#মুগ্ধতার_এক_বিকেল (১২)
ঠান্ডা শীতল বাতাস। ওরা একটা রিসোর্টে ওঠেছে। রিসোর্টটা ভীষণ সুন্দর। সমুদ্রের কাছে। সায়রার মন ভালো হলো অনেকটা। সে এমন একটা জায়গাই খুঁজছিল। ও ধীরে ধীরে সমুদ্রের পাড়ে এগিয়ে গেল। কিছুটা নেমে দাঁড়াল। ঢেউ গুলো ছুঁয়ে গেল পা। শীতল জলে অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করছে। চোখ বন্ধ করল সায়রা। এখন মনে হচ্ছে পৃথিবীটা ভীষণ সুন্দর। কোনো অশান্তি নেই। কারো কথা স্মরণ হচ্ছে না। মস্তিষ্ক যেন নিদ্রায় রয়েছে।
“এই সায়রা, এখানে কী করছো!”
অনুভব! ছেলেটা তার সুন্দর সময়টিতে বাঁধা হয়ে দাঁড়াল। ঘাড় ঘুরিয়ে চাইল সায়রা।
“কী সমস্যা?”
“সমস্যা তো অনেক। তোমাকে খুঁজে আমার পা ব্যথা হয়ে গেছে।”
“আমাকে কেন খুঁজো?”
“তোমার বেবি ডল কান্না কাটি করছে।”
“কী?”
অনুভব বেবি ডল বলতে কাকে বোঝাল সায়রা ঠিক বুঝল না। ও ভ্রু কুঞ্চিত করে রইল।
“আমিরা। সে কান্নাকাটি করছে।”
“কাঁদছে!”
“ইয়ে না মানে তোমায় খুঁজছে।”
“আশ্চর্য! তাহলে কান্না করছে কেন বললে?”
“বললাম।”
“আজব তো।”
“হুম। আজব ই ভালো। দুজন দুষ্টু মেয়ে।”
“কী বললে?”
“দুষ্টু বলেছি।”
“তুমি তো শ য় তা ন।”
“আমি শ য় তান?”
“এখানে আর কেউ আছে যে তাকে শ য় তা ন বলব।”
“ভারী ঝগড়া করতে জানো তো।”
“কথা বলিও না। সব সময় এমন মজা করো। অথচ ভাবো না অপর মানুষটি চিন্তিত হতে পারে।”
“এখন তোমার বেবি ডলের কাছে যাও।”
সায়রা কথা না বাড়িয়ে পানি থেকে পা সরিয়ে নিল। তারপর হাঁটতে লাগল রিসোর্টের পথে। অনুভব পেছন থেকে ডেকে ওঠল।
“আরে এই দুষ্টু মেয়ে।”
পেছন না ঘুরেই সায়রা বলল,”তুমি এই নামে ডাকলে আমি শুনব না অনুভব।”
“কিন্তু জবাব তো দিয়েছ।”
সায়রা হতাশ হলো। সে সত্যিই তো জবাব দিয়ে ফেলেছে। কি যে হচ্ছে তার সাথে। আজকাল নিজেকে বড়ো বোকা মনে হয়। আর সব থেকে বেশি বোকা হতে হয় অনুভবের কাছে। ছেলেটা এত বেশি করে ইদানীং।
আমিরা ঘুমিয়ে ছিল। বিকেলে ফিরে যে যার রুমে গিয়েই রেস্ট করছিল। সায়রার ভালো লাগছিল না বিধায় সমুদ্রের পাড়ে আসে। এর মধ্যে আমিরার ঘুম ভে ঙে যায় আর সে ভীত হয়ে পড়ে। তখনই অনুভব সায়রার খোঁজে বের হয়। আমিরা এখন চুপ করে বসে আছে। যেন শান্ত সমুদ্র।
“কী রে। ঘুম ভে ঙে গেল?”
“তুমি কোথায় ছিলে মিমি?”
“এই তো বাইরে।”
“অহ। আমার ভয় করছিল।”
“ঠিক আছে। এসে গেছি।”
“হুম।”
“কিছু খাবি?”
