অর্ধ_নক্ষত্র ।৬। #লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati

0
195

#অর্ধ_নক্ষত্র ।৬।
#লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati
থানার পিছনের দিকে বেঞ্চিতে বসে আছে মেহরা,দৃষ্টি তার মাটির দিকে।আশেপাশে পাখিরা তাদের কিচিরমিচির শব্দে মেতে উঠেছে।সূর্য তার অর্ধেক অংশ মেঘের আড়ালে লুকিয়ে রেখেছে।আজ খুব জলদি থানায় চলে এসেছে মেহরা।সবে ঘড়িতে ছয়টা বাজে।

মেহরা দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়লো।কিয়ৎক্ষণ আগেই তার বাবার সাথে ভিডিও কলে কথা বলেছে সে।লন্ডনে তখন রাত একটা,মেয়ের ফোন পেয়ে দ্রুত রিসিভ করেছেন তিনি।মেহরা তার মনের সকল অব্যক্ত অনুভূতি গুলো ভাগ করে নেয় তার বাবার সঙ্গে।মেহরার বাবা নীরবে শুনে যান মেয়ের কথা।প্রত্যেকটি কথা বলতে গিয়ে মেহরার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়া অশ্রুগুলো লক্ষ্য করে মেহরার বাবা।শেষে বলেন,”মা সাফওয়ান তোর জন্য সঠিক নয় বলেই আল্লাহ এমন লিখন লিখেছেন।তুই ওকে ভুলে যেতে শুরু কর,এখন তোর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ শুধুই আরশমান।”মেহরা চুপটি করে শুনেছিল তার বাবার বলা কথাটি।

গত কাল রাতে আরশমান মেহরার সঙ্গে হেঁটে মেহরা কে বাড়ি অব্দি পৌঁছে দিয়েছে।সমগ্র রাস্তা জুড়েই মেহরা ছিল নীরব।আরশমান চেয়ে চেয়ে দেখছিল তার নীরব রূপসী কে।বাড়ির সম্মুখে আসতেই আরশমান মেহরার হাত ছেড়ে দিয়ে মেহরার গালে হাত রেখে বলেছিলো,”মেহরা আপনার হৃদয়ের কোনো স্থানেই হয়তো আমি নেই,রয়েছে শুধু মাত্রই সাফওয়ান।আমি কখনোই চাইবো না আমার শখের নারীর চিত্তে অন্য কোনো পুরুষ থাকুক।কিন্তু আমি জানি আমি জোর করলেও আপনি নিজের হৃদয়ের মাঝ থেকে ওকে মুছে ফেলতে পারবেন না।তাই বলছি ওর সাথে আপনার কাটানো সুন্দর মুহুর্ত গুলো রেখে দিন আপনার হৃদয়ের এক কোণায় আর বাকি স্থান জুড়ে জায়গা দিয়ে দিন আমায়।”

মেহরা মুগ্ধ হয়ে শুনেছিল আরশমানের কথন।সত্যি তো কেউ জোর করলেও নিজের জীবনের প্রথম প্রেমানুরাগ কে ভুলে যাওয়া সম্ভব না।

“এত কী ভাবছেন রূপসী?”,পিছন থেকে আসা চেনা কণ্ঠে সবে বলা কথাটি মেহরার শ্রবণেন্দ্রিয়তে আঘাত হানা মাত্রই মেহরা চকিত হয়।পিছন ফিরে তাকায় বিস্মিত কণ্ঠে বলে,”আপনি এই সময়ে,এইখানে?”

আরশমান হেঁসে অগ্রসর হয়,মেহরার সামনে এসে তার পায়ের কাছে হাঁটু ভাঁজ করে বসে।প্রথমেই উত্তর না দিয়ে ঠোঁটের কোণে হাঁসি বজায় রেখে নিজ রূপসীর মুখাবয়ব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে নেয়,জলে টলমল করতে থাকা ফোলা ফোলা চোখ দুটো লাল রঙ ধারণ করেছে মেহরার।মলিন মুখ।উন্মুক্ত কেশ শীতল বাতাসে এলোমেলো হয়ে উড়ছে।আরশমান হাত বাড়িয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলে মেহরার চোখের কোণে থাকা জল মুছে দেয় প্রতুত্তরে বলল,”আমি সমগ্র দিন রাত জুড়েই তো আপনার ভাবনায় মগ্ন থাকি মেহরা।তাইতো সকালের আলো ভালো করে ফোটার পূর্বেই নিজের রূপসীর নিকট চলে এলাম।”

