হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_৩৪

0
432

#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৩৪

জাহিন নিজের পার্টি অফিসে বসে আছে। ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখে ঘন্টার কাঁটা একটার ঘরে আর মিনিটের কাঁটা পনেরো ঘরে। ইতিমধ্যে পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে অয়ন্তির। আজ অয়ন্তির শেষ পরীক্ষা। সময় খুব তাড়াতাড়ি চলে যায়। অয়ন্তির পরীক্ষাগুলা চোখের পলকে শেষ হয়ে গেল। সকাল বেলা যখন জাহিন তৈরি হচ্ছিল তখন অয়ন্তির চেহারা দেখে বুঝতে পেরেছিল কিছু একটা বলতে চায় তাকে কিন্তু জড়তার কারণে সেটা বলে উঠতে পারি নি। কিন্তু জাহিন স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে অয়ন্তি কি চায় বা কি বলতে চায়? জাহিন চেয়েছিল মেয়েটা নিজ থেকে তার কাছে এসে নিজের মনের কথা ব্যক্ত করুক, কিন্তু না অয়ন্তি সেটা করল না। জাহিনের তাতে রাগ উঠল অয়ন্তির উপর, এত কিসের জড়তা এই মেয়ের এখনও বুঝে উঠতে পারছে না সে। আজ বাদে কাল কিছুমিছু করলে এক বাচ্চার মা হয়ে যাবে আর এই মেয়ের এত জড়তা। জাহিন এসব ভেবেই দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ল। পুনরায় ঘড়ির দিকে তাকাল একটা একুশ বেজে গেছে। বউ যখন নিজ থেকে মনের কথা প্রকাশ করবে না তার কাছে তখন নিজেই যা করার করতে হবে। ডেস্কের উপরে রাখা দুটি ফোন থেকে একটি ফোন হাতে নিয়ে কাইফকে কল করল। দু বার রিং হওয়ার পরপরেই কাইফ ফোন ধরল।

“হ্যাঁ ভাই।”

“কই তুই?”

“এইতো ভাবির কলেজের সামনে।”

“তোর ভাবির পরীক্ষা কখন শেষ হয়?”

“পাঁচটার দিকে।”

“ঠিক আছে তুই চলে আয়।”

“আমি চলে আসলে ভাবি কিভাবে আসবে তাহলে?”

“আমার সাথে। আমি আসছি, তুই চলে আয়।”

“আচ্ছা।”

জাহিন ফোন কেটে দেয়। জাহিন সকাল বেলাই বুঝতে পেরেছিল অয়ন্তির মনের কথা। অয়ন্তি চেয়েছিল জাহিন যেন আজ তাকে পরীক্ষার হলে দিয়ে আসে, কিন্তু মেয়েটা বলতেই পারল না মুখ ফুটে। মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না। কি অদ্ভুত এই মেয়েদের চরিত্রের বৈশিষ্ট্য! জাহিন নুহাশকে বলে বেরিয়ে পড়ল। এখানেই দেড়টার উপরে বেজে গেছে যেতে যেতে তো সাড়ে চারটা বাজবে এটা সিউর জাহিন। জাহিন ড্রাইভ করছে আর কল্পনা করছে অয়ন্তি যখন তাকে কলেজ গেটের সামনে দেখবে তখন কেমন রিয়েকশন দিবে। নিশ্চয়ই হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকবে তার দিকে আর নয় তো নিজের মনের ভ্রম বলে ভাববে।