“না। আমি খেলব।”
“আচ্ছা চল।”
আহনাফ কে ও বের করে নিল আমিরা। তারপর আমিরা, আহনাফ আর সায়রা খেলতে লাগল একটি বল দিয়ে। ওরা বেশ আনন্দের সাথে সময় কাটাচ্ছে। অনুভব তখন নিজের গিটার নিয়ে বসল। এই গিটারের সাথে তার সবথেকে ভালো বন্ধুত্ব। এমন না সে ভালো গান গাইতে পারে। তবে গানের প্রতি বিশেষ ভালোবাসা কাজ করে।
সন্ধ্যায় মারুফ কল করল। কল রিসিভ করে সায়রা বলল,”হ্যাঁ ভাইয়া কখন ফিরলে?”
“কিছু সময় হলো। তোরা সবাই ঠিক আছিস?”
“হুম ঠিক আছি।”
“শোন না, একটা কথা বলার ছিল।”
“হুম। বলো, শুনছি।”
“বাহাদুর কল করেছিল।”
“কেন?”
“আমিরার খোঁজ নিতে।”
“হঠাৎ।”
“বুঝতে পারছি না।”
সায়রা একটু চিন্তায় পড়ল। তারপর বলল,”ঠিক আছে। ফিরে বিষয়টা দেখব।”
“হুম। তবে কথা শুনে মনে হলো মেয়ের প্রতি দরদ এসেছে।”
“সত্যিই কী তাই ভাইয়া?”
“জানি না রে।”
“সে একটা নিকৃষ্ট মানুষ ভাইয়া। আমার আপুকে মে রে ছে এখন মেয়েটা কে ও মা র বে।”
মারুফ একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল। তারপর বলল,”ভুল তো সবার ই ছিল রে। আমরা আসলে কারো জীবন নিয়েই বলতে পারি না। তবে বাহাদুর আমেনাকে ভালোবাসত।”
“ভালোবাসলে শেষ দিকে এত যন্ত্রণা কেন দিল বলতে পারো?”
“বোঝার ভুল আসলে।”
“ভুলে ভুলে আমার বোনটাকেই মে রে ফেলল।”
মারুফ দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল। সায়রা কিছুটা উত্তেজিত।
“সব মানলাম। তার যদি এতই ভালোবাসা থাকত তবে আপুর মৃ ত্যু র দশ দিনের মাথায় বিয়ে কেন করল?”
মারুফ নিশ্চুপ। আসলেই ভালোবাসা রঙ বদলায়। এটা অস্বীকারের উপায় নেই শুরুর কিছু বছর বাহাদুর ছিল আমেনার জন্য রহমত স্বরূপ। অথচ শেষ কিছু মাস যে যন্ত্রণা তিরস্কার করল এটি কোনো ভাষাতেই ব্যক্ত সম্ভব নয়।
রাতের খাবারের আগ দিয়ে সায়রার মেজাজ আরো গরম হতে লাগল। বাহাদুর যেই মেয়েকে অস্বীকার করেছে সেই মেয়ের প্রতি এখন আবার দরদ দেখাচ্ছে। তাকে দেখতে চেয়েছে। সায়রা বলে দিয়েছে আমিরা আর কোথাও যাবে না। অন্তত সৎ মায়ের কাছে তো কখনোই না। তখনই বাহাদুর জ্বলে ওঠে। বলে তার মেয়েকে সে নিয়ে যাবে। দেখবে কে কি করতে পারে। সায়রা আসলেই তিক্ত হয়ে পড়ল। অসহ্য লাগল তার সব। সে খেল না। এখন রাত দশটার কিছু বেশি বাজে। ও এসেছিল হাওয়া খেতে। বাইরের শুনশান নীরব পরিবেশ। সে সময়েই মনে হলো তার পেছনে কেউ আছে। ও চট করেই ঘুরে তাকাল। দেখল অনুভব দাঁড়িয়ে। সায়রা ভয় পেয়ে গেল। জ্বলন্ত চোখে তাকাল।
“তোমার সমস্যা কী অনুভব?”
