#অ্যারেঞ্জ_ম্যারেজ
#অবন্তিকা_তৃপ্তি
#পর্ব_২৪ (১৮+ এলার্ট)
জন্মের পর শুভ্র নানাবাড়ি এই প্রথম এলো। মায়ের দুঃখের শুরুটা তার নানাবাড়ি ছিল বিধায় কোনোদিন এখানে আসার ইচ্ছাও জাগে নি। তবে আজ আফরোজার জোড়াজোড়িতে আসতে হলো। শুভ্র চৌধুরী বাড়ির গেইটের সামনে দাঁড়াল। আফরোজার কাঁধে হাত রেখে এগিয়ে গেল সামনে। তুলি পেছনে পেছনে আসছে। শুভ্রদের নানাবাড়ি খুব বিশাল। ২০ ডিসিমেল জায়গার উপর করা চৌধুরী ভবন। তুলি বাড়িটা বড্ড বিস্ময় নিয়ে দেখছে। বাড়ির ভেতরে মস্ত বড় দুটো পুকুর। একটা পুকুরে কয়েকটা বাচ্চা গোসল করছে। আরেকটা পুকুরে জাল ফেলা। বাগানও আছে। তুলি এসব দেখছিল। অনেক বছর পর আফরোজা বাপের বাড়ি এসে আবেগপ্রবণ হয়ে গেলেন। তার চোখ দুটো ছলছল করছে। আফরোজাদের বাড়ির ভেতরে ঢুকতে দেখে চৌধুরী ভবনে হইচই লেগে গেল। দৌড়ে কটা মেয়ে ‘ফুপু’ বলে আফরোজার পাশে ঘিরে ধরলো। পেছন পেছন এলো ভাইয়ের বউরা। সবাই আফরোজাকে বড্ড আদর করছেন। হালচাল জিজ্ঞেস করলেন। আফরোজার কথা এ কী বলার আছে? সে তো মাতোয়রা বাড়ির সবার আচরণ দেখে। একপর্যায়ে সবার নজর গেলো শুভ্রর উপর। শুভ্র তাদের তাকানো দেখে সালাম করল। আফরোজার বড় ভাইয়ের বউ ফাহিমা এগিয়ে গেলেন। শুভ্রর মুখটা আদর করে দেখলেন। তারপর হেসে আফরোজাকে বললেন;
‘আমাদের শুভ্র তো খুব বড় হয়ে গেছে। তা আপা, ছেলে বিয়ে দিবা না? বৌ কবে আনবা ঘরে?’
আফরোজা কিছু বলতে যাবেন, তার আগেই শুভ্র হালকা হেসে তুলিকে কাছে আসতে ইশারা করল। তুলি ধীর পায়ে শুভ্রর পাশে এসে দাঁড়াল। শুভ্র পরিচয় করিয়ে দিলো;
‘মামি, আমার স্ত্রী। প্রত্যাশা হোসেন তুলি।’
শুভ্রর কথাটা বলার সাথেসাথে সম্পূর্ণ ঘর নীরব হয়ে গেলো। ফাহিমা অবাক চোখে তুলিকে দেখছেন। সবার চোখ তুলির উপর পরতেই আপাদমস্তক কুকড়ে গেলো তুলি। এভাবে তাকে দেখছে কেন সবাই? ফাহিমা কিছুক্ষণ পর হাসার ভান করে তুলির মুখটা ধরে বললেন;
‘খুব সুন্দরী। শুভ্রর সঙ্গে মানিয়েছে।’
পাশ থেকে ছোট ভাইয়ের বউ উর্মিলা বলে বসলেন;
‘তবে আমাদের তানিকে আরও বেশি-‘
‘আহ, চুপ। ওদের ভেতরে নিয়ে আসো।’
ফাহিমা কথা শেষ করতে দিলেন না ঊর্মিলাকে। উর্মিলা মুখটা কাচুমাচু করে আফরোজাদের নিয়ে ভেতরে গেলেন। তুলির একদমই তাদের কথাটা ভালো লাগল না। তানি কে? কী হয় শুভ্রর? তুলি বাকি কিছু ভাবতে পারে না। তার আগেই তুলিকে বাচ্চা-কাচ্চারা ঘিরে ধরল। সবাই আফরোজাদের নিয়ে একটা ঘরে এলো। ঘরে বিছানায় শুয়ে আছেন একজন বৃদ্ধ মহিলা। মহিলাটি আফরোজার মা, খোদেজা বেগম। তিনি এখন বিছানায়ই থাকেন। প্রস্রাব- পায়খানা সবই বিছানায় করেন। তার জন্যে কাজের লোক রাখা হয়েছে। তিনি দেখভাল করেন আফরোজার মায়ের। আফরোজা মায়ের পাশে এসে বসল। শুভ্র দাঁড়াল খোদেজার মাথার পাশে। শুভ্র একবার স্যালাইন দেখল। স্যালাইন চলছে তার। শুভ্র পাশে থাকা ফাহিমাকে জিজ্ঞেস করল;
‘স্যালাইন কী সবসময়ই দেওয়া লাগে?’
