মুগ্ধতার_এক_বিকেল (৯)

0
259

#মুগ্ধতার_এক_বিকেল (৯)

আরো দুটো টিউশনি নিয়েছে সায়রা। প্রয়োজন ছিল না, তবু সে নিয়েছে। এর কারণ নিজেকে যতটা সম্ভব অধিক ব্যস্ত রাখা। ভীষণ ক্লান্তিতে ডুবিয়ে দেওয়া। কারণ এতে তার অতীত স্মরণ কম হবে। কাজের ব্যস্ততা দুঃখ লাঘব করবে। আর যদি, সে এমনটি না করে তাহলে সে মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে যাবে। সাঈদের কথা স্মরণ হলেই যে ওর বুক কাঁপে। একটু ফুসরত পেলেই ছেলেটার ছবি দেখার ভীষণ ইচ্ছে জাগে। সায়রার টিউশনি থাকে লম্বা সময় জুড়ে। তাই আজকাল বাসায় ফিরতে ও ভীষণ দেরি হয়। ও যখন ফিরে তখন দুপুরের খাবার সবাই খেয়ে নিয়েছে। কিন্তু আজকে ফিরে দেখল কেউ ই খাবার খায় নি। সবাই অপেক্ষা করছে। বাড়ি-ঘর কেমন চকচক করছে। ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে।

“এসেছিস, যা দ্রুত গোসল করে নে।”

সায়রা নিজের ব্যাগ রাখতে রাখতে বলল,”কেন ভাবি? এত তাড়া কেন আজ?”

জুথি তেমন একটা জবাব দিল না। ইনিয়ে বিনিয়ে বলে ওকে পাঠিয়ে দিল। লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে ফিরল সায়রা। চুল গুলো মুছতে মুছতে দেখল নতুন জামা পরেছে আমিরা।

“কী রে, আজ এত ফিটফাট কেন?”

আমিরা চুপ। সায়রার চোখে মুখে বিস্ময়। ও খুব করে বুঝতে পারছে, তার অগোচরে বাড়িতে কিছু হচ্ছে। তবে বিষয়টা সহসাই ধরা যাচ্ছে না।

ডাইনিং এর খাবারের আয়োজন দেখে সায়রার চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল। সচরাচর এ রকমের আয়োজন তারা করে না। সংসার চলে ছিমছাম ভাবে যতটা প্রয়োজন ঠিক ততটাই। আজকের এই আয়োজন, নিশ্চয়ই সমস্যাটি গভীর হবে। সায়রা জানে, প্রশ্ন করে লাভ নেই। এরা বলবে না যেহেতু, তাই চুপ থাকাই ভালো। তাছাড়া এই জগতের কোনো কিছুতেই আজকাল ওর আগ্রহ থাকে না। মনে হয়, জীবন পানসে হয়ে গেছে।

যখন ঘড়িতে সাড়ে তিনটা বাজে তখন বাড়ির সামনে এক দল মানুষ এসে উপস্থিত হলেন। দরজা খুলে সায়রা অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। ডাইনিং থেকে ছুটে এল জুথি। যথেষ্ট সমাদরের সাথে ভেতরে নেওয়া হলো মানুষ গুলোকে। এদিকে সায়রা চুপ, তার মন মস্তিষ্ক বিষয়টি ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে।

জুথি যখন নাশতা পানির আয়োজন করছে তখন সায়রা গিয়ে বলল,”ভাবি, ঘটনা কি বলো তো।”

“ঘটনা আবার কি?”

“এরা, ভাইয়ার কলিগের ফ্যামেলি তাই না।”

“হুম।”

“কেন এসেছে?”

“ওমা কেন আসবে? তুই কেমন করে বলছিস রে সায়রা।”

“ভাবি, আমি কিন্তু বুঝতে পারছি।”

“কী বুঝতে পারছিস?”

সায়রা থম ধরে থাকে। জুথি নাশতার ট্রে দিয়ে ফিরে আসে। তারপর বলে,”শোন, তোর প্রতি আমাদের দায়িত্ব আছে।”

“দায়িত্বের নাম করে তাড়িয়ে দিতে চাইছো ভাবি?”

