একটি_সাঁঝরঙা_গল্প #তানিয়া_মাহি #পর্ব_১৮

0
105

#একটি_সাঁঝরঙা_গল্প
#তানিয়া_মাহি
#পর্ব_১৮

গেইট খুলতেই আবিরকে দেখে মৃদু হাসলো তোয়া। আবির বাইকটা লক হয়েছে কি না আবার চেক করে এগিয়ে এলো। তোয়ার দিকে তাকিয়ে মৃদু গলায় বলল,

“নিশো রেডি হয়েছে?”

তোয়া ওপর-নিচ মাথা নেড়ে বলল,”হ্যাঁ। খাওয়া শেষ করল। তৈরি হয়ে নিয়েছে।”
“রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? সর, যেতে দে।”

আবিরের ধমকের স্বরে চটে গেল তোয়া। খিটখিটে মেজাজে বলল,“তোকে আটকে রেখে আমি কী করব ব….?”
“বকাবকি করলে লা*ত্থি খাবি। অসভ্য মেয়ে মানুষ। ”
“তুই খুব সভ্য! আসছে আমার সভ্য পুরুষ।”
“তোকে আমি দেখে নেব তোয়া।”

”দেখ না দেখ, ভালো করে দেখ। চোখ বড় বড় করে দেখ তাহলে ভালোভাবে দেখতে পাবি। যেহেতু আমি একটু বেশিই সুন্দর দেখতে তো চাইবিই।”বলেই তোয়া আরেক কদম এগিয়ে এসে আবিরের সোজাসুজি দাঁড়ালো। এক হাত খানেকও ফাঁকা নেই মাঝে। আবির পিছিয়ে গেল। এদিক ওদিক দেখে আঙুল উঁঠিয়ে বলল,

“ছেলে মানুষের মতো ব্যবহার কেন? অসভ্য মহিলাকে কে বিয়ে করবে কে জানে?”

তোয়া মাথা উঁচু করে বলল,“তুই আছিস না? তুই যোগাড় করে দিবি তিন বছরের বড় ভাই আমার।”

আবির সহসা বলে উঠল,“তোর কপালে ছেলে আছে?হুহ!”
“তোর কপালে আসার আগেই তো চলে চলে যায়। এই যে দেখ ইয়াদ বিয়ে করে নিচ্ছে।”
“বয়স তো কম হলো না, বুদ্ধি এত কম কেন?”
“বড়লোক ছেলে বিয়ে করে তার টাকায় পুষ্টিকর খাবার খেতে পারলে বুদ্ধির বিকাশ হবে, ব্যবস্থা করে দে।”
“তোর বাপ-ভাই নাই? তাদের বল তোর সুগার ড্যাডি লাগবে।”
“এহ, বুইড়া দিয়ে আমি কী করব? মাসে চার পাঁচটা পিৎজা খাওয়ানোর মতো, একবার শপিং করানোর মতো বড়লোক হইলেই হবে। বুড়োকে বিয়ে করে মান সম্মান হারাবো কেন? এসব বুদ্ধি নিয়ে ঘুরিস তুই? ছ্যাহ আবির ভাই ছ্যাহ।”
“ভাই বলিস আবার তুই করে কেন বলিস?”
“আপনে করে কওয়া লাগবে?”
“তোর সাথে কথা বলা মানেই সময় নষ্ট। হাঁটুতে বুদ্ধি নেমে গেছে তোর।”

“তোকে দেখেও মনে হয় না তুই ফালাকের ভাই। রসকষহীন পুরুষ মানুষ একটা।” বলেই নিজের ঘরের দিকে চলে গেল তোয়া।

আবির মুহূর্ত কয়েক সেখানেই দাঁড়িয়ে মুচকি হাসলো। এ বাড়িতে আসলেই কিছু না কিছু নিয়ে তাদের ঝগড়া হয় আর তোয়া এভাবেই গাল ফুলিয়ে প্রস্থান করে। আবিরের অভ্যাস হয়ে গিয়েছে এসবে। বরং তোয়া কোনভাবে নিরব থাকলে বা ভালোভাবে কথা বললেই আবিরের আনকম্ফোর্ট লাগে। মনে হয় তোয়া পালটে গেছে বা মন খারাপ। তোয়াকে সহজেই রাগিয়ে দেওয়া যায় আর সেটা আবির ভালো পারে।

বাহিরে আবিরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জাফর সাহেব এগিয়ে এলেন। চাচাকে দেখে হাসি হাসি মুখটা মলিন হতে শুরু করল। জাফর সাহেব আবিরের সামনে এসে দাঁড়ালেন। মৃদু হেসে বললেন,

“কেমন আছিস, বাপ?”