‘হ্যাঁ, উনি মুখে খেতে পারেন না সবসময়। তাই বেশিরভাগ সময়ে স্যালাইন দিয়ে খাওয়ানো হয়।’
ফাহিমা উত্তর দিলো। আফরোজা খোদেজার মুখটা ছুয়ে ছুয়ে দেখল। জ্ঞান নেই খোদেজার। কাউকে এখন চিনেন না, বুঝেনও না কিছু। আফরোজা তবুও বললো;
‘আম্মা, আম্মা আমি আফরোজা আসছি গো। শুনতে পারছ তুমি আমাকে? ও আম্মা।’
খোদেজা শুনেন, কিন্তু জবাব দিতে পারেন না। আফরোজা তবুও কথা বলতে থাকেন। শুভ্রকে দেখিয়ে বলেন;
‘আম্মা, ও শুভ্র। তোমার নাতি, আমার ছেলে। শুভ্র এদিকে আয়।’
শুভ্র এগিয়ে গেল। আফরোজা শুভ্রর গা ছুয়ে ছুয়ে দেখাচ্ছেন খোদেজাকে। তারপর তুলিকে ডাকলেন।
‘আম্মা, ও তুলি। শুভ্রর বউ। দেখো তোমার বউ পছন্দ হইছে কী না। ও আম্মা। শোনো তুমি আমারে?’
খোদেজা চোখ পিটপিট করলেন। মুখ দিয়ে গোঙ্গানি বের হলো শুধু। আফরোজা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। মা বাবা বৃদ্ধ কেন হয়? এদের কী কখনও কোনও শক্তি দিয়ে চিরযৌবনা করা যায় না?
চৌধুরী বাড়িতে দুপুরে বিশাল আয়োজনে খাবার দাবারের আয়োজন করা হলো। সিদ্দিক সাহেব মাত্রই বাজার থেকে ফিরলেন। তিনি ফিরতেই আফরোজা এগিয়ে গেলেন তার দিকে। সিদ্দিক সাহেব আফরোজাকে দেখে হাত উঁচু করলেন, গম্ভীর গলায় বললেন;
‘এসেছ তবে। এ বাড়িতে সবার সঙ্গে তোমার মেশার অনুমতি আছে; শুধুমাত্র আমার আশেপাশে আসার কোনো অনুমতি নেই। এই, ওদের খাবার সাজাও।’
কথাটা বলে চলে গেলেন সিদ্দিক সাহেব। ভাগ্যিস শুভ্র আশেপাশে নেই। নাহলে কেলেংকারি ঘটে যেত। আফরোজা হাঁপ ছাড়লেন।
_______________
রাতটুকু আসল। শুভ্রর জানামতে, সব কিছু এখন অব্দি ভালোই চলছে। তবে আসার পর থেকে নানার সঙ্গ দেখা হয়নি। একবারও শুভ্রর। শুভ্র বুঝে, দেখা না পাওয়ার পেছনে কারণ কী। তাই সেও আগ বাড়ায় না। রাতের খাবার শেষ হলে, শুভ্র বেসিনে হাত ধুতে যায়। তুলিও যায় তখন। বেসিনে শুভ্র হাত ধুচ্ছে, তুলি পাশে ঝুটা হাত নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্র হাত ধুয়ে তোয়ালেতে মুছল। রুমে যাওয়ার আগে তুলির কানে ফিসফিস করে বলে গেল;
‘রুমে আসো, অপেক্ষা করছি।’