মেহরা দ্রুত তার চোখ মুখ মুছে নেয়।অবাক হয়ে বলে,”কিন্তু আপনি জানলেন কী করে আমি এইখানে?আজ তো আমি নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই চলে এসেছি।”

আরশমান মেহরার চুল কানের পিছনে ঠেলে দিয়ে বলে,”সিক্রেট বলা যাবে না।আর শুনুন এমন উন্মুক্ত চুলে আমার সামনে আসবেন না।এমন রূপে আপনাকে দেখলে আমার যে আপনাকে আদর করতে ইচ্ছে করে।”

মেহরা বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকায় চট জলদি দাড়িয়ে উন্মুক্ত চুল গুলো হাত খোপা করে নেয়।অতঃপর আরশমানের দিকে তাকিয়ে বলে,”আপনার মুখের লাগাম কখনোই আসবে না আরশমান?”

আরশমান হাঁসলো ভ্রু নাচিয়ে বলল,”আপনার মত বউ থাকতে আমার মুখে লাগাম টানা মানে মস্ত বড় পাপ করে ফেলা।”

মেহরা ভ্রু কুঁচকে থমথমে গলায় বলল,”মুখে লাগাম টানা পাপ এমন কথা আজ শুনলাম।শুনে রাখুন আপনি যদি লাগাম না টেনে কথা বলেন তাহলে আপনাকে ই ভ টি জিং এর মামলায় জেলে ঢুকিয়ে রাখবো।”

আরশমান দাড়িয়ে হেঁসে বলে,”নিজের হবু বউয়ের সাথে প্রেমালাপ করা বুঝি ই ভ টি জিং?যদি তেমন হয়েই থাকে তাহলে আপনি আমায় জেলে দিতেই পারেন আপনার জন্য নাহয় মশার কামড় খেয়ে বিন্দাস জেলের ভিতর জীবনটা কাটিয়ে দিবো।”

“উফ আপনার সাথে কথা বলতেই ভালো লাগে না।আপনি আমায় প্রচুর বিরক্ত করেন।”,বলেই মেহরা হাঁটা ধরে।আরশমান ধীর গতিতে মেহরার পিছন পিছন যেতে শুরু করে।

হাঁটতে হাঁটতে থানার পিছনের দিকের বড় সড়কে চলে আসে মেহরা।থানার পিছনের দিকটি মনোমুগ্ধ পরিবেশে আচ্ছন্ন,সড়কের দুই পাশে এক শাড়িতে থাকা একেক রকমের ফুল গাছে সৌন্দর্যমন্ডিত সড়কটি।আরশমান খেয়াল করলো সড়কের এক পাশে রেখে আসা তার কালো গাড়িটিকে,চট করে মেহরার পাশে হাঁটতে শুরু করলো।গাড়ির পাশে চলে আসতেই আচমকা মেহরার হাত টেনে গাড়িতে উঠে বসলো আরশমান।মেহরা ভড়কে গেলো,বুকে হাত রেখে বারকয়েক শ্বাস নিয়ে ধমকে বলল,”এইসবের মানে কী?আপনাকে আমি”

আরশমান মেহরাকে আর বলতে না দিয়ে নিজেই বলে,”কী করবেন চুমু খাবেন?ইশ মেহরা আগে বলবেন না নিন নিন দ্রুত শুভ কাজটা করে ফেলুন।একদম দেরী করবেন না নাহয় আমি নিজেই শুভ কাজটা সেরে ফেলবো।”

মেহরা ভ্রু কুঁচকে ফেললো,তার লজ্জা পাওয়া দরকার ছিল নাকি?মেহরা তিক্ত কণ্ঠে বলল,”আপনাকে লাঠি দিয়ে বিস্তর পিটুনি দেয়ার অদম্য ইচ্ছে আছে আমার।এমন উত্তম মাধ্যম মারবো না চুমু খাওয়ার শখ পিছন দিয়ে পালাবে।”

আরশমান ঠোঁট উল্টে বলে,”আপনাকে আদর করে চুমু খাওয়ারও আমার অদম্য ইচ্ছে রয়েছে,তাই আমাকে উত্তম মাধ্যম দিলেও এই ইচ্ছে কোনো জায়গা দিয়েই পালাবে না।”

মেহরার কপালের ভাঁজ পূর্বের থেকে অধিক কুঞ্চিত হলো।আরশমান চট করে মেহরার দিকে ঝুঁকে গেলো পকেট থেকে কয়েকটি কাঠ গোলাপ বের করে মেহরার খোপায় গুজে দিল,প্রফুল্ল হেঁসে নিজের আগের অবস্থানে ফিরে এলো।

মেহরা নিজের খোপায় হাত দিয়ে বোঝার চেষ্টা করে বলল,”কী করেছেন আপনি?”

