#প্রিয়_রুদ্র_ভাই
#পর্ব-২৮
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ
প্রিয় মন খারাপ, অবেলায় কেন হানা দাও রুদ্রের একান্ত রমনীর মনে? কেন নাম না জানা মন খারাপে ভাসিয়ে নিয়ে যাও হাসিখুশি আমিকে? এমন মন খারাপের কোনো মানে হয়? তুমি চিরবিদায় নাও না কেন? আমি ছাড়া কি জগতে আর কেউ নেই? আমার আমিকে নিঃশেষ করে দিতে এতো কেন আয়োজন তোমার? রুদ্রের সর্বনাশিনীর সর্বনাশ করতে চাও এতো দুঃসাহস তোমার! জানো তো? সে জানলে তোমার এই আয়োজনে ভাঁটা পড়বে চরম ভাবে।
বিষন্ন সন্ধ্যায় বারান্দায় দাড়িয়ে আকাশ দেখতে দেখতে নিজ মনে কথা বলে চলেছে তটিনী। আজ তার মন খারাপ! নাম না জানা মন খারাপে বিষিয়ে যাচ্ছে সে।
আজ সকালে বাসায় এসেছে সে। মিনহাজদের বাড়ি ঘুরেফিরে বাসায় এসে তার এমন অদ্ভুত মন খারাপ জেঁকে ধরেছে। রুদ্রকে মেসেজ করে নিজের আসার খবর জানিয়ে আর কোনো বার্তা বা ফোনকল করা হয়নি। সে মোবাইল হাতে নিলো। ওয়ার্সআপে ফোন করলো রুদ্রকে। রুদ্র রিসিভ করলো তৎক্ষনাৎ।
স্কিনে ঠোঁট চেপে তাকিয়ে আছে তটিনী। রুদ্র ভালো করে দেখার ট্রাই করলো,
‘অন্ধকারে কি করছো?, লাইট অন করো। তোমায় দেখা যাচ্ছে না ঐশি।’
তটিনী লাইট অন করলো। রুদ্র তটিণী-র দিকে চোখ ভুলিয়ে নিলো।
‘চোখ মুখের এই অবস্থা কেন?
তটিনী ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে উঠলো।
রুদ্র হতভম্ব হয়ে তাকালো।
‘এই তুমি কাঁদছো কেন?’
‘আপনার কাছে যাবো।’
তটিনী বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে আবদার করলো। রুদ্র অনেক দিন পর তটিণী-র বাচ্চামো দেখলো। হেসে বলল,
‘আসবে তো শীগ্রই আসবে।’
‘আমি এখনই যাবো, নিয়ে যান।’
রুদ্র ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো,
‘কেন থাকতে পারছো না?’
তটিনী এবার কান্নার শব্দ বাড়ালো। রুদ্র দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, ‘মন খারাপ কেন?’
‘আমি জানি না, আমার কেন এমন অদ্ভুত মন খারাপ হয়। কেন আমি গুমরে মরি বুকের ভেতর। আমি শুধু জানি আমার সবকিছু ছেড়ে চলে যেতে ইচ্ছে করে। পাহাড়ের বুকে শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। এক পৃথিবী মন খারাপ হয় আমার রুদ্র ভাই।’
রুদ্র মনোযোগ দিয়ে তটিণী-র কথা শুনলো। তটিনীকে বলল ক্যামেরা চাঁদের দিকে ঘুরাতে। তটিনী ঘুরালো। রুদ্র গম্ভীর স্বরে বলল,
‘তোমাকে দায়িত্ব দিয়েছি আমার চাঁদকে দেখে রাখতে। তুমি কি করছো? তুমি চাঁদ আমার চাঁদের মন খারাপে ম্যাজিকের মতো কাজ করছো না কেন? কেন আমার চাঁদ বুকের ভিতর গুমরে মরছে? আমার অনুপস্থিতিতে তুমি তাকে হাসাতে পারছো না কেন?’
আকাশের চাঁদ মুখ গোমড়া করে বলল,
‘তোমার চাঁদ কি আর আমার কথায় পোষ মানে? সে তো তোমার চাঁদ। তোমার কথাই শুনবে। তার এই নাম না জানা মন খারাপ ভালো করার একমাত্র ঔষধ তুমি। আমি কিভাবে সে-ই দায়িত্ব পালন করবো বলতে পারো?’
