অর্ধ_নক্ষত্র ।৮। #লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati

0
192

#অর্ধ_নক্ষত্র ।৮।
#লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati

সড়কের ফুটপাতে হেঁটে চলেছে প্রশান্ত,জুনায়না।তাদের দুজনের পিছনেই হেঁটে আসছে আরশমান ও ফাইজ।কিয়ৎক্ষণ আগেই কবরস্থান থেকে বেরিয়ে এসেছে সকলে।কবরস্থান থেকে বেরিয়ে প্রথমেই আরশমান তার গাড়ি করে জুনায়নার মা কে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে।

জুনায়নার হাতের ভাঁজে প্রশান্তর হাত আবদ্ধ।জুনায়না বারবার চেয়ে চেয়ে দেখছে প্রশান্তকে।পিছন থেকে ফাইজ বলে উঠলো,”জুনায়না এমন করে চেয়ে চেয়ে দেখিস না বইন আমাদের প্রশান্ত বাবুর তো নজর লেগে যাবে।আর দোস্ত তোর নজর জা মারাত্বক লেভেলের ভয়ংকর।”

জুনায়না পিছন ফিরে তাকালো বলল,”ফাইজ তুই আসলেই একটা ফা জি ল।পোলা আমার দিকে নজর না দিয়ে নিজের দিকে নজর দে এখনও একটা মেয়ে পটাইতে পারলি না।”

ফাইজ চুল গুলো পিছনের দিকে ঠেলে ভাব দেখিয়ে বলে,”আমি মেয়ে পটানোর মত এইসব ফালতু কাজ করি না।যে আসার সে নিজে থেকেই আমার কাছে সময় হলে উড়ে উড়ে চলে আসবে।”

আরশমান তার হাতে থাকা ফোনের দিকে চেয়ে থেকে বলল,”কেন ফাইজ তোর ফিউচার কী উড়ন্ত পরি নাকি যে উড়ে উড়ে আসবে?”

“আমি কালা হতে পারি কিন্তু আমার ফিউচার বউ পরীর থেকে কম হবে না,একদম চাঁদের মত প্রশংসনীয় রূপ হবে তার।দেখে নিস।”,ফাইজ ভাব দেখিয়ে কথাটি বলতেই আরশমান বলে,”তোর মত ঝগ্রাইট্টা পোলার সঙ্গে পরি?দোস্ত মাত্রাতিরিক্ত আশা করে ফেললি না।”

ফাইজ ভ্রু কুঁচকে তাকালো আরশমানের দিকে বলল,”কেন দোস্ত তুই চাস আমার বউ আমার মত ঝগ্রাইট্টা হোক?”

আরশমান,জুনায়না হেঁসে উঠল সঙ্গে এতক্ষন যাবৎ নিশ্চুপ থাকা প্রশান্ত হাঁসলো।তিনজন একসাথে বলল,”দোস্ত তোর বউ ঝগ্রাইট্টা হইলে কিছুদিন পরই আমরা শুনতে পারবো ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’।”

ফাইজ বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো,”আমার বউ পরি হলেও সমস্যা ঝগ্রাইট্টা হলেও সমস্যা হওয়াই?দোস্ত তোরা চাস টা কী?”

জুনায়না বলল,”দেখ দোস্ত আমরা শুধুই বুঝাতে চাইলাম এক বো ম যদি আরেক বো ম এর সংস্পর্শে আসে ভাব কোন পারমাণবিক বো মা র সৃষ্টি হইবো।”

ফাইজ হেঁসে বলল,”সমস্যা কী সেই পারমাণবিক
বো মা দিয়ে তোদের উড়িয়ে অন্য গ্রহে ট্রান্সফার করে দিবো।তোরা তিনটায় এই গ্রহের আবর্জনা।”

আরশমান ফাইজ কে আর দ্বিরুক্তি করতে দিলো না ফাইজ এর হাত ধরে উল্টো দিকে হাঁটা ধরলো,ফাইজ বলে উঠলো,”আরেহ ভাই আমরা তো ওইদিক দিয়ে যাবো তুই আমাকে উল্টো দিকে নিয়া যাচ্ছিস কেন?”

আরশমান কণ্ঠে বিরক্তির রেশ টেনে বলল,”তোকে এখন ময়লার ঝুড়ি তে গেঁথে রেখে আসবো।প্রশান্ত আর জুনায়না কে একটু স্পেস দিতে পারিস না তুই।এমনিতেই প্রশান্ত চুপচাপ স্বভাবের তার উপর জুনায়নার অনুভূতি গুলোকে কেমন এড়িয়ে চলে।”

ফাইজ ভাবুক স্বরে বলল,”হম ঠিক বলছিস দোস্ত।আচ্ছা দোস্ত আমরা যে রাতে যেই প্ল্যান গুলো করলাম ভাবি কী আসবে না?”