আরশমান হাঁসলো পকেট থেকে ফোন বের করে মেহরা কে ঘুড়িয়ে খোপার একটি ছবি ক্যামেরা বন্দি করে নিলো।অতঃপর মেহরার দিকে ফোন এগিয়ে দিয়ে বলল,”নিজের শখের নারীর শখের কেশ সাজিয়েছি।”

মেহরা ক্ষীণ অবাক হলো।আরশমানের মুখ পানে তাকালো।সাফওয়ান’ও যে এমনি করে তার খোপায় কাঠ গোলাপ গুজে দিত।মস্তিষ্কে স্মৃতি গুলো পুনরাবৃত্ত হচ্ছে মেহরার।

আরশমান পাশ থেকে ব্যাগে মোড়ানো একটি বক্স বের করলো।তারপর ব্যাগ থেকে বক্সটি বের করে বক্সের ঢাকনা খুলতে খুলতে বলল,”আপনি এমন করে চেয়ে থাকলে আমার বুকের হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় মেহরা।”

মেহরা দৃষ্টি সরিয়ে ফেললো বলল,”তাহলে জলদি ডাক্তার দেখান আপনার হৃদপিন্ডে সমস্যা আছে।”

আরশমান হাঁসলো বক্স থেকে খাবার নিয়ে মেহরার মুখের সামনে তুলে ধরে বলল,”এইযে খেয়ে নিন রূপসী।”

মেহরা তাকালো,তার মুখের সামনে আরশমানকে খাবার ধরে রাখতে দেখে অবাক হলো বলল,”খাবার কেনো?”

আরশমান মেহরা কে প্রথমেই উত্তর করলো না মেহরার গাল টিপে ধরে মেহরার মুখের ভিতর খাবার দিয়ে বলে,”খাবার।কারণ আমার রূপসী খেয়ে আসেনি।আর এমনিতেও আজ খাওয়া দাওয়া সে অনিয়ম করবে আমি জানি।জলদি খেয়ে নিন।”

মেহরা মুখে থাকা খাবার গিলে বলল,”আপনি কী করে জানলেন আমি খেয়ে আসিনি?”

আরশমান এই ফাঁকে পুনরায় মেহরার মুখে খাবার দিয়ে দিলো বলল,”আপনাকে এত্ত সব জানতে হবে না।চুপটি করে খেয়ে নিন।”

আরশমান অনর্গল মেহরা কে একেক কথায় ভুলিয়েভালিয়ে সম্পূর্ণ খাবার নিজ হাতে খাইয়ে দিল শেষে পকেট থেকে রুমাল বের করে সযত্নে মেহরার ঠোঁটের কোণায় লেগে থাকা খাবার মুছে দিলো।ঝুঁকে গিয়ে মেহরার কপালে অধর ছুঁয়ে দিয়ে বলল,”ভালোবাসি আপনাকে।আপনার জন্য আমার ভালবাসা সারগ্যাসো সাগরের ন্যায় যার কোনো তীর খুঁজে পাবেন না আপনি।শুধুই আমার ভালোবাসার সাগরে ঘুরে বেড়াবেন।”

মেহরা কেঁপে উঠলো বিস্মিত নয়নে চাইলো আরশমানের পানে,ভাবলো এঙ্গেজমেন্টর পরদিন থেকে এই অব্দি লোকটি মেহরার প্রতি তার ভালবাসা প্রকাশের কোনো পথ বাকি রাখলো না।

আরশমান মেহরার গালে হাত রেখে বলল,”আজ আর বিরক্ত করবো না আপনাকে।সাবধানে থাকবেন।রাতে সাবধানে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরবেন।”

মেহরা উত্তর করলো না দেখলো আরশমানকে।

.
জুনায়না নিজের ইউনিফর্ম পরে তৈরি হয়ে নিয়েছে।বসার ঘরে এসে ওষুধের বক্স থেকে ওষুধ ও পানির গ্লাস হাতে নিয়ে নিজের মায়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,”শুনছো মা কাজ বাদ দাও আগে ওষুধ খেয়ে নাও।”

আঞ্জুমান ফিরে তাকালেন মেয়ের হাত থেকে ঔষধ গুলো নিয়ে খেয়ে নিলেন।তারপর সোফার পাশে থাকা ছোট টেবিলের উপর রাখা ব্যাগটি হাতে তুলে নিলেন দ্রুত জুনায়নার হাতে ধরিয়ে দিলেন বললেন,”শুন না মা এই ব্যাগে আমার প্রশান্ত বাবার জন্য একটা পাঞ্জাবি আছে তুই আজ যাওয়ার সময় ওকে দিয়ে দিস।”