শুভ্র তুলির গা ঘেঁষে রুমে চলে গেলো। তুলি হা হয়ে শুভ্রকে দেখল। এই শুভ্রর সঙ্গে বিয়ের শুরুর সময়ের শুভ্রর কোন মিল নেই। অবাস্তব লাগছে শুভ্রকে তুলির কাছে। শুভ্র কখন থেকে এতটা নির্লজ্জ হলো? কোন কুলক্ষণে যে রাতের কথাটা তুলি তুলেছে, নিজের উপরই রাগ লাগছে তুলির।
রাতের খাবার শেষ হওয়ার পরও, তুলি ভয়ে আর রুমে গেল না। বাচ্চাদের সঙ্গে গল্পে মন দিল। গল্পের মধ্যেও বারবার শুভ্রর রুমের দিকে তাকাচ্ছে। শুভ্র এই ডাকল বলে। ডাকলে যাবে কিভাবে তুলি? দৌড়ে? ছিঃ! তুলির বুকটা কাপছে; ধুরধুরু করে। কিভাবে মুখোমুখি হবে ওমন নির্লজ্জ এক শুভ্রর? মনে হচ্ছে, এই প্রথম দুজনের কাছাকাছি আসা, প্রথম স্পর্শ, প্রথম লজ্জা।
তুলি বাচ্চাদের সঙ্গে লুডু খেলছিল। হঠাৎ একটা মেয়ে এলো। তুলির পাশে বসে শুরুতেই জিজ্ঞেস করে বসল;
‘তুমি শুভ্রর ভাইয়ের ছাত্রী ছিলে না?’
তুলি আচমকা এমন প্রশ্নে কিছুটা বিব্রত হলো। পাশ থেকে একটা বাচ্চা বিরক্ত হয়ে বললো;
‘তানি আপু, বিরক্ত করো না তো খেলার মধ্যে। যাও যাও।’
তানি চোখ গরম করে হিয়ার দিকে তাকাল। বললো;
‘বড়দের সঙ্গে এভাবে যাও যাও করে কথা বলে হিয়া? বলব তোর আম্মুকে?’
হিয়া খামোকা বকা খাচ্ছে দেখে তুলিই বললো;
‘হিয়া আমরা পরে খেলবো, হু? যাও ঘুমিয়ে পড়ো। অনেক রাত হয়েছ।’
হিয়া শুনলো না। বাকি বাচ্চারাও তেমনই শুনলো না। হিয়া নাছোড়বান্দার মতো বললো;
‘কাকি, এই চালটা শেষ করি প্লিজ? তারপর পাক্কা ঘুমিয়ে যাব, প্রমিজ।’
তুলি হাসলো, বলল;
‘ঠিকাছে, এই চাল শুধু।’
তারপর তুলি আবার খেলায় মন দিল। তানি পাশ থেকে এসব দেখল। তারপর আবারও প্রশ্ন করল:
‘কবে থেকে প্রেম তোমাদের?’
তুলি অবাক হলো। লুডু খেলা পোজ করে তানির দিকে চেয়ে প্রশ্ন করলো:
‘প্রেম? কীসের প্রেম?’
‘শুভ্র ভাইয়ের সঙ্গে তোমার বিয়ে প্রেম করে নয়?’
তানি যেন তাচ্ছিল্য করে বললো। তুলি এবার বিরক্ত হলো। কড়া গলায় বললো;
‘আমাকে শুভ্র স্যারের আম্মু, মানে তোমাদের ফুপু পছন্দ করে এনেছেন। প্রেম করে বিয়ে নয় আমাদের।’
‘হ্যাঁ, সেটাই। আগে চয়েজ ছিলো, তাই ফুপুও হয়তো শুভ্র ভাইয়ের মুখের দিকে চেয়ে রাজী হয়েছেন। এখন লোক ঢাকতে অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ বলে প্রচার করছ। রাইট?’
