প্রিয়_রুদ্র_ভাই #পর্ব-২০ #তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

0
466

#প্রিয়_রুদ্র_ভাই
#পর্ব-২০
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

বাইকে পুরো শহর চক্কর কেটে আড্ডা দিয়ে, খেয়ে দেয়ে রুদ্র সন্ধ্যা নাগাদ তটিনীকে নিয়ে বাড়ি ফিরলো। রুপান্তরের প্রথম মন খারাপ হলেও পরে সে নিজেও এনজয় করেছে সবকিছু। সবকিছু আজ রুদ্রের পক্ষ থেকেই ছিল। সাথে ছিল রুদ্রের বন্ধুরা।

ফুরফুরে মন নিয়ে বাসায় ফিরে তটিনী একটি খবর পেয়ে থমকে গেলো। তখন সে মাত্রই সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। রোবা নাহার তখনই রুদ্রকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘তোর সবকিছু রেডি রে রুদু, ফ্লাইট দু তিনদিন পরই৷

তটিনী সিঁড়ি দিয়ে না উঠে পিছন ফিরে তাকালো। রুদ্রের সাথে চোখাচোখি হতেই রুদ্র হাসলো। তটিনী ঠোঁট উল্টে নিজের রুমে চলে গেলো। রুদ্র ফ্রেশ হয়ে তটিণী-র ফোনে বার্তা পাঠালো।’

‘তখন ঠোঁট উল্টিয়ে চলে গেলি কেন? খুশি হোস নি?’

তটিনী কি বলবে ভেবে পেলো না। কিন্তু কিছু তো লিখতে হবে। সে টাইপ করল, ‘খুশি হবো না কেন রুদ্র ভাই? আপনি আপনার নিজের সাথে বাবা মা’র ইচ্ছে পূরণ করতে যাচ্ছেন। খুশি হবারই কথা।’

রুদ্র মেসেজটি তড়িৎ গতিতে সিন করলো। লিখলো, চিন্তা করিস না। তোকে এমনই এমনই ছেড়ে যাবো না। আমি চলে তো যাবো কিন্তু তোকেও একটা গন্ডিতে আবদ্ধ করে যাবো।

তটিনী উপরে তাকানো ইমোজি দিলো। বলল, ‘মানে?’

রুদ্র হাসির ইমোজি দিয়ে বলল, ‘সময় হলে বুঝতে পারবি। আপাতত ঘুম দে।’

কিন্তু তটিনী ঘুমাতে পারলো না। তার মনে বার-বার একই প্রশ্ন জাগতে লাগলো। রুদ্র কিসে আবদ্ধ করে যাবে তাকে?’

*

তটিনী যখন অনেক কষ্টে ঘুমিয়ে গেলো, তার ঠিক এক ঘন্টা পর রুপান্তর একের পর এক কল দিতে লাগলো। ঘুম ঘুম চোখে বাধ্য হয়ে তটিনী কল রিসিভ করলো। রাগে গরগর করে বলল, ‘তোর সমস্যাটা কি? ঘুমাতে দিবি না?’

রুপান্তর দাঁত কেলিয়ে বলল, ‘দোস্ত আমি মনে হয় প্রেমে পড়ছি।’

তটিনীর মুখ দিয়ে বের হয়ে এলো বিশ্রি এক গালি। কিন্তু তাতেও রুপান্তরের কিছু হলো না। সে বলতে শুরু করলো, ‘দোস্ত মিনহাজ টা দিনদিন হ্যান্ডসাম হয়ে যাচ্ছে বুঝলি।’

তটিনী দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল, ‘দিনদিন তো ছোট হচ্ছে না। একটা ছেলের পরিপূর্ণ যুবক চেহারা পেতেই বয়স পঁচিশ হতে হয়। ধীরে ধীরে চেহারা গ্লো করবে স্বাভাবিক। তুই কি নাদান বাচ্চা? এতো রাতে ফোন করে ডিস্টার্ব করছিস কেন?’

