#অর্ধ_নক্ষত্র ।৫।
#লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati
মেহরার হাত ধরে গাড়িতে উঠে বসে আরশমান।মেহরা ভাঙ্গা কণ্ঠে বলে,”হাত ছাড়ুন আরশমান আমার যেতে হবে।আমি শেষ বার সাওফয়ান কে দেখতে চাই।”
আরশমান মেহরার হাত ছেড়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলে,”আসার সময় শাশুরি মার থেকে আপনার খাবারের বক্স টা নিয়ে এসেছিলাম,ভেবেছিলাম জামাই বউ মিলে প্রেমালাপ করতে করতে লাঞ্চ করবো কিন্তু নাহ আপনি তো সাওফয়ান এর নাম নিয়েই যাচ্ছেন।আপনি কী বুঝেন না আপনার মুখে বারংবার ওর নাম শুনে আমার কেমন লাগছে।যাইহোক চলুন শেষ বার ওর ওই মুখ আপনাকে দেখিয়ে আনি।”
মেহরা উত্তর দিলো না চাপা নিশ্বাস ছাড়লো।সকালেই খবর পেয়ে ছুটে এসেছিল মেহরা।এসেই র ক্তা ক্ত সাওফয়ান কে চোখের সামনে দেখে অন্তর আত্মা কেঁপে উঠে তার।মন চাইছিল সাওফয়ান কে একবার জাপটে ধরে চিৎকার করে কাদবে।কিন্তু তা হয়ে উঠল না নিজের পেশার দরুন,পাথরের মত দাড়িয়ে চেয়ে চেয়ে দেখলো র ক্তা ক্ত সাওফয়ানের ঘুমন্ত দেহটিকে।
শব্দ তুলে আরশমানের ফোন বেজে উঠল।এক হাতে পকেট থেকে ফোন বের করে ফোনের স্ক্রিন দেখে নিলো অতঃপর ফোনটি মেহরার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,”জুনায়না ফোন করেছে কথা বলুন।”
মেহরা হাত বাড়িয়ে ফোনটি নিয়ে কানে চেপে ধরলো।ঐপাশ থেকে জুনায়না বলল,”মেহরা আমরা সবে সাওফয়ান এর বিরুদ্ধে আরও প্রমাণ পেয়েছি।সাওফয়ান চৌধুরী ড্রা গ স নিত।নারী পা চা র সহ আরও বিভিন্ন খা রা প কাজে জড়িত ছিলো ও।এইসব কাজে ওর লোক আসিফ সহ দলের অনেকেই জড়িত আছে।আমরা আরোও নিশ্চিত হতে চাই,কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সাওফয়ান এর লা শ টি কে পোস্টমর্টেম করার জন্য পাঠানো হবে।”
সাওফয়ান এর বিরুদ্ধে সকল প্রমাণ আরশমান জুনায়না কে দিয়ে রেখেছিল।জুনায়না সেই সকল প্রমাণ উপর মহল অব্দি সময় বুঝে পৌঁছে দিয়েছে আজ।
মেহরার দম বন্ধ হয়ে এলো,চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো কম্পিত কণ্ঠে বলল,”জুনায়না আমি আসছি।”
আরশমান পাশে তাকিয়ে দেখে নিলো মেহরা কে। থমথমে গলায় বলল,”শুধু নারী পা চা র নয় সাথে আপনাকেও পা চা র করার কথা ভেবেছিল মেহরা।”
মেহরা তড়িৎ গতিতে ঘাড় ঘুরিয়ে আরশমান এর দিকে তাকায়।ধরে আসা কণ্ঠে বলে,”কী বলছেন এইসব?সাওফয়ান দেশ দ্রো হী খারাপ কাজে লিপ্ত হতে পারে কিন্তু কখনো এমনটা করতো না সে।ভালোবাসতো আমাকে।”
“করতো মেহরা করতো।”
মেহরা কানে দুই হাত চেপে ধরে চেঁচিয়ে বলে,”থামুন আরশমান আমি আর নিতে পারছি না।দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার।”