তানির মুখে তুলি এতগুলো কথা শুনে কান জ্বলে গেলো মনে হলো। তুলি খেলা কোনরকম শেষ করে উঠে দাঁড়াল। তানির দিকে চেয়ে বললো;
‘তোমার যা ইচ্ছা ভাবো। আমাদের বিয়ে প্রেম করেই হোক বা অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ, বিয়েই তো হয়েছে। কিভাবে হয়েছে, ডাজেন্ট ম্যাটার।’
কথাটা বলে তুলি রুমে চলে গেলো। তুলি রুমে ঢুকেই দরজায় খিল তুলে দিল। শুভ্র বিছানায় শুয়ে মোবাইল দেখছিল। তুলি রুমে ঢুকতেই শুভ্র আফসোসের সুরে শোনাল;
‘আর এলেই কেন? রাতটা শেষ করেই আসতে।’
তুলি কোন কথা বলল না। সোজা শুভ্রর পাশে বসে সরাসরি প্রশ্ন করল;
‘আপনার সঙ্গে এ বাড়ির তানি মেয়েটার বিয়ে ঠিক ছিল? সত্যি করে বলুন।’
‘কে তানি? কার কথা বলছো তুমি?’
শুভ্র অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল। তুলি লম্বা করে শ্বাস ফেলল। রাগটুকু কন্ট্রোল করে তারপর বললো;
‘আপনার মামার মেয়ে। আপনি চিনেন না?’
‘না, আমি তো আজকেই প্রথম এলাম নানাবাড়ি। ওদের সঙ্গে এর আগে আম্মুর যোগাযোগ থাকলেও আমার ছিল না। কেন বলো তো?’
তুলি বুঝতে পারল, শুভ্র যেখানে তানিকে চীনেই না। সেখানে অযথা এসব নিয়ে কথা বাড়ানোর দরকার নেই। নিজেদের সুন্দর মুহূর্তটা একটা বাইরের মেয়ে নিয়ে ঝগড়া করে কাটাতে চায়না তুলি। তুলি নিজেকে শান্ত করল। বিছানা থেকে উঠতে উঠতে বললো;
‘আমি ফ্রেশ হয়ে আসি। ঘুমাব।’
শুভ্র ‘ঘুমাব’ শুনে দ্রুত তুলির শাড়ির আঁচল চেপে ধরে আবার বিছানায় বসিয়ে দিল। বললো;
‘ঘুমাবে মানে? আজ রাতে কোন ঘুম নেই।’
‘তো রাতে কী হাডুডু খেলবেন?’
‘হ্যাঁ, হাডুডুই খেলব। সকালে কি কথা হয়েছিলো? মনে নেই নাকি আমি মনে করিয়ে দিব?’
তুলি বুঝল, শুভ্রর কথার ধাঁচ কোথা থেকে কোথায় যাচ্ছে। তুলি নজর লুকিয়ে লুকিয়ে বললো;
‘কোন কথা-টথা হয়নি। আমি গাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলাম।’
শুভ্র বাঁকা চোখে চাইল। দুষ্টু হেসে বলল;
‘আমি কখন বললাম গাড়িতে আমাদের কোন ব্যাপারে কথা হয়েছে। অন্য কোথাও তো হতে পারতো? দ্যাটস মিন্স তোমার সব মনে আছে। জলদি জলদি আমার উইশ পূরণ কর। আর দেরি নয়।’
তুলি লজ্জায় বিছানা থেকে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়াল। চুলে বেনি করতে করতে বলল;
‘ঘুমান, এত রাতে কেউ আলাদিনের চেরাগ নিয়ে বসে নেই আপনার উইশ পূরণ করতে।’
শুভ্র উঠে আসলো। তুলির পেছনে দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরলো তুলিকে পেছন থেকে। সফ্ট কাঁধে নাক ঘষে বলল;
‘তুমিই আমার আলাদিনের চেরাগ। আজ এই অধমের তিনটি উইশ পূরণ করো, প্লিজ আমার আলাদিনের চেরাগ।’
তুলি ওমন স্পর্শে কেঁপে উঠল। কাঁধে শুভ্রর খোঁচা খোঁচা দাড়ির ঘষা লাগছে খুব তুলির। তুলি চোখ বন্ধ করল। মিনমিন করে বলল;
‘কী উইশ?’
শুভ্র তুলির কাঁধে নাক ঘোষল। গভীর ভাবে কাঁধে চুমু খেলো একটা। অনুভব করল, তুলির ফিনফিনে শরীরের কাপুনি। শুভ্র গভীর কণ্ঠে ফিসফিস করে বলল;
‘মুজরা ড্যান্স দেখাবে আমাকে।’
সঙ্গেসঙ্গে তুলি চমকে চোখ খুলে ফেলল। জোর করে শুভ্রকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো;
‘নো ওয়ে। আমি পারব না। ছিঃ।’
শুভ্র এগিয়ে এসে বলল;
‘উফ তুলি। আম ইউর হাসবেন্ড। আমার সামনে কীসের ছিঃ?’
