#প্রানেশা
#পর্ব_৯
#জান্নাত_সুলতানা
[পর্ব টা একটু রোমান্টিক পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন]
ভালোবাসার মানুষ টাকে তীব্র ভাবে পাওয়ার ইচ্ছে। নিজের সাথে ভালোবাসার মানুষ টার সারা জীবন এর জন্য বাঁধা।স্বপ্ন কি এটা?নাহ একদম স্বপ্ন নয়।এই তো মিরা শুয়ে আছে রিহানের পাশে। ইশ এরচেয়ে সুন্দর ভালো লাগার আনন্দের মূহুর্ত আর কি হতে পারে!মিরার জানা নেই।
কিন্তু তার পরেও কোথাও একটা চাপা কষ্ট অনুভব হচ্ছে মিরার।
তখন রিহানের কথায় মিরা কষ্ট পায় নি তবে খারাপ লেগেছিল। এই রাত নিয়ে মোটামুটি সব মেয়ের স্বপ্ন থাকে তাই মিরার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়।মিরার ছিল। কিন্তু সে নিজেও চায় না রিহান নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করে।তাই তো নীরব থেকে সম্মতি দিয়েছে।রিহান মুচকি হেঁসে পাশে শোয়ার জন্য ইশারা করে নিজেও চোখ বন্ধ করে নিদ্রায় তলিয়ে গেলো মিনিট ব্যবধানে। মিরাও চুপ করে এসে রিহানের পাশে শুয়ে পড়ে।
রিহান ভাই আজও সারাহ কে ভালোবাসে বেশ বুঝতে পারছে মিরা।রাত গভীর রিহানের নিঃশ্বাস এর ভারী শব্দ শুধু শোনা যাচ্ছে। আবার তো মাঝে মাঝে দূর দূর হতে বন্য প্রাণীর কণ্ঠ স্বর ভেসে আসছে।
মিরা ঘুম আসছে না সে এক দৃষ্টিতে অন্ধকারের মাঝে আবছা আলোর মাঝে ঘুমন্ত রিহানের দিকে তাকিয়ে আছে। কি মায়াময় সেই মুখ।
চাপ দাঁড়ি ভর্তি গাল।সরু নাক, জোড়া ভ্রু। তাঁর মাঝে সিগারেট পোড়া ঠোঁট যা বরই বেমানান।
একদম সুন্দর লাগে না দেখতে।
মিরা একটু এগিয়ে সামন্য চাপলো রিহানের দিকে। অতঃপর মলিন স্বরে বলল,
-“আপনি জানেন রিহান ভাই! আপনার এই সুশ্রী সুন্দর মুখখানায় এই পোড়া ঠোঁট বড্ড বেমানান?
উঁহু, জানবেন কি করে! আপনি তো এই ঠোঁটে ভালোবাসার পরশ পান নি।আমার কেন মনে হচ্ছে আপনি ওই ঠোঁটে একবার আমার ঠোঁটের স্পর্শ পেলে আপনি আপনার সুন্দর ঠোঁট জোড়া সিগারেটে পোড়ানোর জন্য আফসোস করবেন!”