আরশমান ঠোঁট প্রসারিত করে ক্ষীণ হাঁসলো বলল,”ওকে এখনও বলা হয় নি।জুনায়না বলল আজ মেহরা খুব কাজের প্রেশারে রয়েছে তার উপর সন্ধ্যার মধ্যে ডিউটি শেষ করে বাড়ি ফিরবে।”

“তাহলে কী আসবে না ভাবি?আর এই জুনায়না কে ছুটি দিলো কে?ওদের তো ছুটি পাওয়া অমাবস্যা চাঁদের মত।”

“আসবে,কেনো আসবে না।আর জুনায়না আজ ঝগড়া করে ছুটি নিয়েছে,থানার ওসি কে বলে এসেছে আজ কেউ ম রে গেলেও সে থানায় যাবে না সা স পে ন্ড করে দিলে দেয়া হোক।আর তুই তো জানিস ওসি ওর উপর কী ক্রাশ।কিছু বলে নি।”ফাইজ হাঁসলো।

.
সারাদিন মেহরা ব্যাস্ত থাকলো নিজের কাজে,সূর্য দিগন্তে যেতেই অন্ধকার নেমে আসার পূর্বে হাসপাতাল থেকে জাহরা কে নিয়ে বাড়ি চলে এলো।মেহরা,জাহরা দুইবোন বসে গল্পের আসর বসিয়েছে।হঠাৎ তাদের গল্পের মাঝে বসার ঘরে তাদের মা মায়া এসে বলে উঠে,”মেহরা আকাশ নামের একজন ছেলে এসেছে।”

মেহরা তাকালো তার মায়ের দিকে,ভ্রু কুঞ্চিত হলো তার।সে তো আকাশ নামের শুধু মাত্র আরশমানের সেই বিশ্বস্ত লোককে চিনে যে সবসময় আরশমানের সঙ্গেই থাকে।মেহরা বলল,”কোথায় ছেলেটা?”

“দরজার বাইরেই দাঁড়িয়ে আছে।”, তার মা কথাটি বলতেই মেহরা উঠে দাড়ালো গায়ে জড়ানো ওড়না ঠিক করে দরজার দিকে অগ্রসর হলো।আকাশ এর সামনে এসে দাড়াতেই আকাশ তার হাতে থাকা কয়েকটা ব্যাগ ও একটি ফোন মেহরার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,” ভাবী ব্যাগ গুলো ধরুন আর ভাইয়ের সাথে কথা বলুন।”

মেহরা বুঝে উঠতে পারল না আকাশ এর হাত থেকে ব্যাগ গুলো ও ফোনটি নিয়ে নিলো।ফোনটি কানের কাছে নিয়ে আসতেই ওই পাশ থেকে আরশমানের কন্ঠে ভেসে আসলো,”শুনুন মেহরা যেই ব্যাগ গুলো দিয়েছে আকাশ,সেইখান থেকে একটা শাড়ি চুজ করে পরে নিন তারপর আকাশের সাথে চলে আসুন।সাথে জাহরা কেও নিয়ে আসবেন।আমি নিজে আপনাকে নিতে আসতে পারলাম না তার জন্য ভেরি ভেরি সরি।”

মেহরা আরশমানের বলা কথার আগা গোড়া কিছুই বুঝল না তাই বিরক্তি প্রকাশ করে বলল,”কী সব বলছেন কোথায় যাবো আমরা আর এইগুলো পাঠিয়েছেন কেনো?”

“আজ প্রশান্তর জন্মদিন এই উপলক্ষে আমরা ছোট একটি সারপ্রাইজ পার্টির আয়োজন করেছি।আর আপনি আজ ব্যাস্ত বলে ফোন দিয়ে বিরক্তি করি নি ভেবেছিলাম সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরলে একেবারে বলে আপনাকে নিয়ে আসবো কিন্তু এইখানে কাজের চাপে আমি আপনাকে নিতে যেতে পারলাম না তাই আকাশ
কে পাঠিয়েছি প্লীজ চলে আসুন।”

মেহরা সময় নিয়ে ছোট্ট করে বলল,”ঠিক আছে।”
.
একটি খোলা মাঠে বেলুন ও ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।মাঠের অল্প-সল্প জায়গায় ছোট ছোট মরিচ বাতির আলোর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।এক কোণায় বসার ব্যবস্থা’ও করা হয়েছে।