জুথি হাসে। সায়রার গাল স্পর্শ করে বলে,”যদি তেমনটি ভাবিস, তবে তেমনটিই।”

“ভাবি।”

সায়রার মুখে অসহায়ত্ত্বের ছায়া। জুথি একটা নিশ্বাস ফেলে। কিছুটা গুমোট স্বরে বলে,”তুই কী সারাটা জীবন বিয়ে না করেই থাকবি?”

এ প্রশ্নের জবাবে সায়রা মৌন থাকে। ভাবে কি বলা যায়। আসলে উত্তরটি ওর হৃদয়ে আছে। তবে বের হতে চাচ্ছে না। ও একটু সময় গেলে জবাব দেয়,”হ্যাঁ ভাবি। আমি সারা জীবন এমনই থাকব। এই জীবন অনেক সুন্দর ভাবি।”

“এসব শুধুই কল্প খেয়াল সায়রা। জীবনে একা থাকা যায় না। ওসব মানুষ ভাবতেই পারে। ভাবনাতেই সুন্দর লাগে। আদতে এসব মানুষকে অসুস্থ করে তুলে।”

“কেন জীবনে একা থাকা যায় না?”

“অনেক কারণ আছে।”

“ছয় বছরের সম্পর্ক ছিল। অথচ আমি কিন্তু একাই আছি। সম্পর্কের কোনো মূল্য আছে বলো তো? যখন তখন ভে ঙে যেতে পারে। কোনো নিশ্চিয়তা নেই।”

“সব ই বুঝলাম। তবে তুই তো এভাবে থাকতে পারবি না। সঙ্গীর প্রয়োজন পড়বেই।”

“আমার কাছে আমিরা আছে ভাবি।”

“মানলাম আমিরা আছে। তবে তুই ই বল, ও কি সারাজীবন তোর কাছেই থাকবে? এটা সম্ভব?”

এবার সায়রার মাথায় চিন্তা ভর করে। সত্যিই তাই। আমিরা তো সারাজীবন তার কাছে থাকবে না। মেয়েটি বড়ো হচ্ছে। একটি নির্দিষ্ট সময় পর আমিরাকেও বিয়ে দিতে হবে। তখন সায়রার কি হবে? অনেক রকমের চিন্তা এসে ভর করল সায়রার মস্তিষ্কে। ও শুকনো ঢোক গিলল। গলা ভেজানোর প্রয়াস করল। তবে সবটাই ব্যর্থ।

মারুফের কলিগ সহ তার পরিবার খাবার খেতে বসেছে। আর পরিবেশন করে চলেছে সায়রা। ও যথেষ্ট নম্র, ভদ্র। খুবই সাধারণ আচরণ করছে। সেই সুযোগেই জুথি বলল,”তাহলে কী আজ ই কথা বলব?”

“ভাবি আমার সময়ের প্রয়োজন।”

এ কথার পর জুথি আর কিছু বলল না। খুব স্বাভাবিক ভাবেই তাদের খাবারের তদারকি করতে লাগল। মেহমান দের বিদায় দিয়ে সায়রা এল নিজের ঘরে। তারপর পুরনো সব জিনিসপত্র বের করল। যার সব কিছুতে সাঈদের স্মৃতি মিশে আছে। ও ধীরে স্বস্তে সব গুলো স্মৃতি গুছিয়ে রাখল। জুথি সেসব দেখে বলল,”তোর উচিত, এসব ফেলে দেওয়া।”

“থাক না পুরো অতীত। ফেলে দিলেই তো মুছে যাবে না।”

“যেই মানুষ টাই তোর নেই, তার জিনিস ধরে রাখার কোনো দরকার কী আছে?”

