মুগ্ধতার_এক_বিকেল (১৪)

0
214

#মুগ্ধতার_এক_বিকেল (১৪)

এ যাত্রায় বেঁচে গিয়েছে সায়রা। আহনাফের জন্মদিনটা ভালোই ভালোই পার হলো। আগের মতন দামি উপহার না দিতে পারলেও যেই উপহারটি এনেছে সেটা সুন্দর। আর আহনাফের পছন্দ হওয়ার মতনই। তবে অনুষ্ঠানে হাসি খুশি মেজাজ দেখালেও সে ভেতরে ভেতরে আসলে বড়ো দুঃখী ছিল। অনেকদিন পর সাঈদকে দেখেছে কী না। ছেলেটা ওর প্রথম ভালোবাসা। কথায় আছে প্রথম ভালোবাসা বড়ো কাঁদায়। আহারে সায়রা। ছয়টা বছর গেল একটি সম্পর্কে। অথচ পাওয়া হলো না। না পাওয়ার এই গল্পে কারো দোষ নেই। না ওর, আর না সাঈদের। ওরা এখন কেবল একটি সুন্দর জীবনের জন্য প্রার্থনা করতে পারে। ব্যাস, এইটুকুই। সায়রা মন থেকেই চায় সাঈদ অসম্ভব ভালো থাকুক। হয়তো এক সাথে পথচলা হলো না। তবে দুজন দুজনের প্রতি যে শ্রদ্ধা সেটি তো মিথ্যে হতে পারে না। দুজনই চেষ্টা করেছিল। তবে পরিবার আর পরিস্থিতি তাদের এক হতে দেয় নি। হয়তো এটাই নিয়তি। ও এখন খুব করে চায় জীবনে সাঈদ কে নিয়ে ওর আর কোনো পিছুটান না আসুক। জীবন চলুক জীবনের মতন। সাগর পাড়ে এসে এসবই ভাবছিল ও। সে সময়েই একটি বল এসে লাগল ওর বাহুতে। ও ঘাড় ঘুরিয়ে চাইল।

“বলটা এদিকে দেও সায়রা।”

সায়রা সেটি ওঠিয়ে অনুভবের দিকে ছুঁড়ে দিল। অনুভব সেটা নিয়ে আবার ছুটতে লাগল। দুজনের মাঝে বেশি দূরত্ব নেই। অথচ দুজন দুই দিকের যাত্রী। একজন সমুদ্রের কাছে দুঃখের গল্প করছে। আরেকজন ভীষণ আনন্দে সমুদ্র পাড়ে বল নিয়ে খেলছে।

সায়রার খুব কান্না পাচ্ছে। তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। ওর মনের ভেতর একটা দুঃখ চলছে। এত যন্ত্রণা কেন এই হৃদয়ে? ও আলগোছে বালিতে বসে পড়ল। ঢেউ এসে ছুঁয়ে গেল সমস্ত শরীর। সায়রার দু চোখ থেকেও নোনা জল নামল। একটা সময় পর মেয়েটি চিৎকার করে ওঠল। এই পৃথিবী ওকে অসহায় করে তুলেছে। ওর জীবনের সব রঙ হারিয়ে গেছে। আহারে কী এক যন্ত্রণা।

ভিজে একাকার হয়ে রিসোর্টে ফিরল সায়রা। অনুভব তখন ফোন নিয়ে ভিডিও করছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ একটিভ সে। কিছু ফ্যান ফলোয়ার ও আছে। তাদের নিয়েই ভবঘুরে অনুভবের দিন চলে। আর কোনো ভাবনা নেই তার মাঝে। সে মুক্ত ভাবে জীবন যাপন করে। ভিডিও করে র এক পর্যায়ে সায়রাকে দেখতে পেল। ভিজে শরীর মেয়েটার।

“এই সায়রা, ভিজেছ কেন?”

“এমনি।”

“হুম প্রেমিকের সাথে ভিজেছ?”

সায়রা এবার বিস্ফোরিত নয়নে তাকাল। অনুভব একটু ভরকে গেল। মেয়েটির চোখ থেকে যেন উত্তাপ নামছে। হুট করে কি যে হয়ে গেল।

“কী সমস্যা তোমার? সব সময় কেন প্রেমিক প্রেমিক করো। বলেছি না আমার কোনো প্রেমিক নেই। তাহলে কেন বার বার এমন বলো? তুমি এমন কেন অনুভব? কেন এমন?”

কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল সায়রা। অনুভব হা হয়ে চেয়ে রইল। কী এমন বলেছে সে? এতটা রিয়েক্ট করার মতন কিছু কী ছিল বাক্যটিতে?

পুরো সন্ধ্যা মন খারাপ করে রইল অনুভব। সে কখনোই সায়রাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য কিছু বলে না। তবে প্রেমিক শব্দটি বললেই ও কেমন করে ওঠে। এটিই ভাবিয়ে তুলল ওকে। আমিরা আর আহনাফ খেলছিল। ওদের মাঝে গিয়ে দাঁড়াল অনুভব। আমিরা নাক ছিটকে রইল।

“আমিরা, এদিকে শোনো তো।”

অনুভব এত সহজ করে কথা বলছে! এটি ছোট্ট আমিরাকে অবাক ই করল।

“একটা কথা বলবে?”