‘তবুও? ছিঃ, আপনি আমাকে নিয়ে এসব অশ্লীল চিন্তা করেন।’
শুভ্র এগিয়ে এসে চেপে ধরলো তুলিকে নিজের সঙ্গে। কানে ঠোঁট ছুইয়ে বলল;
‘বউ তুমি আমার। তোমাকে নিয়ে অশ্লীল চিন্তা হালাল আমার জন্য।’
তুলি পুনরায় ধাক্কা দিল শুভ্রকে। নিজের থেকে শুভ্রকে আলগা করে বললো;
‘আমি পারব না। অন্য কিছু বলেন।’
শুভ্র তুলির এভাবে ধাক্কা দেয়ায় ভেতরে ভেতরে ব্যথিত হলো। সঙ্গে অপমাণিতও হলো। সে বোধহয় তুলিকে জালাচ্ছে ভীষণ। কথাটা তোলা হয়তো ঠিক হয়নাই। তাই শুভ্র সব ভেবে আর জোর করল না তুলিকে। মুখটা গম্ভীর করে বলল;
‘ঠিকাছে, ঘুমিয়ে পড়ো।’
কথাটা বলে শুভ্র লাইট নিভিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো। তুলি এখনও আয়নার সামনে ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্র কী কষ্ট পেল? হয়তো পেয়েছে। নাহলে শুভ্র এমন অদ্ভুত ব্যবহার করে ঘুমিয়ে পড়তো না। তুলি দোটানায় পড়ে গেল। কী করবে বুঝতে পারল না।
______
শুভ্র ঘুমিয়েই পড়েছিল। হঠাৎ কোথা থেকে মোমবাতি কতগুলো জ্বলে উঠায় চোখ খুললো সে। শুনতে পেল, গান বাজছে।
আঙ্গে লগা দে র; মোহে রংগ লগা দে রে
অংগ লগা দে র; মোহে রংগ লগা দে রে
মেং তোহ তেরী জোগনিযা; তূ জোগ লাগা দে রে
শুভ্র গানটা শুনেই অগোচরে হেসে উঠল। বিছানা থেকে উঠে বসল। মুখে ইচ্ছে করেই রাগ ভাব ধরে রাখল। তুলি ফিনফিনে একটা পাতলা শাড়ি পরে শুভ্রর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। শুভ্র হাত ছুলো না। রাগ দেখিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অন্যপাশে গেলো। তুলি গান গাইলো;
জোগ লগা দে রে; প্রেম কা রোগ লগা দে রে
মেং তোহ তেরী জোগনিযা; তূ জোগ লগা দে রে
তুলি পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল শুভ্রকে। শুভ্রর বুকে দুই হাত ঘুরিয়ে ঝাপটে ধরলো পেছন থেকে তাকে। শুভ্র ভাব নিয়ে তুলির হাতটা ছড়িয়ে নিয়ে অন্যপাশে গেলো। তুলি মুখ ভেঙ্গিয়ে আবারও এগিয়ে এলো।
রাম রতন ধন; লগন মগন মন
তন মোরা চংদন র; উজলী কোরী প্রীত প্যাসত
রংগ লগা দে রে
তুলি আবেদনময়ী অঙ্গভঙ্গি করে শুভ্রর সামনে দাঁড়িয়ে গলা জড়িয়ে ধরলো। তারপর কোমর বাঁকিয়ে মাথাটা নিচের দিকে ঝুকায়। শুভ্র একহাতে তুলির কোমর ধরে তুলিকে আবার সোজা করে ফেলে। তুলি দুহাতে গলা জড়িয়ে ধরে শুভ্রর।
আং লগা দে রে; মোহে রাং লাগা দে রে
মেং তোহ তেরী জোগনিযা; তূ জোগ লাগা দে রে