আরশমান চুপ হয়ে গেলো ফিরে তাকালো।মেয়েটা ছটফট করছে খুব।কানে দুই হাত চেপে ধরে নেত্র দুটো খিচে বন্ধ করে গাড়ির একদম কোণায় গা ঘেঁষে বসে আছে।আরশমান এক হাতে মেহরার বাহু ধরে হেঁচকা টানে নিজের বুকে নিয়ে এলো,মেহরা ভড়কে গেলো সরে আসতে চাইলো।আরশমান এক হাতে ড্রাইভিং করছে আরেক হাতে মেহরা কে চেপে ধরে রেখে বলল,”একদম নড়বেন না।এইখানেই থাকুন।কাদতেঁ ইচ্ছে করছে তাহলে করুন কান্না তাও এইখানে থেকেই।আপনার মনে যত কথা চাপা রয়ে আছে বলে ফেলুন,আমি বাধা দিব না।আমাকে নাহয় বন্ধু ভেবে নিজের কষ্ট গুলো ভাগ করে নিন মেহরা।”
মেহরা আরশমানের শার্ট খামচে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।এইসময় তার একটি স্থান প্রয়োজন যেইখানে সে তার মনের চাপা কষ্ট গুলো ঝেড়ে ফেলতে পারবে,পেয়ে গেলো সে।মেহরা কাদতেঁ কাদতেঁ বলল,”আমার বুকের ভিতর টা হাহাকার করছে।আমার ভাগ্যে এমন লিখন না হলেও পারতো,এমন করে মরণ যন্ত্রণা সহ্য করতে হতো না আমাকে।আমার জীবন টা কেমন অগোছালো হয়ে উঠল আরশমান।হুট করেই আমার জীবনে আপনার আগমন,সাওফয়ান এর পরিবর্তন,পাগলামোকে বাড়িয়ে তোলে।শেষে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া আর এখন চিরতরে আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়া।”বলে মেহরা আরো শক্ত করে খামচে ধরলো আরশমান এর শার্ট,মেহরার নখের আঁচড় লাগলো আরশমান এর বুকে সঙ্গে সঙ্গে জায়গাটি জ্বালা করে উঠলো।আরশমান কোনো প্রকার প্রতিক্রিয়া করলো না।বরং দৃঢ় করে চেপে ধরলো মেহরার বাহু।মেহরার মুখে অন্য পুরুষের কথা আরশমানের সহ্য হচ্ছে না তবুও মেয়েটি কে যদি সে সামলে না নেয় কে সামলে রাখবে তাকে।
.
আধ ঘন্টার মধ্যে থানায় চলে আসে মেহরা,আরশমান।
সাওফয়ান এর লাশটি এখনও থানায় রয়েছে।মেহরা এগিয়ে যায় কম্পিত হস্তে সাদা রঙ্গা ব্যাগের চেইন খুলে সাওফয়ান এর মুখটি দেখে নেয়।সঙ্গে সঙ্গে মেহরার মস্তিষ্কে হানা দেয় রাজনীতিতে প্রবেশ করার পর সাওফয়ান মেহরাকে বলেছিল,”আমি চাই আমার মৃত্যু যেনো আমার মহুয়ার আগে হয়।মহুয়া আমি মরে গেলে আমার লাশের পাশে এসে কিছুক্ষন বসে থেকো কেমন।তারপর তোমার ঐ অদূরে কণ্ঠে বলিও ভালোবাসি সাফু।উত্তরে হয়তো তখন কিছুই বলতে পারব না তবে আমার আত্মা টা শান্তি পাবে।তুমি তো গ্রাম থেকে আসার সময় প্রথম তোমার অদূরে কণ্ঠে বলেছিলে ভালোবাসি সাফু।আমি জীবনের শেষেও তোমার অদূরে কণ্ঠে ভালোবাসি কথাটা শুনতে চাই।”
মেহরা বিড়বিড় করলো,”এইসব কী নাটক ছিলো সাফওয়ান?”বলে ব্যাগটির চেইন লাগিয়ে সরে আসলো মেহরা চোখমুখ মুছে শক্ত কণ্ঠে জুনায়নার দিকে তাকিয়ে বলল,”ওর দলের যেই মানুষগুলো ওর সাথে জড়িত ছিলো তাদের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে?”
আরশমান বুকে দুই হাত গুজে হুট করে পাল্টে যাওয়া মেহরার মুখাবয়বের দিকে চেয়ে রইল।
.
জাহরা হাত ঘড়িতে সময় দেখে পাশের ড্রায়ার থেকে খাবারের ব্যাগটি বের করতেই কেবিনের দরজা ঠেলে ফাইজ প্রবেশ করলো,দাঁত কেলিয়ে হাসছে সে।জাহরা ভ্রু কুঁচকে বলল,”ফাজিল লোক ভদ্রতা জানেন না?নক করে অনুমতি নিয়ে আসতে পারেন না?”
