একটি_সাঁঝরঙা_গল্প #তানিয়া_মাহি #পর্ব_২২

0
201

#একটি_সাঁঝরঙা_গল্প
#তানিয়া_মাহি
#পর্ব_২২

তোয়া যখন আবিরের বিয়ের কথা আবিরকে জানিয়েছে তখন থেকে আবিরের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করছে। প্রিয় মানুষ কি-না এত আনন্দের সাথে অন্যকারো সাথে বিয়ের কথা জানাচ্ছে! এ-ও সম্ভব!

স্থির হয়ে দাঁড়ালো আবির। তোয়া পাশ থেকে প্রস্থান করল। পাশ ফিরে তোয়াকে দেখতে না পেয়ে এবার আরও অসহায় লাগছে নিজেকে।

বিয়ের কথা উঠল। সামনের দিকের চেয়ারে বসে থাকা মধ্যবয়সী লোক। গাত্ররঙ শ্যামবর্ণ। লম্বাচওড়া দেহ। তিনি পানের পিক ফেলে জাভেদ সাহেবের দিকে তাকালেন। মুচকি হেসে বললেন,

“ভাই, মসজিদ থেকে আসার সময় যে ব্যাপারে কথা বলছিলাম সেটার ব্যাপারে কথা এগুতে পারলে ভালো লাগতো। মাশাআল্লাহ কী সুন্দর আপনার ছেলে! আমার খুব মনে ধরেছে।”

কথাগুলো সূচের মতো বিঁধলো আবিরের বুকে। চোখ বড় বড় করে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে সে। একভাবে দাঁড়িয়েও থাকতে পারছে না। এদিক ওদিক তাকিয়ে এক পাশে মাকে দেখতে পেল সে। দ্রুত সেদিকে পা বাড়ালো। রাবেয়া বেগম এক পাশে ইয়াদের মা’র সাথে বসে আছেন।

আবির রাবেয়া বেগমের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। তাদের থেকে কিছুটা দূরেই তোয়া তার মায়ের সাথে বসে আছে। তাকে দেখে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। আবির দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মায়ের কাধে হাত রাখতেই মা পিছনে ফিরে তাকালো।

“কী হচ্ছে এসব, মা?”

রাবেয়া বেগম ভ্রু কুঁচকে বললেন,“কী হচ্ছে?”
“তোয়া বলল এখানে নাকি আমার বিয়ের কথা হচ্ছে!”
“বড় হয়েছিস, বিয়ের কথা হতে পারে না?”
“মা, তুমি তো জানো।”

রাবেয়া বেগম উঠে দাঁড়ালেন। ননদকে মৃদু হেসে বললেন,“আমি একটু আসছি।”

ছেলেকে হাত ধরে টেনে একটু দূরে নিয়ে এলেন। এদিক ওদিক দেখে শুধালেন,

“এবার বল।”
“আমি ওই মেয়েকে বিয়ে করব না।”
“কাকে বিয়ে করবি?”

“তোয়াকে।” বলেই অন্যদিকে তাকালো আবির।

রাবেয়া বেগম ফোস করে শ্বাস ছাড়লেন। ছেলের মুখপানে চেয়ে বললেন,“বিয়ে করবি ওকে জানিয়েছিস? আর বিয়ের পর দুজন কী করবি ঝগড়া? প্রতিদিন তিনবেলা ভাত খাওয়ার মতো ঝগড়া করবি আর আমি কি মিলমিশের দায়িত্ব নেব? এসব আমি পারব না। যার সাথে বিয়ের কথা হচ্ছে মেয়েটা ভীষণ মিষ্টি, আমার পছন্দ হয়েছে।”

আবির রুষ্ট হলো। চোখে মুখে বিষ্ময় ফুঁটিয়ে বলল,“তুমি এমন কথা কীভাবে বলতে পারলে?”