শেষ কবে বড় চাচার সাথে আবিরের কথা হয়েছে বা এভাবে তিনি ডেকেছেন সেটা আবিরের খেয়াল নেই, মনে নেই। সুতরাং আজকের এরকম আন্তরিকতায় বেশ অবাক হলো আবির। সুর কোমল করে বলল,

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?”
“ভালো আছি৷ এখানে দাঁড়িয়ে কেন? ভেতরে যা, নিশো রেডি। আমি গাড়ির খোঁজে যাচ্ছি।”
“গাড়ি খুঁজতে হবে না। আমি ওর সাথে যাচ্ছি। চিন্তা নেই।”
“ তাহলে তো ভালোই হলো। আয় বাপ ভেতরে আয়।”

জাফর সাহেবের পিছু পিছু রওয়ানা দিল আবির। তোয়া নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে বলে উঠল,“সভ্য মানুষজনকে বাড়িতে ডেকো না, বাবা। বাড়ির মানুষগুলোকে সভ্যতায় ভাসিয়ে দিলে আমার মতো অসভ্যের কী হবে?”

কথাগুলো বলেই নিশোর রুমের দিকে চলে গেল সে। আবির শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে তোয়ার কথা সহ্য করল। জাফর সাহেব থমথমে মুখ করে আবিরের দিকে তাকিয়ে রইলেন। বিষয়টা একেবারেই যে বোধগম্য হলো না সেটা হয়তো আবির জাফর সাহেবের মুখের দিকে এবার তাকিয়ে বুঝল। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে জোরপূর্বক হাসলো সে।
____

নিশোর পরিক্ষা শেষ হতে হতে বিকেল চারটা। অনেকক্ষণ আগে থেকেই ভেতর থেকে মানুষ বের হওয়া শুরু করেছে। মাঝখানে আবির একবার নিজের কাজের জায়গা থেকে কল এলে সেখানে গিয়েছিল তারপর কাজ শেষ করে আবার পরিক্ষাকেন্দ্রের বাহিরে এসে দাঁড়িয়েছে।

বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর নিশোকে দেখতে পেল সে। মিনিটের মধ্যেই নিশো আবিরের কাছে এসে পৌঁছলো। নিশোর মুখ দেখে বুঝতে পারছে না পরিক্ষা কেমন হয়েছে তাই নিজেই জিজ্ঞেস করে বসলো,

“পরিক্ষা কেমন হলো?”
“ভাবছি তোর বোনের বিজনেসটা বড় করব।”
“লা*ত্থি খাবি। আমার বাড়ি যাওয়া বন্ধ। আমার বাড়ির ভেতর কেন আশেপাশেও যেন তোকে আর না দেখি।”
“তোর বোন আমাকে না পেলে পাগল হয়ে যাবে। তারপর কি পাবনা পাঠাবি? তার চেয়ে এটা ভালো না যে আমি তোর বোনের বিজনেসটা সামলাই?”
“তোর লজ্জা করে না? আমি ফালাকের ভাই।”
“না, তোর সামনে আবার আমার লজ্জা পাওয়া লাগবে নাকি? আমাকে কি বাপ্পারাজ মনে হয় তোর যে গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে স্মৃতি হারাবো?”
“পরিক্ষা কেমন হয়েছে বল?”
“ভালো হয়েছে। তোর বোনের বিজনেসের দিকে নজর দেয়া লাগবে না।”
“সেদিন যদি দেখতাম তুই আমার বোনকে কোনভাবে প্রশ্রয় দিয়েছিস বা ওকে টাচ করেছিস তোকে আমি সেই রাতেই ছাদ থেকে ফেলে দিতাম।”

“বোনের জামাই হিসেবে পছন্দ হয়েছে বলেই রাতে ছাদ থেকে ফেলে না দিয়ে মেসেজ দিয়েছিলি?” বলেই হো হো করে হেসে ফেলল নিশো।

আবির গিয়ে বাইকে বসে নিশোকে বসতে বলল। বাইক স্টার্ট দিল। বাড়ির উদ্দেশ্যে চলতে শুরু করল। নিরবতা ভেঙে আবির বলল,

