প্রিয়_রুদ্র_ভাই #পর্ব-১৮ (ঈদ স্পেশাল-১) #তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

0
454

#প্রিয়_রুদ্র_ভাই
#পর্ব-১৮ (ঈদ স্পেশাল-১)
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন রুদ্র। রোবা নাহার ছেলেকে ডাকতে ডাকতে ক্লান্ত হয়ে গেলেন। তখনই হাজির হলো তটিনী। রোবা নাহারকে উঠিয়ে বলল, ‘তুমি যাও বড়ো মা। আমি ভাইয়াকে উঠাচ্ছি।’

রোবা নাহার চলে গেলেন। তটিনী প্রথমে রুদ্রের নাকে সুড়সুড়ি দিলো। কিন্তু না রুদ্র উঠলো না। তারপর সে নিজের রুম থেকে মেকআপ বক্স নিয়ে আসলো৷ রুদ্রের চেহারার মানচিত্র পাল্টে দিয়ে কিছুক্ষণ হাসলো নিজ মনে। রুদ্রকে ডাকতে লাগলো সে। কিন্তু রুদ্রের কোনো সাড়া নেই৷ অগত্যা তটিনী পানির জগ হাতে নিলো। সম্পূর্ণ পানি ঢেলে দিলো রুদ্রের চোখেমুখে। যা রুদ্র সহ রুদ্রের সুন্দর বিছানাকেও ভিজিয়ে ফেললে অনায়াসে।

ধড়পড় করে উঠে বসলো রুদ্র। চোখ কচলে তটিণী-র দিকে অগ্নি চোখে তাকালো। তটিণী জিহ্বা বের করে ভেংচি দেখিয়ে বলল, ‘সেই কবে থেকে ডাকছি। আপনার তো উঠার কেনো নামই নেই রুদ্র ভাই। সেজন্য বাধ্য হয়ে পানি ঢাললাম।

রুদ্র দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ‘তাই বলে তুই পানি ঢেলে সবকিছু ভাসিয়ে দিবি?

তটিনী মন খারাপ করে বলল, ‘কি করবো বলেন? বড়ো মা ও আপনাকে ডেকে গেছেন। আপনাকে দু’জন মানুষ ডেকে তুলতে পারেনি। কিন্তু পানি ঢালার পর আপনি ঠিকই উঠলেন। সুতরাং উচিত ছিলো প্রথমেই পানি ঢালা আপনার উপর। শুধু শুধু দুজন মানুষের মুখ ব্যাথা হলো আপনাকে ডেকে।

রুদ্র চিৎকার করে বলল, ‘গো টু হেল ঐশি, নাহলে আজ তোকে খু ন করে ফেলবো আমি। আউট..!

তটিনী দৌড়ে বের হওয়ার আগে জোরে বলল, ‘ঈদ মোবারক রুদ্র ভাই। ভুলেও নিজের চেহারা আয়নাতে দেখতে যাবেন না যেনো।

রুদ্র রাগে তটিণী-র শেষের কথাটি খেয়াল করলো না। চটজলদি বিছানার চাদর পাল্টিয়ে ফেললে। তারপর ওয়াশরুমে ঢুকলো গোসল করতে। আয়নার নিজের চেহারা দেখে কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো রুদ্র। হাতে মেকআপ নিয়ে তা চোখের সামনে ধরলো। তটিণী-র কাজ বুঝতে পেরে রাগ বাড়তে থাকতো দ্রুত গতিতে। নিজেকে মনে মনে বলল, ‘কোল রুদ্র কোল। বাচ্চা মেয়ে ছেড়ে দে।

রুদ্র মেকআপ তুলে গোসল করলো। দ্যান বের হয়ে শরীরে ঈদের নতুন পাঞ্জাবি জড়িয়ে নিলো। মাথায় টুপি পড়ে বাপ চাচা ও রাজ এবং তুরফানকে নিয়ে বের হলো ঈদের নামাজ পড়তে।

তটিনী ঘুরঘুর করতে লাগলো। কখনো বড়ো মা তো কখনো ঈশানীে পিছনে। ঈশানী রেগে গিয়ে বললেন,’যা গিয়ে গোসল কর। দামড়ি মেয়ে হয়ে গেছে এখনো স্বভাব পাল্টালো না।

অগত্যা তটিনী গোসল করতে দৌড় দিলো।

*
চারিদিকে ঈদের আনন্দ। রাস্তায় বের হতেই সবার চোখে পড়ছে বিভিন্ন রঙের পোশাকে নিজেদের আবরিত করা মানব-মানবী কে। রাজ ও তুরফানের খুশি বেড়ে যাচ্ছে সেগুলো দেখে। দুজন এই-বার ফাস্ট ইয়ারে। অর্থাৎ তটিণী-র এক ক্লাস নিচে। রাজ ও তুরফান বাবাদের হাত ধরে মসজিদে প্রবেশ করলো। রুদ্র আগেই মানা করলো, ‘আমার পেছনে একটাও আসবি না।