জাহিন অয়ন্তির কলেজ গেটের সামনে এসে গাড়ি পার্ক করে গাড়ির ভেতরেই বসে রইল। আর পাঁচ মিনিট বাকি আছে পরীক্ষা শেষ হওয়ার। একে একে স্টুডেন্টরা পরীক্ষায় দিয়ে বেরুতে শুরু করল। জাহিন সেদিকটায় তাকিয়ে রইল। কিন্তু যাকে এই দু চোখ খুঁজে বেড়াচ্ছে সে কোথায়? কিয়ৎক্ষণ পরেই কাঙ্ক্ষিত মানুষটার দেখা মিলল আর তার পাশেই লিজা। জাহিনের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল। কিন্তু পরক্ষণে ঠোঁটের কোণে থাকা হাসিটা বিলিন হয়ে যায়, ভ্রুদ্বয়ের মাঝে ভাঁজ পড়ল। চোয়াল শক্ত হয়ে এলো, স্টিয়ারিং এর উপরে রাখা বা হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরল স্টিয়ারিংটা। গরম চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। তার সামনেই তার বউকে প্রপোজ করছে একটা ছেলে এক একগুচ্ছ লাল গোলাপ নিয়ে কত্ত বড় সাহস। আজ পর্যন্ত সে নিজের বউকে একটা গোলাপ পর্যন্ত এনে দেয় নি। আর এই ছেলের কত্ত বড় সাহস তার বউকে গোলাপ ফুল দিয়ে প্রপোজ করছে সিনেমার হিরোর মতো তারেই চোখের সামনে। ছেলেটা কি জানে না এই মেয়েটা কার বউ? অবশ্য জানলে এতো সাহস হতো না জীবনেও হাত বাড়িয়ে প্রপোজ করার, তার আগে হাত ভেঙ্গে আসত। জাহিন গাড়ি থেকে নামতে নামতে রাগান্বিত গলায় বলে।

“তোর সিনেমার হিরো সাজা বের করছি আমি দাঁড়া।”

অয়ন্তি একটা বিব্রতকর পরিস্থিতে পড়েছে। আকস্মিক কিছু বুঝে উঠার আগেই নিজের সামনে একটা ছেলেকে ফুল নিয়ে দাঁড়াতে দেখে হকচকিয়ে উঠে। অয়ন্তি চলে যেতেও পারছে না। ছেলেটা কোনো না কোনো ভাবে তাকে আটকিয়ে দিচ্ছে। সবাই তাদের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে। কেউ কেউ ফিসফিস করে কানে কানে কিছু বলছে। হয়ত এটাই বলছে এই ছেলে কি জানে না এই মেয়েটা কে? অয়ন্তির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লিজা বাজখাঁই কন্ঠে বলে।

“এই ছেলে তোমার সাহস তো কম নয়। তুমি জানো ও কে?”

ছেলেটা ভয়ে ভয়ে বলে উঠল, “আমি জানি ওনি কে? কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি নিজ থেকে ফুল দিতে আসি নি আমাকে একজন বলে পাঠিয়েছে যে ওনাকে ফুলটা দিয়ে বলতে যে ওনি নাকি ওনাকে ভালোবাসেন।”

অয়ন্তি ভ্রু কুঁচকে বলে, “কে বলেছে?”

“আমি আপনাকে নামটা বলতে পারব না। আপনি প্লিজ ফুলগুলা ধরেন।”

“ওনাকে নাই বলতে পারিস আমাকে তো বলতে পারিস।”

