হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_৩২

0
399

#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৩২

রাত এগারোটা বেজে গেছে। জাহিন বেডে বসে ল্যাপটপে কিছু প্রয়োজনীয় কাজ কমপ্লিট করে রাখছে। কিন্তু কাজের ফাঁকে ফাঁকে বার বার দরজা আর ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু যার অপেক্ষা করছে তার আসার নাম নেই। তার লাজুক বউটা কি রাগ অভিমান করে আজ রুমেই আসবে না নাকি।‌ জাহিন তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়ল, সে যখন খাওয়া দাওয়া করচ্ছিল তখন অয়ন্তির দিকে বার বার তাকিয়েছে। কিন্ত মেয়েটা তার দিকে একটি বারের জন্যও তাকায় নি। বোঝায় যাচ্ছে বড্ড অভিমান করেছে বউ তার উপরে। জাহিন আর অপেক্ষা করতে পারছে না সেই যে সন্ধ্যার সময় বউ তার রাগে, দুঃখে, অভিমানে রুম থেকে বেরিয়েছে এরপর আর একটি বারের জন্যও আসে নি রুমে। এবার রাগ উঠছে জাহিনের ভীষণ রাগ। রাগ, অভিমান করছে ভালো কথা তা বলে রুমে আসবে না এ কেমন কথা? জাহিন ল্যাপটপটা রেখে তড়াক করে উঠে দাঁড়াল উদ্দেশ্য অয়ন্তি রুমে না আসতে চাইলে পারলে সে সবার সামনে দিয়ে পাঁজাকোলা তুলে রুমে নিয়ে আসবে। কে কি বলবে তার ধার ধারবে না জাহিন। জাহিন হাই স্পিডে রুমের বাইরে পা রাখতে নিবে তখনই দেখে অয়ন্তি আসছে। জাহিন অয়ন্তিকে দেখে তাড়াতাড়ি করে এসে আগের ন্যায় ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়ল।‌ জাহিনের নজর ল্যাপটপের স্ক্রিনের উপর রাখলেও আড় চোখে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। অয়ন্তি রুমে আসল তার হাতে পানির জগ। অয়ন্তি এক নজর জাহিনের দিকে তাকিয়ে পানির জগটা টেবিলের ওপর রেখে ওয়াশরুমে চলে যায়। জাহিন মুখ দিয়ে “চ” বর্গীয় উচ্চারণ করে ওয়াশরুমের দরজার দিকে তাকাল। মেয়েটাকে মনে হয় একটু বেশিই কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। জাহিন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে‌ চোখ কচলিয়ে ল্যাপটপের দিকে তাকাল। কিছুক্ষণ পরেই অয়ন্তি ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ধীর পায়ে হেঁটে চুপচাপ বেডে শুয়ে পাশ ফিরে চোখ বন্ধ করে গায়ে মাথায় ব্ল্যাঙ্কেট টেনে শুয়ে পড়ল। কিন্তু দু চোখে কোনো ঘুম নেই বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছে জাহিনের গলার কাছটায় খামচির লাল দাগটা। চাইলেও মস্তিষ্ক থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারছে না। বুকের মাঝে চাপা এক কষ্ট অনুভব করছে। অয়ন্তি ডান হাতটা বুকের মাঝে চেপে ধরে বার কয়েক বার চাপড় দিল আর বার বার দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ছে। এই প্রত্যেকটা দীর্ঘ নিঃশ্বাসের শব্দ এই নিস্তব্ধ রাত হওয়াতে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে জাহিন। জাহিন ঘাড় ঘুরিয়ে অয়ন্তির দিকে তাকায়। কি করে অয়ন্তির মনের কষ্ট কমাবে সেটাই ভাবছে? অয়ন্তি দম বন্ধ হয়ে আসছে, শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে না, একটু মুক্ত বাতাসের দরকার তার। অয়ন্তি নিজের গা থেকে ব্ল্যাঙ্কেট সরিয়ে শুয়া থেকে উঠতে নিবে তখনই জাহিনের গম্ভীর গলার স্বর ভেসে আসে।

“কোথায় যাচ্ছেন?”

