#অর্ধ_নক্ষত্র ।৭।
#লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati
“ডক্টর রোমাইজা জাহরা হুতুম পেঁচার মত মুখ করে কী দেখছো ওই ফাইলে?”,বুকে দুই হাত গুঁজে জাহরার দিকে তাকিয়ে কথাটি বলল ফাইজ।
জাহরা চোখ মুখ কুঁচকে তাকালো দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ফাইজের দিকে।কণ্ঠে বিরক্তির রেশ টেনে বলল,”এমন আচমকা এসে গন্ডারের মত চেঁচাচ্ছেন কেন?এইখানে আপনার কাজ কী মিস্টার ফাজিল?কিছু লাগবে আপনার?”
ফাইজ এগিয়ে গেলো ধপ করে জাহরার পাশে বসে পড়ল বলল,”হম আমার তোমাকে লাগবে?”
জাহরা ফাইলের দিকে মনোযোগ দিয়ে বলল,”গাঁ’জা টা’জা খেয়েছেন নাকি?আপনি আমার সামনে এলেই ঝগড়ার সূত্রপাত হয় আর আপনি বলছেন আপনার আমাকে লাগবে?”
“হম আজ তোমাকে আমার খুব প্রয়োজন জাহরা।”,এক অন্য রকম কন্ঠে কথাটি বলল ফাইজ।
জাহরা তড়িৎ গতিতে ফাইজের দিকে তাকালো।ফাইজ কেমন করে চেয়ে আছে জাহরার মুখ পানে।জাহরা ফাইজের চোখের সামনে হাত নাড়িয়ে বলল,”এই সত্যি সত্যি গাঁ’জা টা’জা খেয়েছেন নাকি?হায় আপনি শেষমেশ নে শা খো র হয়ে গেলেন মিস্টার ফা জি ল?”
আচমকা ফাইজ জাহরার হাতের কব্জি ধরে হাতে কামড় বসিয়ে দেয়,জাহরা ফাইজ এর এমন আকষ্মিক আক্রমণে ভড়কে চেঁচিয়ে উঠে,ফাইল পাশে ফেলে দিয়ে ধিরিম ধারাম ফাইজের পিঠে কিল বসিয়ে দেয়।
ফাইজ ছেড়ে দেয় উচ্চ স্বরে হেঁসে নিজের পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলে,”কিল খেলেও কিন্তু ম্যাচ ইস ড্রো মিস অ স ভ্য মহিলা।কাল তুমি আমাকে কা ম ড় দিয়েছিলে আজ আমি দিলাম খেল খতম।কিন্তু কী জোরে জোরে কিল মেরেছো তুমি!আশ্চর্য আমি!এইটুকু মেয়ের গায়ে শক্তি কত!পিঠের হাড় টা মনে হয় চুরমার হয়ে গেলো আমার”
জাহরা ফাইজ এর চুল টেনে ধরে বলে,”আপনাকে এখন তুলে এই ছাদ থেকে ফেলে দিবো কত জোরে কামড় দিয়েছেন আমার হাতে!”
ফাইজ নিজের চুল জাহরার থেকে ছাড়িয়ে বলে,”এই মাইয়া তুমি দেখি আমার শখের চুল দুই দিনে ছিঁড়ে ফেলবা পরে ওই ডক্টর হোসেন এর মত টাক মাথা নিয়া ঘুরতে হবে।আমার মত হ্যান্ডসাম শেষ মেষ টাক্কু হবে ওই হোসেন এর মত পুরাই মর্মান্তিক ঘটনা!”
“ডক্টর হোসেন আপনার থেকেও বেশি হ্যান্ডসাম বুঝলেন।”
“ওই ফুটবলের মত পেট আর টাক মাথায় কোন দিক দিয়ে তাকে হ্যান্ডসাম হিসেবে গণ্য করলা জাহরা?উনি যদি হ্যান্ডসাম হয় বইন সত্যি আমি এক বালতি সুস্বাদু বি ষ খাইয়া মইরা যাবো।”
“বি ষ আবার সুস্বাদু?”,ভ্রু কুঁচকে কথাটি বলল জাহরা।
ফাইজ ভাব দেখিয়ে বলল,”কোনো কিছু সুস্বাদু না হলে আমি খাই না।”
জাহরা অবাক হলো বলল,”ভাই তুই পুরাই গাঁ’জাখুরি কথা কস।আমি তো এখন সিউওর তুই গাঁ’জা টা’জা খাস!”