গাইলো তুলি। শুভ্র গলা থেকে তুলির হাত ছাড়িয়ে নিলো। হেঁটে বিছানার পাশে এসে দাঁড়াল সে। তুলি নেচে শুভ্রর মাথা নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে ঢেকে দিলো। শুভ্র হাত দিয়ে আঁচল তার মুখের সামনে থেকে সরিয়ে দিল। তুলি শুভ্রর দিকে চেয়ে রাগ দেখিয়ে আবারও দুহাতে ঝাপটে ধরলো শুভ্রকে। পিঠে চিমটিও কাটল একটা। শুভ্র ব্যথায় কুকিয়ে উঠল। সঙ্গেসঙ্গে তুলি শুভ্রর ঠোঁটে আঙ্গুল রাখল। তারপর আঙুলটা শুভ্রর সারামুখে ছুঁয়ে তুলি গাইলো;
রাত বংজরভি সী হৈং; কালে খংজর সী হৈং
রাত বংজর সী হৈং; কালে খংজর সী হৈং
তেরহ সীনে কী লৌ; মেরে অংদর ভী হৈং
তূ হবা দে ইসস; তোহ মেরা তন জল
শুভ্র তুলির চোখের দিকে চাইল। ও চোখ যেন শুধু কোন চোখ নয়। আস্ত এক মায়ার সমুদ্র। ডুবে যায় শুভ্র। শুভ্র আর রাগ করার ভান করতে পারে না। দুহাতে কোমর পেঁচিয়ে ধরে তুলির। তুলিও বাকি গান
শেষ করলো, একে অপরের চোখের দিকে চেয়ে:
জলা দে রে স্যাং জলা দে র; মোহে রাং লাগা দে র
মেং তোহ তেরী জোগনিযা; তূ জোগ লাগা দে রে..
গান শেষ হলো। অথচ এখনও দুজন দুজনের চোখের দিকে চেয়ে আছে। শুভ্র এগিয়ে এসে তুলির কপালে চুমু বসালো। নেশালো গলায় বললো;
‘থ্যাংক ইউ আমার এই কাঠখাট্টা জীবনে আসার জন্যে।’
তুলি শুভ্রর চুল এলোমেলো করে দিয়ে মুচকি হেসে বললো;
‘রাগ কমেছে?’
হেসে ফেলল শুভ্র। উত্তর দিল না। কিছু কথা বলে নয়, করে বোঝাতে হয়। শুভ্র আলগোছে তুলির কোমরে হাত রেখে পাঁজাকোলে তুলে বিছানার দিকে এগিয়ে গেলো। নরম বিছানায় তুলির পিঠ ঠেকতেই তুলি ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো;
‘বাকি দুটো উইশ?’
শুভ্র তুলির উপর নিজের সমস্ত ভার ছেড়ে দিয়ে বললো;
‘ওগুলো বিশেষ মুহূর্তের জন্যে তোলা রইল।’
তুলি অন্যপাশে মুখ ঘুরিয়ে হাসল। শুভ্র তুলির মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে কপালে চুমু খেল। শাড়ির আঁচল সরানোর আগে ফিসফিস করে বলল:
‘চলো, ডুবে যাই।’
‘কোথায়?’
‘সুখের সমুদ্রে।’
তুলি চোখ লুকালো। অন্যদিকে চেয়ে লাজুক গলায় বলল;
‘আমি সাঁতার জানি না।’
‘তাহলে আসো, শিখিয়ে দিই।’
কথাটা বলে শুভ্র তুলিরশাড়ির আঁচল সরিয়ে ফেলল। তুলির গলায় ঠোঁট ছুঁতেই দুহাতে তুলি আগলে ধরল শুভ্রকে। মানুষটা যখন ছোঁয়, তুলির এত কেন ভালো লাগে? অন্য কেউ সামান্য হাতটা ধরলেও তুলির গা ঘিনঘিন করে। অথচ স্বামী শুভ্রর প্রতিটা স্পর্শ তুলিকে যেন স্বর্গ দেখায়। তুলি চোখ বন্ধ করা অবস্থায় ফিসফিস করে শুভ্রকে বললো;
‘ভালোবাসি।’
শুভ্র মাথা তুলে। তুলির চোখে চোখ রেখে মৃদু হেসে জবাব দেয়;
‘জানি তো।’
বলে হালকা হেসে তুলির কপালে চুমু খেল। অতঃপর আবারও ডুবে গেলো তুলির মধ্যে। দম্পত্তির এ রাতটা কাটল অত্যন্ত সুখে, আনন্দে।
#চলবে