আকস্মিক এক পরিচিত গম্ভীর পুরুষালী কন্ঠস্বর শুনে অয়ন্তি পেছন ফিরে তাকায়। পেছন ফিরে স্বয়ং জাহিনকে দেখে হতবাক হয়ে যায় অয়ন্তি। জাহিন কি আদৌ এখানে এসেছে নাকি সবটাই তার ভ্রম। কিন্তু এই লোক এখানে কি করছে? জাহিন কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছেলেটার দিকে। অয়ন্তি টের বুঝতে পারছে ঘুমন্ত বাঘ ক্ষেপে গেছে। জাহিন একবার অয়ন্তির দিকে তাকিয়ে ত্রস্ত পায়ে এসে ছেলেটার সামনে দাঁড়ায়। ছেলেটার মুখটা ভয়ে একটুখানি হয়ে গেছে। সে এবার কোন পথে যাবে দুইটা পথে বন্ধ তার জন্য, অয়ন্তিকে ফুল না দিলে ওই লোকটা তাকে জানে মে*রে দিবে বলেছে। কিন্তু এবার এই জাহিন তার সাথে কি করবে? এটা ভেবেই ভয়ে শুকনো ঢোক গিলল। উৎসুক জনতারা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে, কি হয় সেটা দেখার জন্য? জাহিন বুদ্ধিমান ছেলে, সে চারপাশটায় নজর বুলাল এত মানুষের ভীড়ে এই ছেলের সাথে কোনো রকমের বেজালে জড়ানো যাবে না আর কয় দিন পরেই নির্বাচন না হলে কষিয়ে এই আধ আঙুলে ছেলের দু গালে দুটো থাপ্পড় মেরে দিত, ডান হাতটা বড্ড নিশপিশ করছে তার। জাহিন নিজেকে সামলে ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে ছেলেটার হাত থেকে ফুলের তোঁড়াটা নিয়ে ফুলের ঘ্রাণ নিয়ে বলে।

“উমম গোলাপ ফুলের তেমন ঘ্রাণ নেই।”

অয়ন্তি বড্ড অবাক হয় জাহিনের কথায়। গোলাপ ফুলের ঘ্রাণ নেই মানে কি? গোলাপ ফুলের সুগন্ধ তো সবাইকে বিমোহিত করে। আর এই লোক বলছে কি না গোলাপ ফুলের তেমন ঘ্রাণ নেই। জাহিন গোলাপ ফুলের একটা পাপড়ি ছিঁড়ে শান্ত স্বরে বলে।

“তা কে তোকে ওকালতি করতে পাঠিয়েছে? মানে আমার বউকে গোলাপ দিয়ে প্রেম নিবেদনের প্রস্তাব তোর মাধ্যমে কে দিয়ে পাঠিয়েছে?”

অয়ন্তি জাহিনকে এমন শান্ত গলায় কথা বলতে শুনে হকচকিয়ে উঠে। গলার শান্ত হলেও এই স্বরে মিশে আছে দাবানলের তাপ। ছেলেটা ভয় পেয়ে আমতা আমতা করে বলে।

“ভাই আমি তারে চিনি না।”

জাহিনের মেজাজ বিগড়ে যায়। চিনে না মানে কি? চিনোস না যখন তার জন্য ওকালতি করতে এসেছিস কেন শা’লা? জিহ্বার আগায় চলে এসেছে কথাটা তার, কোনো মতে দাঁতে দাঁত পিষে কথা গিলে ফেলল। জাহিন অনামিকা আঙ্গুল দ্বারা বা চোখের ভ্রুটা চুলকিয়ে রাগটা কন্ট্রোল করে বলে।

“আচ্ছা পরের বার এই নিম্নমানের ওকালতি করতে গেলে হাজার বার ভাববি। এবার যা।”

কথাটা শান্ত গলায় বললেও এখানে স্পষ্ট হুমকির আভাস রয়েছে। ছেলেটা কথাটা শোনা মাত্রই দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। জাহিন অয়ন্তির দিকে তাকাতেই অয়ন্তি নজর সরিয়ে নেয়। আজ সে ভাগ্যিস এসেছিল না হলে তো জানতেই পারতো না তার বউকে কেউ প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে পাঠিয়েছে। জাহিন আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা জনগনদের সাথে সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে কয়েকটা কথা বলল। আস্তে আস্তে ভীড় কমে গেল জাহিন লিজার সাথে কথা বলে অয়ন্তির দিকে তাকিয়ে বলে।

“গাড়িতে গিয়ে বসুন।”

অয়ন্তি লিজাকে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসল। জাহিনের হাতে এখনও ফুলের তোড়াটা রয়েছে চাইলেও মাটিতে ছুঁড়ে ফেলতে পারছে না তাই বাধ্য হয়ে নিজের সাথে করে নিয়ে গেল। গাড়ির সামনে ফুলের তোড়াটা রেখে গাড়ি স্টার্ট দিল।