ফাইজ জাহরার দিকে তাকিয়ে বলল,”আমি গাঁ’জা টা’জা খাই না তুমি খাইসো কখনও?কেমন খেতে?”
“আমি কী গা’জা’খোর নাকি যে গাঁ’জা খাবো, গা’জার টেস্ট জানবো?
“খেতেও পারো আমার তো তোমার উপর সন্দেহ হয়।কেমন করে হুটহাট তেঁতে উঠো তুমি।পুরোই মারাত্বক!”
এহেন কথা শুনে জাহরা তেড়ে গেলো পুনরায়,নিজেকে সংযত করে ফেললো দাঁতে দাঁত পিষে বলল,”মন চাইছে একেবারে গলা টিপে দেই আপনার।”
“গলা লাগবে না তুমি বরং আমার পা টিপে দাও তোমায় খুঁজতে খুঁজতে আপনার পা দুটো ব্যথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে জাহরা খাতুন।”
জাহরা প্রতুত্তর না করে বারকয়েক বড় বড় শ্বাস নিলো পড়ে থাকা ফাইল হাতে তুলে নিলো।ফাইজ জাহরার হাত থেকে এক টানে ফাইলটি নিয়ে বলে,”চুপ হয়ে গেলে কেনো?আর এইটা কীসের ফাইল?আজ সারা দিন কোথায় ছিলে?”
জাহরা ভ্রু কুঁচকে বলে,”কেনো আপনি চান আমি আপনার সাথে আরও ঝগড়া করি?সারা দিন যেইখানে খুশি সেইখানে থাকি তাতে আপনার কী?”
ফাইজ ফাইলটি বন্ধ করে পাশে রেখে দিয়ে বলল,”তোমার সাথে ঝগড়া করলে মনের মাঝে এক শান্তি খুঁজে পাই।তোমাকে খুঁজতে গিয়েই তো আমার পা দুটো ব্যাথা করছে।”
“কে বলেছে আমাকে খুঁজতে?”
“আমার ভিতরের আত্মা।যাইহোক বাড়ি যাবে না দশটা তো বেজে এসেছে।”
“মেহরা আসবে আমাকে নিতে।আর শুনুন এই ফাইলটা আপনারই দেয় ভুলে গিয়েছেন?আমি ফাইলটা ভালো করে দেখেছি সত্যি তার ক্যান্সার এর বিষয়টা খুব বিরল।ওই সাদা বিলাই কালা বিলাই কে নিয়ে কবে আলোচনায় বসবেন?”
ফাইজ ভাবুক দৃষ্টিতে আকাশ পানে তাকিয়ে বলল,”পরশু।আমি পরশু ওই রোগীকে আসতে বলেছি।আর ওরাও আসবে।”
জাহরা উঠে দাড়ালো ফাইজ এর পাশ থেকে ফাইলটি নিয়ে বলল,”আপনার ওই রোগী কে বলবেন আমি ওই রোগীর সকল খরচ দিতে চাই।”
ফাইজ মিষ্টি করে হাঁসলো বলল,”এত সুন্দর ভাবনার জন্য এই প্রথম তোমার উপর আমি খুশি হলাম কিন্তু লাগবে না আমি নিজেই রোগীর খরচ দিচ্ছি।”
ফাইজ এর এমন নিজ থেকে উদ্দ্যেগ দেখে জাহরা প্রথম থেকেই মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু প্রকাশ করলো না।ছাদ ত্যাগ করার জন্য দরজার দিকে অগ্রসর হলো পিছন থেকে ফাইজ ডেকে বলল,”জাহরা আমি কাল হাসপাতাল আসবো না।”
জাহরা দাড়িয়ে গেলো ফাইজের দিকে না তাকিয়েই বলল,”আমাকে কেনো বলছেন?”
