হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_৩৩

0
401

#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৩৩

কেটে গেছে দু দুটো দিন। সবাই সবার কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। জাহিন ব্যস্ত হয়ে পড়ল আসন্ন নির্বাচনের কাজ নিয়ে। এদিকে অয়ন্তিও নিজের পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বিয়ে পর পড়াশোনা ঠিক মতো করা হয় নি বলতে গেলে। তাই একটু পড়াশোনা করে তো পরীক্ষাটা দিতে হবে তা না হলে তো পরীক্ষায় গোল্লা পাবে। এদিকে জারা আছে নুহাশকে নিয়ে মহা জ্বালায়। নুহাশ তাকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যায়। নুহাশের করা এই ইগনোর একদম সহ্য করতে পারছে না‌ জারা। নুহাশের ইগনোর করা দেখে মনে হচ্ছে যেন সে কেউ না, কিন্তু কয়েকদিন আগেও তো কত্ত সুন্দর করে জান টান ডাকল তাকে। আর এখন নুহাশের ভাব গতি মনে হচ্ছে এমন কোনো কিচ্ছু হয় নি তাদের মাঝে। তাই আজকে জারা ঠিক করছে আজকে সে নুহাশের কাছে যাবেই যাবে আর নুহাশকে জ্বালিয়ে মারবে।

জারা পড়ার টেবিলে বসে এসব ভাবছে আর ছক কষছে কি করে নুহাশের কাছে যাওয়া। ব্যাডা ওই ঘটনাটার পর থেকে এখন আর দরজা খুলা রাখে না সব সময় দরজা লক করে রাখে যাতে করে জারা আবার রুমে না ঢুকতে পারে। কিন্তু জারা তো আজকে যাবেই ওই রুমে যেই করেই হোক। আকস্মিক জারা বসা থেকে লাফিয়ে উঠে হাসিহাসি মুখে বলে‌।

“পেয়ে গেছি বুদ্ধি। এখন শুধু সেটা প্রয়োগ করার পালা। আমাকে জ্বালিয়েছো এবার তোমার জ্বালার পালা।”

জারা কোমর বাঁকিয়ে বইয়ের সারিতে একটা বই খুজতে খুজতে বলে, “কোথায় গেলো আমার ইংলিশ বইটা কোথায়?”

বইটা হাতে পেয়ে পুনরায় চেয়ারে বসে বইয়ের পাতা উল্টাতে শুরু করল। খুঁজে বের করতে শুরু করল কঠিনের থেকে কঠিন তম ন্যারেশন। পাঁচ মিনিট পর খুঁজে পেল একটা কঠিন ন্যারেশন। এই ন্যারেশন বুঝিয়ে দিতে বলবে নুহাশকে। নুহাশ ইংলিশে অর্নাস আর মার্স্টাস দুটোই করেছে সেই সুবাধে নুহাশ ইংলিশ খুব ভালো পারে। আর সেই সুবিধাটাই আজকে জারা কাজে লাগাবে। জারা বই খাতা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ল। আস্তে আস্তে হেঁটে নুহাশের রুমের কাছে এসে দরজায় টোকা দিল। দরজার শব্দ শুনে নুহাশ ভেতর থেকে বলে।

“কে?”

জারা গলা পরিস্কার করে বলে, “নু্হাশ ভাই আমি।”

জারার কন্ঠস্বর শুনে নুহাশ তাড়াতাড়ি করে শুয়া থেকে উঠে বসে বিড়বিড় করে বলে, “এই আধ পাগল মেয়ে কি চায় আবার?”

জারা পুনরায় বলে, “নু্হাশ ভাই তুমি কি ভেতরে আছো?”

নুহাশ নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, “হ্যাঁ জারা বলো? কিছু কি লাগবে তোমার?”