রুদ্র দমে গেলো। তটিনী নিজের দিকে ক্যামেরা ঘুরিয়েছে। রুদ্র হেসে বলল,
‘চাঁদকে বকে দিয়েছি। এ এখন থেকে তোমার মন খারাপের সঙ্গী হবে আমার অনুপস্থিতিতে।’
তটিনী আবদার করলো, ‘আপনার কাছে যাবো।’
রুদ্র গভীর চোখে তাকালো,
‘তোমাকে বলতে চাইছিলাম না। ভেবেছিলাম একেবারে সারপ্রাইজ দিবো। নাও বলে দিচ্ছি, তোমার ভিসা কমপ্লিট। তুমি কয়েকদিনের জন্য সুইজারল্যান্ড আসছো আমার কাছে। তোমার ফ্লাইট এর দিন তোমাকে জানাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আজ জানিয়ে দিলাম। হ্যাপি?’
তটিনীর এক উত্তর ‘আপনার কাছে যাবো।’
‘আসবে তো আমার কাছে। আরও দুদিন পর তোমার ফ্লাইট। সবকিছু গুছিয়ে রাখো, যা কিছু সাথে আনতে চাও তা গুছাও। আমার কাছে আসবে প্রস্তুতি আছে না?’
তটিনী চোখভরা অশ্রু নিয়ে তাকালো। রুদ্র মানা করে বলল, ‘একদম কাঁদবে না, আমি এতো দূরে বসে তোমার চোখের পানি মুছিয়ে দিতে পারবো না। যতো কাঁদবার ইচ্ছে আমার কাছে এসে তারপর কাঁদবে। আমি বুক পেতে দিবো কেমন?’
তটিনী ফুপিয়ে উঠলো। রুদ্র গম্ভীর স্বরে বলল, ‘এবার কিন্তু আমি বকা দিবো তোমায়।’
তটিনী মুখ নিচু করলো। রুদ্র গভীর চোখে তাকিয়ে বলল,
‘তোমার মন খারাপে একশো একটি চুমু ঐশি। একশো একটি চুমুর পর যতোগুলো চুমু পৃথিবীতে রয়েছে সবটুকু তোমার কপালে। ঐশির মন খারাপ ম্যাজিকের মতো বেনিশ হও। আমার লক্ষীর মন কি তোমাকে আমি ভাড়া দিয়েছি? দেইনি তো। আমার অনুপস্থিতিতে একদম আমার লক্ষী কে জেঁকে ধরবে না। আমি কিন্তু তা সহ্য করবো না।’
তটিনী খিলখিল করে হাসলো। রুদ্র হেসে বলল, ‘এবার ঠিক আছে। তোমাকে হাসিতে মানায় ঐশি। আমার ঐশি ভালোবাসাময়ী দুষ্টুমির রানী আমার। তুমি সবসময়ই হাসবে। মনে থাকবে?’
তটিনী মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো। রুদ্র ফাজলামি করে বলল, ‘এবার স্কিনের দিকে তাকিয়ে আমাকে একটা উড়ন্ত চুমু দাও। কতোদিন তোমাকে চুমু টুমু খেতে পারছি না বলো তো? এক বছর পেরিয়ে গেলো। এটা জানো আমার জন্য কতো বড় লস? এক বছর চুমু খাইনি, এক বছর! মাই গড!’