———
রাশি বিছানায় বসে আছে।ঘুম নেই চোখে ওর।কখন আসবে কাঙ্খিত মানুষ টা?সেই যে দুপুরে বেড়িয়ে গেলো। ওদিকের একটা খবরও দিলো না। কি হচ্ছে? বাচ্চা আর বাচ্চার মা ঠিক আছে তো?রাশি তো অনেক বার নিজের মায়ের বাটন ফোন টা দিয়ে সমুদ্র কে কল দিলো।কিন্তু প্রতিবারই ফোন টা বন্ধ দেখালো।
রাশির অস্থির অস্থির লাগছে। বিছানা ছেড়ে রুম পেড়িয়ে ছোট বসার ঘরে এলো।
এখানে এক সেট সোফা আর একটা খাওয়ার টেবিল রয়েছে সেখানে পানির জগ হতে রাশি গ্লাসে পানি নিয়ে পানি খেলো। তৃষ্ণা যেনো মিটলই না।গ্লাসে আবার পানি নিতে যাবে ঠিক তক্ষুনি উঠোনে বাইকের শব্দ হলো।রাশি পাশের দেওয়াল ঘড়ি টার দিকে দৃষ্টি এক পলক তাকালো রাত প্রায় একটা বাজতে চলে।
রাশি হাতের গ্লাস রেখে টেবিলের উপর এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখলো সমুদ্র বাইক টা বারান্দায় তুলে রাখছে।রাশি কে দেখে এক পলক তাকিয়ে বাইক রেখে চাবি হাতে বসার ঘরে এলো তবে আসার আগে বারান্দার গেইট লাগাতে ভুলে না।
-“আপনি হাত মুখ ধুয়ে আসুন।
আমি খাবার নিয়ে রুমে আসছি।”
সমুদ্র রাশির কথায় ঘাড় নেড়ে রুমে চলে গেলো। রাশি রান্না ঘরে চলে গেলো।
বেশ কয়েক পদের তরকারি গরম করলো রাশি এর মধ্যে সমুদ্র নিজেও এসে রাশি কে এটা সেটা এগিয়ে দিয়ে সাহায্য করল।
রাশি অবাক হয়ে সমুদ্রের হাত থেকে একটা বাটি টেনে নিতে নিতে বলল
-“আল্লাহ, আপনার মাথা খারাপ হয়েছে?
আপনি রুমে যান আমি সব গুছিয়ে নিয়ে রুমে আসছি।”
-“আমার মাথা একদম ঠিক আছে।”
চুপ করে কাজ করো।”
সমুদ্র গম্ভীর কণ্ঠে কথা টা বলেই আবার ভাত এর প্লেট হাতে নিয়ে আর একটা পানির গ্লাস হাতে রুমে ছুটে।রাশিও একটা ট্রে করে তরকারির বাটি গুলো নিয়ে সমুদ্রের পেছনে পেছনে রুমে চলে আসে।
সমুদ্র নিজে খাবার খেলো সাথে রাশিকেও খাইয়ে দিলো।
খাওয়া শেষ রাশি এঁটো থালা বাসন নিয়ে আবার রান্না ঘরে রেখে এলো।
রুমে এসেই রাশি সমুদ্র কে প্রথমে জিজ্ঞেস করলো
-“আপু ঠিক আছে?”
-“হ্যাঁ, আল্লাহ রহমতে সবাই ঠিক আছে।”
রাশি যেনো এতোক্ষণে একটু স্বস্তি পেলো।বিছানা ঠিকঠাক করে নেয়।শোয়ার জন্য সমুদ্র কে ডাকতেই দেখলো সমুদ্র রাশির দিকে নেশাময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
রাশি ভরকালো তবে নিজে কে সামলে এতোক্ষণ অবহেলায় পড়ে থাকা ওড়না টা চেয়ার হতে তুলে নিয়ে গায়ে পেঁচাতে লাগলো।এতোক্ষণ তো ওড়নার কথা বেমালুম ভুলে বসে ছিল মেয়ে টা।
সমুদ্র রাশি কে লজ্জা পেতে দেখে হাসলো।যেটা রাশির চোখে পড়তে আরও একদফা লজ্জায় আড়ষ্ট হলো।
-“বোকা মেয়ে।
একটু পর তো তোমার সর্বাঙ্গ জুড়ে আমার রাজত্ব চলবে। সেখানে এই ওড়নার স্থান তখন মেঝেতে হবে।তাই এটা কে এতো যত্ন করে আমাকে কেন জেলাস ফিল করাচ্ছো !”
