#প্রিয়_রুদ্র_ভাই
#পর্ব-২৪
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ
রাত ১২টা। চারিদিকে অন্ধকার। রুদ্র নিজের রুমের বেলকনিতে বসে আছে। রাত পোহালেই থাকে চলে যেতে হবে এই দেশ ছেড়ে। রুদ্রের ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটে কিছুর শব্দে। সে উঁকি দিয়ে নিজের রুম পর্যবেক্ষণ করলো। কারো ছায়া দেখা যাচ্ছে। রুদ্রের ভ্রু আপনাআপনি কুঁচকে গেলো।
‘কে ওখানে?’
অবয়বটি স্পষ্ট হতে লাগলো রুদ্রের সামনে। আচমকা কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে দেখে রুদ্র চমকে গেলো৷
‘তুই?’
তটিনী মাথা নিচু করে রুদ্রের সামনে দাড়িয়ে আছে। রুদ্র অপলক তাকিয়ে তটিণী-কে পর্যবেক্ষণ করে নিলো কিছু সেকেন্ড। হাত টেনে নিজের উপর বসালো। তটিনী মাথাটা আরও নিচু করে ফেললো।
‘মাথাটা আর কতো নিচে নামাবি?’
রুদ্রের কথা শুনে তটিণী-র মাথা আর নিচু হয়ে গেলো। রুদ্র হতভম্ব হয়ে তটিণী-র মাথা ধরলো।
‘কি করছিস? মাথাটা কোথায় নিয়ে লাগাচ্ছিস খেয়াল আছে তোর?’
তটিনী এবার মাথা উপরে তুললো। রুদ্রের কথার মানে না বুঝে প্রশ্ন করলো।
‘কোথায় লাগাচ্ছি?’
তটিনী বসেছে রুদ্রের এক পায়ের বাহুতে। অর্থাৎ আরেকদিক খালি। মাথা বুক থেকে পেট, পেট থেকে কোমড় থেকে কোলে। মানে প্যান্টের চেইন বরারব! তটিনী সেটা ভেবে থমকে গেলো।
রুদ্র নিজের ঠোঁট চেপে ধরে হাসি নিয়ন্ত্রণ করলো। তটিনীর তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়ালো। যেতে নিলে রুদ্রে হাত টেনে আবারও বসিয়ে দিলো।
‘কোথায় যাস?’
‘ঘরে।’
‘এখানেই বস।’
রুদ্র এবার তটিনীকে নিজের পুরো কোলেই বসালো। তটিণী-র মনে নষ্টালজিক সব চিন্তারা হানা দিতে লাগলো। বেচারি জীবনে প্রথমবার এমন কিছু ভেবে ঘাবড়ে গেলো। রুদ্র সেটা খেয়াল করলো। তটিণী-র পড়নে পাতলা টি-শার্ট ও প্লাজু। গলায় ওড়না পেঁচানো। রুদ্র ওড়না খুলে ছুঁড়ে ফেললো বারান্দার একপাশে। তটিনী চোখ বড়বড় করে তাকালো। রুদ্রের চোখমুখ কেমন অন্যরকম। তটিনী ভয় পেয়ে গেলো।
‘একটু গভীরভাবে ছুয়ে দেই? প্লিজ!