জারা অবলীলায় বলে, “হ্যাঁ লাগবে তো, তোমাকে।”

নুহাশ হকচকিয়ে উঠে জারার কথা শুনে। কি বলছে এই‌ মেয়ে? বাড়ির কেউ যদি এটা শুনে তাহলে কি ভাববে? নুহাশ চুপ মেরে রইল। জারা পুনরায় কিছু বলতে যাবে তখনই দেখে জাহিন উপরে উঠছে। ভাইকে থেকে জারার মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল আর কুটিল হেসে মনে মনে বলে।

“দরজা খুলবে না তো‌। ঠিক আছে দেখাচ্ছি মজা দরজা তুমি খুলবে সাথে তোমার ঘাড়ও খুলবে।”

জারা কয়েক কদম এগিয়ে এসে ভাইকে বলে, “ভাইয়া নু্হাশ ভাই দরজা খুলছে না দেখো?”

জাহিন হঠাৎ বোনের এমন কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে বলে, “মানে?”

“মানে দেখো না আগামীকাল আমার কোচিং এ ইংলিশ পরীক্ষা আর আমি একটা ন্যারেশনটা কিছুতেই সলভ করতে পারছি না। তাই নুহাশ ভাইয়ের কাছে এসেছি কিন্তু নুহাশ ভাই তো দরজাই খুলছে না। তুমি একটু বলবে খুলার জন্য।”

কিন্তু জাহিন জারার সমস্ত পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিয়ে বলে, “দেখি ন্যারেশনটা।”

ভাইয়ের কথা শুনে জারা থমকালো। এবার কি হবে? ভাই তার ইংলিশ নিয়ে পড়ে নিয়ে নি ঠিক আছে কিন্তু এই ন্যারেশন তো এক মিনিটের মধ্যে সমাধান করে দিবে। জারা আমতা আমতা করে বলে, “তুমি পারবে ভাইয়া। তুমি তো অংক নিয়ে পড়েছো?”

“পারবো তুই চল আমার সাথে আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি।”

নেও ঠেলা, জারার সব আশায় এক খাবলা ছাই ঢেলে‌ দিলো তার ভাই। জাহিন দু কদম এগিয়ে যেতেই ফোন বেজে উঠে। কিছুক্ষণ কথা বলার পর জারাকে বলে, “আমাকে বেরুতে হবে তুই নুহাশের কাছে বুঝে নে ন্যারেশনটা।”

জারার চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল আমোদে। তার সাথে আল্লাহ আছে না হলে এভাবে মোড়টা ঘুরিয়ে‌ দেয়। আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে। এবার কোথায় যাবে মিস্টার নুহাশ রহমান? জাহিন চলে যেতে নিবে তখনই জারা বলে উঠে।

“কিন্তু ভাইয়া নুহাশ ভাই তো দরজা খুলছে না। ভেতরে কি করছে কে জানে?”

“দাঁড়া আমি দেখছি।”

জাহিন দরজায় টোকা দিয়ে দু বার নু্হাশকে ডাকতেই দরজা খুলে গেল। জাহিন নুহাশকে দেখে বলল, “জারা একটা ন্যারেশন বুঝছেনা না ওকে বুঝিয়ে দে তো।”

কথাটা বলেই জাহিন চলে যায়। নুহাশের মুখে অমাবস্যার ঘোর অন্ধকার নেমে এলো। এই মেয়ে নিশ্চিত কিছু একটা করবে। তার ভাইয়া যদি জানতো এই মেয়ের মনে কি কি আছে তাহলে হয়তো জীবনেও এই ঘরে আসতে দিতো না। জারা হাসি মুখে রুমের ভেতরে ঢুকে। কিন্তু নুহাশ এখনও আগের জায়গাতে দাঁড়িয়ে আছে। চিন্তায় আছে ওই দিনের মতো যদি আবারো সে দুর্বল হয়ে পড়ে তখন কি হবে? এই মেয়েটা কেন তাকে এভাবে জ্বালাচ্ছে? জারা টেবিলের উপরে বই খাতা রেখে চেয়ার টেনে বসে গলার স্বর টেনে টেনে বলে।