সমুদ্র কথা গুলো বলতে বলতে চেয়ার ছেড়ে একদম রাশির কাছে এসে এক টানে রাশি কে নিজের নিকটে আনে।
ওড়না টেনে গলা হতে সরিয়ে নিজের বুকের সাথে আরও কিছু টা চেপে ধরে মেয়েটার নরম সত্তা গিয়ে সমুদ্র প্রসস্থ বুকে ঠেকালো।তৎক্ষনাৎ রাশি চোখ বন্ধ করে নিলো।রাশি
নিজের সারা দেহ জুড়ে কম্পন তুলে।যা সমুদ্র নিজেও টের পেলো। চোখ বন্ধরত অবস্থায় নিজেদের ঠোঁটে গভীর হতে গভীর স্পর্শ পেলো রাশি।
সমুদ্র নিজের মতো করে বউয়ের অধর আদুরে স্পর্শ দিতে লাগলো।রাশি নিজেও তা যত্নের সাথে গ্রহণ করলো।
———
মধুময় সুন্দর একটা ভালোবাসার রাত কাটিয়ে শাওয়ার শেষ করে নামজ পড়ে ভোর সাড়ে পাঁচ টার দিকে ঘুমিয়েছে দু’জন। কিন্তু ঘুম টা আর হতে দিলো না সমুদ্রের ফোন টা বেশ শব্দ করে বাজতে লাগলো।সমুদ্র ঘুম ঘুম চোখে রাশির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাশি তখনো
ঘুমে বিভোর।
সমুদ্র নিজের উপর হতে রাশি মাথা টা সরিয়ে বালিশে রেখে শোয়া থেকে ওঠে গিয়ে ফোন টা হাতে নিতে নিতে কল টা কেটে গেলো।
সমুদ্রের বাবা ফোন দিয়েছে।
সমুদ্র কল ব্যাক করার আগেই আবার কল এলো।সমুদ্র সময় নষ্ট না করে ফোন টা রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ হতে গম্ভীর কণ্ঠে ভেসে এলো,
-“নয়টার দিকে জরুরী একটা মিটিং রয়েছে।
তুমি চলে এসো।”
সমুদ্র কিছু বলবে তাঁর আগেই সমুদ্রের বাবা কল কেটে দিলো।
ততক্ষণে রাশি ঘুম থেকে ওঠে বিছানায় বসে গোলগোল আঁখিদুটি সমুদ্রের দিকে স্থির রেখে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো
-“কি হয়েছে?”
-“বাবা ফোন করেছে।
মিটিং আছে জরুরী আমাকে যেতে হবে।”
সমুদ্রের জবাব রাশির ভালো লাগেনি সেটা রাশির মুখ দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
তবে রাশি মুখে বলল
-“আচ্ছা।
আমি কলেজ থেকে ওই বাড়ি চলে যাব।”
সমুদ্র মাথা নাড়ে অতঃপর টাওয়াল হাতে রুম হতে বেড়িয়ে গেলো।
——-
ক্লাস শেষ মিরা আর রাশি কলেজ থেকে বেড়িয়ে দেখলো রিহান গেইটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে।
ওরা এগিয়ে যেতেই রিহান বোন কে আগলে নেই। সময় নিয়ে বোন কে আদর করে।
রাশি ভাইয়ের আদুরে আরে গলে গেলো। শিকদার বাড়ি
যাবে না বায়না ধরলো।
রিহান তৎক্ষনাৎ সমুদ্র কে কল দিলো।
অতঃপর বলে দিলো রাশি আজ যেতে চাচ্ছে না।সমুদ্র শর্টকাট জবাবে জানালো রাশির কথা শোনার জন্য। রিহান খুশি মনে কল কেটে বউ আর বোন নিয়ে বাড়ি ফিরে।
যা দূরে আড়াল হতেই কেউ দাঁড়িয়ে তা নজরে নজরে রাখলছিল।রাশি কে রিহানদের সাথে নিয়ে যেতে দেখেই ব্যাক্তিটা রাগে ফেটে পড়লো।ফুসফুস করে আওড়াল
-“কত দিন রাখবি আগলে!
এই ময়নাল ঠিক সময় মতো নিজের মনস্কামনা পূর্ণ করে নিবে। এটা ময়নালের ওয়াদা।”
#চলবে……
[দুদিন গল্প না দেওয়ার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী, আর রাতে আরেক পর্ব আসতে পারে আবার না ও পারে।]
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/