ফাইজ ভিতরে ঢুকে দরজার নব ঘুড়িয়ে দরজা আটকে বলে,”আরেহ মিস অসভ্য মহিলা তুমি আমার এক মাত্র বেয়াইন তোমার কেবিনে আসতে কীসের অনুমতি?”
জাহরা তেঁতে উঠে বলল,”এই অসভ্য মহিলা মানে কী?”
ফাইজ জাহরার পাশে চেয়ার টেনে বসে তার এক হাতে থাকা ফাইল ও একটি লাল রঙের ব্যাগ জাহরার টেবিলে রেখে বলল,”এমন আগুনের গোল্লার মত তেঁতে উঠো কেনো?এইভাবে তেঁতে উঠলে তোমাকে ভয়ংকর লাগে না বরং একটা লাল টুকটুকে স্ট্রবেরির মত লাগে মন চায় খেয়ে ফেলি।”
জাহরা বিস্মিত কণ্ঠে বলে,”হেইন!!!”
ফাইজ জাহরার হাতে থাকা খাবারের ব্যাগটি কেড়ে নিয়ে বলে,”কী হেইন?চলো এক সাথে লাঞ্চ করি আমাকেও আন্টির এই সুস্বাদু খাবার খাওয়ার ভাগ্য করে দাও মিস জাহরা খাতুন।”
জাহরা নাক কুঁচকে ব্যাগটি শক্ত করে ধরে বলে,”আমি কোনো খাতুন নাফা জি ল লোক।আপনার ভাগ্যে আমার মায়ের খাবার নেই যান ফুটুন এইখান থেকে,ভাগুন।”
ফাইজ জাহরার সাথে ব্যাগটি কাড়াকাড়ি করতে করতে চোখ মেরে বলল,”তুমি আমার সাথে ভেগে যেতে চাইলে আমরা দুইজন এক সাথে ভাগতে পারি বেয়াইন।”
জাহরা ব্যাগটি ফাইজ এর হাত থেকে টানতে টানতে বলল,”আপনার মত তারখাম্বা,ফা জি ল,
রা ক্ষ স লোকের সাথে ভেগে যাওয়ার থেকে তো উত্তম নিজেকে বাঘের খাঁচায় সপে দেয়া।”
“দেখো আবার নিজেকে বাঘের খাঁচায় সপে দিতে গিয়ে ভুলবশত আমার কাছে নিজেকে সপে দিও না।”,বলেই এক টানে ব্যাগটি নিয়ে নেয় ফাইজ।জাহরা চেয়ার ছেড়ে উঠে ফাইজ এর চুল মুঠ করে টেনে ধরে বলে,”আহ আমার খাবার দিয়ে দিন নাহয় আপনার চান্দী ফাটিয়ে দিবো বলে দিলাম।”
ফাইজ কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না দ্রুত ব্যাগটি থেকে খাবারের বক্স বের করে জাহরার দিকে তাকালো।শুকনো ঢোক গিললো ফাইজ।জাহরার মাথায় ওড়না দিয়ে টেনে রাখা ঘোমটাটি নেই সরে গিয়েছে।সারাক্ষণ জাহরার মাথায় কপাল অব্দি ওড়না টেনে ঘোমটা থাকে,ঘোমটা ছাড়া সবেই জাহরা কে দেখলো ফাইজ।
জাহরার পূর্বেই ফাইজ এক অদৃশ্য অধিকারবোধ দেখিয়ে দ্রুত জাহরার ওড়না ধরে জাহরার মাথার উপর দিয়ে দেয়,জাহরার হাতের কব্জি ধরে নিজের চুল থেকে জাহরার হাত ছাড়িয়ে নেয়,বলে,”এই শুনুন জাহরা খাতুন ওরফে অসভ্য মহিলা আমার সাথে এমন করে ঝগড়া করার সময় নিজের ওড়না সামলে রাখবেন।আমি যেনো কখনও না দেখি আপনার ঘোমটা মাথার উপর থেকে সরেছে।”
জাহরা চোখ ছোট ছোট করে বলে,”এইসব নামে আমাকে একদম ডাকবেন না আর আমার ঘোমটা সরে গেলে আপনার সমস্যা কি মিস্টার ফাজিল?”