“জানি না বলতে ইচ্ছে করলো।”,বলে ফাইজ আকাশ পানে চাইলো।জাহরা চলে গেলো।ফাইজ মুগ্ধ নয়নে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করলো,”চাঁদ তোমার রূপ প্রশংসনীয়,আর তোমার ঐ প্রশংসনীয় রূপে থাকা দাগ গুলো মনোহর।”
.
জাহরা নিচে এসেই মেহরা কে পেলো।মেহরা নিজের গাড়ির সামনেই ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে আকাশের তাঁরা দেখছে।জাহরা দূরে তাকিয়ে মেহরা কে দেখছে।
মেহরার বাড়িতে দুটো গাড়ি,একটি গাড়ি রহিম চাচা ড্রাইভ করে জাহরা কে হসপিটাল দিয়ে যেতো কিন্তু রহিম চাচা বর্তমানে অসুস্থ থাকায় গাড়িটি মেহরা নিজে চালিয়েই নিয়ে আসে,থানার থেকে বেরিয়ে জাহরা কে নিতে চলে আসে।
মেহরা এক জ্বলজ্বল করতে থাকা তারার পানে চেয়ে হুট করেই হেঁসে ফেললো বিড়বিড় করলো,”আমার জীবনে যত টুকু সময় জুড়ে তুমি ছিলে,আমাকে মিথ্যে ভালোবাসলেও আমি কিন্তু তোমাকে বড্ডো ভালোবেসেছি।দেখো না আমি তোমাকে ভালোবেসেছি অন্য দিকে আমাকেও উম্মাদের মত ভালবাসে যাচ্ছে এক পুরুষ।যার প্রতিটি কান্ডে অবাক করে দেয় আমায়।”
জাহরা নিজের বোনের ঠোঁটের কোণে হাঁসি দেখে খুশি হয়ে গেলো।দৌড়ে গিয়ে বোনকে জড়িয়ে ধরলো গালে কয়েকটা টপাটপ চুমু খেয়ে বলল,”মেহরা এমনি করে হাসবি।তোর লটকে রাখা মুখ আমার একদম পছন্দ না।”
মেহরা বোনের কাণ্ড দেখে হো হো করে হেঁসে উঠলো।জাহরা বোনের হাঁসি দেখলো,মেয়েটা হাসলে কতই না ভালো দেখায় তাকে।
মেহরা দুই হাতে জাহরা কে জড়িয়ে ধরে বলল,”তোর সাথে কত রাত ভালো করে গল্প করি না জাহরা। চল আজ মা আমি তুই মিলে গল্প করবো।”
জাহরা খুশিতে বিস্তর হাঁসলো সে তার আগের মেহরা কে ফিরে পাচ্ছে।জাহরা মেহরা গাড়িতে উঠে বসলো,মেহরা ড্রাইভিং সিটে বসে দ্রুত গাড়ি ছুটিয়ে নিয়ে গেলো।
.
কারাগারে বন্দী আসিফ ভুঁইয়া।অন্ধকার কারাগারটিতে অন্ধকার ছাড়া শুধু চাঁদের ক্ষীণ থেকেও ক্ষীণ ছটা উপস্থিত যা পিছনের দেয়ালে থাকা চার আঙ্গুল সমান ছোট স্থান দিয়ে আসছে।এক কোণায় বসে আছেন আসিফ।
“আবার কোন পরিকল্পনা করছিস?”,থমথমে কণ্ঠে কথাটি ভেসে গেলো আসিফের কর্নে।আসিফ অন্ধকারে কণ্ঠের মালিক কে না দেখেই বুঝে উঠলো কারাগারের ওই পাশে সবে বলা কণ্ঠের মালিক আরশমান দাড়িয়ে।
আসিফ হেঁসে বলল,”এমপি সাহেব এসেছে যে?বলুন এমপি সাহেব কী ভাবতে পারি আমি।”
আরশমান ভরাট কণ্ঠে বলল,”সাফওয়ান কে মা রা র কারণ কী ছিলো?”
আসিফ পাগলের মত করে উঠলো, এই অন্ধকারে এগিয়ে এসে লোহার গরাদে বারি দিতে শুরু করলো বলল,”ওকে বলা হয়েছিল যে করে হোক ইলেকশানে জিততে ও জিতলো না কেনো তুই কি করে জিতে গেলি?ওর না জিততে পারায়া আমার কত বড় লস হয়েছে তুই জানিস?”