রুপান্তর মন খারাপ করে বলল, ‘তোকে ছাড়া আর কাকে বলবো বল? কে-ই বা আছে আমার? মিনহাজ ঈদের পাঞ্জাবি পড়ে ফটো দিয়েছে, দেখবি?’

তটিণী-র মাথায় হাত। বলল, ‘মজনু থেকে সোজা মিনহাজ। ওরে বাটপার ওরে চিটার। তুই ফোন রাখ। তোর জামাইরে তু-ই দেখ।’

তটিনী ফোন কেটে দিলো। মাথায় বালিশ চেপে ঘুমাতে চেষ্টা করলো। সারাদিনের ঘুরাঘুরিতে তার মাথা ব্যথা নামক বন্ধুটা ফিরে এসেছে। রুপান্তর দমে গেলো না। সে পুনরায় কল দিতে শুরু করেছে। তটিনী কল রিসিভ করে বলল, ‘কি বলবি মা?

রুপান্তর এইবার রেগে গেলো। বলল, ‘বউ হতে হলে কোনো ইয়াং ছেলের হবো, তোর বাপ আমার বাপের বয়সী হয়। আমি তাকে আঙ্কেল ডাকি। শয়তানের বাচ্চা!’

তটিনী চটে গিয়ে বলল, ‘তুই কি ইন্ডিরেক্টলি আমার বাপকে বুড়ো বলতে চাইছিস? তুই জানিস আবার বাপকে এখনো ইয়াং ছেলেদের মতো হ্যান্ডসাম দেখায়? আমার মা যদি বিবাহিত না হতো বা সে অন্য কারো বউ হতো তো আমি আমার বাপকে দিয়ে অল্প বয়সী মেয়ে পটিয়ে দেখিয়ে দিতাম তোকে।’

রুপান্তরের মাথায় হাত। বলল, ‘বলদের বলদ, তোর মায়ের অন্য কারো সাথে বিয়ে হলে তোর বাপ আর তোর বাপ থাকতো না। অন্য কেউ তোর বাপ হতো। কি খেয়ে ঘুমাচ্ছিস? মাতাল কোথাকার।

তটিনী রেগে আবারও কল কেটে দিলো। কিন্তু এবার রুপান্তর আর কল দিলো না। তটিনী নিজের কথা গুলো রিপিট করতেই থমকে গেলো। শেষ পর্যন্ত সে কি না মাতালদের মতো আচরণ করলো। ঘুম তটিণী-র উড়ে গেছে। আজ আর ঘুম আসবে না। সে রুদ্রকে একের পর কল দিতে শুরু করলো। বেচারা রুদ্র ফোন রিসিভ করে গম্ভীর স্বরে বলল, ‘তোর কি কোনো কাজ নেই? একটা মানুষ এতো নিমকহারাম কিভাবে হতে পারে? সারাদিন তোকে ঘুরালাম। এখন শান্তিতে একটু ঘুমাচ্ছি সেটাও তোর সহ্য হচ্ছে না।

তটিনী চটে গিয়ে বলল, ‘আমি বলেছিলাম ঘুরাতে? নাকি আপনিই চার বেটারির মতো ঘুরঘুর করেছেন? আপনাকে বলেছি আমাকে নিয়ে ঘুরতে? যত্তোসব।

রুদ্র থমথমে গলায় বলল, ‘হ্যাঁ আমিই নিয়ে গেছিলাম। তো কি হয়েছে? আমি যদি ঘুরাতে না নিয়ে যেতাম তো দুটো রাস্তায় হাটতি আর এদিক সেদিক তাকাতাকি করতি।’

তটিনী রেগে বলল, ‘তাকাতাকি করতাম মানে? আপনি কি বুঝাতে চাইছেন রুদ্র ভাই? আমরা কি রাস্তায় ছেলেদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম নাকি?

