প্রানেশা #পর্ব_৮ #জান্নাত_সুলতানা

0
183

#প্রানেশা
#পর্ব_৮
#জান্নাত_সুলতানা

-“তোমরা তো জানো আমার অবস্থা।
মেম্বার এর লগে আমি কথা দিয়া লাইছি।”

-“আপনি কি সত্যি চান আপনার মেয়ের এমন বাজে একটা ছেলের সাথে বিয়ে হোক?”

সমুদ্র প্রশ্নে মিরা মায়ের মুখ আঁধার নেমে এলো। সত্যি সে চায় না এমন ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিতে কিন্তু কিছু করার নেই যে।

-“আপনি টেনশন করবেন না।
আমার উপর বিশ্বাস রাখেন।”

সমুদ্র কথা গুলো শেষ করে মিরার মায়ের কাছে বিদেশে নিয়ে রাশির হাত ধরে মিরাদের বাড়ি হতে বেড়িয়ে এলো।

——-

গ্রামে একটা মসজিদের সামনে রাশি আর মিরা দাঁড়িয়ে আছে আর মসজিদ এর ভেতরে অবস্থান করছে রিহান,সমুদ্র আর সমুদ্রের কিছু ছেলেপেলে।
একটু আগেই মিরা রিহানের বিয়ে হয়েছে। মিরার গায়ে সাধারণ একটা টকটকে লাল জামদানী শাড়ী।
বিষয় টা সত্যি চমৎকার। মিরার যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না এই সাতসকালে তার বিয়ে হয়েছে তাও আবার তারই ভালোবাসার মানুষ টার সাথে। মিরা সকালে ঘুম থেকে উঠার পর দেখলো রান্না ঘরে আশপাশের বাড়ির কিছু মহিলা মিলেমিশে রান্না বান্না করছিল।
আর সে নিজের ঘরে বসে বসে তা পর্যবেক্ষণ করছিল।
কিন্তু হুট করে রাশির আগমন হলো।কোনো কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই তো বাড়ির পেছন দিক দিয়ে উঠোন পেড়িয়ে সোজা রাশিদের বাড়িতে নিয়ে এলো।
আর সেখানেই তো রাশির মা নিজের বিয়ের শাড়ী টা মিরা কে পড়িয়ে দিলো।শাড়ী পড়ানোর মাঝেই তো একবার রাশির মায়ের ছোট বাটন ফোন টা বেজে ছিল আর রাশি কল রিসিভ করে কথা বলা শেষই তো মিরা কে নিয়ে এখানে এলো।তার পর? এখানে এসেই তো সেই কাঙ্খিত মানুষ টার দেখা মিলে শুভ্র পাঞ্জাবি গায়ে মসজিদ এর ভেতর সমুদ্র ভাই সহ মসজিদের হুজুরের সাথে কথা বলছিল।সাথে ছিলেন রিয়াজ মাহমুদ।
অতঃপর আরও ছেলে এলো তার পর পরই দুইজনের তিন কবুল বলে দুইজনে সুন্দর হালাল একটা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হলো।
কি সুন্দর মূহুর্ত।ইশ কখনো কি ভেবেছিল মিরা রিহান ভাইয়ের সাথে এমন হুট করে তাঁর জীবনের সাথে বাঁধা পড়বে?উঁহু সে শুধু স্বপ্নই দেখত কল্পনা করতো কিন্তু কখনো বাস্তব হবে তা কস্মিনকালেও ভাবে নি।অবশ্য ভাবার কথাও নয়। কোথায় রিহান ভাই আর কোথা সে। যদিও রূপ গুণ কোনোটাই কমতি নেই তবুও সায় সম্পত্তি আর পরিবার। সেই দিক দিয়ে যে মিরা একদম শুন্যে।
বাবা সেই ছোট বেলায় মারা গিয়েছে মা বহু কষ্ট তাকে এই পর্যন্ত এনেছে অবশ্য মিরার মামা বাড়ি যথেষ্ট প্রভাবশালী।
মিরার ভাবনার মাঝেই মসজিদ এর ভেতর হতে বেড়িয়ে এলো সব পুরুষ।

-“এখন কি আমাদের বাড়ি যাবে আগে?”

রিয়াজ মাহমুদ সমুদ্র কে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করল।
সমুদ্র রিয়াজ মাহমুদ এর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে জানালো,

-“না বাবা।
আমরা ভাবিদের বাড়ি যাচ্ছি এখন।”

-“বেশ তবে চলো।”

রিয়াজ মাহমুদ সায় দিয়ে বলল।
অতঃপর সবাই চলল মিরার বাড়ির উদ্দেশ্য।
বেলা প্রায় অনেক টা গড়িয়েছে সুর্য মামা তার তেজ নিয়ে পূর্ব দিক হতে জানান দিচ্ছে আজও প্রতি দিনের ন্যায় প্রচুর রেগে আছে তাই তার তাপমাত্রা সে রোজকার ন্যায় বহল রাখবে।
মিরাদের বাড়ি পৌঁছতে পৌঁছাতে প্রায় আট-দশ মিনিট এর মতো সময় লাগল।
বাড়িতে বিয়ের কোনো আমেজ নেই শুধু উঠোনের দক্ষিণ দিকের রান্না ঘর হতে কিছু মহিলার কথোপকথন এর শব্দ আসছে। হয়তো রান্না নিয়ে আলোচনা করছে।
কিন্তু হটাৎই রাস্তা দিয়ে বেশ সোরগোল এর শব্দ হলো কিছু পুরুষের কথোপকথন আসল।যাতে করে সবার বুঝতে বেগ পেতে হয় না মেম্বার বাড়ি পর্যন্ত বিয়ের খবর পৌঁছে গেছে।
এর মধ্যে বাড়ি হতে রান্না ঘর বসার ঘরে যে সকল মহিলা পুরুষ ছোট ছোট বাচ্চারা ছিল সবাই এসে উঠোনে উপস্থিত হলো।
মিরা কে বঁধু রূপে দেখেই সবাই বেশ চমকালো তবে আবার কেউ কেউ কানাঘুঁষা শুরু করল।মিরার মা নির্বিকার। তিনি এক পাশে চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকে যেনো এসব হওয়ারই ছিল।উঁহু হওয়ার কথা ছিল না সে কেন মেয়ের মতামত চাইলো না!কেন জিগ্যেস করলো না মেয়ের কোনো পছন্দ আছে কি না!যদি জানতে চাইতো তাহলে হয়তো আজ এমন বাজে একটা পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হতো না।
মিরার মায়ের ভাবনার মাঝেই লতিফ মেম্বার এগিয়ে এসে ভদ্রতার সহিতে জিজ্ঞেস করলো