অয়ন্তি ঢোক গিলে বলে, “বেলকনিতে।”

“কেন?”

“এমনি।”

জাহিন কঠিন গলায় বলে, “এমনি কেন? বাহিরে কুয়াশা পড়েছে বেলকনিতে যাওয়ার কোনো দরকার নেই। সকাল বেলা রোদ উঠলে তখন যতক্ষণ মন চাইবে ততক্ষণ বেলকনিতে থাকবেন। এখন চুপচাপ ঘুমান।”

অয়ন্তি দু ঠোঁট চেপে‌ ধরে। বড্ড কান্না পাচ্ছে তার। জাহিন তার সাথে এমন রুক্ষ ভাষায় কথা বলছে কেন? কই এত দিন তো এমন রুক্ষ গলায় কথা বলে নি আজ হঠাৎ কি হলো জাহিনের? অয়ন্তি ব্ল্যাঙ্কেটটা পুনরায় জড়িয়ে‌‌ নিয়ে ঢোক গিলে‌‌ কান্নাটা আটকে নিল। কষ্ট গুলা দলা পাকিয়ে‌ বুকে চেপে শক্ত হয়ে শুয়ে রইল। জাহিন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে উঠে দরজা সিটকারি লাগিয়ে দিল আর‌ ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে‌ দিল। অয়ন্তি শক্ত করে খামচে ধরল ব্ল্যাঙ্কেটটা। তার অবচেতন মন বলছে জাহিন তার কাছে আসবে, তাকে জড়িয়ে ধরবে। জাহিন বেডে বসে কিছুক্ষণ তব্দা মেরে রইল। জাহিন অয়ন্তির বাহুতে হাত রেখে‌ নরম গলায় বলে।

“অয়ন্তি।”

অয়ন্তি চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে‌ রইল। এমন একটা ভান ধরছে যে সে ঘুমিয়ে গেছে। জাহিন পুনরায় মোলায়েম কন্ঠে বলে, “সাড়া দিবেন না আমার ডাকে।”

জাহিন জোর করে অয়ন্তির বাহু ধরে নিজের দিকে ঘুরাল। অয়ন্তি চিৎ হয়ে শুয়ে আছে‌, জাহিন হালকা ঝুঁকে‌ আছে অয়ন্তির দিকে। অয়ন্তির চোখ বন্ধ করে রেখেছে তা দেখে জাহিন বলে।

“ঘুমান নি সেটা কিন্তু আমি জানি কারণ, আপনার চোখের পাতা নড়ছে সেটা আমি স্পষ্ট ড্রিম লাইটের মুদৃ আলোতে দেখতে পারছি।”

অয়ন্তি কথাটা শুনে চোখ মেলে তাকাল কিন্তু জাহিনের দিকে নয় বরং অন্য দিকে তাকিয়ে রইল। জাহিন আলতো হাতে অয়ন্তির গালে হাত রাখে। অয়ন্তি চোখ বন্ধ করে‌‌ ঢোক গিলে পুনরায় তাকাল। জাহিন আড়ষ্ট কন্ঠে বলে।

“রাগ করেছেন আমার উপরে?”

অয়ন্তি ধরা গলায় বলে, “না।”

“তাহলে অভিমান করেছেন?”

অয়ন্তি আগের ন্যায় বলল, “না।”

“সেটাও না। তাহলে‌?”