“নুহাশ ভাই তুমি কি ওখানে দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি। আমায় তাড়াতাড়ি বুঝিয়ে দাও ন্যারেশনটা। তুমি যদি ওভাবে পাথরে মতো দাঁড়িয়ে থাকো তাহলে তো সন্ধ্যা পেরিয়ে গভীর রাত হয়ে যাবে।”

নুহাশ চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ল। নিজেকে তটস্থ করে টেবিলের দিকে এগিয়ে এসে চেয়ারে বসে বলে, “কোন ন্যারেশনটা বুঝতে পারছো না দেখি?”

জারা আস্তে করে বলে, “বইয়ের সাদা রঙের পাতায় থাকা সব ধরনের ন্যারেশন আমি বুঝতে পারি, কিন্তু তোমার মনের কঠিন তম ন্যারেশনটা আমি বুঝতে পারি না শুধু।”

নুহাশ জারার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে, “কিছু বললে?’

“কই না তো?”

“বের করো।”

জারা ন্যারেশনটা বের করে দিল। নুহাশ ন্যারেশনটায় কিছুক্ষণ চোখ বুলিয়ে জারাকে বুঝাতে শুরু করল কিন্তু জারা ন্যারেশন বুঝার পরিবর্তে সে এক ধ্যানে তার স্বপ্নের প্রেমিক পুরুষকে দেখছে। এই‌ প্রেমিক পুরুষ স্বপ্নেই অনেক ভালো। তাকে স্বপ্নেই ভালোবাসে, যত্ন করে কিন্তু বাস্তবে একটুও ভালোবাসে না। আচ্ছা বাস্তবে ভালোবাসে কি না পরীক্ষা করা দরকার। নুহাশ সম্পূর্ণ ন্যারেশনটা বুঝিয়ে বলে।

“বুঝতে পেরেছো সবটা।”

নুহাশ কথাটা সমাপ্ত করতেই জারা বুকের বা পাশে হাত রেখে “আহ” করে উঠে। জারার এমন আর্তনাত শুনে নুহাশের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে। বিচলিত গলায় বলে।

“কি হয়েছে জারা?”

জারা ব্যথাত্তুর কন্ঠে বলে, “নুহাশ ভাই খুব ব্যথা করছে খুব।”

নুহাশ বসা থেকে উঠে জারার দু গালে হাত রেখে ভর্য়াত গলায় বলে, “কোথায় ব্যথা হচ্ছে?”

জারা জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে নিতে বলে, “বুকে ভীষণ ব্যথা হচ্ছে।”

নুহাশ ঘাবড়ে যায় জারার এহেন কথা শুনে। চোখ, মুখ লাল হয়ে গেছে মেয়েটার। জারার এমন করুণ অবস্থা দেখে নুহাশের মনে পড়ে যায় অতিতের ভয়ংকর এক ঘটনা। জারা তখন ক্লাস এইটে পড়ত। তখন স্কুল থেকে ফিরে বাড়িতে মেয়েটা পা রাখতেই বুকে ব্যথা হচ্ছে বলে হাটু ভেঙ্গে বসে পড়ে। হঠাৎ করে জারার এমন অবস্থা দেখে ভয়ে কুঁকড়ে যায় বাড়ির সকলে। হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা করে জানতে পারে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা। অতিতের সেই ঘটনা পুনরায় ঘটতে চলেছে নাকি। নুহাশ আর ভাবতে পারছে না পরিস্থিতি শোচনীয় হওয়ার আগেই জারাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। নুহাশ কোমর বাঁকিয়ে নিচু হয়ে বা হাত পিঠে আর ডান হাত গোড়ালিতে রেখে জারাকে পাঁজাকোলা তুলে নিয়ে বলে।

“কিচ্ছু হবে না তোমার আমি আছি তো।”

ঘটনাটা এতটা জলদি ঘটে গেছে যে জারা হতবাক, বিস্মিত হয়ে নুহাশের পানে তাকায়। সে এতটা একসেপ্ট করে নি। নুহাশ বড়ো বড়ো কদম ফেলে রুম থেকে বেরুতে নিবে তখনই জারা অধৈর্য গলায় বলে।

“নুহাশ ভাই কি করছো নামাও আমাকে।”

নুহাশ থেমে গিয়ে জারার পানে তাকায়। জারা পুনরায় বলে, “কি হলো নামাও?”