পাশ থেকে এক মেয়েলী কণ্ঠে ভেসে এলো,”এমন পাগলের মত গরাদে বারি দিচ্ছিস কেনো? আমি একবার ভিতরে এলে এমন মা র মা র বো না যা পা গ ল আছিস তার থেকেও অধিক বড় পা গ ল বানিয়ে ফেলবো।যা জিজ্ঞেস করছে তার উত্তর ভালো করে দিতে জানিস না।”
আসিফ বুঝে উঠতে পারলো না মেয়েটি কে,দেখতে পারলো না তাকে অন্ধকারে,চিনলো না তার কন্ঠ।আরশমান পাশে তাকিয়ে চোখে ইশারা করে জুনায়না কে শান্ত থাকতে বলল।আসিফ হঠাৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়লো তাচ্ছিল্য হেঁসে বলতে শুরু করলো,”আমি তো এমনিতেই পা গ ল কিন্তু আমার থেকাও বড় পা গ ল জানিস ওই সাফওয়ান যে সত্যি ওই মেহরা মাইয়া টারে ভালোবাসতো।ওরে তো খারাপ বানাইসি আমরা।ওই মাইয়ার লাইগ্গা আমাদের সাথে প্রথমে জড়াইতে চায় নাই কত সাধনা কইরা ওরে আমাদের দলে আনসি।প্রথম যেইদিন ওরে ওই মাইয়ারে পা চা র কইরা দেয়ার কথা বলসিলাম ওয় আমারে মারসিল তারপর থেকেই ওর উপড়ে আমার ক্ষোভ।ওরে আমি তো ওইদিন থেকেই ঘুমের মধ্যে ড্রা গ স এর ইনজেকশান দেয়া শুরু করি। তারপরই তো ওই মাইয়া রে পা চা র করতে রাজি হইসিলো কিন্তু ওই মাইয়ার সামনে গেলেই ওয় কেমন ঠিক হইয়া যাইতো আমি বুঝতে পারতাম না কেনো এমন হইতো?”আসিফ থেমে গেলো পা গ লের মত হাঁসলো।
আরশমান ভ্রু কুঁচকে মনোযোগ দিয়ে শুনলো আসিফ এর কথা।সাথে জুনায়না’ও।
আসিফ পুনরায় বলা শুরু করলো,”আমাদের দলের সবাই জানতো সাফওয়ানরে আমি তোর আর ওই মাইয়ার এঙ্গেজমেন্ট এর পর থেকা ড্রা গ স দেই।ওই পোলায় তোগো এঙ্গেজমেন্টর কথা শুইনা তো পুরাই পাগল হইয়া গেসিলো, ইলেকশন নিয়া ওর সাথে কথা বলতে গেসিলাম কিন্তু ওয় আমারে পাগলের মত মারসে।আর এইদিকে তুই তোর এঙ্গেজমেন্টর পরের দিন বিপুল ভোটে এমপি পদ পেয়ে গেলি।অনেক বড় একটা লস হয়ে গেলো আমাদের ওই সাফওয়ান এর জন্য,আর সহ্য হলো না শা লা রে নিয়া মে রে একদম নিজের ক্ষোভ মিটিয়ে ফেললাম।হাস্যকর ব্যাপার কী জানিস ওই শা লা য় মরার আগে ওই মাইয়ার নাম নিসে,ওই মাইয়ার লাইগ্গা আমার পা ধইরা অনুরোধ করসে যেনো ওই মাইয়ার ক্ষতি কখনো না করি।শেষ
ছু রি টা ওর বুকে ঢুকায়া দেয়ার পরও ওয় ওই মাইয়ার নাম নিসে।”,বলে হাঁসলো আসিফ।দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে আবার বলল,”আমার দেয়া ড্রা গ স যে কাউকে পা গ ল বানায়া দেয়,কেউই তখন নিজের মধ্যে থাকে না।আর আমি ভাইবা কুল পাই না কী ভালোবাসা রে ওর ভালোবাসায় আমার ড্রা গ স’ও হার মাইন্না গেসে।”
জুনায়না ভ্রু কুঁচকে বলল,”এই তো পুরাই পা গ ল হইয়া গেসে নিজ থেকেই সব শিকার করতেসে।”
আরশমান বলল,”তো আসিফ তোর দলের কে কে জড়িত তা না বলে তুই নিজেই নিজের দো ষ এত সহজে শিকার নিলি যে?”