তটিণী-র ঘাবড়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে রুদ্র নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করলো। কিন্তু পাল্টি খেলো তটিনী। সহসা রুদ্রের ওষ্ঠে ডুব দিলো।
রুদ্র নিয়ন্ত্রণ হারালো পুরোপুরি। এরকম উন্মাদ হতে রুদ্রকে কখনো দেখেনি তটিনী। নিম্নে নামলো রুদ্রের ওষ্ঠদ্বয়। তটিণী-র দেহের প্রতিটি ভাজে নিজের ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিয়ে ক্রান্তিলগ্নে এসে তটিনীর উনিশ বছর ও নিজের চব্বিশ বছরের ভা র্জি নি টির রেকর্ড ভেঙে দিল সে।
ক্লান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে রুদ্র থমকে গেলো। তটিনীর মাথা বালিশ থেকে নেমে গেছে৷ চুল এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে চারিপাশে। রুদ্র দু’হাতে যত্ন করে স্ত্রীর চুল ঠিক করে দিলো। তটিণী-র গালে শুকিয়ে যাওয়া অশ্রুর চাপ। রুদ্র চুমুতে ভরিয়ে দিল মুখশ্রী। তটিনী আদর পেয়ে রুদ্রের বুকে মুখ লুকালো। শব্দ করে কাঁদলো অনেকক্ষণ।
রুদ্রের মনে অপরাধবোধ জাগ্রত হলো। তটিনীকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে উঠে বসলো। টেবিলের সাইড থেকে বের করলো ঔষধের বক্স।
রাত দুটোর দিকে রুদ্রকে ঔষধের খুঁজে বের হতে হলো৷ বেচারা জীবনে প্রথমবার ঔষধ কিনতে গিয়ে নাজেহাল হলো অনেক। লেগে গেলো রুদ্রের মধ্যে পরিপূর্ণ স্বামীর ট্যাগ।
তটিনীকে প্রয়োজনীয় সব ঔষধ খাইয়ে রুদ্র মাথায় হাত ভুলিয়ে দিতে লাগলো। কিন্তু তটিনী চোখ বড়বড় করেই তাকিয়ে রইলো। রুদ্রের ক্লান্তিতে চোখে ঘুম নেমেছে। বউ ঘুমাচ্ছে না দেখে সে-ও ঘুমাতে পারছে না।
তটিণী-র হয়তো মায়া হলো। সে চোখ বন্ধ করে ঘুমাতে চেষ্টা করলো।
*
সকাল নয়টার দিকে ঘুম ভেঙেছে তটিণী-র। নিজেকে নিজের বিছানায় পেয়ে থমকে রইলো কিছুক্ষণের জন্য। তবে কি সব স্বপ্ন ছিল? ওয়াশরুমের আয়নায় নিজেকে দেখলো সে। নাহ্ স্বপ্ন ছিল না, সব সত্যি। আচ্ছা রুদ্র ভাই কি চলে গেছেন?
সে তড়িঘড়ি করে ফ্রেশ হয়ে নিলো। নতুন একটি পোশাকে নিজেকে আবরিত করলো। তাকেও এয়ারপোর্টে যেতে হবে।
রেডি হয়ে তটিনী নিচে নামলো রুদ্র তখন সোফায় বসে ফোন গুতাচ্ছে। রুদ্রের পড়নে সাদা শার্ট ইন করা। রেডি হয়েই বসে আছে তাহলে। তটিনী খাবার টেবিলে গিয়ে বসলো। ঈশানী এক ফাঁকে কানের দুল লাগাতে লাগাতে বলে গেলেন,
‘টেবিলে খাবার ঢেকে রাখা আছে খেয়ে নে।’
তটিনী খেয়ে নিলো৷ তারপরই সবাই ধীরে ধীরে বের হলো বাড়ি থেকে। গাড়িতে আগে থেকেই রুদ্রের সব ব্যাগপত্র রাখা। তটিনীকে আজ সবাই রুদ্রের পাশে বসতে দিলো। আরেক পাশে বসেছেন রোবা নাহার। সবার অগোচরে রুদ্র তটিণী-র হাতে হাত রেখেছে সন্তপর্ণে। এয়ারপোর্টে গাড়ি থামতেই তটিণী-র হৃদপিণ্ড থমকে গেলো যেনো। রুদ্রসহ সবাই নেমে দাঁড়ালো এক এক করে।
বিদায় বেলা চলে এলো। রোবা নাহার ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন শক্ত করে। এক এক করে সবাই জড়িয়ে ধরলো। বাকি রইলো তটিনী। সবার সামনে রুদ্রকে জড়িয়ে ধরতে লজ্জা করছে তার। রুদ্র অপেক্ষা করে আছে তটিণী-র জন্য। রোবা নাহার ধাক্কা দিলেন।
‘যা মা।
তটিনীর পা চলতে চাইলো না। ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে উঠলো সে। আঁচড়ে পড়লো রুদ্রের বুকে। রুদ্র শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো। সবার আড়ালে ঠোঁট ভুলিয়ে নিলো কপালে। রুদ্র যখন ব্যাগ হাতে নিয়ে গেইট ক্রস করবে তটিনী তখন পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। রুদ্রের পা থমকে গেলো। গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো কয়েক ফোঁটা অশ্রুকণা। সামনে ফিরে তটিনীকে এক হাত দিয়ে নিজের সাথে জড়ালো ফের। রোবা নাহার তটিনীকে ছাড়িয়ে নিলেন। ছেলের চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললেন,
‘ফিরে এসো। আমার মেয়েটা কিন্তু তোমার অপেক্ষায় থাকবে রুদু। তোমার মা-ও তোমার অপেক্ষায় থাকবে বাবা।
সবার পেছনে দাড়িয়ে তাহসিন ইরফান চোখে হাত ভুলাচ্ছেন। রাজ কেঁদে কেঁদে বলল,
‘আমি তোমাকে মিস করবো ভাইয়া।’
তুরফান ঈশানীকে জড়িয়ে কাঁদছে। রুদ্র সবার দিকে তাকিয়ে ফের পা চালালো। পেছন ফিরে দেখলো না আর। একের পর এক গেইট ক্রস করে সে অদৃশ্য হয়ে গেলো।
গাড়ি ছুটছে বাড়ির দিকে। তটিণী-র ফোনে টং করে শব্দ হলো। বড় একটি বার্তা এসেছে রুদ্রের নাম্বার থেকে।
সর্বনাশিনী..!