জুনায়না সুর টেনে বলল,”ওহ বাবা! প্রশান্ত বাবুর জন্য পাঞ্জাবি এনেছো দেখি।”

আঞ্জুমান হাসলেন বললেন,”আরেহ ছেলেটার কাল জন্মদিন,প্রতি সময় তো সকালে ঘুম থেকে উঠেই ও আমার দেয়া পাঞ্জাবি পরে।তাই তো কিনে এনেছি।আমি ছেলেটাকে কিছু না দিলে কে দিবে বল তো।”

জুনায়না আঞ্জুমান কে জড়িয়ে ধরলো চুলের ভাঁজে আলতো করে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিয়ে বলল,”তুমি বেস্ট মা।”

“হম এখন বেরিয়ে পর নাহয় তোর যেতে দেরী হয়ে যাবে।”

.
জুনায়না শীঘ্রই বেরিয়ে পড়লো।থানায় না গিয়ে প্রশান্তর অফিসের উদ্দেশ্যে রিকশা নিয়ে নিলো।সকালের খালি সড়ক সময় লাগলো না কুড়ি মিনিটের মধ্যেই রিকশা এসে থামলো ‘নয়না’ নামক উচ্চ ভবনের সম্মুখে।

জুনায়না ভাড়া চুকিয়ে ভিতরে চলে গেলো।তিন তলায় দক্ষিণ দিকে থাকা প্রশান্তর কেবিনের দিকে অগ্রসর হলো।কেবিনের সম্মুখে এসে কেবিনের দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করলো।প্রশান্ত হাতের ফাইল টেবিলে রেখে চকিতে তাকালো বিস্মিত কন্ঠে বলল,”তুই!”

জুনায়না হেঁসে এগিয়ে গেলো,প্রশান্তর চেয়ার টেনে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে প্রশান্তর কোলে বসে পড়লো।প্রশান্ত চোখ বড় বড় করে বলল,”জুনায়না এইসব কী হচ্ছে সর।তুই আমার মন ইজ্জত খেয়ে দিবি নাকি?”

জুনায়না হো হো করে হাঁসলো,তার এক হাতে থাকা ব্যাগটি টেবিলের উপর রেখে বলল,”তোর ইজ্জত খাওয়ার মত উত্তম কাজটা আমি না করলে কে করবে বল তো?যাইহোক এই দেখ মা তোর জন্য পাঞ্জাবি পাঠিয়েছে।”

পাঞ্জাবির কথা শুনেই প্রশান্তর ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠল ব্যাগটি হাতে নিয়ে ভিতরে থাকা পাঞ্জাবিটি দেখে নিলো।বলল,”মামনি কে বলবি এইবারও তার প্রশান্ত বাবা পাঞ্জাবি পেয়ে খুব খুশি।”

জুনায়না প্রশান্তর ঠোঁটের কোণে মাখা হাসির দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,”তোকে এমন করে হাসতে দেখলে আমার বক্ষঃস্থল এক অন্যরকম শীতলতায় ছেয়ে যায় প্রশান্ত।”

প্রশান্ত হাসি বজায় রেখে বলল,”আমার সব কিছুতেই তোর এত ভালো লাগা কী করে হতে পারে জুনায়না?আমি দেখতে কালো তেমন তো সুন্দর না।”

জুনায়না প্রশান্তর কানের কাছে এগিয়ে গেলো ফিসফিস করে বলল,”কে বলেছে তোকে কালো হলেই সুন্দর না।তুই কোন দিক দিয়ে কম প্রশান্ত বাবু?তোকে তো দেখলেই ইচ্ছে করে তোর সর্বাঙ্গে আমার ভালোবাসার চিহ্ন একে দেই।”

প্রশান্তর হাসি উবে গেলো বিড়বিড় করলো,”আস্তাগফিরুল্লাহ।”

“স্যার আসছি।”,বলেই প্রশান্তর পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট দরজা ঠেলে কেবিনে প্রবেশ করলো।প্রশান্ত জুনায়নাকে নিজের থেকে সরিয়ে দিতে চাইলো কিন্তু জুনায়না ঠাঁই প্রশান্তর কোলে বসে রইলো।প্রশান্তর পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট তীব্র এখন রীতিমত যক্ষ্মার রোগীর মত কাশছে।

জুনায়না তীব্রর দিকে তাকিয়ে বলল,”হায় হ্যান্ডসাম।”