“ফালাক আমার ছোট বোন। ওর সাথে আমার সম্পর্ক যতই ভালো হোক না কেন আমি তোদের দুজনের ব্যাপারে ওর সাথে কথা বলতে পারি না। তাছাড়া আমি প্রেমের বিষয়টা সাপোর্ট করি না। কেন করি না সেটার প্রমাণ তুই নিজেই। তুই যখন ফালাককে ফিরিয়ে দিলি আমি খুশি হয়েছিলাম। তোর এতদিন কোন জব হয়নি অথচ তুই কত ভালো ছাত্র আর সেদিক দিয়ে আমি অ্যা বিগ জিরো। জব না হওয়ার ব্যাপারটা পুরোটাই ভাগ্য। এই যে আজ পরিক্ষা দিলি, ভাগ্যে লেখা থাকলে তুই যতটা পরিশ্রম করেছি এতেই তুই সফল হবি। আমার বাবার টাকার অভাব নাই৷ আমি বোনকে কোনদিন ঠকাবোও না কিন্তু আমি চাই না কোন হেরে যাওয়া মানুষ আমার বোনের ভাগ্যে আসুক। তার অধিকার আছে নিজের পছন্দের মানুষকে বিয়ে করার কিন্তু আমাদেরও তো দায়িত্ব তাকে ভালো কারো হাতে তুলে দেওয়ার।”

নিশো পিছনে বসে বসে আবিরের কথা শুনছিল। আবিরের কথায় ভেতর থেকে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো। ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুঁটলো। বলল,

“তোর মতো ভাই আর বন্ধু সবার হোক। এই যে আমার খারাপ সময়ে আল্লাহর পরে সবসময় আমি তোকে পেয়েছি।”

“বিনিময়ে তুই শুধু আমার বোনকে ভালোবাসবি। তোর রেজাল্টের অপেক্ষা করতে হবে না। আমি বাবার সাথে তাড়াতাড়ি কথা বলব। আমি চাই না আমার বোন প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যাক। আমি কিছুতেই চাই না, বিয়ের মতো এত সুন্দর আর স্নিগ্ধ সম্পর্কে দেরি করে আসুক।”

নিশোর মুখটা কিঞ্চিৎ মলিন হলো। ঘরে তার অবিবাহিত বোন আছে। বয়স হচ্ছে। গত বছর থেকে এ বছরে মোটে সাতটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। কোথাও মোটা অঙ্কের যৌতুক চেয়েছে বা কোথাও -মেয়ের বয়স বেশি বলে কেটে পড়েছে। একটা বাড়ির মেয়ের বাবা আর বড় ভাই জানে বাড়িতে অবিবাহিত মেয়ের বিয়ের আশা কমতে থাকলে বাবা আর ভাইয়ের চিন্তা বাড়তে থাকে।

নিশোকে চুপ থাকতে দেখে আবির বলে উঠল,“তোর আবার কী হলো?”

আবিরের স্বরে নিশো যেন সৎবিৎ ফিরে পেল। রাস্তার দিকে তাকিয়ে বলল,”তোর বোনের বয়স কম। দুই বছর অপেক্ষা করতে পারবে কিন্তু আমার বোনের বয়স বাড়ছে। আমার চেয়ে ওর বিয়েটা জরুরি। ওর আগে বিয়ে দেয়া প্রয়োজন।”

আবির এবার আর কিছু বলতে পারল না। নিশো মজার ছলে সব কথা হুড়মুড় করে ভেতর থেকে আবিরের সামনে বের করে দিলেও আবির পারল না। মনে মনে একটাই চিন্তা এলো- নিশো যদি ভাবে, ফালাক আর নিশোর ব্যাপারটা সে মেনে নিয়েছে তোয়ার কথা ভেবে? নিশো যদি তাকে ভুল বোঝে!
_____

একদিন, দুইদিন করে কাটতে কাটতে দুটো সপ্তাহ কেটে গেল। সবকিছু আগের তুলনায় অনেক স্বাভাবিল হয়েছে। ইয়াদের বিয়ের কথাবার্তা এগুতে এগুতে বিয়ের তারিখও ঠিক হয়ে গেছে। দুদিন পরেই ইয়াদের বিয়ে। বিয়ের জন্য ইয়াদসহ তার পরিবার গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়েছে। সেখানেই দাদার বাড়িতে বিয়ে অনুষ্ঠিত হবে। সপ্তাহখানেক ধরে ইয়াদ তোয়া আর ফালাককে বারবার কল দিয়ে মন খারাপ করে কথা বলছে। ওখানে তার সঙ্গী কেউ নাই। কারো সাথে মিলছে না। অসহ্য লাগছে। বিয়ের অনুষ্ঠান কেন গ্রামে করতে হবে? এসব বলে আফসোস করছে। অতঃপর নিশোর এবং ফালাকের বাড়িতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ভোর চারটার ট্রেনে সবাই ইয়াদের গ্রামের বাড়ির দিকে রওয়ানা দেবে।