অয়ন্তি দ্রুত গলায় বলে, “আমি আপনার উপর রাগ অভিমান কিচ্ছু করে নি।”

জাহিন মুচকি হাসল। বউ তার রাগ, অভিমান করে নি ঠিকই বলছে কিন্তু প্রচন্ড অভিমান করেছে তার উপর সেটা টের বুঝতে পারছে। জাহিন এবার আকস্মিক অয়ন্তির বা হাতের বাহুর ধরে অয়ন্তিকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। অয়ন্তি হকচকিয়ে উঠে এমনটা হওয়াতে। কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে জাহিনের বুকে পড়ে রইল বিড়াল ছানার মতো। জাহিন অয়ন্তির খোলা চুলের ভাঁজে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে।

“সরি! বুঝতে পারি নি আপনি যে আমার ওই কথাটা শুনে এতটা হার্ট হবেন।”

অয়ন্তি চুপ মেরে রইল‌ একটা “রা” অব্দি করল না। জাহিন পুনরায় বলতে শুরু করল, “আপনি জানতে চান এই খামচি দেওয়ার মালিক কে?”

জাহিন কিছুটা থেমে বলে, “এই খামচির দাগটা আপনারেই দেওয়া অয়ন্তি।”

অয়ন্তি চমকে জাহিনের দিকে তাকায়। কি বলছে এই‌‌ লোক? সে কখন এই কাজটা করল? অয়ন্তির হতবিহ্বল চেহারা দেখে জাহিন ঠোঁটের কোণে চাপা হাসি রেখে বলে, “আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি।”

অয়ন্তি অবিশ্বাস্য গলায় বলে, “আমি কখন এমনটা করলাম?”

“গতকাল রাত্রে করেছেন মিস ও সরি মিসেস অয়ন্তি। যখন আমি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলাম তখন হঠাৎ করেই চোখ মেলে দেখি আপনি বিড়ালের বাচ্চার মতো শক্ত করে আমাকে খামচে ধরেছেন। হয়তো কোনো কোনো স্বপ্ন দেখছিলেন তারেই বহিঃপ্রকাশ করেছেন আপনি এভাবে।”

অয়ন্তি বোকার মতো প্রশ্ন করে, “আপনি সত্যি বলছেন তো?”

“বেশি প্রয়োজন না পড়লে আমি মিথ্যা কথা বলি না অয়ন্তি। আর বিয়ের প্রথম রাতে আপনাকে বলেছিলাম, আপনি ব্যতীত আমার জীবনে অন্য কোনো নারী ছিল না, আপনি আমার জীবনের প্রথম নারী।”

অয়ন্তির মনে পড়ল ওই দিন রাতে ছাদে থাকাকালীন জাহিনের কথাটা। অয়ন্তির এখন নিজেকে নিজের কাছেই ছোট লাগছে এটা ভেবে, সে কি করে জাহিনের সম্পর্কে এমনটা ভাবল। জাহিনের কথা শুনে মনে হচ্ছে সেই এই কাজটা করেছে। ইস! খুব কষ্ট পেয়েছে নিশ্চয়ই মানুষটা এভাবে খামচি দেওয়াতে। সকাল হোক তারপর তার এই বাঘিনীর মতো নখগুলা কাটতে হবে। জাহিন অয়ন্তির ভাবুক চেহারা দেখে বলে।

“এই যে ম্যাডাম কোথায় হারিয়ে গেলেন?”

অয়ন্তি দু পাশে মাথা নাড়িয়ে বুঝায়, সে কোথাও হারিয়ে যায় নি। জাহিন মুচকি হেসে বলে, “এবার নিশ্চিন্তে ঘুমান। সন্ধ্যা থেকে অনেক চিন্তা ভাবনা করেছেন এই ছোট্ট মাথা নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে।”

কিন্তু অয়ন্তি জাহিনের কথা না শুনে জাহিনের খামচি দেওয়ার স্থানে আলতো হাতে স্পর্শ করে আহত গলায় বলে, “খুব ব্যথা করছে তাই না।”

জাহিন নিষ্প্রভ স্বরে বলে, “একটুও না।”

“সরি আমি সত্যি বুঝতে পারি নি কখন এমনটা করে ফেলেছি। আপনি ছাড়ুন আমাকে না হলে কখন আবার ঘুমের মাঝে এমনটা করে বসব।”

অয়ন্তি সরে যেতে চাইলে জাহিন হাতের বাঁধন দৃঢ় করে। অয়ন্তি জাহিনের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, “কি হলো ছাড়ুন?”