নুহাশ রোবটের ন্যায় জারাকে কোল থেকে নামিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে, “বুকে ব্যথা কমে গেছে?”

জারা ঢোক গিলে মাথা নাড়াতে নাড়াতে বলে, “হুম।”

নুহাশ সন্দিহান গলায় বলে, “এতো তাড়াতাড়ি।”

জারা ফিক করে হেসে বলে, “তোমায় বোকা বানালাম। দেখতে চেয়েছিলাম তুমি কি করো?”

জারার এহেন কথা শুনে নুহাশের পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যায়। রাগে নাকের পাটা ফুলিয়ে কোমরে দু হাতে রেখে আশেপাশে ঘাড় ঘুরিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে। রাগটা কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সে, কতটা ভয় পেয়েছিল সে তার কোনো আইডিয়া আছে এই নির্বোধ মেয়েটার। নুহাশ রাগটা নিজের বশে না আনতে পেরে জারার দু বাহু শক্ত করে চেপে ধরে নিজের কাছে এনে রাগান্বিত গলায় কিছু বলতে যাবে তখনই থমকে যায়। জারা হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। নুহাশ যে এতটা রেগে যাবে এটা ভাবি নি, কিন্তু লোকটা কিছু বলছে না কেন কিছু তো বলুক তাকে আর সে সেই কথার পাল্টা প্রশ্ন করবে। নুহাশ চোয়াল শক্ত করে রেখেছে। ঘন ঘন নিঃশ্বাস ছাড়ছে। ইচ্ছে করছে হাজারটা কথা শুনিয়ে দিতে এই মেয়েকে। কিন্তু চাইলেও পারছে না, কথা শুনাতে গিয়ে যদি হিতে বিপরীত হয়ে যায়। নুহাশ জারাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে অন্যপাশে ফিরে কঠিন স্বরে বলে।

“নিজের রুমে যাও জারা আর এসব পাগলামি বন্ধ করো।”

কথাটা বলে সোজা বেলকনিতে চলে‌ যায় নুহাশ। জারা নুহাশের পানে অবিশ্বাস্য চোখে চেয়ে পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে রইল। মানুষটা তাকে এত্ত ভালোবাসা অথচ মুখে স্বীকার করতে চায়ছে না। একবার ভালোবেসে নিজের বাহুডোরে নিলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে। আচ্ছা সত্যি কি সে একটু বেশি পাগলামি করছে। ঠিক আছে আর করবে না সে পাগলামি। জারা নিজের কাছেই নিজেই প্রতিক্ষা করে বসল সে আর পাগলামি করবে না। কিন্তু আদৌ কি পাগালামি না করে থাকতে পারবে এই মেয়ে। জারা বই খাতাগুলা হাতে নিয়ে নুহাশকে উদ্দেশ্য করে বলে।

“আমি চলে যাচ্ছি রুমে চলে আসো বাইরে হিম পড়ছে।”

নুহাশ জারার কথাটা শুনে চোখ বন্ধ করে নেয়। না পারছে কিছু বলতে না পারছে কিছু সইতে। এই মেয়ে নিজ থেকে কেন বুঝতে পারছে না সে যে সম্পর্ক গড়তে চায়ছে তার সাথে সেই সম্পর্ক তাদের মাঝে কখন হওয়ার নয়। নুহাশ তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে কপাল ঠেকিয়ে দেয় গ্রিলের মাঝে।