ঈদের খুশিতে সেটা মনে কোনো প্রভাব ফেললো না দুজনের। তারা খুশিমনে নামাজ পড়তে মসজিদে প্রবেশ করলো।

*
গোসল করে তটিনী ভিডিও কলে কানেক্টেড হলো রুপান্তরের সাথে। রুপান্তর একের পর এক ব্রাশ ঘষছে নিজের গালে। তটিনী চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে সেসব দেখছে। রুপান্তর মেকআপ করার এক ফাকে তাকিয়ে বলল,, ‘কি মা? এতো কি দেখিস? জলদি রেডি হো। আমি আসতেছি তোদের বাসায়। একসাথে ঘুরতে বের হবো।

তটিনী ঈদের ড্রেস গায়ে জড়ালো। মেকআপ করে নিজেকে অপ্সরী লোক দিয়ে তবেই থামলো। এদিকে নামাজ পড়ে বাসায় সেই কবেই এসেছে রুদ্র রা। সোফায় বসে আপাতত সবাই পিঠা, সেমাই, নুডুলস আর কতো কি খেতে ব্যস্ত। তটিনী নিজেকে ঠিকঠাক করে সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগলো। সবাই খাওয়া বাদ দিয়ে সিঁড়ির দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো। রুদ্র গালে হাত রেখে মুচকি হাসলো। পকেট থেকে দুটো পাঁচশ টাকার নোট বের করে তটিণী-র দিকে এগিয়ে দিলো। তটিনী লুফে নিলো সেটা। তাহসিন ইরফান পাঁচ হাজার টাকা দিলেন। তাহের ইফফাত দিলেন সাত হাজার। ব্যস তটিনীকে পায় কে? রাজ ও তুরফান সুযোগ বুঝে তটিনীর পায়ে ধরে বসে পড়লো। তাদের এক কথা, ‘সালামি দে বোন।’

রুদ্র মুখ চেপে হাসতে লাগলো। তটিনী কাঁদোকাঁদো মুখ করে বলল, ‘ও বাবা ওদের বলো আমার পা ছাড়তে।

রাজ ও তুরফান আরও জুড়ে চেপে ধরলো। বলল, সালামি দিয়ে দে।

তটিনী নিজের সদ্য পাওয়া সালামির দিকে তাকালো। সেখান থেকে দুটো পাঁচশো টাকার নোট দুটোর দিকে এগিয়ে দিলো। রাজ ও তুরফান খুশিতে তটিণী-র পা ছেড়ে সোফায় বসে পড়লো। তটিনী ঠোঁট উল্টে বলল, ‘শয়তান গুলো, আমার সালামির টাকা নিয়ে নিলি।

রাজ মুখ বাঁকিয়ে বলল, ‘কতো টাকা পেয়েছিস। এক হাজার দিয়ে তোর তো কমলো না। আরও বাড়িয়ে দিতে পারতি আমাদের।

তটিনী ভেংচি কে*টে রোবা নাহারের দিকে চলে গেলো। রোবা নাহার তটিণী-র দিকে পাঁচশ টাকার নোট বাড়িয়ে দিলেন। তটিনী সেটা পেয়ে খুশি হয়ে গেলো। রুদ্র হেসে বলল, ‘এই-বার আগে সালামি পেয়েছিস, নে এবার পায়ে ধর সবার।

তটিনী মুখ বাকিয়ে বললো, ‘পায়ে ধরে সালাম করা জায়েজ না। আমি মুখে সালাম দিবো সবাইকে।

তটিনী সবাইকে মুখে সালাম দিয়ে ঈদ মোবারক জানালো। রুদ্র গম্ভীর স্বরে বলল, ‘বেঁচে গেলি, আগে সালামি দিয়ে দেওয়ার জন্য এইবার তোকে পা ধরতে হচ্ছে না। নাহলে পা ধরার পর সালামি দিতাম।

তটিনী সানগ্লাস চোখে পড়ে ভাব নিলো। সোফায় বসে খেতে শুরু করলো। রুপান্তরের আগমন ঘটলো তখনই। সে প্রথমে সবাইকে সালাম ও ঈদ মোবারক জানালো। নিজের সালামি বুঝে নিয়ে বসে পড়লো তটিণী-র পাশে। খেতে খেতে রুপান্তর বলল, ‘আন্টি আমি ও তটিনী ঘুরতে বের হবো একটু।