গাড়ি এসে জায়গাটির সম্মুখে থামতেই গাড়ির দরজা খুলে মেহরা ও জাহরা বেরিয়ে আসে।সুদূরে দাঁড়িয়ে ফাইজ এর সঙ্গে কথায় মগ্ন থাকা আরশমান খেয়াল করলো মেহরা কে, কথার বুলি আওড়ানো বন্ধ করে নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকলো তার রূপসীর পানে।তার দেয়া শাড়ির মধ্যেই গাঢ় নীল রঙ্গা একটি শাড়ি পরেছে মেহরা।আরশমান কে এমন করে চুপ হয়ে যেতে দেখে ফাইজ আরশমানের দৃষ্টি অনুসরণ করলো সঙ্গে সঙ্গে ফাইজ এর চোখ দুটো রসগোল্লার মতো আকার ধারণ করলো।ফাইজ মনে মনে আওড়ালো,”ভাবির পাশ জাহরা।আমি কী ঠিক দেখছি!”

জাহরা,মেহরা এগিয়ে আসলো দুজনের দিকে।ফাইজ তার দৃষ্টি সরিয়ে ফেললো।আরশমান তাকিয়ে থাকলো মেহরার পানে।দুজন তাদের সম্মুখে এসে দাঁড়ালে মেহরা হেঁসে ফাইজকে নম্র কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,”কেমন আছেন ফাইজ?”

ফাইজ প্রতুত্তরে বলল,”জি আলহামদুলিল্লাহ ভাবী অনেক ভালো আছি।আর বেয়াইন কে দেখছি নিয়ে এসেছেন,ভালই কিন্তু করেছেন।”

জাহরা আড় চোখে দেখে নিলো ফাইজ কে।আশপাশে তাকিয়ে জুনায়না কে খুঁজলো মেহরা কিন্তু পুরো মাঠে নিজেদের ছাড়া আর কাউকে দেখতে পেলো না সে। আরশমান হাত বাড়িয়ে নিজের হাতের ভাঁজে মেহরার হাত নিয়ে নিলো।মেহরা চমকে উঠলো।ফাইজ ও জাহরার দিকে তাকিয়ে আরশমান বলল,”তোরা কথা বল আমি আর মেহরা আসছি।”,বলে মেহরা কে নিয়ে হাঁটা ধরলো আরশমান।

মেহরা তিক্ত কণ্ঠে বলে উঠলো,”এমন হুটহাট হাত ধরার সভাব কেনো আপনার?আপনি আমার অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন বোধ করেন না?করবেন কী করে এই অব্দি অনুমতি ছাড়া কত কিছুই করে ফেলেছেন।”

আরশমান বসার জায়গায় এসে মেহরা কে বসিয়ে দিয়ে নিজেও পাশে বসে পড়ল অতঃপর ঠোঁটের কোণে হাঁসির রেখা ফুটিয়ে বলল,”অনুমতি চাইলেই কী আপনি অনুমতি দিয়ে দিবেন মেহরা?যাইহোক আপনার সাজে একটা জিনিস কিন্তু মিসিং।”

“কী মিসিং?”,মেহরা প্রতুত্তরে কথাটি বলতে আরশমান পাশ থেকে একটি গোলাপ ফুলের গাজরা বের করে বলে,”এইযে এই ফুলের গাজরা।”

মেহরা অবাক হলো।আরশমান ঝুঁকে গিয়ে মেহরার খোপায় পড়িয়ে দিলো ফুলের গাজরা।অতঃপর একটি ছবি ক্যামেরা বন্দি করে নিলো তার শখের নারীর শখের কেশে থাকা গাজরার।নিজের পূর্বের অবস্থানে এসে ফোনটি মেহরার দিকে ধরে ছবিটি দেখালো মেহরা কে।মেহরা দেখলো ছবিটি।মেহরা মনে মনে আওড়ালো,”আরশমান আপনি নিজেও অবগত নন যে আপনার অনেক কর্মকাণ্ডে আমি সাফওয়ান কে আপনার মাঝে খুঁজে পাই।”

আরশমান লক্ষ্য করলো মেহরার চোখের কোণে জমে আসা জল।আরশমান মেহরার গালে তার হাত রেখে মলিন কণ্ঠে বলল,”মেহরা কী হয়েছে?”

মেহরা মৃদু কন্ঠে বলল,”কিছু না।”

“তাহলে আপনার চোখের কোণে জল কেনো?”