________

গৌধুলী বেলা। সূর্যটা পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে। সূর্যের সোনালি আভা ছড়িয়ে পড়েছে পশ্চিম আকাশের চারিদিকে। সূর্যের উষ্ণতা কমে যেতেই মানুষরা রাস্তার পাশে আগুন জ্বালাতে শুরু করল শরীর কিছুটা উষ্ণ করার জন্য। সেই সুন্দ দৃশ্যের মাঝ দিয়ে অবন্তি ধীর পায়ে হেঁটে যাচ্ছে পাশেই ইভা একাএকা বকবক করছে কিন্তু অবন্তির সেই দিকে খেয়াল নেই। এই রাস্তা, এই সময় মনে করিয়ে দেয় সেই দিনের কথা যেই দিন প্রথম দেখা হয়েছিল রিহান নামক ব্যক্তিটির সাথে। কোথায় আছে লোকটি তার কথা কি একবারও মনে পড়ে না। সেই কয়দিন তো ভালোবাসি ভালোবাসি বলে কান ঝালাপালা করে ফেলেছিল তার এখন কোথায় গেল সেই ভালোবাসা। অবন্তি আকস্মিক থেমে গিয়ে তড়িৎ বেগে পাশ ফিরে তাকায়। যেই মানুষটাকে দেখেছিল সেই মানুষটা কোথায়? সে স্পষ্ট দেখেছে রিহানকে কিন্তু এখন কোথায় হারিয়ে গেল মানুষটা? ইভা অবন্তিকে কিছু খুঁজতে দেখে বলে।

“কি রে কি খুঁজছিস তুই?”

“আমি এই মাত্র রিহানকে দেখলাম ওখানটায়?”

ইভা জায়গাটা পরোক্ষ করে বলে, “কোথায় রিহান ভাইয়া? এখানে তো কেউ নেই।”

“বিশ্বাস কর আমার কথা আমি স্পষ্ট দেখেছি সাদা হুটি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে।”

“সাদা হুটি পড়া দেখেছিস তো তাহলে ওইটা রিহান ভাইয়ার আত্মা ছিল। রিহান ভাই এখানে যদি থাকত তাহলে তোর সাথে এভাবে লুকোচুরি খেলত না নিশ্চয়ই দেখা করতো।”

“কিন্তু আমি দেখেছি মনে হলো।”

“তুই‌ ভাইয়ার ভাবনাতে বিভোর থাকতে থাকতে এখন সব জায়গাতে রিহান ভাইয়ার আত্মা দেখতে পাচ্ছিস। এখন তাড়াতাড়ি চল না হলে আর হোস্টেলে ঢুকতে পারব না। রিহানে ভাইয়ার আত্মার মত ঘুরাঘুরি করতে হবে রাস্তায়।”

ইভা অবন্তির‌ হাত ধরে সামনের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করল। কিন্তু অবন্তি পেছন ফিরে তাকিয়ে রইল যতক্ষণ না এই স্থানটা চোখের আড়াল না হয়। সে কি এতোটাই ভুল দেখেছে। অবন্তি আর ইভা চলে যেতেই গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসা রিহান। ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠে প্রশান্তির হাসি। অবন্তি যাকে রিহান পাপড়ি নামে চিনে তাকে এক নজর দেখার জন্য রিহানের এখানে আসা। ভেবেছিল পাপড়ি হয়ত খুব খুশিতে আছে তার আশেপাশে তাকে দেখতে না পেয়ে কিন্তু ইভার কথা শুনে তার ভাবনাটা ভুল প্রমাণিত হয়ে গেল। রিহান প্যান্টের পকেটে হাত গুঁজে মুখ দিয়ে শিষ বাজাতে বাজাতে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়।।