আমিরা চেয়ে রয়। অনুভব সংকোচ ছাড়াই বলে,”তোমার মিমির কোনো প্রেমিক আছে?”

আমিরা এবার যেন বিরক্তই হলো। অনুভবের দৃষ্টিতে ভরা উদাসীনতা।

“কী হলো?”

“কেন বলব?”

“বলো না। বললে তো তোমায় কেউ মা র ছে না। সায়রার কোনো প্রেমিক আছে?”

“আমি মিমির কোনো কথা কাউকে বলি না।”

এটা বলেই চলে যায় আমিরা। অনুভব চেয়ে থাকে। মনে মনে বলে, যেমন খালামনি, তেমন হয়েছে ভাগনি!

রাতের খাবারের সময় অনুভব আর সায়রার দেখা। আজকে বার বি কিউ’র আয়োজন হয়েছে। একদম সমুদ্র ঘেঁষে। শান্ত সমুদ্রের পাড়ে মাঁদুর পেতে বসেছে সবাই। আগুন জ্বালানো হয়েছে। অনুভবের চোখ লাল হয়ে আছে। সে ভীষণ অনুতপ্ত। পুরো সন্ধ্যা সে ভেবেছে। হয়তো সায়রার মনে কোনো দুঃখ আছে। আর সেই দুঃখটি সে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

“সায়রা শোনো।”

অনুভব একদম কাছে এসে কথাটা বলল। সায়রা মাথা ঘুরিয়ে চাইতেই দুজনের চোখাচোখি হলো। সায়রা আশেপাশে চেয়ে দেখল অনেক মানুষ। ও একটু বিব্রত হলো।

“আমি আসলে খুবই দুঃখিত। জানি না কীভাবে তোমায় কষ্ট দিয়ে ফেললাম।”

“ইটস ওকে।”

“সত্যি বলছি ইচ্ছা করে ওমন করি নি…”

ফোঁস করে দম ফেলে সায়রা। নিজের মনকে শীতল করে বলে,”আমার ও ওভাবে রিয়েক্ট করা উচিত হয় নি। আসলে একটু মেন্টালি ডিস্টার্ব ছিলাম। কিছু মনে কোরো না।”

অনুভব চুপ। সায়রা ও চুপ। দুজন আর কথা বলছে না। একটা সময় পর দুজনই একই সঙ্গে বলে,”যা হবার হয়েছে।”

একই সাথে এক কথা বলে ফেলায় দুজনেই হেসে ফেলে। অনুভব মাথায় চুলকায়। হাত বাড়িয়ে বলে,”ফ্রেন্ড?”

হাতটি স্পর্শ না করে সায়রা হাসে। বলে,”ফ্রেন্ড হলে কিন্তু অনেক জ্বা লা। নিতে পারবে তো?”

“পারব।”

সায়রা হেসে নেয়। হাতের সাথে এক সেকেন্ডের মতন হাত মিশিয়ে বলে,”ওকে ডান।”

এই এক সেকেন্ড ই হয়তো অনুভবকে ধ্বং স করার জন্য যথেষ্ট হয়ে পড়ে। অনুভব নামের পাগল ছেলেটির মনেও মিষ্টি এক অনুভব জাগে। যাকে সহজ করে বলা যায় ভালোবাসা।

সাঈদ এক ঝলক দেখে নেয় সায়রা আর অনুভবকে। দুজন দুজনার প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছে। এদিকে ওর অন্তর জ্ব ল ছে। ও একটা নিশ্বাস ফেলে। চোখ বন্ধ করে। সায়রা কে দেখতে পায়। ভীষণ ভাবে মনে পড়ে ছয়টা বছরের স্মৃতি। অর্ধ যুগ। কম সময় নয় নিশ্চয়ই।

“স্যার, আপনাদের লাগেজ গাড়িতে ওঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আপনার ওয়াইফ দাঁড়িয়ে আছেন।”

সাঈদ মৃদু সুরে বলে,”হু।” তারপর আবার ডুবে যায়। সায়রা আর অনুভব এখন পাশাপাশি হাঁটছে। দুজনের মাঝে যে সামান্য দূরত্ব সেটাও ক্রমে ছোট হয়ে আসছে। সাঈদের চোখে ভাসছে দুজন দুজনার হাত বেছে নিয়েছে। ওর চোখে ভাসছে দুজনার সুন্দর সংসার। বিভ্রম দেখে সে। অথচ মন বলে এই বিভ্রম সত্যি হতে চলেছে। সাঈদ ঠোঁট থেকে
জ্ব ল ন্ত সিগারেট নামিয়ে বালিতে ফেলে। পা দিয়ে পিঁষে বলে,”আমার প্রিয়তমা সায়রা। ভালো থেকো, সব সময়।”

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

(১৫)
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=413211394573094&id=100076527090739&mibextid=Nif5oz

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here