ফাইজ প্রতুত্তর করলো না সে তো তার দৃষ্টি সরিয়ে বক্স থেকে খাবার নিয়ে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে।তার মুখশ্রী খুশিতে জ্বলজ্বল করছে,মজার মজার খাবার পেলেই ফাইজ দিন দুনিয়ার কথা ভুলে যায়।সে তো এই খাবারের টানেই জাহরার কেবিনে এসেছে।
জাহরা চেঁচিয়ে বলে উঠলো,”এই আপনি আমার খাবার খেয়ে ফেলছেন কেনো?”
ফাইজ খুব আবেশে বলল,”আহ জাহরা খাতুন খাবার টা খেতে ঝাক্কাস হয়েছে।আফসোস আমার মা যদি এমন করে রাঁধতে পারতো।তবুও মায়ের খাবার আমার ইমারজেন্সি ক্ষুধার লাল বাত্তিকে সামলে নিতে পারে।”
জাহরা খেয়াল করলো এখনও তার এক হাতের কব্জি ফাইজ শক্ত করে রেখেছে।জাহরা নিমগ্ন হয়ে ফাইজ এর হাত কা ম ড়ে ধরে।ফাইজ চেঁচিয়ে উঠে বলে,”আহ শাকচুন্নি মাইয়া আমার হাত খাইয়া দিলো রে!বইন আমার হাত ছাইড়া দে আমার মাংস খাইয়া তুই মজা পাবি না ছাড়।”,জাহরা চোখে হাঁসলো আরো জোরে কা ম ড়ে ধরলো।ফাইজ চেঁচিয়ে পুনরায় বলল,”প্লিজ বইন ছাড় তোর খাবারের দিকে আর জীবনেরও নজর দিবো না আমি।আমার হাতের মাংস খাইয়া ফেলিস না রে বইন ছাড় তোরে বরং আমি খাসির মাংস কিনে দিবো নে ওইগুলো খাইস আমার হাত ছাড়।”
জাহরা ছেড়ে দিলো ফাইজ এর দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেঁসে উঠল।ফাইজ ঠোঁট উল্টে নিজের হাত টা একবার দেখে নিল ইশ!হাতে কা ম ড়ের চিহ্ন বসিয়ে দিয়েছে হালকা র ক্ত বেরিয়ে আসছে।
ফাইজ জাহরার মাথায় গাট্টা দিয়ে খাবারের বক্স নিয়ে এক দৌড়ে দরজার কাছে চলে যায়।জাহরা তার হাসি থামিয়ে মাথায় হাত দিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।ফাইজ মুখ ভেংচে বলে,”পেঁচার মত মুখ করে লাভ নেই এই পুরো খাবার আর পাচ্ছ না তুমি হাহ গেলাম আমি।”,বলেই কেবিনের দরজা খুলে বেরিয়ে যায় ফাইজ।
জাহরা মাথায় হাত রেখে বলল,”আহ ফা জি ল,
বে য়া দ ব,পেটুকের তিন নাম্বার বাচ্চা আমার খাবার ডাকাতি করে নিয়ে চলে গেলো।তোকে পেয়ে নেই
হা রা মী তোর ফুটবলের মত পেট ফুটো করে দিবো।”
কেবিনের দরজা ঠেলে আবার কেউ প্রবেশ করতে নিলে জাহরা তেঁতে বলে উঠে,”পেটুকের তিন নম্বর বাচ্চা তুই আবার এসেছিস।তোর ফুটবলের মত পেট আমি ফুটো করে দিবো।”
ডক্টর হোসেন তাঁর ফুটবলের মতো পেটে হাত বুলিয়ে বলল,”আমি একদম পেটুক না আর আমার পেট টাও তো কোনো ফুটবল না জাহরা।”
জাহরা বিড়বিড় করে বলে,”টাকলা তোর পেট ফুটবল না হলেও আস্ত একটা স্টেডিয়াম।”
ডক্টর হোসেন এগিয়ে এসে বলল,”কী বিড়বিড় করছো জাহরা?”