-“আমাদের এভাবে অপমান কেন করলেন ভাবি?”

মিরার মা কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে যাবে তার আগেই সমুদ্র এগিয়ে এসে বলে উঠলো

-“চাচা আপনি আপনার মেয়ে কে এমন একটা চরিত্রহীন ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইতেন!
যে কি না বিয়ের দিন আগের রাতেও কোনো মেয়ের সাথে রাত্রিযাপন করে!”

এখানে উপস্থিত প্রায় সবাই চমকালো।মেম্বার এর ছেলে লম্পট, খারাপ নেশাপানি করে জানতো।কিন্তু নারী? এসবও করে বেড়ায় কেউ জানতো না।
সমুদ্রের কথায় ময়নাল ক্ষেপে এসে সমুদ্র কে মারার জন্য হাত তুলতেই লতিফ মেম্বার ছেলের হাত ধরে আঁটকে দিলো।অতঃপর গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দিলো ময়নালের গালে।
ময়নাল স্তব্ধ।যে বাবা তার গায়ে কোনো দিন ফুলের টোকা লাগতে দেই নি সে বাবা কি না আজ একটা বাইরের ছেলের কথা বিশ্বাস করে তাঁর গায়ে হাত তুলল?
ময়নাল লজ্জায় রাগে চুপ করে গেলো।
তার মধ্যে চেয়ারম্যান নিজোও তার দলবল নিয়ে হাজির হলো।
একজন মধ্যবয়স্ক লোক চেয়ারম্যান এর কাছে সব বিস্তারিত জানালো।
চেয়ারম্যান লতিফ মেম্বার কাছে এগিয়ে গিয়ে শান্ত আর বোঝানোর স্বরে বলল

-“যা হওয়ার হয়েছে।
বাড়ি যাও।আমার নাতি কে চেনো না।তোমার ছেলে কে জেলে পুরে দিতে একবারও ভাববে না।”

লতিফ মেম্বার ঘৃণায় লজ্জায় ছেলে কে নিয়ে বাড়ির হতে বেড়িয়ে গেলো।

——-

দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ মিরা কে নিয়ে রিহান বাড়ি এলো সাথে রাশি সমুদ্র শিকদার বাড়ি যায় নি এখানে এসছে।
রাশি আশপাশের বাড়ির কিছু মেয়ে নিয়ে রিহানের রুম টা সুন্দর করে সাজিয়ে দিলো।
সব দিক গুছিয়ে মিরা কে রাহনুমা বেগম এর রুমে রেখে রাশি রুমে এলো।
আর রুমে এসেই দেখলো সমুদ্র রেডি হচ্ছে। কানে ফোন চেপে ধরে অস্থির কণ্ঠে বলে যাচ্ছে,

-“আমি পাঁচ মিনিট এর মধ্যে আসছি।
তোমরা বেড় হও।”

লাইন টা কেটেই সমুদ্র ফোন টা প্যান্ট এর পকেটে পুরো রুম হতে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই দরজায় রাশি কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,

-“যাক তুমি এসছো,ভালো হয়েছে।
সারাহ কে হসপিটাল নিচ্ছে।লেভার পেইন হচ্ছে।আমি যাচ্ছি রাতে আসব।”

-“আমি যাব।”

-“না জান।
আমি রাতে ফিরব তো।”

সমুদ্র রাশির কপালে একটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে রুম হতে বেড়িয়ে গেলো।
রাশি মন টা খারাপ হলো।তবে মন খারাপ না করে আল্লাহর কাছে দোয়া চাইতে লাগলো যাতে মা বাচ্চা দুজনেই সুস্থ থাকে।

——-

রাত নয়টার দিকে রিহান দোকান থেকে বাড়ি ফিরল।অবশ্য রিয়াজ মাহমুদ অনেক বার করে না করেছে আজ দোকানে যাওয়ার প্রয়োজন নেই কিন্তু রিহান শুনলে তো!
দুই বাপ ছেলে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নিয়ে যার যার রুমে চলে গেলো। মিরা শ্বাশুড়ির হাতে হাতে সব গুছিয়ে প্রায় দশটার দিকে রুমে এলো।
এসেই দেখলো রিহান চোখের উপর এক হাত রেখে সটান হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে।
মিরা দ্বিধাদ্বন্দ্ব করে জিগ্যেস করলো,

-“আপনার শরীর কি খারাপ লাগছে?”

-“নাহ।”

রিহান এর ভাবলেশহীন জবাব।মিরার মন খারাপ হলো।তবে পর পরই রিহান ডেকে উঠে মিরা কে বলল

-“শোনো,বিছানার এক পাশে শুয়ে পড়ো।
আমার একটু সময় চাই দিবে,প্লিজ?”

#চলবে….

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here