জাহিনের গাড়ি মিলিয়ে যেতেই দেয়ালের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে সুঠাম দেহের অধিকারী এক সুপুরুষ। চোখে মুখে রয়েছে বিষন্নতা। মাটির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে জিহ্বা দ্বারা নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে আকুতি ভরা গলায় আওড়ায়।

“তোমার পাশে আমার থাকার কথা ছিল অয়ন্তি। কিন্তু তুমি আজ অন্য কারো সাথে, অন্য কারোর পাশে, অন্য কারোর অর্ধাঙ্গিনী, হয়তো আর কয়েক মাস পরে অন্য কারোর সন্তানের মা হবে। কিন্তু এই সমস্ত কিছু আমার হওয়ার কথা ছিল। আজ শুধু মাত্র আমার মায়ের জন্য তোমাকে আমায় হারাতে হয়েছে। কথায় আছে মায়েরা নাকি সন্তানের ভালো চায় কিন্তু আ‌মার মা আমার ভালো করতে গিয়ে আমার জীবনটাই তছনছ করে দিল। কিন্তু আমি আজীবন তোমায় ভালোবেসে যাবো অয়ন্তি আজীবন। তোমায় দূর থেকেই না হয় ভালোবেসে জীবনটা কাটিয়ে দিব।”

বলতে বলতে পুরুষটির গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল নোনা জল।

________

জাহিন এক মনে ড্রাইভ করছে। অয়ন্তি আড় চোখে বার বার স্বামীকে দেখছে। লোকটা কি খুব বেশি রেগে আছে! কিন্তু এখানে তার উপরে রাগার কি আছে সে তো আর কাউকে বলে দেয় নি আমায় আসে প্রেমের প্রস্তাব দাও। অয়ন্তি এদিক ওদিক তাকিয়ে সামনের দিকে নজর পড়ে ফুলের তোড়াটা উপরে। হাত বাড়িয়ে ফুলের তোড়াটা নিতে যাবে তৎক্ষণাৎ জাহিন ঝড়ে বেগে ফুলের তোড়াটা বা হাতে নিয়ে জানলা দিয়ে ছুড়ে বাইরে ফেলে দেয়। অয়ন্তি চোখ বড় বড় করে বলল।

“আরে এটা কি করলেন? ফেলে দিলেন কেন?”

জাহিন সাথে সাথে গাড়ির ব্রেক কষে ভ্রু কুঁচকে অয়ন্তির দিকে ফিরে প্রশ্ন করে, “তো কি করব?”

“আরে এত সুন্দর ফুল গুলা এভাবে ফেলে দেওয়ার কোনো মানে আছে বলুন। বেচারা ফুল গুলা তো কোনো অপরাধ করে নি।শুধু শুধু তাদের উপরে কেন এই অবিচার।”

জাহিন অয়ন্তির দিকে তীক্ষ্ণ চাউনি ফেলে বলল, “গোলাপ বুঝি আপনার প্রিয় ফুল।”

“হুমম।”

“ওও।”

পেছন থেকে অন্য গাড়ির ড্রাইভাররা হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছে এই ভাবে মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামানোর জন্য। জাহিন পুনরায় গাড়ি ড্রাইভ করায় মনযোগ দিল। অয়ন্তি মন খারাপ করে বসে রইল। জাহিন আড় চোখে বউকে দেখে গলা খাকারি দিল কিন্তু চুপ রইল। কিছু দূর যেতে জাহিন গাড়ি সাইডে রেখে থামাল। জাহিন সিট বেল্ট খুলতে খুলতে বলে।

“আপনি বসুন আমি আসছি। গাড়ি থেকে বের হবেন না কিন্তু।”