রুদ্র বলল, ‘ছেলেদের দিকে কেন তাকাবি? তোরা তো গরু ছাগলের দিকে তাকাস।’

তটিনীর কন্ঠে থমথমে ভাব, ‘আপনি আমার সাথে কখনো কথা বলবেন না রুদ্র ভাই।’

রুদ্র দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ‘আমি তোর সাথে কথা বলার জন্য ম রে যাচ্ছি না। তুই কে যে তোর সাথে আমার কথা বলতে হবে?

তটিণী-র মন খারাপ হয়ে গেলো। সে ফোন কেটে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। রুদ্র ভাই মুখের উপর ওসব বলতে পারলো তাকে? মানুষটা দিন দিন নির্দয় হয়ে যাচ্ছে।

তটিণী বিষন্ন মনে অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো। ঈদের দিন ভালো কেটে রাতে অমাবস্যা নামলো। এটার কোনো মানে হয়? তটিণী-র চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগলো। বারান্দায় অন্ধকারে কাউকে বেয়ে উঠতে দেখে তার আবেগ জানালা দিয়ে পালালো। চোর চোর বলে রুম থেকে বড়ো লাঠি নিয়ে এলো।

ছায়াটা তটিণী-র বারান্দায় ধপ করে লাফ দিলো। তটিনী লাফ দিয়ে পেছনে সরে গেলো। আবছায়া থেকে ধীরে ধীরে প্রতিবিম্ব দেখা গেলো। রুদ্র কোমড়ে হাত রেখে হাঁপাতে লাগলো। তটিনী হাতের লাঠির দিকে একবার তো রুদ্রের দিকে একবার তাকাচ্ছে। রুদ্র তটিণী-র দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলল, ‘সামান্য লাঠি হাতে চোর তাড়াবি তুই? তোকেই তো তাড়িয়ে দিবে।’

নিজের এহেন অপমান তটিনী মানতে পারলো না। লাঠি দিয়ে রুদ্রের পাছায় বারি মে রে বলল, ‘কিভাবে তাড়াতে হয় দেখাচ্ছি আপনাকে।’

রুদ্র লাঠি কেঁড়ে নিলো। বলল, ‘এতো জোরে মা র লি ব্যাথা পেলাম না কেন?

তটিনী ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘কেন?’

রুদ্র হাতের লাঠি ফেলে দিলো। তটিণী-র কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। চোখে চোখ রেখে বলল, ‘ভালোবাসার মানুষ মা র লেও সেটা মিষ্টি লাগে।’

‘ও আচ্ছা তার মানে আপনার লেগেছে?’

‘হ্যাঁ বাট সেটা মিষ্টি হয়ে গেছে সেকেন্ডের গতিতে।

তটিণী-কে নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করলো। রুদ্র আরও পেচিয়ে ধরলো। বলল, ‘এতো ছাড়াছাড়ি করছিস কেন? তোকে কি আমি কামড়ে দিবো নাকি, বেয়াদব।

তটিনী ঠোঁট ফুলিয়ে বলল, ‘আপনি আমার সাথে একদমই কথা বলবেন না। বলেছিলাম না?’

রুদ্রের স্বাভাবিক উত্তর, ‘তোর সাথে কথা বলছে কে? আমি তো আমার বাগদত্তার সাথে কথা বলছি।

তটিনী অবাক, ‘কে আপনার বাগদত্তা?

‘যার সাথে কথা বলছি।’

তটিনী বুঝেও না বুঝার ভান করলো। নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, ‘বাগদত্তাকে হুটহাট জড়িয়ে ধরতে নেই। বিয়ে করা বউকে ধরুন, ফসকে যাওয়ার চান্স থাকবে না।’

রুদ্র নিজের মাথা চুলকিয়ে হাসলো। দূরত্বে দাড়িয়ে বলল,

‘তুমিই তো টেনে আনো বার-বার। মেয়ে তুমি সব বুঝো, আমি কাছে আসলেই শুধু না বুঝার ভান করো। অধমের প্রতি মায়া হয়না?’

তটিনী মুখ বাঁকিয়ে বলল, ‘একদম না!

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here