_______

দেখতে দেখতে অয়ন্তির‌ পরীক্ষার দিনে এগিয়ে এলো। আর দু’দিন পরেই অয়ন্তির ইনকোর্স পরীক্ষা শুরু হবে। কিন্তু পরীক্ষা দেওয়ার জন্য তো বাবার বাড়ি যেতে হবে তাকে, শ্বশুরবাড়ি থেকে পরীক্ষা দেওয়াটা সম্ভব হবে না কলেজ দূরে হওয়াতে। জাহিন ফোনে কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলছিল। অয়ন্তি জাহিনের কথা শেষ হওয়ার অপেক্ষা করছে। জাহিন বেলকনি থেকে এসে অয়ন্তির চিন্তিত মুখখানা দেখে সোফায় বসতে বসতে বলে।

“কিছু বলতে চান অয়ন্তি?”

“আসলে আমার পরীক্ষা।”

“পরীক্ষা! কিসের পরীক্ষা?”

“ইনকোর্স।”

জাহিন টেবিলের উপরে থাকা ফাইলের মাঝে থেকে ফাইল খুঁজতে খুঁজতে বলে, “তাহলে দিবেন।”

“পরীক্ষার জন্য আমাকে সন্ধ্যাপুরে গিয়ে পনেরো দিন থাকতে হবে।”

অয়ন্তির এহেন কথা শুনে জাহিনের হাত দুটো থেমে যায়। নির্বাক হয়ে অয়ন্তির পানে তাকিয়ে বলে, “কি?”

অয়ন্তি আস্তে করে বলে, “হুম।”

জাহিন হতবাক হয়ে অয়ন্তির দিকে তাকিয়ে রইল। পনেরো দিন এই পনেরোটা কি করে থাকবে অয়ন্তিকে ছাড়া সে? না না এই পনেরো দিন অয়ন্তি ছাড়া সে কিছুতেই থাকতে পারবে না। তার দিন শুরু এই মায়াবী মুখখানা দেখে আর দিন শেষ হয় এই মায়াবী মুখখানা দেখে। তাহলে পনেরো দিন কার মুখ দেখে দিন শুরু করবে আর কার মুখ দেখেই বা শেষ করবে? জাহিনকে কিছু বলতে না দেখে অয়ন্তি পুনরায় বলে।

“কি হলো কিছু বলুন?”

জাহিন দৃষ্টি সরিয়ে ঢোক গিলল। মাথা নাড়াতে নাড়াতে বলল, “যাবেন তাহলে।”

অয়ন্তি আহত হলো। ভেবেছিল জাহিন হয়তো বলবে এখানে থেকে পরীক্ষা গুলা দেওয়া যায় না অয়ন্তি, কিন্তু না জাহিন রাজি হয়ে গেল যাওয়ার বিষয়টা নিয়ে। জাহিনকে ছাড়া কি করে থাকবে এই‌ পনেরো দিন? আর তার চেয়ে বড়ো কথা পড়াশোনায় তো মনযোগ বসবে না সারাক্ষণ জাহিন নামক পোকাটা তার মাথায় ঘুরবে তখন পরীক্ষাটা দিবে কি করে? কিন্তু অয়ন্তি মুখ ফুটেও কিচ্ছু বলতে পারচ্ছে না জাহিনকে। কিছু বললে যদি জাহিন উল্টাপাল্টা কিছু ভেবে বসে। অয়ন্তি আচ্ছা বলে চলে যেতে নিবে তখনই জাহিন ডেকে উঠে।

“অয়ন্তি?”

অয়ন্তি খুশি মনে জাহিনের দিকে ফিরে বলে, “কিছু বলবেন?”

“বলচ্ছিলাম…আপনি কিসে পড়েন?”

