনুভূতিতে সিক্ত তারিনের হাত তামজিদের উদাম পিঠের সর্বত্রে বিচরণ করছে। দুটি দেহ একাকার হয়ে মিশে যাচ্ছে গভীর আলিঙ্গনে। কিছুসময় পর হঠাৎ করেই তামজিদ তারিনের উপর থেকে সরে আসলো। তামজিদ উঠে বসলো। মুখে হাত চেপে কয়েকবার জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেললো। লাইট অন করে এক গ্লাস পানি ঢকঢক করে গিলে ফেললো। তামজিদের অস্থির অস্থির ভাব দেখে তারিন শাড়ির আঁচলটা ঠিক করে উঠে বসলো। চিন্তিত স্বরে বলে উঠল,
“কি হয়েছে? ঠিক আছেন আপনি?”
তামজিদ তারিনের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলো। তারিনের গালে হাত রেখে আদুরে স্বরে বললো,
“ঠিক আছি।”
তারিন পুনরায় প্রশ্ন করলো,
“তাহলে এমন করলেন যে?”
তামজিদ কিছুক্ষণ চুপ থাকলো। অতঃপর শান্ত স্বরে বলে উঠল,
“তোমার এখনো অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া বাকি। তোমার স্বপ্ন পূরণ করা বাকি। তোমার স্বপ্ন পূরণের পথে শুরু থেকেই বহু বাঁধা এসেছে। এখন আমাদের ভুলে নতুন এক বাঁধা আসুক তা আমি চাইনা।”
তারিন তামজিদের কথাটার মানে ঠিক ভাবে বুঝলো না। অবুঝ স্বরে প্রশ্ন করলো,
“আমাদের মাঝে আর কোন বাঁধা আছে, মাস্টার মশাই?”
তামজিদ এবার তারিনের দুই গালে হাত রাখলো। আলতো স্বরে শুধালো,
“আমাদের সন্তান।”
কথাটা শোনা মাত্রই তারিনের নেত্রপল্লব বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে গেলো। অবিশ্বাস্য স্বরে জোরালো স্বরে প্রশ্ন করলো,
“কি বলছেন এসব? সন্তান কি কোনো বাবা-মায়ের জীবনে বাঁধা হতে পারে, মাস্টার মশাই?”
তামজিদ হাসলো। তারিনের নাকে নাক ঘষলো একবার। অতঃপর শান্ত, শীতল স্বরে পুনরায় শুধালো,
“একদম না। আমি এভাবে বুঝাই নি। আমি বুঝিয়েছি এক৷ তুমি বুঝেছো দুই। আমি বুঝিয়েছি, এখন তোমার উপর অনেক দায়িত্ব। তোমার বয়স অনুযায়ী এত দায়িত্ব তোমার পালন করার কথা না। কিন্তু তবুও তুমি খুব সুন্দর ভাবে সবটা সামলে চলেছো। সংসার, পড়ালেখার মাঝে মায়ের দায়িত্ব পালন করতে পারবে তো? মা হতে হলে অনেক কষ্ট,যন্ত্রণা সহ্য করা লাগে। পারবে তো? আর তোমার কি এখনো বাচ্চা নেওয়ার বয়স হয়েছে? তুমি তো শিক্ষিত মেয়ে। ডাক্তার হতে চাও, আশা করি এই বিষয়টা তুমি বুঝবে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাচ্চা নেওয়ার উপযুক্ত সময়ে আমরা বাচ্চা নিবো। তুমি কি আমার সিদ্ধান্তর সাথে একমত?”
তামজিদের কথা শুনে তারিন ভাবনায় পড়ে গেলো। সত্যিই তো! এসময় একটা প্রাণ জন্ম দেওয়া, তাকে লালন পালন করা, বড় করে তুলে অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। সবটা তারিন সামলে উঠতে পারবে না। আবার অন্যদিকে তামজিদের কথা শুনে মা হওয়ার এক অদম্য ইচ্ছা মনের কোনে বাসা বাঁধলো নতুন করে। দুটো ভাবনার মাঝে পড়ে তারিন চুপ করে রইলো। তামজিদকে কি বলবে? হ্যাঁ, নাকি না? কোনটা বলা ঠিক হবে?

#চলবে

[আমার পারিবারিক সমস্যা ছিলো এতদিন। এজন্য গল্প লেখার মতো মন মানসিকতা ছিলো না। ক্ষমা করবেন। অবশ্যই কাল সকালে এক পার্ট পাবেন, ইন শা আল্লাহ। আপনাদের কি মনে হয়? তারিনের কোনটা বলা ঠিক হবে?]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here