জাহিন জিহ্বা দ্বারা নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে ঢোক গিলে প্রগাঢ় গলায় বলে, “প্লিজ অয়ন্তি দূরে সরে যাবেন না। আমার বুকের মধ্যখানেই থাকুন আপনি।”

অয়ন্তি জাহিনের দিকে সন্তপর্ণে তাকাল। জাহিন শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। কিন্তু এই শান্ত চোখের ভাষা বড্ড অন্যরকম সেটা অয়ন্তি মেয়ে হয়ে স্পষ্ট বুঝতে পারছে। অয়ন্তি জাহিনের চোখে চোখ রেখে মিহি স্বরে বলে, “আপনি কি কিছু বলতে চান আমায়?”

জাহিন শুকনো ঢোক গিলল। সে তো অনেক কিছুই বলতে চায় অয়ন্তিকে‌ কিন্তু কন্ঠনালীতে সেই সকল কথা গুলা এসে আটকে যায়। জাহিন চোখ বন্ধ করে নিজেকে তটস্থ করল। অয়ন্তির মাথাটা নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে চোখ বন্ধ করে রাশভারী গলায় বলে।

“ঘুমান অয়ন্তি। অনেক রাত হয়েছে।”

অয়ন্তি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়াল। এই লোক এতটা ধৈর্যশীল কি করে হতে পারে? এই ধৈর্যের আড়ালে লুকিয়ে থাকা একজন প্রেমিক পুরুষকে কবে কাছে পাবে সে? তবে মাঝে দুই বার পেয়েছিল। একবার নিজের অজান্তে প্রথম বারের মতো তার কাছে আসা আরেক বার নেশায় কাবু হয়ে তার কাছে এসেছিল। কিন্তু কবে সকল জড়তা কাটিয়ে জাহিন নিজ থেকে তার কাছে আসবে। সেই কাঙ্ক্ষিত রাতটা কবে আসবে যেদিন জাহিনের এই ধৈর্যের বাঁধ ভাঙবে। সেই রাতটার অপেক্ষায় থাকল অয়ন্তি।

_______

লিজা পড়ার টেবিল গুছিয়ে শরীর টানটান করে উঠে দাঁড়ায়। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে পৌনে বারোটা বাজে। লিজা হাতাশার নিঃশ্বাস ছাড়ল জীবনটা পুরো তামা তামা করে দিল এই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। কথা নেই বার্তা নেই হুট করে নির্বাচনের এক মাস আগে ইনকোর্স পরীক্ষার রুটিন দিয়ে দিল। মানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে দেখে শিখতে হবে কি করে শিক্ষার্থীদের বাঁশ দেওয়া লাগে। লিজার হঠাৎ করেই মনে পড়ল অয়ন্তির কথা। অয়ন্তি কি জানে ইনকোর্স পরীক্ষার যে রুটিন প্রকাশ হয়েছে? হয়ত জানে আবার নাও জানতে পারে। এখন তো অনেক রাত হয়ে গেছে এখন ফোন দেওয়াটা ঠিক হবে না। তাই লিজা ঠিক করল সকালে ফোন দিয়ে পরীক্ষার বিষয়ে কথা বলবে। লিজা লাইট নিভিয়ে বিছানায় শুতে যাবে সাথে সাথে ফোনের রিং টোন বেজে উঠে। লিজা পুনরায় রুমের লাইট জ্বালালো। এত রাতে কে ফোন করল তাকে? কারো কোনো বিপদ হয় নি তো আবার। লিজা জলদি করে ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রিনে ফোন নাম্বারটা দেখে চেহারার রং পাল্টে গেল। আজ যদি এই লোককে না ধোলাই দিয়েছে পাউডার ছাড়া তাহলে তার নাম লিজা না। শা*লা এত রাতে ফোন দিয়ে মেয়েদেরকে বিরক্ত করা। লিজা কলটা ধরে কটু কথা বলতে নিবে তখনই পাশ থেকে ভেসে আসে একটা পুরুষালী ভারী কন্ঠ।

“আসসালামু আলাইকুম।”

লিজা থমকে যায়। এর জবাবে তো আর বাজে কথা বলা যায় না তাই আস্তে করে বলে, “জি অলাইকুম আসসালাম! কে বলছেন?”