জাহিনের এমন কথা শুনে অয়ন্তির হাসি খুশি মুখটা চুপসে যায়। স্তব্ধ, বিমূঢ় হয়ে স্বামীর পানে তাকিয়ে রয়। সে কিসে পড়ে মানে? বউ তার কিসে পড়ে জাহিন সেটা জানে না? বাহ খুব সুন্দর ব্যাপার! মানুষজন জানতে পারলে বাহবা দিবে তো জাহিনকে। দেখা যাবে আর কয়েকদিন পরে বলবে অয়ন্তি আমাদের বিয়েটা কিভাবে হয়েছিল একটু ডিটেলসে বলবেন প্লিজ, আমার না ঠিক মনে নেই? আচ্ছা এই লোক কি তার সাথে মজা নিচ্ছে নাকি? এই প্রথম বারের মতো‌ জাহিনের উপর রাগ উঠছে অয়ন্তির ইচ্ছে করছে রেগে গিয়ে হাজারটা কথা শুনিয়ে দিতে। অয়ন্তিকে চুপ করে থাকতে দেখে জাহিন আবারো বলল।

“কি হলো বলুন কিসে পড়েন আপনি?”

অয়ন্তি ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, “আর্নাস সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি।”

“ওও।”

“আপনার কি আরো কিছু জানার আছে?”

জাহিন মুখ দিয়ে “চ” বর্গীয় শব্দ উচ্চারণ করে বলে, “না আর কিছু জানার নেই কিন্ত একটা কথা ভাবছি।”

“তা কি ভাবছেন শুনি একটু আমি?”

“উমম! আপনি আর্নাস সেকেন্ড ইয়ারে পড়েন তাহলে আপনার বয়স কত?”

অয়ন্তি বাক্যহীন। এই লোকের মাথা খারাপ হয়ে গেছে নিশ্চয়ই নির্বাচনের চাপে পড়ে। কি উল্টাপাল্টা কথা বলছে কখন থেকে। জাহিন নিজ মনে গড়গড় করে বলতে শুরু করল।

“আচ্ছা আপনি ষোল বছর বয়সে মেট্রিক দিয়েছেন আর ইন্টারমিডিয়েট দিয়েছেন আঠারো বছর বয়সে। তো আপনার বয়স গিয়ে দাঁড়ায় সব মিলিয়ে একুশ বছর। আপনি আমার থেকে দশ বছরের ছোট অয়ন্তি ভাবা যায়।”

অয়ন্তির রেগে কেঁদে দিতে ইচ্ছে করছে, নাকের পাটা ফুলে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে। এখানে আর এক মুহূর্ত থাকা যাবে না। অয়ন্তি কিচ্ছু না বলে চলে যেতে নিবে তখনই জাহিন ভরাট গলায় বলে উঠে।

“অয়ন্তি আমার কাছে থেকে মানে এখানে থেকে পরীক্ষাগুলা দেওয়া যায় না। আমি কাইফকে বলে দিবে আপনাকে পরীক্ষার হলে দিয়ে আসবে আবার নিয়েও আসবে।”

অন্য সময় হলে অয়ন্তি খুশি মনে জাহিনের বলা কথাটা মেনে নিতো। কিন্তু এতক্ষণ জাহিন যা যা বলছে তাতে অয়ন্তির রাগ এভারেস্টের চূড়ায় আছে। এতো সহজে এই রাগ কমাবে না সে। অয়ন্তি ঠোঁট ফুলিয়ে নাকচ করে বলল।

“না দেওয়া যায় না। এখানে থেকে পরীক্ষায় দেওয়া যায় না।”

জাহিন ভ্রুদ্বয়ের মাঝে ভাঁজ ফেলে গম্ভীর গলায় বলে, “কেন দেওয়া যায় না?”

অয়ন্তি চাপা গলায় চেঁচিয়ে বলে, “দেওয়া যায় না মানে দেওয়া যায় না।”

জাহিন অয়ন্তির কথার প্রতিত্তর না করে বসা থেকে উঠে অয়ন্তির কাছে এসে অয়ন্তির বাহু ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে থমথমে গলায় বলে, “দেওয়া যাবে নাকি যাবে না সেটা আমি ঠিক করব।”

অয়ন্তি নজর নিচু রেখে ধরা গলায় বলে, “আপনি কে বলার?”