ঈশানী হেসে বললেন, ‘বেশ তো বের হও৷ কিন্তু সাবধানে থাকবে। অচেনা কোথাও যেও না। পারলে রুদ্রকে সাথে নিয়ে যাও। তোমাদের দেখে রাখবে।

রুপান্তর ও তটিনী একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। তটিনী ঠোঁট উল্টে বলল, ‘আমরা বাচ্চা নই মা, বড়ো হয়ে গেছি। নিজেকে সেইফ রাখতে পারবো।

‘তাহলে তো হলোই, তবুও সাবধানে থাকবে।

ঈশানীর প্রতিত্তোরে দুজন খুশি। হলো। সামনের সোফায় বসে থাকা রুদ্র গম্ভীর স্বরে বলল, ‘তোর সাথে যাওয়ার জন্য আমি ম রে যাচ্ছি না। আমারও বন্ধুদের সাথে ঘুরাঘুরি করা বাকি। তাদের রেখে তোর বডিগার্ড হতে যাবো কোন দুঃখে?

তটিনী চুল কানে গুঁজে বলল, ‘আমি তো বলিনি আপনাকে আমার সাথে যেতে তাই না?

রুদ্র কথা বাড়ালো না। চোখে সানগ্লাস লাগাতে লাগাতে বের হয়ে গেলো। তটিনী ও রুপান্তর বের হলো তার কয়েক মিনিট পর। দুজন বের হয়ে হাঁটতে শুরু করলো। রাস্তার মোড়ে রুদ্র নায়কদের মতো লোক নিয়ে বাইকে বসে আছে। মেয়েরা যেতে আসতে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। তটিনী দাঁত চেপে রুদ্রের পাশে গেলো। বলল, ‘এখানে কি করছেন? মেয়েদের দেখাচ্ছেন নাকি?

রুদ্র নিরীহ চোখে তাকিয়ে হাসলো। তটিণী-র বের হয়ে আসা চুল দু আঙুলের সাহায্যে কানে গুজে দিলো। বলল, ‘একদম না। কোথায় যাবি? চল পৌঁছে দেই।

তটিনী ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘আপনি না বন্ধুদের সাথে ঘুরবেন?

এরমধ্যে রুপান্তর চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে শুধালো, ‘বুঝি বুঝি, আমি বাচ্চা নই। হায় আল্লাহ এতোদিন আমি কোন জগতে ছিলাম। এ দুজন তো তলে তলে উড়োজাহাজ চালাচ্ছে গো।

তটিনী ঠোঁট চেপে হাসি আটকালো। রুদ্র নিজের চুলে ব্রেনওয়াশ করে তটিণী-র দিকে তাকালো। তারপর রুপান্তরের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আপনার ভরসায় ছাড়ছি শালিকা। দেখে রাখবেন।

রুপান্তর বুকে হাত চেপে বলল, ‘হায় আল্লাহ, আপনি তো বো ম ব্লা স্ট করছেন দুলাভাই। চাপ নিবেন না দেখে রাখবো।

রুদ্র বাইক নিয়ে সাই-সাই করে চলে গেলো। রুপান্তর তটিণী-র দিকে চোখ গরম করে তাকালো। তটিনী লজ্জায় কথা বলতে পারছে না। রুপান্তর ভ্রু নাচিয়ে বলল, ‘তলে তলে এতোকিছু বান্ধবী?

তটিনী মিনমিন করে বলল, ‘সেরকম কিছু না বিশ্বাস কর।

‘তাহলে কিরকম কিছু?

‘আমাদের প্রেম টাইপ কোনো সম্পর্ক নেই। উনি কখনো আমাকে এসব নিয়ে কিছু বলেন নি। আমিও কখনো কিছু বলিনি।

রুপান্তর তটিণী-র এক হাত ধরে বলল, ‘বুঝতে পারছি, দুলাভাই আমার হালালে বিশ্বাসী।’

তটিনী লজ্জা পেলো। বলল, ‘বাদ দে এই টপিক। আমাকে লজ্জা দিতে এসব বলে চলে গেছে। আমি এখন সামনেও যেতে পারবো না। প্রথমবার এমন করেছে।

রুপান্তর প্রাউড ফিল করে বলল, ‘যাক আমি একটা ভালো কাজের কারণ হলাম।

তটিনী হেসে রুপান্তরের হাতে ঘুষি মা র লো। কিন্তু মনে চলছে তার নানান ভাবনা। এ কেমন প্রণয়? দুজন দুজনকে না বলে মনে মনে বিশাল এক প্রেমময় সমুদ্র গড়ে উঠেছে। সেটা দুজনেই বুঝতে পারছে। অথচ কেউ কাউকে বলছে না। কিন্তু বার-বার মনে হচ্ছে ‘আমার সে আছে।’

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here