অয়ন্তিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেল। সন্ধ্যা হয়ে গেছে, কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। তার মাঝে আবার পেটেও খুব খিদে পেয়েছে। কিন্তু এই জাহিন আবার কই চলে গেল? অয়ন্তি জানলা খুলে দিয়ে মাথা বের করে চারিদিকটা দেখল কিন্তু জাহিনের হদিস নেই। প্রায় মিনিট দশেক পর জাহিন আসল। গাড়ির দরজা খুলে অয়ন্তির কোলে মস্ত বড় এক লাল গোলাপের বুকে রেখে দিল। প্রায় ত্রিশ থেকে চল্লিশটার মতো গোলাপ হবে বুকেটার মাঝে। আকস্মিক এমনটা হওয়াতে অয়ন্তি হা হয়ে একবার জাহিনের দিক তো আরেকবার তার কোলে থাকা বুকেটার দিকে তাকাচ্ছে। জাহিন অয়ন্তির এসব চাওনি পাত্তা না দিয়ে বুকেটার উপরে আরেকটা প্যাকেট রেখে সিট বেল্ট লাগিয়ে গাড়ি ড্রাইভে মনোনিবেশ করল।‌ অয়ন্তি প্যাকেটের ফাঁক দিয়ে দেখে তাতে খাবার আর পানির বোতল। জাহিন বুঝলো কি করে যে তার খিদে পেয়েছে? অয়ন্তি কিছুক্ষণ তব্দা মেরে বসে রইল।

“এসব কি?”

অয়ন্তি নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে কথাটা বলে জাহিনের পানে তাকাল। জাহিন ভাবলেশহীন গলায় বলে, “খাবার আর বুকে।”

“কিন্তু…।”

“অয়ন্তি চুপচাপ খেয়ে নিন।”

অয়ন্তি আর কথা বলল না একবার বুকেটা হাতে নিয়ে নাকের ধারে এনে চোখ বন্ধ করে গোলাপের মিষ্টি ঘ্রাণ প্রাণ ভরে নিয়ে পেছেনের সিটে রেখে দেয়। খাবার প্যাকেট খুলে দেখে তাতে বিরিয়ানি। অয়ন্তি এক চামচ মুখে দিতে নিবে তখনই জাহিনের দিকে ফিরে নিজে না খেয়ে চামচটা জাহিনের মুখের দিকে এগিয়ে দেয়। জাহিন তা দেখে এক পল অয়ন্তির দিকে তাকিয়ে সামনের দিকে ফিরে বলে।

“আপনি খান আমি খাবো না।”

কিন্তু অয়ন্তি চামচটা ধরে রইল। জাহিন বুঝল সে না খেলে অয়ন্তি হাত সরাবে না। জাহিনও চুপচাপ খেয়ে নিল। পরপর অয়ন্তি আরো পাঁচ বার এমনটা করল জাহিনও খেয়ে নিল। মনে মনে বলল বউয়ের হাতে খেতে ভালোই তো মজা। ভেবেই হাসল।

_________

রাতের অন্ধকারে একটি যুবক আর মধ্যবয়স্ক দুজন পুরুষ এক সাথে বসে আলোচনা করছে কারোর সর্বনাশ করার বিষয় নিয়ে। যার সর্বনাশ করার বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সে আর কেউ নয় জাহিন। জাহিনের আপন জনের আড়ালে থাকা শ’ত্রু ম*দের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলে।

“চাইলে আমার প্ল্যানটা কাজে লাগাতে পারেন। তাতে ওই জাহিন নির্বাচনের কাজে নয় বউকে খুঁজতে ব্যস্ত থাকবে।”

খলিল তালুকদার বলল, “কিন্তু এতে যদি কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয়।”

যুবকটি বাঁকা হেসে বলল, “সমস্যার ভয় পাচ্ছেন আবার নির্বাচনের বিজয়ী হতে চাইছেন। আগে আপনি কি চান সেটা ঠিক করেন?”

মিজান সাহেব বলেন, “কিন্তু কাজটা কে করবে?”