“উমম এমন কি কেউ যে আপনাকে চায়।”

লিজা তেতে উঠে বলে, “এই মিয়া কেডা আপনে হুম? রাত বিরাতে মাইয়াদের বিরক্ত করেন। কাজ কাম নাই আপনের?”

লোকটা মজা পেলো লিজার কথা শুনে কৌতুকের স্বরে বলে, “ওয়াও এটা বুঝি আপনাদের আঞ্চলিক ভাষা।”

লিজা কটমট করে বলে, “জে এটা আমাগো আঞ্চলিক ভাষা। এহন আঞ্চলিক ভাষায় কি আপনে কোনো গালি হুনতে চান। যদি হুনতে না চান তাহলে ফোন রাহেন।”

“প্লিজ প্লিজ ফোন রাখবেন না। আপনি যদি এখন ফোন কেটে দেন না জানি আবার আপনি কবে ফোন ধরেন? একশোটা কলের মাঝে আপনি মাত্র একটা কল ধরেন।”

লিজা এবার সিরিয়াস হয়ে বলে, “এই আপনি কে বলুন তো? কোনো প্রতারক, দালাল নাকি চুর?”

“এই তিনটার কিছুই না আমি। তবে এই তিন ধরণের মানুষ আমাকে দেখলে ভয় পায়। আর আপনি কিন্তু এই তিনটার মাঝে একটা।”

লিজা ভ্রু কুঁচকে বলে, “মানে?”

“হুম আপনি একজন চুর।”

লিজা রাগ দেখিয়ে বলে, “এই মিয়া আমি আবার কি চুরি করলাম?”

“কেন আমার মন।”

“মানে।”

“প্রেম ভালোবাসা করবেন আমার সাথে মিস লিজা।”

লিজা হতবাক হয়ে যায় পুরুষটির কথা শুনে। রাতে বিরাতে তাকে ফোন দিয়ে প্রেম করার প্রস্তাব দিচ্ছে। লিজা তিরিক্ষি মেজাজ দেখিয়ে বলে, “আপনি কোন দেশের লাট সাহেব যে আপনার সাথে আমি প্রেম ভালোবাসা করতে যাব।”

“বাংলাদেশের লাট সাহেব। আর এই লাট সাহেবের সাথে একবার করেই দেখুন না অনেক ভালোবাসব আপনাকে অন্নেক।”

লিজা ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে, “এই আপনি ফোন রাখেন না তো। অসভ্য লোক কোথাকার?”

“লিজা।”

লোকটার এমন আবেগ মেশানো ডাক শুনে লিজার বুকটা ধ্বক করে উঠে। লিজা শুকনো ঢোক গিলল। পুরুষটি পুনরায় নরম গলায় বলল, “দেখা করবেন আমার সাথে একটা বারের জন্য।”

“না আপনার সাথে আমি দেখা করব না।”

বলেই টাস করে কল কেটে দিয়ে লিজা লাইট নিভিয়ে ধপ করে শুয়ে পড়ে। বুকটা জানি কেমন ধক ধক করছে। এমনটা করছে কেন? লিজা জোরে জোরে বার কয়েক বার শ্বাস নিল। এমন সময় মেসেজ আসার শব্দ হলো। লিজা মেসেজ আসার শব্দ শুনেও শুয়ে রইল সে জানে ওই অজ্ঞাত লোকটাই মেসেজ করেছে। পুনরায় মেসেজ আসার শব্দ ভেসে আসলো। লিজা এবার হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিল। মেসেজ অপশনে ঢুকে চোখ বুলাল।