তীব্রর আরো কাশি উঠে গেলো।প্রশান্ত জুনায়নাকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে গ্লাসে ভরা পানি নিয়ে তীব্রর দিকে এগিয়ে গেলো।প্রশান্ত তীব্রর কাছে এসে দাঁড়ালে প্রশান্তর থেকে পানির গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে সম্পূর্ণ গ্লাসের পানি সাবার করে ফেললো তীব্র।

জুনায়না পেটে হাত রেখে খিলখিল করে হেসে উঠলো।হাসতে হাসতে বলল,”তীব্র নিজেকে আরেকটু স্ট্রং বানান ডিয়ার।নাহয় আপনার ফিউচার আপনার কাছে এলে এমন করে কাশতে কাশতে সোজা স্বর্গে চলে যাবেন।”

প্রশান্ত তীব্রর অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেও হো হো করে হেঁসে ফেললো।জুনায়না এগিয়ে আসলো তীব্রর কাধে হাত রেখে বলল,”আজ আমার হাতে সময় নেই নাহয় আপনার সাথে গল্প করতে পারতাম তীব্র দা হ্যান্ডসাম ম্যান।”

তীব্রর কাধ নিচের দিকে ঝুঁকে এলো জুনায়না থেকে দূরে সরে প্রশান্তর দিকে তাকিয়ে বলল,”স্যার আমি যাই মারাত্বক রকমের ভুল সময়ে এসেছি আমি।”,বলেই এক দৌড়ে কেবিন ত্যাগ করে তীব্র।

জুনায়না ক্ষীণ হেঁসে কেবিন থেকে প্রস্থান নেয়ার জন্য পা বাড়ায় পিছন থেকে প্রশান্ত বলে,”আজ রাতে আমি তোকে বাড়ি পৌঁছে দিবো জুনায়না।”

জুনায়না ফিরে তাকালো বলল,”বাবা প্রশান্ত বাবু আমাকে নিয়ে কত ভাবছে!এত বাবার জন্য লাফ ইউ।কিন্তু আজ আসার দরকার নেই আমার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে সেই কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরবো।”,বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো জুনায়না।
প্রশান্ত কে কোনো প্রকার দ্বিরুক্তি করার সুযোগ দিলো না।

.
বিকেল হতেই তপ্ত গরমের প্রকট বৃদ্ধি পেয়ে গিয়েছিল।সূর্য অস্ত যেতেই আশপাশের পরিবেশ ঠান্ডা হতে শুরু করে।এক শীতল বাতাস বইতে শুরু করে।

ফাইজ নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে মুখ লটকিয়ে করিডোর দিয়ে হেঁটে চলেছে।সকালেই ফাইজ এর মা ফাইজ এর হাতের কামড়ের দাগ দেখে মিটমিট করে হেঁসে বলেছিলো,”কীরে ফাইজ কোন মেয়ে কামড়ে দিয়েছে তোকে?”

ফাইজ রেগে একাকার হয়ে বলেছিলো,”না মেয়ে কেনো হবে এক রা ক্ষ সী কামড়েছে।”

ফাইজ দ্রুত শার্টের স্লিভে নিজের হাতের কামড়ের দাগ ঢেকে নিলো কটমট কণ্ঠে বিড়বিড় করলো,”জাহরা আজ দেখো তোমায় কী করি তোমার জন্য মা আমায় সকালে টিস করে কথা বলসে।”

ফাইজ হাসপাতালে আসার পর নিজের সিডিউল অনুযায়ী রোগী দেখা শেষে জাহরার কেবিন সহ পুরো হাসপাতাল জুড়ে জাহরা কে খুঁজে বেড়ায় কিন্তু খুঁজে পায় না।বর্তমানে ফাইজ করিডোর পার করে হাসপাতালের ছাদের দিকে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হয়েছে।

ফাইজ ছাদের স্টিলের দরজা শব্দ করে খুলে ভিতরে প্রবেশ করতেই ক্ষীণ অবাক হয় ছাদের রেলিং ঘেঁষে বসে আছে জাহরা,ছাদের কৃত্রিম আলোয় বসে বসে হাতে থাকা ফাইলের দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে আছে সে।

#চলবে।

আমার কোনো প্রকার ভুল হয়ে থাকলে ধরিয়ে দিবেন শুধরে নেয়ার চেষ্টা করবো।🍁

#কালেক্ট_গল্প_কথা
Story Link-গল্পের লিংক (রিভিউ+আলোচনা)💓https://facebook.com/groups/329590663119170/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here