“তুই তোয়াকে পছন্দ করিস সেটা কাকে জানিয়েছিস? তোয়াকে নাকি তোয়ার পরিবারকে? এতই যদি পছন্দ করিস তুই তোয়াকে তাহলে এই যে বিয়ের কথা হচ্ছে এটা তুই নিজেই থামিয়ে দে।”

আবির কিছুক্ষণ মৌন রইল তারপর মায়ের দিকে তাকে তাকিয়ে চাপা শ্বাস ফেলে বলল,

“আমি কীভাবে বিয়ের কথা থামিয়ে দেব?”
“তুই তোর বাবাকে বল, তুই তোয়াকে বিয়ে করতে চাস। আমার বাবা কোনকিছুতেই আপত্তি নেই। তুই যাকে নিয়ে, যার সাথে ভালো থাকবি আমি তোকে তার সাথেই বিয়ে দেব কিন্তু তোর সেটা মুখ ফুটে বলতে হবে।”
_____

ফালাক ঘুমুচ্ছে। ঘুম গাঢ় হয়নি এখনো। দরজাটা খুলে কেউ ঘরে প্রবেশ করল সেটা সে স্পষ্ট বুঝতে পারল। মুখের ওপর কারো দেহাংশের ছায়া পড়ল। আস্তে আস্তে চোখ খুলল ফালাক। দেখল সামনে নিশো দাঁড়িয়ে। ধীরে ধীরে উঠে বসার চেষ্টা করল সে। নিশো চকিতে বলে উঠল,

“আমি ধরব?”

ফালাক হাত বাড়িয়ে বাঁধা দিয়ে বলল,“উহু, আমি পারব।”

উঠে বসলো ফালাক। সামনে, পাশে আর কাউকে না দেখে বলল,“আপনি একা এসেছেন?”
“তোয়া বলল, তোমার মাথাব্যথা করছে তাই এলাম।”
“মা কোথায়?”
“বাহিরে বসে আছে। তোমার শরীর এখন কেমন?”
“মাথা এখন একটু হালকা লাগছে। খুব মাথাব্যথা করছিল তখন।”
“ওষুধ খেয়েছ?”
“না, আমি মাথাব্যথার ওষুধটা যতদূর সম্ভব এড়িয়ে চলি। এখন ঠিক আছি। সবাই কি বাহিরে?”
“হ্যাঁ, সবাই বাহিরে।”
“তাহলে চলুন আমরাও যাই।”
“যেতে পারবে? না পারলে তুমি শুয়ে বিশ্রাম নাও আমি যাই।”
“না, না আমি যেতে পারব। সবাই বাহিরে আছে আমার একা একা এখানে ভালো লাগবে না। ”
“ঠিক আছে চলো।”
“আপনি যান, আমি আসছি।”

নিশো আর কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে গেল। সে হয়তো বুঝল ফালাক আনকম্ফোর্ট ফিল করছে। আগে কতগুলো দিন তাকে পড়িয়েছে সে। কই আগে তো এমন হয়নি! দুজনের কথা দুজনের জানাজানির পর থেকে দূরত্ব বেড়েছে। যদিও দুজনই চেষ্টা করে দূরত্ব বজায় রাখতে কিন্তু ফালাকের চেষ্টাটা যেন একটু বেশিই। নিশোর এতে খারাপ লাগে না। একটাবারের জন্য মনেও হয় না যে ফালাক তাকে অবহেলা করছে। সবকিছুর একটা সঠিক সময় আছে। নিজেদের কাছে খোলা বই হয়ে ধরা দিতে না-হয় বিয়েটাই আগে হোক!

জাভেদ সাহেব আশেপাশে তাকিয়ে স্ত্রীর চেয়ার ধরে ছেলেকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হাত বাড়িয়ে নিজের কাছে ডাকলেন। আবির এক পা দু’পা করে বাবার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। শ্বাস ঘন হচ্ছে তার। বাবাকে কী করে বলবে তোয়ার কথা? সামনের দিকেই তোয়ার বাবাও বসে আছে। শুকনো ঢোক গিলছে আবির। বাম পাশের সামনের দিকে তাকিয়ে দেখল ইভা সম্ভবত তার মায়ের পাশে মাথানিচু করে বসে আছে। এই মুহূর্তে সভ্য হয়ে বসে থাকা মেয়েটাকে প্রচন্ড অসভ্য লাগছে আবিরের কাছে। কোন কথাবার্তা ছাড়া কীভাবে পরিবারকে জানিয়ে দিল! আগে এই বিষয়ে কিছু কথা তো বলে নিতে পারত! বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে এমন একটা ছেলে মনে মনে মিঙ্গেল থাকতেই পারে। প্রেমিকা না থাকুক মনে মনে বিয়ে করা বউও তো থাকতে পারে। অসম্ভব কিছু না তো!