তোয়া সন্ধ্যার দিকে নিজের ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিয়েছে। ফালাক বারবার কল দিয়েই যাচ্ছে রাতটা তার ওখানে থাকার জন্য। জাফর সাহেব কিছুতেই যেতে দেবে না ভেবে সে নিশোর ঘরে গেল। নিশো চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল। ঘরে কারো উপস্থিতি বুঝে তাকালো সে।

তোয়া নিশোর টেবিলের সাথে রাখা চেয়ারটায় গিয়ে বসলো। নিস্তেজ গলায় ডাকলো,

“ভাইয়া।”
“শুনছি, বল।”
“ফালাক কল দিয়েছিল।”
“কী বলে?”
“তোকে দেখতে চাচ্ছে। আমাকে বলল তোকে নিয়ে যেতে।”
“তোর কেন মনে হলো আমি এখন মজা করার ম্যুডে আছি? উল্টাপাল্টা কথা না বলে রুমে গিয়ে ঘুমা। তিনটার পরপর বের হতে হবে।”
“শোন না।”
“কী শুনব?”
“ক্যাডার হয়ে যাবি বলে ভাব দেখাচ্ছিস?”
“আমার মতো হাজার হাজার মানুষ পরিক্ষা দিয়েছে। তোর সাথে কথা বলতে আমার ক্যাডার হওয়া লাগবে? বেকার থেকেই চড়ায় নিতে পারি।”

তোয়া দমে গেল। গালে হাত দিয়ে অসহায় ভঙ্গিতে বলল,“ফালাক আজকের রাতটা ওর সাথে থাকতে বলল। আমাকে একটু দিয়ে আসবি?”
“বাবাকে বল।”
“তোর মনে হয় আব্বাজান যাবে?”
“যাবে। যা বল।”
“প্লিজ ভাইয়া, দিয়ে আয় না।”
“ভালো লাগছে না। বাবাকে বল দিয়ে আসবে। বিরক্ত করিস না যা এখন। একটু ঘুমোতে দে।”

তোয়া আর কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেল। মায়ের ঘরে উঁকি দিয়ে দেখল ঘরে লাইট অন। আলো এখনো আছে। দরজায় নক করতেই রূম্পা বেগম এসে দরজা খুলে দিল। বাহিরে তোয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,

“কী হয়েছে? ঘুমাসনি এখনো?”
“বাবা কী করছে?”
“ওষুধ খেয়ে বিছানায় গেল মাত্র। কেন?”
“বাবাকে একটু বলো না আমাকে ফালাকদের বাড়িতে রেখে আসতে।”

তোয়া কথাটা বলেই নিশোর ঘরের দরজার দিকে তাকাতেই দেখল নিশো সেখানে দাঁড়িয়ে। তোয়াকে তাকাতে দেখেই নিশো ইশারায় বাবাকে বলতে বলল।

তোয়ার কথা শুনে রূম্পা বেগম বললেন,”তোর বাবা যাবে? পাগল হয়েছিস তুই? আয় ভেতরে আয়। তুই নিজেই বল।”

তোয়া বাহিরে আর না দাঁড়িয়ে ভেতরে গেল। জাফর সাহেব চোখের চশমা খুলে পাশে রাখতে রাখতে মেয়েকে দেখে বললেন,

“কী রে মা, কিছু বলবি?”

তোয়া মাথানিচু করে ভয়ে ভয়ে বলল,“বাবা, ফালাক আজকের এই রাতটুকু ওর কাছে থাকার কথা বলছিল। ভাইয়াকে বললাম এগিয়ে দিয়ে আসতে কিন্তু ওর নাকি ঘুম পাচ্ছে। তুমি একটু এগিয়ে দিয়ে আসবে?”

চারপাশ নিরব। চোখ বন্ধ করে মাথানিচু করে দাঁড়িয়ে আছে তোয়া। এখন এই মুহূর্তে যা কিছু ঘটে যেতে পারে বলে আশঙ্কায় আছে সে। এই মুহূর্তের কোন বিপদ সংকেত নেই।

নিরবতা ভেঙে সবাইকে অবাক করে দিয়ে জাফর সাহেব বললেন,“ নিজের ব্যাগটা নিয়ে নাও। আমি বের হচ্ছি।”

#চলবে…….
গল্পের পরবর্তী পর্ব পেতে আমাদের গ্ৰুপে জয়েন হয়ে পাশে থাকুন। ধন্যবাদ।
https://www.facebook.com/groups/1129904368415371/?ref=share_group_link

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here