জাহরা পুনরায় বিড়বিড় করে বলল,”আমি কী বিড়বিড় করছি তাও কি তোকে বলতে হবে নাকি টাকলা।এই টাকলা,ফুটবল স্টেডিয়াম এর মত পেট নিয়ে কী ভেবে যে আমার পিছনে পড়ে থাকে।দেখতে তো আমার নানার মত।”
ডক্টর হোসেন মেডিসিন বিভাগের ডক্টর।সে প্রথম থেকেই জাহরার পিছনে পড়ে থাকে কোনো না কোনো কারণে।জাহরা অনুরোধের স্বরে বলল,”ডক্টর আপনার সাথে যদি পরে কথা বলি কোনো সমস্যা হবে কি?আমার এখনও লাঞ্চ করা হয়নি।”
ডক্টর হোসেন দ্রুত বললেন,”ওহ তাহলে আমি পরে আসছি তুমি ভালো করে খাওয়া দাওয়া করো।”
ডক্টর হোসেন চলে গেলেন।জাহরা বড় করে নিঃশ্বাস ছেড়ে ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো।টেবিলের দিকে নজর দিতেই এক কোণায় থাকা ফাইজ এর আনা ফাইল ও লাল ব্যাগটির দিকে নজর পড়ল।জাহরা ঠিক হয়ে বসলো ব্যাগটি হাতে নিয়ে ব্যাগটির ভিতর থেকে একটি বক্স বের করলো।বক্সের উপর স্টিকি নোট দেয়া,”তোমার খাবারে নজর পড়েছে আমার আমি জানি সব আমি খেয়ে ফেলবো।তাই বক্সের ভিতর তোমার জন্য দুইটা স্যান্ডউইচ রয়েছে খেয়ে নিবে মাই ডিয়ার অসভ্য বেয়াইন।”
জাহরা দাঁতে দাঁত পিষে ফাইজ কে গালি দেয়া সহ তার পুরো গুষ্টি উদ্ধার করলো।অতঃপর পেটে হাত বুলিয়ে বলল,”খেয়ে ফেলি প্রচুর ক্ষুধা লেগেছে।খেয়ে আবার ওই ফাজিলের গুষ্টি উদ্ধার করবো নাহয়।”
.
অনেক আগেই সূর্য অস্ত গিয়ে অন্ধকারে ঢেকে এসেছে আশপাশ।ঘড়ি জানান দিচ্ছে এখন আটটা বেজে চল্লিশ মিনিট।আরশমান এখনও মেহরার পাশে।থানার সকল ইন্সপেক্টর অবাক চোখে দুপুর থেকে দেখে যাচ্ছে দুজনকে,মেহরা যেদিকে যাচ্ছে আরশমান সেইদিকে।
মেহরা চেয়ারে বসে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলো তার সামনে গালে হাত রেখে আরশমান চেয়ে চেয়ে দেখছে মেহরা কে।মেহরা গ্লাস শব্দ করে টেবিলে রেখে ভ্রু কুচকে ভাঙ্গা কণ্ঠে বলল,”এইযে আপনার কী কাজ নেই আমার পিছন পিছন মুরগির বাচ্চার মত ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেনো?”
“কী বলো রূপসী আজকে তোমার জন্য সকল কাজ স্থগিত রেখেছি।আজ দিনটা শুধুই আমার বউ,রূপসীর জন্য।”,বলে আরশমান পাশে বসে থাকা জুনায়নার দিকে তাকিয়ে বলল,”দোস্ত তোদের এইখানে গরম পানি পাওয়া যাবে?”
জুনায়না ঘাড় কাত করে বলল,”কেন দোস্ত কার উপর ছুঁ ড়ে মা র বি?”
আরশমান কণ্ঠে বিরক্তির রেশ টেনে বলে,”মা র বো কেনো?একটু গরম পানি পেলে তা নরমাল পানির সাথে মিলিয়ে আমার বউকে খাওয়াতাম।দেখেছিস গলার কী অবস্থা করেছে?”