জাহিন তুখর চোখে অয়ন্তির নিচু মুখখানার দিকে তাকাল। সে কে মানে? দুনিয়ার সবাই জানে সে কে এই কথাটা। আর অয়ন্তি জানে না সে কে? ঠিক আছে একমাত্র বউ যখন প্রশ্ন করেছে তার উত্তরও সে দিবে। জাহিন নম্র গলায় বলল।

“প্রশ্ন যেহেতু করেছেন উত্তর তো দিতেই হবে। উত্তরটা হলো “আই এম ইউর হাসবেন্ড”। এবার মনে থাকবে আমি কে?”

অয়ন্তি মিহি গলায় বলে, “স্বামী হলে বউয়ের মনের কথা বুঝতে পারতেন।”

জাহিন নিঃশব্দে হাসল। অয়ন্তির বাহু ছেড়ে কোমরে হাত রেখে নিজের কাছে এনে ফিসফিস করে বলল, “বউয়ের মনের কথা বুঝি না বুঝি আমি।”

অয়ন্তি চোখ মুখে খিঁচে বন্ধ করে বলল, “না।”

জাহিন ফু দিয়ে অয়ন্তির অবাধ্য চুল গুলা মুখ থেকে সরিয়ে দিল। অয়ন্তি শুকনো ঢোক গিলে খামচে ধরল জাহিনের জ্যাকেট। জাহিন আগের ন্যায় বলল।

“বউয়ের মন বুঝি বলেই তো বলছি এখানে থেকেই পরীক্ষা গুলা দেওয়ার জন্য। না হলে বউ আমার বাপের বাড়ি গিয়ে স্বামীর চিন্তায় পড়াশোনা তো করতেই পারবে না। উল্টে আমার চিন্তায় চিন্তায় শুকিয়ে যাবে।”

অয়ন্তি চোখে মেলে তাকিয়ে জাহিনের কথা নাকচ করে বলে, “এমনটা মোটেও না।”

“তাই বুঝি।”

“হুম। আপনি একটু বেশিই ভেবে বসে আছেন মিস্টার নেতা মশাই।”

জাহিন হাসল। বড্ড সুন্দর সেই হাসি। লোকটা হাসলে মারাত্মক সুন্দর লাগে অয়ন্তির কাছে। কিন্তু এখানে হাসার কি হলো? হাসার তো কোনো কথা বলে নি সে। জাহিন শান্ত গলায় বলে।

“সুন্দর একটা নাম দিয়েছেন তো আমায় নেতা মশাই। ছদ্মনাম নামটা পছন্দ হয়েছে আমার। অবশ্য অনেকেই‌ আমাকে নেতা সাহেব বলে ডাকে কিন্তু নেতা মশাই বলে কেউ ডাকে নি আপনিই প্রথম ডাকলেন।”

অয়ন্তি বিরস গলায় বলল, “ভালো হয়েছে।”

“আচ্ছা এসব কথা বাদ, পরীক্ষা কবে আপনার?”

“আর দুই দিন পর।”

“আচ্ছা আমি কাইফকে বলে দিবো আপনাকে পরীক্ষার হলে পৌঁছে দিতে। এবার যান পড়তে বসেন গিয়ে পরীক্ষায় ফেইল করলে খবর আছে।”

“এটা সামান্য ইনকোর্স পরীক্ষা।”

“ওকে! পড়তে বসুন গিয়ে।”

“ছাড়ুন তাহলে।”

“ওও আচ্ছা।”

জাহিন অয়ন্তিকে ছেড়ে দিয়ে সোফায় বসে পড়ল। অয়ন্তি গিয়ে নিজের টেবিলে বসে পড়ল। অয়ন্তিও খুশি জাহিনও খুশি কেউ কাউকে ছাড়া থাকতে হবে না।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here