আসিফ হাঁসলো বলল,”আরেহ পাগল নাকি দলের সবাইর কথা বললে আমারে এইদিক থেকা বাইর করবো কে?আর এয়ারপোর্টে নিজেই নিজেরে না
ফাঁ সা ই’লে দলের লোক তোরা আমারে এইখানে আনার আগেই মা ই রা ফেলতো।”
“কেনো মারতো?” ,আরশমান কথাটি বলতে আসিফ ভ্রু কুঁচকে বলল,”তোকে কেনো বলবো?এসেছিস কেনো এইখানে যা এইখান থেকে।”
জুনায়না দাঁতে দাঁত পিষে বলে,”দোস্ত এরে থা র্ড ডিগ্রি দেয়াই লাগবে মুখ খুলতে চায় না।ওর কয়েকটা মেডিক্যাল টেস্ট করতে হবে আমার মনে হয় ওয়’ও
ড্রা গ স নিতো নাহয় এমন পাগলের মত করছে কেনো?”
“ঠিক বলেছিস দোস্ত।চল এখন।”,বলে আরশমান বেরিয়ে যেতে নিলে আসিফ বলে উঠলো,”তুইও ভালোবাসোস ওই মাইয়া রে?দেখিস ওই মাইয়ার জিনা হারাম কইরা দেই কেমন করে।”
আরশমান ঘুরে তাকালো বলল,”যেই মুখ থেকে ওই কথা বলেছিস ওই মুখ টাই চিড়ে রেখে দিবো।ওর দিকে নজর দেয়ার সাহস করবি না অ ন্ধ বানিয়ে ফেলবো।”,বলেই চলে গেলো আরশমান পিছন পিছন বেরিয়ে গেলো জুনায়না।
.
আরশমানের কপালে দৃঢ় ভাঁজ,শক্ত করে স্টিয়ারিং ধরে গাড়ি চালাচ্ছে।পাশেই জুনায়না বসে আছে।জুনায়না সিটে গা এলিয়ে দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো বলল,”দোস্ত সাফওয়ান কে ভুল বুঝেছিলাম আমরা।ছেলেটা নিজের থেকে কিছু করেনি সব ওই ড্রাগস এর ভেলকি।ছেলেটা আমাদের মেহরা কে আসলেই বড্ডো ভালোবাসতো।”
আরশমান গাড়ি চালানোর স্পিড বেরিয়ে দিলো মনে মনে নিজেই ভেবে নিলো,”সাফওয়ান বেসেছিল ভালো।কিন্তু সেও তো ভালোবাসে মেহরা কে তার ভালোবাসা কেউ দেখতে পাচ্ছে না।”
জুনায়না চোখ বড় বড় করে বলল,”দোস্ত আস্তে চালা তুই কী বাড়ির পৌঁছানোর বদলে আমারে স্বর্গে পৌঁছানোর প্ল্যান করতেসোস নাকি!”