মেহরা হাঁসলো মৃদু কণ্ঠেই বলল,”কিছু পুরোনো স্মৃতি মনে পড়ে গেলো।”

আরশমান মেহরার গা ঘেঁষে বসলো এক হাতে মেহরা কে আগলে নিলো বলল,”আপনি আপনার মধ্যে কথা চেপে রাখবেন না আমার কাছে এসে বলে ফেলবেন,আমি আপনার কষ্ট দূর করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।”

মেহরার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাঁসির রেখা ফুটে উঠলো।

আরশমান মোলায়েম স্বরে বলল,”এমন করেই হাসবেন মেহরা।আর আজ দ্বিতীয় বার আপনাকে শাড়িতে দেখছি।আমি ভাবছি বিয়ের পর সবসময় আপনাকে শাড়ি পরতেই বলবো।শাড়িতে আপনাকে ভয়ংকর সুন্দর দেখায়।আপনি শাড়ি পরে সারাক্ষণ আমার সামনে ঘুরঘুর করবেন আর আমি মুগ্ধ নয়নে চেয়ে চেয়ে দেখবো।”

মেহরা বলে উঠলো,”বিয়ের আগেই এত ভেবে বসে আছেন নির্লজ্য লোক।”

আরশমান হাঁসলো।অতঃপর বলল,”কিছু কথা ছিলো আপনার সঙ্গে বুঝে উঠতে পারছি না এখন বলবো কিনা।”

“এখনই বলে ফেলুন।”

“আসলে মেহরা আমি দুঃখিত।আমরা সবাই ভুল ছিলাম।আপনি প্রথমেই ঠিক ছিলেন আপনার সাফওয়ান আপনাকে সত্যিই ভালোবেসেছে।”,আরশমান হঠাৎ কথাটি বলা মাত্রই লক্ষ্য করলো মেহরা মৃদু কেঁপে উঠেছে।আরশমান দৃঢ় ভাবে আগলে নিলো মেহরা কে,পাশ থেকে তার ফোনটি নিয়ে একটি অডিও ক্লিপ চালু করলো সঙ্গে সঙ্গে গত কাল আসিফ ভুঁইয়ার বলা প্রত্যেকটি কথা ভেসে আসতে শুরু করলো।মেহরা ভেতর টা ক্ষত বিক্ষত হয়ে উঠলো তার সাফওয়ান শেষ বার তার নাম নিয়েছিল তার জন্য এমন কুৎসিত মানুষের কাছে অনুরোধ অব্দি করেছিল।

মেহরা নিশ্চুপ হয়ে গেলো তার ভিতরে তুলুম ঝড় বয়ে যাচ্ছে।আরশমান তার ফোনটি পাশে রেখে দিয়ে বলল,”পোস্টমর্টেম প্রক্রিয়াটি করতে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়,আর সাফওয়ান এর পোস্টমর্টেম এর প্রক্রিয়াটি শুরু হয়নি এখনও।আজ এইখানে আসার পূর্বে আমি এসপির সাথে দেখা করে এসেছি। সাফওয়ান এর পোস্টমর্টেম প্রক্রিয়াটি বন্ধ করতে বলেছি,কাল সকালেই ওর লাশ নিয়ে আসা হবে।”

মেহরা ছোট্ট করে মৃদু কণ্ঠে বলল,”অসংখ্য ধন্যবাদ আরশমান।”

“আমাকে ধন্যবাদ দেয়ার প্রয়োজন নেই আপনার খুশির কারণ হতে পারে এমন সকল কিছু আমি করতে রাজি আছি।”

#চলবে।

বিঃদ্র:সকলের জীবনের প্রথম ভালবাসা ভুল হয় না।অনেকের প্রথম ভালোবাসা সঠিক’ও হয়ে থাকে।আবার প্রথম ভালবাসা পূর্ণতা পাওয়া বড্ডো কঠিন।সমাজের কিছু কিছু কু ৎ সি ত মনের মানুষের জন্য ভালো মানুষ সমাজে নিজের মত করে টিকে থাকতে পারে না।তারা কোনো না কোনো উপায়ে তার ক্ষ তি সাধন করবেই।সাফওয়ান এর ব্যাপার টা তেমনই।

আজ মাত্রাতিরিক্ত গরম।এই গরমে আমার মাথা ব্যাথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে।কী লিখেছি আজ নিজেও জানি না।যদি আজকের লেখায় কোনো ভুল ত্রুটি হয়ে থেকে আমি দুঃখিত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here