তটিনী শরীর দুলিয়ে হাসছে। রুদ্র সুইজারল্যান্ডের একটি বিলাসবহুল ফ্লাটে বসে সেই দৃশ্য স্কিনে তাকিয়ে দেখে তৃপ্তি পাচ্ছে। তটিনী পেট চেপে ধরে বলল, ‘আর হাসতে পারছি না।’
‘তুমি হাসছো কেন? তোমাকে কি আমি হাসতে বলেছি? বলিনি তো, তুমি প্লিজ হাসবে না। আমি তোমায় হাসাতে একদম এসব বলিনি।’
তটিনী দাঁত বের করে হেসে বলল, ‘আমি জানি আপনি আমাকে হাসাতেই এমন করছেন। এবং আমি হেসেও ফেলেছি।’
রুদ্র হাসলো,
‘তোমাকে ভালো রাখতেই আমার সব করা ঐশি। তোমাকে সারাজীবন ভালো রাখবো বলেই দূরে আজ। তোমার দায়িত্ব নেওয়ার যোগ্য না হলে যে আমি তোমাকে পুরোপুরি সবার সামনে স্বীকৃতি দিতে পারবো না। পরিবারের বাহিরে তোমাকে স্বীকৃতি দিতে হলে রুদ্র ইরফানকে যোগ্য স্বামী হয়ে দেখাতে হবে।’
তটিনী নিরিহ চোখে তাকালো,
‘আপনি আমার যোগ্য বলেই আজ আমি আপনার স্ত্রী।’
রুদ্র চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘এটা তুমি আমাদের পরিবার মানবে ঐশি। সমাজ তোমাকে বেকার ছেলের স্ত্রী ভাববে। তোমার স্বামীর যোগ্যতা দেখে তোমাকে ট্রিট করবে। তোমাকে আমি সমাজের সামনে যোগ্য মর্যাদা দিবো ঐশি। তুমি হবে যোগ্য স্বামীর যোগ্য বউ।’
তটিণী-র বুক ভরে গেলো।
‘আপনাকে একটু ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।’
রুদ্র গভীর চোখে তাকালো,
‘চোখ বন্ধ করো, আমাকে কল্পনায় দেখতে চেষ্টা করো। তারপর ছুয়ে দাও ইচ্ছে মতো।’
তটিণী-র রুদ্রের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করলো। কল্পনায় ছুয়ে দিতে গিয়ে স্কিনে চুমু দিয়ে ফেললো। রুদ্র হেসে বলল, ‘তুমি রোমান্টিক হয়ে গেছো বউ। এতো দূরে বসে তোমার রোমান্টিকতা দেখতে ভালো লাগছে না। আমার কাছে আসার জন্য প্রস্তুত হও।’
তটিনী লজ্জা পেলো। রুদ্র গম্ভীর স্বরে বলল, ‘লজ্জা বাদ দিয়ে পড়তে বসো। অনেক তো ঘুরাঘুরি করেছো। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ো বলে কি পড়তে হবে না? তোমাকে পাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি করতে হবে দেখছি।’
তটিনী চোখ বড়বড় করে তাকালো,
‘একদম না। আমি পাইভেট এ পড়বো না। অনেক প্যারা দিবে।’
‘তো পড়তে হবে না?’
‘পড়বো তো। আমি আপনার কাছে ঘুরেফিরে তারপর দেশে এসে পড়তে বসবো প্রমিজ।’
রুদ্র মেনে নিলো। বলেও লাভ হবে না। কাছে থাকলে ধরে বেঁধে পড়ানো যেতো। তটিনী ঠোঁট উল্টে বলল, ‘আপনি রোমান্টিকতা বাদ দিয়ে পড়াশোনা নিয়ে পড়েছেন কেন? কেমন স্বামী আপনি?’
রুদ্র ভ্রু কুঁচকে ফেললো,
‘স্বামীর ভূমিকা যদি এখন পালন করতে চাই তো তুমি আমাকে আর ফোন করবে না।’
‘কেন করবো না? অবশ্যই করবো।’
‘তুমি চাও আমি করি?’
‘অবশ্যই অবশ্যই।’
রুদ্র ঠোঁট কামড়ে হাসলো,
‘ঠিক আছে যাও নাইট ড্রেস পড়ে আসো। দ্যান আমি স্বামীর ভূমিকা পালন করছি।’
সঙ্গে সঙ্গে স্কিন অফ৷ রুদ্র শরীর দুলিয়ে হাসলো।
‘আমার অবুঝ ঐশি। পৃথিবীটা তুমি এখনো ভালো করে চিনতে পারো নি। পৃথিবীর মানুষের নোংরামি সম্পর্কে তোমার ধারণা নেই। আমি চাই তুমি যাতে কখনো ধারনা না করো। তুমি এমন-ই সুন্দর ঐশি। পৃথিবী চিনলে তোমার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে জান।
(চলবে)