“ভাবি, এসব যখন সাঈদ আমাকে দিয়েছিল, তখন ও কিন্তু আমার ই ছিল। আমি চাইলেই সেই সময় গুলো অস্বীকার করতে পারব না। এটা সম্ভব না।”

জুথি চুপচাপ সব দেখতে থাকে। সায়রা কাবাড বন্ধ করে পুনরায় বলে,”তবে আজকের বিষয়টা ঠিক হয় নি। তারা যে আসবে এটা আমাকে বলে নেওয়া উচিত ছিল।”

“তুই, বললে নিষেধ করে দিতি।”

“তা করতাম। তবে তোমাদের বলে নেওয়া উচিত ছিল। আমার খুব আন ইজি লেগেছে।”

জুথি বুঝল বিষয়টা আসলেই ভুল হয়েছে। ওর একটু মন খারাপ হলো। তবে যা হবার তা তো হয়েছেই। চাইলেই তো পরিবর্তন সম্ভব না।

রাতের খাবারের সময় মারুফ বলল,”আমিরা স্কুলে ভালো ফলাফল করছে। আজ ফেরার পথে ওর ক্লাস টিচারের সাথে দেখা হয়েছিল। স্যার বেশ প্রশংসা করলেন।”

সায়রার ভালো লাগল। ও আমিরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,”ও তো সবসময়ই ব্রাইট ছিল ভাইয়া।”

“হুম। শুধু শেষ সময়ে ঐ জানোয়ারটা….”

ভাইকে আটকে দেওয়ার প্রয়াসে সায়রা বলল,”বাদ দাও ওসব কথা। আমিরা তোর খাওয়া হয়েছে? খাওয়া শেষ করে সোজা ঘুমাতে যাবি।”

আমিরা মাথা দু দিকে দুলিয়ে ভাতের শেষ লোকমা তুলে চলে গেল। সায়রা নম্র সুরে বলল,”ভাইয়া, আমি চাই, আমিরা যেন কখনো অতীত স্মরণ না করে। ওর বাবার প্রতি ঘৃণা এমনিতেই আছে। তবে চাই না সেটা স্মরণ করে ও কষ্ট পাক।”

মারুফ কথাটা বুঝতে পারল। ও সেটা মেনে নিয়ে বলল,”আচ্ছা ঠিক আছে। আর কখনো ওর সামনে বলব না এসব। এখন তুই বল, সামনে কী করবি?”

“গ্রাজুয়েশন শেষ করে জব নিব। আর সাথে মাস্টার্সটা ও কমপ্লিট করব।”

“সেটা না হয় করবি। তবে মাস্টার্সের আগে বিয়েটা করে নিলে হয় না?”

“এত বিয়ে বিয়ে কেন করছো ভাইয়া? আমি তো তোমাদের ঘাড়ে বসে খাচ্ছি না। তোমরা কেন বুঝতে পারছো না আমি এখন বিয়ে করতে চাই না। সব সময় বিয়ে বিয়ে আর বিয়ে। বিয়ে ছাড়া জীবনে কী আর কিছু নেই?”

হুট করেই সায়রা যেন রেগে গেল। মারুফ কিছু বলতে যাচ্ছিল তবে ওকে চোখের ইশারায় থামিয়ে দিল জুথি। সায়রা খাবার না খেয়েই ওঠে গেছে। জুথি একটা নিশ্বাস ফেলে বলল‍,”ওর সময় দরকার। মাত্রই বিষয় গুলো মেনে নিতে শিখেছে।”

মারুফ কথা বলে‍ না। চুপ করে থাকে। বোনের কষ্ট সেও উপলব্ধি করে। তবে বয়স হচ্ছে। এমনিতেই আশে পাশের মানুষ আড়ালে আবডালে মেয়েটির নামে সমালোচনা করে। কত সমস্যা রয়েছে। যা ওকে, বাধ্য করে বিয়ের কথা তুলতে।

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ ন‍ৌশি

পর্ব (১০)
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=403959508831616&id=100076527090739&mibextid=2JQ9oc

| সামাজিক জনরার গল্প, আমি চাইলেই টেনে নিতে পারব না। গল্পটা আসলে আটকে আছে না, একটা ফ্লো তে আগাচ্ছে। আর আমি অসুস্থ, বিলম্বের জন্য দুঃখিত। দোয়ায় রাখবেন। আর সামনে বইমেলা, ব্যস্ততা ও বেড়েছে।|

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here