“ভয় পেয়েছ তাই না?”
“তো ভয় পাব না। আশ্চর্য মানুষ তো তুমি।”
“এত রাতে বাইরে কী করছো?”
“বাইরে কী করছি মানে?”
“এখানে তো কেউ নেই। একা কী করো?”
“এমনি এসেছি।”
“এমনি না। নিশ্চয়ই বয়ফ্রেন্ড ও এখানে এসেছে।”
“আজেবাজে কথা বলবে না।”
“হা, বয়ে গেছে আজেবাজে কথা বলতে।”
“আশ্চর্য! তুমি এত জ্বালাও কেন আমায়?”
“জানি না। ভালো লাগছে জ্বালাতে।”
“ধ্যাত।”
অনুভবকে পাশ কাটিয়ে চলে এল সায়রা। ছেলেটা এত বেশি বেশি করে। ও অনেকটা যাওয়ার পর হাতে টান অনুভব হলো। সায়রা চেচিয়ে ওঠল।
“এটা কী রকমের কাজ অনুভব!”
কোনো জবাব এল না। সায়রা ঘুরে তাকাল। দেখল অনুভব নয়। এখানে দাঁড়িয়ে অন্য একজন। যে ওর ভীষণ চেনা। এক সময় ভীষণ কাছের ছিল। ও শুকনো ঢোক গিলল। পুরুষটির ভরাট মুখের রোম রাজি বেশ বড়ো হয়ে গেছে। চুল গুলো এলোমেলো। দৃষ্টিতে ঘুম না হওয়ার ছাপ। কি এক আশ্চর্য ব্যথা সে মুখে। সায়রা তাকিয়ে থাকতে পারল না। চোখ ঘুরিয়ে নিল।
“কেমন আছ?”
সায়রা ধীরে সময় নিয়ে বলল,”ভালো। তুমি?”
“হুম। আছি, ভালো।”
তারপর নীরবতা। দুজনেই যেন কথা বলতে পারল না। সায়রার চোখের কোণ থেকে একটা বিন্দু জল নেমে এল। ও চলে যেতে নিতেই পুনরায় ডেকে ওঠল সাঈদ।
“শোনো একটু।”
সায়রা দাঁড়াল। সাঈদ কাছে এল পায়ের জোরে। বরাবর হয়ে বলল,”সেদিন কল করেছিলে?”
সায়রা চুপ। ও মাথাটা নিচু করে রইল। সাঈদ যেন কিছু বলতেই যাচ্ছিল সে সময়েই বিকট এক আওয়াজ কানে ভেসে এল। মেয়েলি কণ্ঠ। চিৎকার করছে। সম্ভবত পড়ে গিয়েছে। সাঈদ তাকাল ঘাড় ঘুরিয়ে। চোখে মুখে বিরক্তি নেমেছে।
মেয়েটির নাম নম্রতা। সাঈদের স্ত্রী। সায়রা দেখেছে। ছবিতে। অল্প বয়সী। ভীষণ সুন্দর দেখতে। তার চেয়েও বেশি কী না সেটা সায়রা জানে না। তবে দেখতে সুন্দর। সায়রা শুকনো ঢোক গিলল। বলল,”তুমি ওর কাছে যাও।”
সায়রা পায়ের গতি বাড়াল। সাঈদ অলস চোখে তাকিয়ে রইল। আহারে জীবন তার। তার ভালোবাসার মানুষ। জীবন তাকে সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু সেই সুযোগটি সে নিতে পারে নি। একটা ব্যথা তার চোখ দুটোয় রিক্ততা এনে দিচ্ছে। মনে হচ্ছে এই জীবনটাই বৃথা।
চলবে…
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি
| গতকাল বইমেলায় গিয়েছিলাম। জানেন তো আমার বই এসেছে। “প্রেমানল”, পাওয়া যাচ্ছে ঢাকার বইমেলায় স্টল নং:৭৯-৮০। |
(১৩)
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=410079304886303&id=100076527090739&mibextid=2JQ9oc