জুনায়না হেঁসে তার পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষ ইন্সপেক্টর কে অদূরে কণ্ঠে বলে,”এইযে শুনুন না একটু হালকা গরম পানির ব্যবস্থা করুন।”
পুরুষটি হেঁসে চলে যায়।জুনায়নার পিছন থেকে গলা খাকারির শব্দ তাঁর কানে ভেসে আসে।জুনায়না পিছন ফিরে তাকায়, খুশিতে জলদি করে দুই হাত বাড়িয়ে দেয় অদূরে কণ্ঠে বলে,”দোস্ত তুই আসছস!কোলে নে আমাকে।আমি অনেক ক্লান্ত দোস্ত।বাড়ি নিয়ে চল আমাকে।জলদি।”
প্রশান্ত দুই হাত বুকে ভাঁজ করে দাড়িয়ে আছে।আরশমান হেঁসে বলে,”প্রশান্ত এমন করে হাত গুঁজে না থেকে কোলে তুলে নে ,কী অদূরে কণ্ঠে বলছে তোকে।”
প্রশান্ত শান্ত কণ্ঠে বলল,”ও তো যাকে দেখে তাকেই ওর অদূরে কণ্ঠে মোহিত করে তোলে।”
আরশমান পুনরায় বলল,”তোর কাছে যেই অদূরে জুনায়না রয়েছে তা আসল।আর সময় নষ্ট না করে কোলে তুলে নে।”
প্রশান্ত বলল,”কেনো আমি কেনো।আরশমান তুই কোলে তুলে নে।”
আরশমান মেহরার দিকে তাকিয়ে বলল,”আমি তো নিয়ে নিতাম কিন্তু আজ সম্বভ না।”
জুনায়না ঠোঁট উল্টে তাঁকালো প্রশান্তর দিকে।প্রশান্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলে এগিয়ে এসে চট করে জুনায়না কে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে বাইরের দিকে হাঁটা ধরলো।জুনায়না প্রশান্তর গলা জড়িয়ে প্রশান্তর গালে চুমু খেয়ে বলল,”লাফ ইউ প্রশান্ত বাবু।”
প্রশান্ত নাক কুঁচকে বলল,”নির্লজ্য মাইয়া তুই এমন করে আমার গালে চুমু কেনো খেলি?আমি কী তোর বিয়ে করা জামাই হই যে তুই আমাকে এমন করে টর্চার করিস?”
জুনায়না প্রশান্তর বুকে মাথা গুঁজে বলল,”আমি তো তোর গালে কেনো তোর ঠোঁটেও চুমু খেতে পারি।আর তুই চাইলে আজকেই তোকে আমার ছোট বেলার বন্ধু থেকে জামাই বানিয়ে ফেলতে পারি।”
“চুপ কর।”
থানার পিছনের বড় সড়কে গাড়ি রেখে এসেছে প্রশান্ত।কৃতিম আলোয় এই শান্ত সড়কে জুনায়না কে কোলে নিয়ে হেঁটে চলেছে সে।জুনায়না প্রশান্তর বুকে অধর ছুঁয়ে দিয়ে বলে,”প্রশান্ত ভালোবাসি তোকে।বুকের এই স্থানে কিন্তু আমাকেই রাখবি।কখনো যদি জানতে পারি আমি ছাড়া এই স্থানে অন্য কোনো নারী রয়েছে ওই মেয়েকে আমি খু ন করে ফেলবো।”
প্রশান্ত জুনায়নাকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে হেঁসে বলল,”তুই ইন্সপেক্টর হয়ে একজনকে খু ন করবি সাসপেন্ড করে দিবে তোকে।জেলে বন্দি করে রাখবে।”
জুনায়না প্রশান্তর করলার টেনে নিজের কাছে এনে বলল,”তোর জন্য আমি সব করতে পারি।যদি জেলে যেতে হয় তাও যেতে পারি।”
প্রশান্ত জুনায়নার থেকে নিজের করলার ছাড়িয়ে বলল,”গাড়িতে উঠে বস।”
সুদূরে দাড়িয়ে আরশমান দেখলো ওদের দুজনের কাণ্ড।পাশেই মেহরা দাড়িয়ে সে বাড়িতে ফোন করে জেনে নিচ্ছে জাহরা বাড়িতে গিয়েছে কিনা।তার মা জানিয়ে দিয়েছে জাহরা সন্ধ্যায়’ই চলে এসেছিল।মেহরা ফোন কান থেকে সরিয়ে পকেটে ঢুকিয়ে নিতেই আরশমান মেহরার হাত ধরে হাঁটা ধরলো বলল,”মেহরা আজ যদি আপনি বাড়ি অব্দি হেঁটে যান কোনো সমস্যা হবে?”
মেহরা আকাশের পূর্ণ চাঁদের পাশে জ্বলজ্বল করতে থাকা তাঁরার পানে তাকিয়ে বলে,”আমিও আজ পায়ে হেঁটে বাড়ি যেতে চাই।”
#চলবে।
#কালেক্ট_গল্প_কথা
Story Link-গল্পের লিংক (রিভিউ+আলোচনা)💓https://facebook.com/groups/329590663119170/