জুনায়না আরশমানের মুখ পানে তাকালো বুঝতে পারলো এত স্পিডে গাড়ি চালানোর রহস্য তাই পুনরায় বলে উঠলো,”দেখ দোস্ত বুঝছি তুই জেলাস এজন্য আমারে স্বর্গে তোলার কথা ভাবিস না,দোস্ত আমার বিয়ে করা বাকি,শত সন্তানের জননী হওয়া বাকি,নানি দাদির মত সুন্দর ডাক শোনা বাকি।তোর পোলাপাইন এর মুখ থেকে ফুপ্পি ডাক শোনা বাকি।বিশেষ করে আমার জানের মুখ থেকে বউ ডাক এখনও শোনা বাকি।এত কিছু বাকি থাকার পরও যদি আমি টপকে যাই তাহলে তো জীবন যুদ্ধে হেরে গেলাম দোস্ত।”
আরশমান জুনায়নার অবস্থা দেখে গাড়ির স্পিড সাধারনে নিয়ে এলো।
🍁
গাছের ডালে পাখিরা বসে তাদের মোহিত কণ্ঠে কিচিরমিচির শব্দ তুলছে।আশেপাশে প্রজাপতিরা উড়ে বেড়াচ্ছে।সবে মাত্র ভোরের আলো ফুটেছে।অন্তর শীতল করে দেয়া বাতাস বইছে।
পিছনে থাকা তিনটি কবরের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে কিবলাখী হয়ে হাত তুলে দোয়া করছে প্রশান্ত,জুনায়না,আরশমান ও ফাইজ।এই তিন কবরে শায়িত আছেন প্রশান্তর বাবা মা ও জুনায়নার বাবা।
প্রশান্তর নিকট আজকের দিনটি তার জন্মদিন হলেও, এই দিনেই আরো বিশ বছর আগে এক বোমা
বি স্ফো রণের মত দুর্ঘটনায় নিজের প্রিয় মা বাবা কে হারিয়ে ফেলেছিল প্রশান্ত।আর এইদিকে
প্রশান্তর বাবা মা কে বাঁচাতে গিয়ে সেই বি স্ফো রণের কবলে পড়ে মৃ ত্যু বরণ করেছিল জুনায়নার বাবা।
চারজন দোয়া শেষে কবরের দিকে ফিরে তাকালো। প্রশান্তর চোখের কোণে জল,প্রশান্ত হেঁসে বলল,”মা তোমার নামে রাখা আমার বাবার নয়না ইন্ডাস্ট্রি আজ অনেক বিস্তর জনপ্রিয়তা পেয়েছে।বাবা সুদূরের দেশ গুলোতে ছড়িয়ে দিয়েছি তোমার স্বপ্নের নয়না ইন্ডাস্ট্রি কে,তুমি খুশি তো বাবা।তোমাদের স্বপ্ন গুলো পুরুন করতে পেরেছি আমি।”
ফাইজ প্রশান্তর কাঁধে হাত রেখে ভেজা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,”দোস্ত সবই তো পারলি কিন্তু আঙ্কেল আন্টি কে একটা বউমা এখনও এনে দিতে পারলি না।আফসোস দোস্ত।”
ফাইজ এর কথন শুনে প্রশান্ত হেঁসে ফেললো,প্রশান্তর হাঁসি দেখে তিনজনই হাঁসলো।জুনায়না হাসতে হাসতে দূরে দাড়িয়ে থাকা তার মায়ের দিকে চাইলো,মুখের হাঁসি চলে গেলো তার।প্রতি বার আঞ্জুমান দূর থেকেই স্বামীর কবর দেখেন তার কাছে এসে দেখার সাহস হয়ে উঠে না।
সে ঐখানে দাড়িয়েই কবরের দিকে তাকিয়ে কাদঁছে।জুনায়নার সামনে কাদতেঁ চায় না আঞ্জুমান।তাই জুনায়না গেলো না মায়ের কাছে,সেও চায় তার মা মন খুলে কাদুক।
জুনায়না প্রশান্তর দিকে ফিরে চাইলো,তার শাড়ির আঁচলে প্রশান্তর চোখের কোণের জল মুছে দিলো।ফাইজ,আরশমান মিটমিট করে হাসছে।ফাইজ গলা খাঁকারি দিয়ে বলে উঠলো,”উহম! উহম!”, প্রশান্ত মুখটা ছোট করে চাইলো ফাইজ এর দিকে।
আরশমান উচ্চ স্বরে হেঁসে উঠল।নিজের হাঁসি সংযত করে বলল,”আচ্ছা প্রশান্ত তুই তোর জন্মদিন উপলক্ষে আমাদের কাছ থেকে উপহার হিসেবে কী চাস?”
প্রশান্ত অমায়িক হেঁসে বলল,”তোদের মত বন্ধু পেয়েছি আমি।এই তো আমার বড় ভাগ্য, তোরাই তো আল্লাহ প্রদত্ত এক উপহার আমার কাছে।”
#চলবে।