দাঁতে দাঁত চেপে রাগী চোখে মেয়েটাকে দেখছিল আবির। বাবার ডাকে সৎবিৎ ফিরল তার। বাবার দিকে তাকাতেই সে শুনলো জাভেদ সাহেব বললেন,

“ তোমার নিশ্চয়ই কোন সমস্যা নেই।”

পূর্বের কোন কথা কানে যায়নি আবিরের। তাই কথাটা বুঝতে একটু সময় লাগল তবুও পুরোপুরি বুঝতে প্রশ্ন করল,

“কীসে সমস্যা নেই, বাবা?”
“এই যে আমরা তোমার বিয়ের সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।”
“বিয়ে? আমার?”

জাভেদ সাহেব অপ্রস্তুত হলেন। এতক্ষণ এত কথা বললেন আর এই মুহূর্তে এসে ছেলের এমন কথাবার্তা শোভা পাচ্ছে না। ভ্রু কুঁচকে ছেলের চোখে চোখ রাখলেন তিনি। চাপা শ্বাস ফেলে বললেন,

“খেয়াল কোথায় ছিল তোমার?”
“আসলে, বাবা। আমি বুঝতে পারিনি। ”
“তোমার বিয়ের কথা চলছে এখানে। ইভা আম্মাকে আমার পছন্দ হয়েছে। ভাবছি তোমাদের দুজনের বিয়ের ব্যাপারে এগুবো।”

“কিন্তু বাবা, আমি তো অন্য একজনকে পছন্দ করি।” ফট করে মুখ থেকে বেরিয়ে এলো কথাখানা। আবির সাথে সাথে দুই হাত দিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরে এদিক ওদিক চাইলো। সবাই তার মুখের দিকেই তাকিয়ে আছে। সবার চোখে সমস্ত জাহানের বিষ্ময়। সে নজর ইভাকে দেখে নিল। মেয়েটাও তার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।

মুখ থেকে হাতটা নামিয়ে নিল আবির। নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,“বাবা, আমার বিয়ে নিয়ে সবার সাথে কথা বলার আগে আমার সাথে কথা বলে নিলে ভালো হতো না?”

জাভেদ সাহেব পারছেন না শুধু মাটির নিচে ঢুকে যেতে। ছেলে এরকম একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে কে জানতো! তবে তার কথাও ঠিক বলেই মেনে নিলেন তিনি। আমতা আমতা করে বললেন,

“তুমি তো বাড়িতে কিছু বলোনি। তুমি কাউকে পছন্দ করো সেটা মুখ দিয়ে বের করেছ কোনদিন?”
“আমি বলিনি আপনি জিজ্ঞেসও তো করেননি।”

জাভেদ সাহেবের মুখ শুকিয়ে গেল। পাংশুটে দেখাল। একবার ইভার বাবা আর ইয়াদের বাবাকে দেখে আবার ছেলের দিকে তাকালেন। প্রশ্ন ছুড়লেন,

“কাকে পছন্দ করো তুমি?”

আবির এই মুহূর্তে তোয়ার দিকে তাকালো। যদিও সবাই টান টান উত্তেজনায় পরবর্তীতে আবির কী বলবে সেটা জানার অপেক্ষায় আছে তবুও আবির কিছুটা সময় নিল। পরিবেশ ভারি হতে শুরু করল।

জাফর সাহেব এতক্ষণে নিরবতা ভাঙলেন। ভারি গলায় শুধালেন,

“ তোমার বাবা কিছু জানতে চেয়েছে, আবির। জানাও তাকে, কাকে পছন্দ করো তুমি?”

আবির তোয়ার দিকে দৃষ্টিপাত করেই বলে উঠল,“আপনার মেয়েকে। আমি তোয়াকে পছন্দ করি।”

#চলবে…….

‘নীলকুরিঞ্জি’ সংগ্রহ করেছেন তো? না করে থাকলে যে কোন অনলাইন বুকশপ থেকে সংগ্রহ করে ফেলতে পারেন।

** এক হাজার কমেন্ট হলে পরবর্তী পর্ব পাবেন। আজ হলে আগামীকাল পরবর্তী পর্ব পাবেন ইন শা আল্লাহ।

গল্পের পরবর্তী পর্ব পেতে আমাদের গ্ৰুপে জয়েন হয়ে পাশে থাকুন। ধন্যবাদ।
https://www.facebook.com/groups/1129904368415371/?ref=share_group_link

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here