খলিল তালুকদার বলেন, “আমার লোক আছে।”

যুবকটি বলল, “তাহলে তাকে ফোন করুন।”

খলিল তালুকদার আতিককে ফোন করে বলল, “একটা কাজ করতে হবে?”

“কি কাজ?”

“একজনকে কিডন্যাপ করতে হবে।”

“কাকে?”

“সেটা পরে বলি আগে বলো কত লাগবে?”

“আগে এটা বলুন। ছেলে নাকি মেয়ে।”

“মেয়ে।”

আতিক নাকচ করে বলল, “মেয়ে মানুষ কিডন্যাপ করার বিষয়ে আমি নেই।”

“কেন?”

“কারণ আমি মেয়েদের অনেক সম্মান করি। আর আমার লোকজন মেয়েদের গায়ে হাত দিবে সেটা আমি টলারেট করতে পারব না। আপনি অন্য কাউকে খুঁজে নিন।”

খলিল তালুকদারকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কেটে দেয় ফোন। মিজান সাহেব বলল, “কি বলল?”

“কাজটা ও করবে না। মেয়ে সম্পর্কিত কোনো বিষয় ও জড়িত হবে না।”

যুবকটি তা শুনে কাঁধ নাচিয়ে বলে, “ওকে সে না করুন অন্য কেউ করবে। ভাত ছিটালে যেমন কাকের অভাব হয় না। তেমনি টাকা ছিটালর এসব মানুষের অভাব হয় না।”

“কাজটা কবে করা হবে?”

যুবকটি বসা থেকে উঠে বলে, “যে দিন প্রতীক বরাদ্দ করা হবে ওই দিন।”

খলিল তালুকদার সন্দিহান গলায় বলেন, “তুমি তো বলেছিলে আমি মেয়র হই বা না হই তাতে তোমায় কিচ্ছু যায় আসে না। তাহলে তুমি কাজটা করতে চাইছো কেন?”

যুবকটি বাঁকা হেসে বলে, “যায় আসে না তো। কিন্তু এই কাজটাতে জাহিন কষ্ট পাবে ছটপট করবে আর সেটা আমি দু নয়ন ভরে দেখব আর শান্তি পাবো। আর এই কাজটাতে আপনিও লাভবান হবেন আর আমি মনে শান্তি পাবো। এক টিলে দু পাখি মা’রা হবে। বেচারা বউকে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছে।”

__________

আজ প্রতীক বরাদ্দ করার দিন। নির্বাচন অফিস নেতা কর্মী দিয়ে গিজগিজ করছে। একের পর‌ এক নেতাদের গাড়ি নির্বাচন অফিসে প্রবেশ করছে। জাহিন সবে মাত্র এসেছে। সাদা পাঞ্জাবি, সাদা পায়জামা পড়া, পাঞ্জাবির উপর কালো কটি পড়া। শীতের তাপমাত্রাটা যেন আজ অন্য দিনের তুলানায় একটু কম। জাহিন নির্বাচন অফিসের করিডোরে পা রাখতেই কারো কাঁধের সাথে ধাক্কা লাগে। জাহিনের দলের লোকেরা তা দেখে লোকটিকে কিছু বলতে যাবে তার‌ আগেই লোকটি তড়িৎ বেগে অনুনয় গলায় বলে।

“সরি সরি আমি বুঝতে পারি নি।”

জাহিন আস্তে করে বলে, “ইটস ওকে।”

জাহিন কথাটা বলে‌ চলে যায় ভেতরে। কিন্তু সে এটা বুঝতে পারে নি তার কাছ থেকে যে মূল্যবান এক জিনিস নিয়ে গেছে লোকটা। লোকটা কিছু দূরে গিয়ে বাঁকা হেসে নিজের পকেট থেকে একটা কালো রঙের জড় বস্তু বের করল। এটার মাধ্যমে যে আজ বড়ো কিছু ঘটতে চলেছে যেটা জাহিন জানে না অবশ্য জাহিনের জানারো কথা নয়। তার কল্পনার বাহিরে আজ কিছু হতে চলেছে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here