তুমি একটু একটু করে আমার সর্বনাশ করেছো। তোমার প্রেমে দিওয়ানা বানিয়ে ছেড়েছো। আমি আজ তোমার জন্য খেতে পারিনা ঘুমাতে পারিনা। গতকাল কি করলে? এবার আমি সুদূর দেশে থেকে কিভাবে তোমায় কাছে টেনে নিবো? তোমার গায়ের গন্ধ এখনো আমার শরীরে রয়ে গেছে। আমার গা থেকে তুমি তুমি গন্ধ বের হচ্ছে ঐশি। আমি এই গন্ধ নিয়ে দু’বছর অপেক্ষা করবো। আবারও তোমার গন্ধে নিজের শরীরে মাখতে ফিরে আসবো তোমার আমার প্রণয়ের শহরে, তোমার আমার প্রণয়ালিঙ্গনের বিছানাতে। ততোদিন তুমি অপেক্ষা করো কেমন? সর্বদা রুদ্রের সর্বনাশিনী হয়ে থেকে যেও।
আমি আবার আসবো। সেদিন আকাশে পঞ্চমীর চাঁদ ডুবে যাবে। তুমি নিজেকে আকাশের মতো সাজিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করবে। অন্ধকারে আমি তোমার গন্ধে তোমাকে চিনে নেবো।
আমাদের নিজস্ব কুঁড়েঘরের বাম দিকের কাভার্ডে তোমার পছন্দের লেখকের বইগুলো রয়েছে। ওগুলো যখন ছুয়ে দেখবে তখন ভাববে আমাকে ছুঁয়ে দিচ্ছো। আমাদের বিছানায় শুয়ে আমি যেদিকে শুই ওইদিকে হাত ভুলিয়ে দিও আলগোছে৷ আমি ঠিক তোমার কল্পনা হয়ে তোমাকে জড়িয়ে নিবো বুকে। উষ্ণ আদরে তোমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিবো সবসময়ের মতো।
তোমার বক্ষের ভাজে মুখ লুকাতে আমি আবারও আসবো ফিরে। সর্বনাশিনী অপেক্ষা করো। ততোদিন যতোদিন না আমি ফিরে আসছি। মনে রেখো আমি ফিরবো একদিন!
রুদ্র..
দীর্ঘ বার্তা পড়ে তটিনী চোখ মুছলো। রিপ্লাই দিতে টাইপ করল-
আপনি সর্বনাশিনীর সর্বনাশ করে গেলেন রুদ্র। আপনার আপনি আপনি গন্ধটা আমি এখনো পাচ্ছি। বিদেশবিভুঁইয়ে ভালো থাকবেন। সাদা চামড়ার রমনীদর ভীড়ে আমাকে ভুলে যাবেন না যেনো। আমি দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকবো আপনার। সর্বনাশিনীর সর্বনাশ করতে আপনার আগমন হোক পরিপূর্ণ ভাবে! আপনাকে আমি পছন্দ করি না, কিন্তু ভালোবাসি অনেক! বুঝেছেন?
(চলবে)