“আপনার গ্রামে আমি আসব মিস লিজা তখন আমার সাথে আপনাকে দেখা করতেই হবে। আপনি দেখা না করলে পুরো গ্রামে এটা বলে রটিয়ে দিব যে, আপনি‌ আমার সাথে প্রতারণা করেছে। ভালোবাসার অভিনয় করে লাক্ষ লাক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আমার কাছ থেকে।”

লিজা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল ফোনের দিকে। কি ডেঞ্জারাস এই লোক? বলে কি না সে তার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করে লাক্ষ লাক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কত্ত বড় বেয়াদব ছেলেটা। লিজা রেগে মেগে আগুন হয়ে ছেলেটার নাম্বার কল করল।

শারাফের ফোন নন স্টপ বেজে যাচ্ছে আর সেটা দেখে পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে সে। চোখে মুখে রয়েছে প্রশান্তির আভাস। শারাফ বেডের সাথে মাথাটা হেলিয়ে দিয়ে মাথার নিচে দু হাত রেখে দু পা নাড়াতে নাড়াতে ভাবলেশহীন ভাবে বলে।

“কেমন লাগছে মিস লিজা ভিজা আপনার ফোন না ধারাতে? নিশ্চয়ই খুব রাগ উঠছে আমার উপরে তাই না।”

শারাফ কথাটা বলে তড়িৎ বেগে সোজা হয়ে বসে ফোনের দিকে তর্জনী তাঁক করে থমথমে গলায় বলে, “এবার বুঝেন কেমন লাগে একটা মানুষ ফোন না ধরলে।”

পাঁচ পাঁচ বার রিং হওয়ার‌ পর বন্ধ হয় ফোন আসা। কিছুক্ষণ পরেই শারাফের ফোনে মেসেজ আসার শব্দ হলো। শারাফ মেসেজ চেক করে চোখ বড় বড় তাকিয়ে হতবাক হয়ে বলে।

“ভবিষ্যৎ জামাইকে শালা বানিয়ে দিল এই মেয়ে।”

শারাফ পুনরায় লিজাকে মেসেজে দিল, “সোনা এটা কি বলছো তুমি? আমি হতে চাইতাছি তিন অক্ষরের জামাই তোমার আর তুমি আমাকে দু অক্ষরের শালা বানিয়ে দিলে তোমার। এটা ঠিক না সোনা।”

শারাফের মেসেজটা দেখে লিজার চোখ কপালে উঠে যায়। দাঁতে দাঁতে চেপে কিছুক্ষণ বসে রইল। মানুষটা যদি তার সামনে থাকত এই মুহূর্তে তাহলে তাদের গ্রামে থাকা গোবর ভর্তি ডোবায় চুবিয়ে মারত। কিন্তু আপতত নেই তাই মেসেজেই যা করার করতে হবে। লিজা আবারো মেসেজ দিল শারাফকে।

“স্বপ্ন দেখতে থাক অসভ্য বেডা মানুষ জীবনে তিন অক্ষরের জামাই হতে পারবি না তুই আমার।”

শারাফ লিজার মেসেজটা দেখে বলল, “কি ঝগড়ুটে মেয়ে রে বাবা কথার উপরে কথা।”

পরপর শারাফ আবার মেসেজ দিল, “চ্যালেঞ্জ করছো আমাকে ঠিক আছে তোমার চ্যালেঞ্জ একসেপ্ট করলাম।”

লিজা মেসেজটা পড়ে ফোনটা রেখে ভেঙিয়ে ভেঙিয়ে বলে, “হুম আসছে কোথাকার কোন চ্যালেঞ্জ ওয়ালা। তোর পা*দের চ্যালেঞ্জের গু*ল্লি মারি আমি।”

বলেই লেপ গায়ে মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে। কিন্তু শারাফের চোখে ঘুম সে কি করে এই চ্যালেঞ্জ জিতবে সেই ভাবনাতে বিভোর। আর তার চেয়ে বড় ভাবনার বিষয় হল লিজা যখন জানতে পারবে এই অপরিচিত‌ মানুষটা শারাফ তখন লিজা কি প্রতিক্রিয়া করবে এটা ভেবে শারাফের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here